সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মাদক নির্মূলে ইসলাম



দেশের তরুণ-যুবকদের বেশ বড় একটা অংশ আত্মঘাতী মাদকাসক্তির শিকার। তবে মাদকাসক্তি শুধু এই বয়সীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, পূর্ণবয়স্ক, এমনকি শিশু-কিশোরদের মধ্যেও মাদকাসক্তি ছড়িয়ে পড়েছে।মাদকাসক্তের সংখ্যা নির্ধারণে দেশে প্রথমবারের মতো একটি সমীক্ষা পরিচালিত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এই সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, ১৮ বছর বা এর ঊর্ধ্বের বয়সী মানুষের মধ্যে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ মাদকাসক্ত। অন্যদিকে, ৭ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে এই হার শূন্য দশমিক ১০ শতাংশ।দেশে মাদকাসক্তের এই সংখ্যাকে উদ্বেগজনক বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই সমীক্ষার আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ধারণা করত, দেশে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। সমীক্ষায় তা অর্ধেক বলা হলেও অধিদপ্তর এখন বলছে, এই সংখ্যাও আশঙ্কাজনক।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়। দেশের সাতটি বিভাগের সাত বছরের ঊর্ধ্বে ১৯ হাজার ৬৬২ জনের ওপর বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মো. ফারুক আলমের নেতৃত্বে মোট পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বছরব্যাপী পরিচালিত এই সমীক্ষার তত্ত্বাবধান করেন।সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে জনগণের মধ্যে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ভোটার সংখ্যা হিসাবে বর্তমানের বাংলাদেশে এই জনগোষ্ঠী ১০ কোটি ৪১ লাখ। সেই হিসাবে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০।সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, ১২ থেকে বছর ১৮ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মাদক ব্যবহারের প্রকোপে রয়েছে।বর্তমানে মাদকাসক্তদের পরিসংখ্যানের কোনো তথ্য না থাকলেও বেসরকারিভাবে দেশে প্রায় ৭৫ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশ বেকার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৩০ শতাংশই শুধু নেশার খরচ জোগান দিতে নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব জরিপে যে তথ্যটি সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ও ভয়ের কারণ, তা হচ্ছে দেশে মাদকাসক্তদের ৯১ শতাংশই কিশোর তরুণ ও যুবক বয়সী। আর এই আসক্তির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে ছাত্র ও শিক্ষিত বেকারদের মধ্যে।জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মাদকাসক্তদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ পুরুষ, ১৬ শতাংশ নারী। সমাজের বিত্তশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী ও শিশু-কিশোররাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশজুড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে আসক্তদের শতকরা ৯০ ভাগকে কিশোর-তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের শতকরা ৪৫ ভাগ বেকার ও ৬৫ ভাগ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট। আর উচ্চশিক্ষিতের সংখ্যা ১৫ শতাংশ।
মাদকাসক্তের ৫০ শতাংশ অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কিছুদিন আগেও যারা ফেনসিডিলে আসক্ত ছিল, তাদের বেশির ভাগই এখন ইয়াবা আসক্ত। সম্প্রতি ইয়াবা আমাদের দেশের তরুণসমাজকে গ্রাস করেছে।একটি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মাদকসেবীরা গড়ে প্রতিদিন অন্তত ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকে; হিসাব অনুযায়ী মাসে ৬০০ কোটি টাকা। অন্যদিকে সারা দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক কারবারি প্রতিদিন কমপক্ষে প্রায় ২০০ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা করে। তবে আরো বেশ কয়েকটি সংস্থার তথ্যানুযায়ী, অবৈধ মাদকদ্রব্য আমদানির জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকার মুদ্রা বিদেশে পাচার হচ্ছে।একটি ভয়ংকর চিত্র হচ্ছে, সারা দেশের ছড়িয়ে পড়া ইয়াবার শতকরা ৮৫ ভাগই ভেজাল, যার ফলে এসব ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্ত নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে; তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটি সূত্র জানায়, দেশের প্রায় ৫১২টি পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভারত থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ১০ লাখ বোতল ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। সর্বত্র হাত বাড়ালেই মিলছে এসব। সংঘবদ্ধ চোরাচালানি চক্র সব সময় বেপরোয়াভাবে ফেনসিডিল আনছে। বাস, ট্রাক, ট্রেনে সেই ফেনসিডিল ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। বাংলাদেশে মাদকাসক্তরা তাদের আসক্তির পেছনে বছরে খরচ করে কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একজন মাদকাসক্ত তার নেশার পেছনে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা খরচ করে। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই দৈনিক খরচ ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। পক্ষান্তরে এই নেশার টাকার জোগান দিতে আসক্তরা বেছে নেয় বিভিন্ন অন্যায় পথ। যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ঘটনা। নেশার জন্য বাবা খুন হচ্ছে সন্তানের হাতে। ৪০ বছর বয়সের পরে আকস্মিক মৃত্যুর ৫০ শতাংশই ঘটে মাদকাসক্তির কারণে। আর সেই লোকটি মৃত্যুর আগে রেখে যায় কিছু উত্তরসূরি। মাদকাসক্তদের ৫৯ শতাংশই আসে এমন পরিবার থেকে, যাদের মাসিক আয় এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ মদপানের কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, বিশ্বের সব রোগ-ব্যাধির ৩.৫ শতাংশ মদপানজনিত। মদপান ও মাতলামির কারণে প্রতিবছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ১৮৫ বিলিয়ন ডলার নষ্ট হয়।
ইসলামে মাদক সেবন নিষিদ্ধ। ইসলামে অন্য যেসব নিষিদ্ধ বা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত বিষয় রয়েছে, সেগুলো থেকে ব্যক্তি চাইলেই সহজে বিরত থাকতে পারে। অর্থাৎ, ইচ্ছা করলে এসব অপরাধ থেকে সরে থাকা যায়। কিন্তু মাদক গ্রহণ এমন এক অপরাধ, যা নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না; বরং মাদকসেবী নিজেই মাদক বা নেশার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। চাইলেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। অর্থাৎ, সে নেশাকে ছাড়তে চাইলেও নেশা তাকে সহজে ছাড়ে না বা ছাড়তে চায় না। আরবি ‘খমর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে মস্তিষ্কের সুশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড ভেঙ্গে দিয়ে মত্ততা সৃষ্টি করার উপাদান। যার নাম অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য। এমনকী নেশা সৃষ্টি করে এমন দ্রব্য সামগ্রীও ‘খমর’ এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন হেরোইন, কোকেন, কোবেক্স, ইয়াবা ইত্যাদি। মাদকের নেশা আত্মঘাতি, যা সমাজ দেশ মনুষ্যত্ব সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী ডেকে আনছে বিপর্যয়। সকল বিবেকবান মানুষই মদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমেরিকায় ১৯২০ সালে মদ নিষিদ্ধ হয়। কিন্তু মদ্যপায়ী ও মাদকাসক্তিদের চাপে ১৯৩৩ সালে মদ আবার বৈধ করা হয়। একমাত্র ইসলামই এ সমস্যা সফলভাবে সমাধান করেছে। ইসলামই মদপান ও সকল প্রকার মাদকদ্রব্য হারাম করেছে। এবং ভয়ংকর কবিরা গুনাহ হিসেবে চিন্হিত করেছে। মদপান যেন সমাজে প্রশ্রয় না পায় এবং ঘৃণিত ও নিন্দিত থাকে এই জন্য ইসলামি আইনে মদপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা মাতলামির জন্য প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।কোরআন কারিমে মাদক নিষিদ্ধের বিষয়টি তিনটি ধাপে এসেছে। প্রথম ধাপ , ‘লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এতদোভয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য অপকারও, কিন্তু এগুলোতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত- ২১৯)। দ্বিতীয় ধাপ, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, এগুলো শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো’ (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত- ৯০)। সর্বশেষে ঘোষণা করা হলো, ‘শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদিগকে আল্লাহর স্মরণে ও নামাজে বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?’ (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত- ৯১)।
সাহাবি হযরত আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হলো ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞানতার বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান ও মাদকের প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে’ (বুখারি, প্রথম খণ্ড, হাদিস: ৮০)। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–কে মিরাজের রাতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখানো হয়েছে। ‘তিনি মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদের শাস্তি দেখলেন। তারা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে’ (বুখারি ও মুসলিম, মিরাজ অধ্যায়)। ফিকাহ তথা ইসলামি ব্যবহারিক বিধানমতে মাদক গ্রহণ হারাম হওয়ার পাশাপাশি তা অপবিত্রও। কোনো মুসলমানের মাদক ব্যবহার করা যেমন হারাম, অনুরূপভাবে তা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ করা এবং ক্রয়–বিক্রয় করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

রাসূলে করিম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মদ পান করে তাকে বেত্রাঘাত কর। যদি চতুর্থ বার পান করে তবে তাকে হত্যা কর। হযরত জাবের (রা.) বলেন, পরে অনুরূপ এক ব্যক্তিকে রাসূল (সা.) এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে প্রহার করেন। (তিরমিজি, নাসাঈ, মিশকাত) হাদিস: হজরত যাবের বিন ইয়াযীদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর যুগে হজরত আবু বকর, হযরত উমর (রা.) এর যুগের প্রথম দিকে কোনো মদ্যপায়ী আসামী এলে আমারা হাত দিয়ে, চাদর, জুতা ইত্যাদি দিয়ে পিটাতাম। অত:পর হযরত উমরের (রা.) যুগের শেষ দিকে তিনি বেত্রাঘাত করেন। কিন্তু যখন মদ্যপান বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তিনি আশিটি বেত্রাঘাত করেন। (বুখারি, মেশকাত)

ঈমাম নাসাঈ হযরত ওসমান (রা.) হতে বর্ণনা করেন, হযরত ওসমান বলেন, ‘তোমরা মদ্যপান থেকে বিরত থাকো। কেননা এটি সকল অপরাধের ম‚ল। (তিনি এ সম্পর্কে একটি আশ্চর্য কাহিনী বর্ণনা করেন) তোমাদের পূর্বেকার যুগে একজন আবিদ লোক ছিল। এক ভ্রান্ত মহিলা তার পিছু লাগলো। লোকটির কাছে একজন দাসী প্রেরণ করল। দাসী আবিদ লোকটিকে বলল, আমরা আপনাকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে আহবান করছি। লোক দাসীর সাথে রওয়ানা হলো। এক ঘরে প্রবেশ করা মাত্র দাসী প্রতিটি দরজা বন্ধ করে দেয় । শেষ পর্যন্ত লোকটি উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট মহিলার কাছে প্রবেশ করল, যার কাছে একজন যুবক ও একটি বড় মদের পাত্র ছিল। মহিলা বললো, আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি! আমি তোমাকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ডাকিনি, বরং ডেকেছি তুমি যেন আমার সাথে সহবাস কর। অথবা এখান থেকে এক পেয়ালা শরাব পান করবে, কিংবা এ যুবককে হত্যা করবে । লোকটি বলল, আমাকে এখান থেকে এক পেয়ালা শরাব পান করাও। আমি তাকে এক পেয়ালা মদ পান করালাম। সে বলল, আমাকে আরো বাড়িয়ে দাও তারা আরও বেশী দিল। শেষ পর্যন্ত সে মদ্যপান অবস্থায় মহিলার উপর পতিত হল এবং যুবককেও হত্যা করলো। হযরত ওসমান ( রা.) বলেন, মদ্যপান থেকে বিরত থাকো। কেননা আল্লাহর কসম, এটি খুবই নিকৃষ্ট । আল্লাহর শপৎ ঈমান ও সর্বদা মদ্যপান করা একত্রিত হতে পারে না। তাদের একজন অন্যজনকে বের করে দেয়’ (আন নাসায়ী, কুরতুবী, ৩য় খন্ড, পৃ.৫৫)।
রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, দুই ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না। মাতা-পিতার অবাধ্যকারী ও মদপানকারী (নাসাঈ)। রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘মদপানকারী জাহান্নামে ব্যাভিচারী নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে নির্গত পানি পান করানো হবে। রাসূলে করিম (সা.) বলেছেন, মদের নেশায় অভ্যস্ত ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ (ইবনে মাজাহ)

গ্রন্থনায় -মো.আবু রায়হান

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...