বোরকা ফ্যাশন হিসাবে নয় , হোক আল্লাহর ভয়ে





ইসলামসম্মত পোশাক বলতে সেই পোশাককে বোঝায়, যা লজ্জাস্থান আবৃতকারী, মানানসই, সাদৃশ্যবর্জিত, ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ, বিলাসিতাবিবর্জিত, অহংকারমুক্ত, পরিচ্ছন্ন ।বোরকার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দেওয়া, যাতে করে পরপুরুষের দৃষ্টি শরীরে না পড়ে। উপরোক্ত উদ্দেশ্য শরীর ঢেকে দেয়, এমন প্রতিটি বোরকা দ্বারাই অর্জিত হয়ে যায়।তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেনো বোরকা এমন না হয়, যার ওপরের অংশই পুরুষদের আকর্ষিত করে। এ হিসেবে কালো বোরকা পরিধান করাই সর্বোত্তম।যদি পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য ডিজাইন করা বোরকা পরিধান করা হয়, তাহলে খারাপ নিয়তের কারণে ওই নারী গোনাহগার হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণা তথ্যের বিবেচনায় দেশে বোরকা ও হিজাব ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ। এ পোশাক বাবদ একজন নারী বছরে গড়ে এক হাজার টাকা ব্যয় করলেও দেশে বোরকা ও হিজাবের বাজার দাঁড়ায় দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।কারণ বিশ্ববাজারে বোরকা ও হিজাবের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তবে দেশে যেসব উন্নতমানের বোরকা ও হিজাব দেখা যায় তার সবই প্রায় পাকিস্তান, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির মাধ্যমে আসে।‘বাংলাদেশ ইয়ুথ সার্ভে’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, সুইজারল্যান্ডের উন্নয়ন সংস্থা এসডিসি ও জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)। ওই গবেষণায়ও বাংলাদেশী তরুণীদের হিজাব ও বোরকায় আগ্রহের বিষয়টি উঠে আসে।গবেষণায় দেখা গেছে, ৮৭ শতাংশ মুসলিম তরুণীই হিজাব পরিধান করে। তাদের অধিকাংশই হিজাবকে গুরুত্বপূর্ণ পোশাক মনে করেন। বিভিন্ন গবেষণা বলছে, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বোরকা ও হিজাব পরিধান করছেন। এর মধ্যে গ্রামীণ নারীদের প্রায় ৫০ শতাংশ পোশাকটি পরছেন। শহুরে নারীদের মধ্যে এ হার কিছুটা কম। তবে তা ৩০ শতাংশের নিচে নয়। অঞ্চলভেদেও হিজাব ও বোরকা পরার আগ্রহে তারতম্য রয়েছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ নারীই বোরকা বা হিজাব পরিধান করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেলা যেমনÑ নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনীতে ১৫ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৮০ শতাংশ নারীই বোরকা ও হিজাব পরেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে, দেশে নারীর সংখ্যা ৭ কোটি ৯৩ লাখ। এর মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সী নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি।যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক বাংলাদেশী ফাতেমা মোহসিনা ইসলাম গবেষণা করেছেন বাংলাদেশী তরুণীদের ইসলামী ফ্যাশন ও পোশাক নিয়ে। ‘আ কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক অন দ্য স্টাডি অব ট্রেন্ডস অব ইসলামিক ফ্যাশন অ্যান্ড ক্লদিং প্র্যাকটিসেস অ্যামোংস্ট ইয়াং মুসলিম ফিমেল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, ৫৬ শতাংশ তরুণীই ইসলামী পোশাক পরিধান করেন।তাদের অধিকাংশই হিজাবকে গুরুত্বপূর্ণ পোশাক মনে করেন।আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা ও মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের  উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সূরা আহযাব,আয়াত -৫৯)

এ আয়াতে পর্দার সঙ্গে চলাফেরা করার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে যে, পর্দার সহিত চলাফেরা করলে সবাই বুঝতে পারবে তারা শরীফ ও চরিত্রবতী নারী। ফলে পর্দানশীন নারীদেরকে কেউ উত্যক্ত করার সাহস করবে না।এক সাহাবি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমার শখ হলো, আমার কাপড় উন্নতমানের হোক, আমার জুতা জোড়া অভিজাত হোক—এটা কি অহংকারপ্রসূত? রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন (সৌন্দর্যের প্রকাশ অহংকার নয়)। ওই ব্যক্তি অহংকারী, যে সত্যের সামনে ঔদ্ধত্য দেখায় আর মানুষদের তুচ্ছজ্ঞান করে, অবজ্ঞা করে।’ (মুসলিম, হাদিস - ১৪৭)


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল