সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেসবুকীয় পাপ




মানুষের মৃত্যুর পর তার আমল করার পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন পাপ ও পূণ্য অর্জনের পথও বন্ধ । হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করে থাকে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার (মৃত ব্যক্তির) সঙ্গে থেকে যায়। জিনিস তিনটি হলো- তার পরিবার; তার ধন-সম্পদ ও তার আমলনামা। এর মধ্যে পরিবার ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে। তার সঙ্গে শুধুমাত্র আমলনামায় থেকে যায়। (বুখারি ও মুসলিম) দুনিয়ার বুকে রেখে যাওয়া কিছু ভালো কিংবা খারাপ আমলের ছোয়াব কবর থেকে সে বখশিস হিসেবে পেতে থাকে।
কবরে বসে যদি সে দুনিয়ার ভালো কাজের ছোয়াব পেতে পারে তাহলে দুনিয়ার বুকে করে যাওয়া খারাপ কৃতকর্মের ফলাফল পেতেও সে বাধ্য। কবরে যে সব ছোয়াব পৌঁছে -, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন জ্ঞান (ইলম)- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। ( সহিহ মুসলিম - ৪৩১০)অন্য এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর কবরে ৭টি আমলের সওয়াব অব্যাহত থাকে- ১. যে ইলম শিক্ষা দিল, ২. যে পানি প্রবাহিত করল, ৩. কূপ খনন করল, ৪. খেজুর গাছ লাগালো (গাছ রোপন), ৫. মসজিদ তৈরি করল, ৬. কোরআনে কারিম বিতরণ করল ও ৭. এমন নেক সন্তান রেখে গেল- যে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। (মুসনাদুল বাজ্জার -৭২৮৯)
ছোয়াবের মতো গুনাহও মৃত্যুর পর চলমান থাকে সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই বললেই চলে। মৃত্যুর পরও মানুষের পাপের বোঝা ভারী করতে থাকে দুনিয়ার বুকে করে যাওয়া বেশ কিছু খারাপ আমল বা পাপ। যেসব পাপ মৃত্যুর পরও মানুষের আমলনামায় যোগ হবে এর তালিকা অনেক লম্বা। কিন্তু আজকের আলোচনা সামাজিক মাধ্যম তথা ফেসবুকে করে যাওয়া খারাপ আমল বা পাপ সমন্ধে। যে গুনাহ কবরে বসে পেতে হবে।
মোবাইলে গান শুনছেন, মুভি দেখছেন, হারাম রিলেশনে জড়িয়েছেন, এগুলো তো এমনিতেই জঘন্য পাপ, তার ওপর আবার ওয়াচিং মুভি, লিসেনিং সং, ইন এ রিলেশনশিপ ইত্যাদি লিখে ফেসবুকে জানিয়ে দিলেন। হাজার হাজার মানুষ আপনার গুনাহের সাক্ষী হলো। মৃত্যুর পরও স্ট্যাটাসগুলো থেকে গেল, আর গুনাহের ধারাবাহিকতা চলতে থাকলো।আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি, ‘আমার সকল উম্মত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর এক প্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গোপন রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার উপর আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে।’ (বুখারি : ৬০৬৯, মুসলিম : ২৯৯০) ভয়ানক বিষয় হলো, কমেন্টে হাজারো মানুষ নির্লজ্জের মত বলছে, ‘ভাই লিংক হবে?’ আস্তাগফিরুল্লাহ। গোনাহ করা এক জিনিস আর তা আনন্দের সাথে বলে বেড়ানো তো আরো ভয়ংকর।
আপনার বেপর্দা প্রোফাইল পিকটা ফেসবুকে থেকে গেল। আপনার মৃত্যুর পরও এটি থেকে যাবে। মানুষ দেখে গুনাহগার হবে। সেই গুনাহের একটি অংশ যুক্ত হবে আপনার আমলনামায়।অনেকে আছে ভাইরাল হওয়ার জন্য কিংবা অর্থ উপার্জনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অশ্লীল ভিডিও প্রচার করে। এটি জঘন্য অপরাধ। এই পোস্ট, ভিডিও ইত্যাদি দ্বারা যত মানুষ গুনাহ করবে, সে তার একটি অংশ পেতে থাকবে।এতে আমরা অনেকে লাইক শেয়ার কমেন্ট করে উৎসাহিত করি কিংবা ভাইরাল করি। এসব খারাপ ভিডিও, ছবি ও লেখায় লাইক কমেন্ট ও শেয়ারের জন্য আমাদেরও পাপের অংশীদার হতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন তোমরা জানো না। (সুরা : নুর, আয়াত - ১৯) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো ওপর জুলুম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (সুরা : নিসা, আয়াত -১৪৮) জারির বিন আব্দুল্লাহ বিন জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো উত্তম পন্থার প্রচলন করল এবং লোকে তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পুরস্কার রয়েছে, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে তাদের সমপরিমাণ পুরস্কারও সে পাবে, এতে তাদের পুরস্কার মোটেও হ্রাস পাবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ প্রথার প্রচলন করল এবং লোকেরা তদনুযায়ী কাজ করল, তার জন্য তার নিজের পাপ তো আছেই, উপরন্তু যারা তদনুযায়ী কাজ করেছে, তাদের সমপরিমাণ পাপও সে পাবে, এতে তাদের পাপ থেকে মোটেও হ্রাস পাবে না। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২০৩)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...