সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

করোনার সময়ে মুসাফা বা করমর্দন



দেখা হলে মুসাফা বা করমর্দন করা একটি ইসলামী রীতি নীতি। এটি মুসাফাকারী ব্যক্তিদ্বয়ের মাঝে ভালবাসা ও হৃদ্যতার বহিঃপ্রকাশ। অন্যদিকে এটি মুসলমানদের পারস্পারিক হিংসা-বিদ্বেষ ও কলহ দূর করে দেয়। কিন্তু করোনা এসে অনেক কিছু পালটে দিয়েছে। পালটে দিয়েছে হাত করমর্দনের দীর্ঘ ইতিহাস ঐতিহ্যের। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে করমর্দন শুরু হয়েছিল শান্তি স্থাপনের সংকেত হিসেবে—এর মাধ্যমে বোঝানো হতো, দুজনের কারও হাতেই কোনো অস্ত্র নেই। রোমান সভ্যতায় হাত মেলানোর পরিসর ছিল আরেকটু বড়। পরস্পরের সঙ্গে বাহু মিলিয়ে সম্ভাষণ করত তারা। উদ্দেশ্য একই—জামার আস্তিনের নিচে কোনো অস্ত্র লুকানো নেই, তা জানান দেওয়া। করমর্দনের রীতি বহুল প্রচলিত হলেও সব দেশে যে একই নিয়ম, তা নয়। নিউজিল্যান্ডের মাওরি জনগোষ্ঠী যেমন নাকে নাক ছুঁইয়ে পরস্পরকে সম্ভাষণ জানান। ইথিওপিয়ার মানুষ কাঁধে কাঁধ ছোঁয়ান। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর পুরুষেরা একে অপরের কপালে কপাল ছুঁয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তবে জাপানের মতো এশিয়ার কিছু কিছু দেশের সম্ভাষণরীতি আগে থেকেই বেশ ‘স্বাস্থ্যসম্মত’—হালকা মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানান তাঁরা। ইউরোপের কিছু কিছু দেশে গালে চুমু খাওয়াও সম্ভাষণের অংশ।সাহাবীদের সময়ে মুসাফার প্রচলন ছিল। কাতাদা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আনাস বিন মালিক (রাঃ)কে বললেন: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মাঝে কি মুসাফার প্রথা ছিল? তিনি বলেন: হ্যাঁ।”(সহিহ বুখারী ৬২৬৩)
করোনা সংক্রমনের এই সময়ে শারীরিক দূরত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে দেশে হাজার বছরের প্রচলিত বিভিন্ন প্রথা বিলুপ্তির পথে। ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কোন প্রথাই টেকানো যাচ্ছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল হাত বাড়ালেন কোন এক ক্যাবিনেট সদস্যের দিকে। কিন্তু তিনি হ্যান্ডশেক করলেন না। অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের হাত ফিরিয়ে দিলেন।অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হিন্দু ধর্মের নমস্তে রীতিকে প্রমোট করে এ প্রথাটি চালুর আবেদন জানিয়েছেন। যেহেতু নমস্তে দিতে হাত মিলাতে হয় না বা শরীরের সংস্পর্শ দরকার হয় না এজন্য এটাই উত্তম। বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী উসমানীয় সাম্রাজ্যের আমলে প্রচলিত একটি রীতিকে সময় উপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন। মুসলমানদের মুসাফাহার বিকল্প বলে উল্লেখ করেছে। দূর থেকে মানুষকে বুকে হাত রেখে শ্রদ্ধা জানানোর পদ্ধতিটি তিনি পছন্দ করেছেন।মুসাফা একটি সুন্নত আমল। এমন পরিস্থিতিতেও এটা করতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা হাসিমুখে সালামের ব্যাপক প্রচলন ঘটাতে পারি।। মুসাফার ফজিলতের ব্যাপারে হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোন মুসলিমদ্বয় যদি সাক্ষাত করে পরস্পর মুসাফাহা করে তাহলে তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।”[সুনানে আবু দাউদ (৫২১২); আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...