হযরত ইদরীস (আ.) বিজ্ঞানী নবী ছিলেন



#মো. আবু রায়হান

পৃথিবীর প্রথম সহস্রাব্দে হযরত ইদরীস (আ) এর আগমন।হযরত আদম (আ.)-এর ইন্তেকালের ৩৮০ বছর আগে ইরাকের প্রাচীন নগরী বাবেল শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বেশির ভাগ সাহাবি(রা.)-এর মতে, তিনি নুহ(আ.)-এর পরের নবী। কিন্তু ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাকের মতে, তিনি নবী হযরত নুহ (আ.)-এর দাদা।’ ইতিহাসবিদরা এ মতকে দুর্বল বলে মনে করেছেন। আদম (আ.)-এর পর তিনিই প্রথম নবী ও রাসুল, যাঁর প্রতি আল্লাহ ৩০টি সহিফা (ছোট কিতাব) নাজিল করেছেন।ইদরিস (আ.)-এর মূল নাম ‘আখনুখ’। ইদরিস তাঁর উপাধি। ইদরিস অর্থ শিক্ষা-শিক্ষকতায় ব্যস্ত ব্যক্তি। যেহেতু তিনি বহুবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন, তাই তাকে ইদরিস বা বিদ্যাবিশারদ বলা হয়।
ইদরিস (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে সভ্যতা, সংস্কৃতি ও অনেক বিজ্ঞানসম্মত কাজের আবিষ্কার হয়। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী, সফল রাষ্ট্র পরিচালক, কর্মবীর ও কর্মশিল্পী ছিলেন। ইদরিস (আ.) এমন এক ব্যক্তি, যাঁকে মুজিজা হিসেবে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অঙ্কবিদ্যা দান করা হয়েছে।’ (তাফসিরে বাহরে মুহিত)। ইদরিস (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে চিকিৎসাশাস্ত্র একটি অবকাঠামোর রূপ পায়। এর আগে চিকিৎসাশাস্ত্রের নির্ধারিত নির্দিষ্ট কোনো রূপরেখা ছিল না। মানুষ তাদের ইচ্ছামতো অসুস্থতার নিয়ামক খুঁজে নিত। ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা চলত। ইতিহাসবিদ আল-কিফতি তাঁর ‘তারিখুল হুকামাত’-এ লিখেছেন, ‘ইদরিস (আ.) হলেন প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী। এ বিষয়ে তাঁর কাছে ওহি আসে।’ (মুহাম্মদ নূরুল আমীন রচিত ‘বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান, পৃষ্ঠা ৫৪) সব বিজ্ঞানের সূত্রপাত অঙ্কশাস্ত্র থেকে। আদি যুগ থেকে মানুষের প্রয়োজনে অঙ্কশাস্ত্রের সূচনা হয়। ধারণা করা হয়, সৃষ্টির সূচনা থেকেই অঙ্কশাস্ত্রের আবিষ্কার। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমেও গণনাসংখ্যার অস্তিত্ব প্রকাশ পায়। আদিম যুগের কাহিনি বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে? তারা বলবে, আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন বা এক দিনের কিছু অংশ। আপনি না হয় গণনাকারীদের জিজ্ঞেস করুন। তিনি বলবেন, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে!’ (সুরা মুমিন, আয়াত , ১১২-১১৪)
মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটেছে লিখনপদ্ধতির মাধ্যমে। সভ্যতা আর সংস্কৃতির সন্ধান মিলেছে এর মাধ্যমে। পৃথিবীর গত হওয়া ইতিহাস, হারিয়ে যাওয়া দিনের খোঁজ জানা গেছে এই লিখন পদ্ধতির মাধ্যমে। ইদরিস (আ.) প্রথম মানব, যিনি কলমের সাহায্যে লিখন পদ্ধতির কাজ শুরু করেন। এর আগে কলমের ব্যবহার হয়নি।অথচ ধারণা করা হয়, প্রাচীন মিশরীয়রা সর্বপ্রথম কলম ব্যবহার শুরু করে।
তিনিই সর্বপ্রথম মানব, যিনি বস্ত্র সেলাই শিল্পের সূচনা করেন। সূচনায় লতাপাতা ছিল মানুষের পোশাক। গাছের পাতা, গাছের কাণ্ডের বাকল দিয়ে মানুষ তাদের ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করত। অনেকে জীবজন্তুর চামড়া দিয়ে তৈরি সেলাইবিহীন পোশাক পরিধান করত। আজকের পৃথিবীর মানুষদের মতো তখনকার মানুষদের কোনো পোশাক ছিল না। কেউ সেলাই করে কাপড় পরিধান করত না। সেলাইবিহীন ছিল তাদের পোশাক। ইদরিস (আ.) প্রথম সেলাই করা কাপড় পরিধান করেন। তিনি নিজেই নিজের কাপড় সেলাই করতেন। তিনি ছিলেন জগতের প্রথম দর্জি। তিনি মানুষের কাপড়ও সেলাই করতেন। ধারণা করা হয়, তিনি কোনো মজুরি নেননি। (তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন - ৮৩৮)
মানুষের জীবন পরিচালনায় অতি গুরুত্বপূর্ণ ওজন ও পরিমাপ। মানুষের মধ্যে পরস্পরের লেনদেন, বস্তু আদান-প্রদান, পণ্য বেচা-কেনার জন্য ওজন জরুরি। ওজন ও পরিমাপ ছাড়া মানুষের সভ্যতা, সমাজ ও সংস্কৃতি সুন্দরভাবে চলতে পারে না। সঠিক পরিমাণে আদান-প্রদান করতে পারে না তাদের মালপত্র। ইদরিস (আ.) আবিষ্কার করেন ওজন ও পরিমাপ পদ্ধতি। লোহা দ্বারা অস্ত্রশস্ত্র তৈরির পদ্ধতি তিনিই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন। বিভিন্ন কাজের জন্য লোহার ব্যবহার তাঁর আমল থেকেই শুরু হয়। মানুষের প্রয়োজনীয় নানা কাজের সহজলভ্যতার জন্য ব্যবহার করা হতো লোহা দিয়ে তৈরি অস্ত্র। তাঁর তৈরি করা অস্ত্রের সাহায্যে কাবিল গোত্রের বিরুদ্ধে জেহাদ পরিচালনা করেন এবং তিনি বিজয় লাভ করেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল