শয়তানের যত ক্ষমতা
কোরআনে শয়তান শব্দটি এক বচন ।যা ৬৩ বার আর ‘শায়াতিন’ শব্দটি বহু বচন ।যা ১৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে।শয়তান অর্থ বিতাড়িত, বিদূরিত, বঞ্চিত ইত্যাদি। শয়তান হক থেকে বিদূরিত এবং কল্যাণ থেকে বঞ্চিত বলে তাকে শয়তান বলা হয়। এ ছাড়া তার আরো নাম আছে।পৃথিবীতে শয়তান মুমিনের প্রধান শত্রু। কোরআনের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ শয়তান সম্পর্কে মানবজাতিকে সতর্ক করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)। শয়তানের খাদ্য হলো, হাড়, গোবর ইত্যাদির ঘ্রাণ ও বিসমিল্লাহবর্জিত খাদ্য। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ পড়া হয় না, শয়তান তা নিজের জন্য বৈধ মনে করে।’ তার পানীয় হলো মদ, শিকারের ফাঁদ হলো নারী, বার্তাবাহক হলো গণক, কিতাব হলো অশ্লীল কল্পিত গ্রন্থাবলি, কথা হলো মিথ্যা, মুয়াজ্জিন হলো বাঁশি, বাদ্যযন্ত্র, উপাসনালয় হলো বাজার।আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন প্রত্যেকের কাছে শয়তান এসে বলে, এটা কে সৃষ্টি করেছে? ওটা কে সৃষ্টি করেছে?’ এমনকি সে বলে, আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? এ পর্যন্ত পৌঁছালে যেন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে ও শয়তানকে অভিশাপ দেয়।’(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৭৬) অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘সে যেন বলে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান এনেছি।’(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৩৪)শয়তানকে যখন আল্লাহ তাআলা বেহেশত থেকে বের করে দিলেন, তখন শয়তান আল্লাহর কাছে মানুষের ক্ষতি করার জন্য বেশ কিছু ক্ষমতা চেয়ে নিয়েছেন। আর তা হলো-
১. আমাকে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন লাভ। আল্লাহ তার এ প্রার্থনা কবুল করেন। ২. আমার জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ আবেদনও কবুল করা হয়।
৩. আমাকে মানুষের দৃষ্টিশক্তির অন্তরাল হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। এটিও কবুল করা হয়।
৪. আমি যেন মানবদেহের শিরা-উপশিরায় চলাচল করতে পারি। এ দোয়াও কবুল করা হয়।
আমাকে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন। আল্লাহ বললেন, তোমাকে অবকাশ দেওয়া হ’ল। সে বলল, যে আদমের প্রতি অহংকারের কারণে আপনি আমার মধ্যে পথভ্রষ্টতার সঞ্চার করেছেন, সেই আদম সন্তানদের পথভ্রষ্ট করার জন্য আমি অবশ্যই আপনার সরল পথের উপর বসে থাকব। অতঃপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনে, পিছনে, ডাইনে, বামে সবদিক থেকে। আর তখন আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না’ (আরাফ আয়াত, ১৪-১৭)।মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস :১২৮৮;সহিহমুসলিম,হাদিস-২১৭৪)।রাসুল (সা) বলেন-‘সবামীর অনুপস্থিতিতে কোন স্ত্রীর নিকট তোমরা প্রবেশ কর না। কেননা শয়তান তোমাদের রক্তনালীতে চলমান রয়েছে। আমরা বললাম, আপনার মধ্যেও? তিনি বললেন, আমার মাঝেও। তবে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন। ফলে আমি নিরাপত্তা লাভ করেছি’।(বুখারী -৭১৭১; মুসলিম -২১৭৫; তিরমিযী -১১৭২) আল্লাহ তাআলা শয়তানকে তার চাহিদা মোতাবেক কেয়ামত পর্যন্ত হায়াত দান করেছেন। মানুষকে পথভ্রষ্ট করে থাকে। মানুষের শরীরের রগে রগে বিচরণ করতে পারে। মানুষকে সব দিক থেকে বিপদে ফেলার কুমন্ত্রণা দিয়ে থাকে। সে কারণেই মানুষ শয়তানে পাতা ফাঁদে পা দিয়ে গোনাহ করে থাকে।শয়তানের প্ররোচনায় হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। মহান আল্লাহ তাআলা শয়তান যেমন ক্ষমতা দিয়েছেন তেমনি পথহারা মানুষকে ক্ষমা করে দিতে তিনি খোলা রেখেছেন তাওবার দরজা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন