রাসুল (সা.) কে হত্যার যত চেষ্টা
#এক রাতে আবু জেহেল কুরাইশ গোত্রের কয়েকজন মুশরিক বন্ধুদের নিয়ে কাবা চত্বরে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলো সে নিজেই একটি ভারী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুহাম্মাদ সা:-এর মাথা গুঁড়িয়ে দেবে।পরদিন আবু জেহেল কাবা শরিফের এক পাশে বিশাল ভারী একখানা পাথর নিয়ে মহানবী (সা)-এর আগমন অপেক্ষায় বসে রইল। অন্য দিনের মতো মহানবী সা: কাবা শরিফে নামাজ আদায় করার জন্য এলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। মহানবী সা: যখন সেজদায় গেলেন তখন আবু জেহেল প্রকাণ্ড ভারী পাথরটিসহ অগ্রসর হলো। কিন্তু পরক্ষণেই ভীতসন্ত্রস্ত ও বিহ্বল অবস্থায় বিবর্ণ চেহারায় পিছু হটে ফিরে এলো। যে পাথরটি তার হাতে ছিল সেটি সে ছুড়ে ফেলে দিলো। এ সময় কুরাইশ বন্ধুদের কয়েকজন তার দিকে এগিয়ে গেল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, কী হে আবুল হাকাম, তোমার কী হলো? সে বলল, আমি মুহাম্মাদের সা: সেজদারত অবস্থায় মাথায় আঘাত করার জন্য কাছাকাছি গিয়ে পাথর মারতে যেই উদ্যত হয়েছি, তখনই বিরাট আকৃতির ভয়ঙ্কর একটি উট আমার সামনে এসে আমাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। আল্লাহর কসম! এমন ভয়ঙ্কর দাঁতাল এবং হিংস্র উট আমি জীবনে আর কখনো দেখিনি।
#দারুন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত-১২ই সেপ্টেম্বর ৬২২ খৃষ্টাব্দ বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে সাবেক কুরায়েশ নেতা কুছাই বিন কিলাব প্রতিষ্ঠিত বৈঠক ঘর দারুন নাদওয়াতে কুরায়েশ-এর অধিকাংশ গোত্রনেতাদের এক জরূরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে (১) বনু মাখযূম গোত্র থেকে আবু জাহল (২) বনু নওফেল বিন আবদে মানাফ থেকে জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম বিন আদী, তু‘আইমা বিন আদী ও হারেছ বিন আমের (৩) বনু আবদে শাম্স বিন আবদে মানাফ থেকে আবু সুফিয়ান বিন হারব এবং রাবী‘আহর দুই পুত্র উৎবা ও শায়বা (৪) বনু আব্দিদ্দার হ’তে নযর ইবনুল হারিছ (৫) বনু আসাদ বিন আব্দুল উযযা থেকে আবুল বুখতারী বিন হেশাম, যাম‘আহ ইবনুল আসওয়াদ ও হাকীম বিন হেযাম (৬) বনু সাহ্ম থেকে হাজ্জাজ-এর দুই পুত্র নাবীহ ও মুনাবিবহ এবং (৭) বনু জুমাহ) থেকে উমাইয়া বিন খালাফ। উল্লেখ্য যে, এই বৈঠকে রাসূলের গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবকে ডাকা হয়নি।উপরোক্ত সাত গোত্রের ১৪ জন নেতা দারুন নাদওয়াতে পূর্বাহ্নে বসে আলোচনা শুরু করে। আবু জাহল প্রস্তাব দিয়ে বলল, প্রতি গোত্র থেকে একজন করে সুঠামদেহী যুবক বাছাই করে তাদেরকে তরবারি দেওয়া হৌক। অতঃপর তারা এসে একসাথে আঘাত করে তাকে শেষ করে দিক। এতে তিনটা লাভ হবে। এক- আমরা তার হাত থেকে বেঁচে যাব। দুই- তার গোত্র আমাদের সব গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস করবে না। তিন- একজনের রক্তমূল্য বাবদ একশত উট আমরা সব গোত্র ভাগ করে দিয়ে দেব। যা কারু জন্য কষ্টকর হবে না’।আবু জাহলের এই প্রস্তাবকে সকলে সানন্দে কবুল করল এবং এর উপরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সবাই নিষ্ক্রান্ত হ’ল।
#হিজরতের রাতে : ১৪শ নববী বর্ষের ২৭শে সফর মোতাবেক ৬২২ খিষ্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতের পর।কাফেররা তাদের কৌশলে পাকাপোক্ত ছিল। ওদিকে আল্লাহর কৌশল ছিল অন্যরূপ। যেমন তিনি বলেন, وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ أَوْ يَقْتُلُوْكَ أَوْ يُخْرِجُوْكَ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ- ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল এজন্য যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা বিতাড়িত করবে। এভাবে তারা নিজেদের ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিল, আর আল্লাহ স্বীয় কৌশল করছিলেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ কৌশলী’ (আনফাল আয়াত-৩০)।পূর্বাহ্নে যখন দারুন নাদওয়াতে রাসূলকে হত্যার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখনই জিব্রীল মারফত রাসূলকে তা জানিয়ে দেওয়া হয় এবং রাতে নিজ শয্যায় ঘুমাতে নিষেধ করা হয়। এতেই হিজরতের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুপুরেই আবুবকর (রা)-এর গৃহে তাশরীফ আনেন এবং হিজরতের সময়-সূচী ও অন্যান্য আলোচনা সম্পন্ন করেন। সেমতে আবুবকর (রা) পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন।রাত্রি বেলায় রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুতে বলেন এবং তাঁর নিকটে রক্ষিত প্রতিবেশীদের আমানত সমূহ যথাস্থানে ফেরত দেবার দায়িত্ব দেন।
#পরদিন ১৩ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সাওর পাহাড়ের গুহামুখে উপস্থিত শত্রুদের ব্যর্থ চেষ্টা। যারা ১০০ উট পাওয়ার লোভে তাঁর সন্ধানে বের হয়েছিল।রাসূলকে না পেয়ে কোরায়েশ নেতারা চারিদিকে অনুসন্ধানী দল পাঠায় এবং ঘোষণা করে দেয় যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ও আবুবকরকে বা দু’জনের কাউকে জীবিত বা মৃত ধরে আনবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেওয়া হবে। সন্ধানী দল এক সময় ছওর গুহার মুখে গিয়ে পৌঁছে। এমনকি আবুবকর (রাঃ) তাদের পা দেখতে পান। তাদের কেউ নীচের দিকে তাকালেই তাদের দেখতে পেত। ফলে তিনি রাসূলের জীবন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لاَ تحزن إن الله معنا ‘দুঃখিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’। বিষয়টির বর্ণনা আল্লাহ দিয়েছেন এভাবে-
إِلاَّ تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَار إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُوْدٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌِ-যদি তোমরা তাকে (রাসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখো আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফেররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। তিনি ছিলেন দু’জনের একজন। যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় ‘সাকীনাহ’ (প্রশান্তি) নাযিল করলেন এবং তার সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখোনি। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথা সদা সমুন্নত। আল্লাহ হ’লেন পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তওবা আয়াত-৪০)।
#৬২২ খৃষ্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর বুধবার বনু মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাক্বা বিন মালেক বিন জুশুম কর্তৃক হিজরতের পথিমধ্যে হামলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।বনু মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাকা বিন মালেক বিন জু‘শুম জনৈক ব্যক্তির কাছে রাসূল গমনের সংবাদ শুনে পুরস্কারের লোভে দ্রুতগামী ঘোড়া ও তীর-ধনুক নিয়ে রাসূলের পিছে ধাওয়া করল। কিন্তু কাছে যেতেই ঘোড়ার পা দেবে গিয়ে সে চলন্ত ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ল। তখন তীর ছুঁড়তে গিয়ে তার পসন্দনীয় তীরটি খুঁজে পেল না। ইতিমধ্যে মুহাম্মাদী কাফেলা অনেক দূরে চলে গেল। সে পুনরায় ঘোড়া ছুটালো। কিন্তু এবারও একই অবস্থা হ’ল। কাছে পৌঁছতেই ঘোড়ার পা এমনভাবে দেবে গেল যে, তা আর উঠাতে পারে না। আবার সে তীর বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু আগের মতই ব্যর্থ হ’ল। তার পসন্দনীয় তীরটি খুঁজে পেল না। তখনই তার মনে ভয় উপস্থিত হ’ল এবং এ বিশ্বাস দৃঢ় হ’ল যে, মুহাম্মাদকে নাগালে পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে তখন রাসূলের নিকটে নিরাপত্তা প্রার্থনা করল। এ আহবান শুনে মুহাম্মাদী কাফেলা থেমে গেল। সে কাছে গিয়ে রাসূলকে কিছু খাদ্য-সামগ্রী ও আসবাবপত্র দিতে চাইল। রাসূল (সা) কিছুই গ্রহণ করলেন না। সুরাকা বলল, আমাকে একটি ‘নিরাপত্তা নামা’ লিখে দিন। তখন রাসূলের হুকুমে আমের বিন ফুহায়রা একটি চামড়ার উপরে তা লিখে দিলেন। অতঃপর রওয়ানা হ’লেন। লাভ হ’ল এই যে, ফেরার পথে সুরাকা অন্যান্যদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল, যারা রাসূলের পিছু নিয়েছিল। এভাবে দিনের প্রথম ভাগে যে ছিল রক্ত পিপাসু দুশমন, দিনের শেষভাগে সেই হল দেহরক্ষী বন্ধু।
#পরদিন ১৯শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সাক্ষাত যমদূত হিসাবে দেখা দেয় বিখ্যাত আরব বীর বুরাইদা আসলামী ও তার ৭০ জনের একটি পুরস্কার লোভী দল।কিন্তু শিকার হাতে পেয়ে তিনিই ফের শিকারে পরিণত হলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে কিছু কথাবার্তাতেই তার মনে দারুণ রেখাপাত করে এবং সেখানেই তার ৭০ জন সাথী সহ ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর মাথার পাগড়ী খুলে বর্শার মাথায় বেঁধে তাকে ঝান্ডা বানিয়ে ঘোষণা বাণী প্রচার করতে করতে চললেন, قدجاء ملك الأمن والسلام، ليملأ الدنيا عدلاً وقسطًا- ‘শান্তি ও নিরাপত্তার বাদশাহ আগমন করেছেন। দুনিয়া এখন ইনছাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ হয়ে যাবে’।
#২য় হিজরীর ১৭ই রামাযানে সংঘটিত বদর যুদ্ধের কয়েক দিন পরে মক্কার নেতা সাফওয়ান বিন উমাইয়ার কুপরামর্শে দুষ্টমতি ওমায়ের বিন ওয়াহাব আল-জামহী সে মহানবী সা:-এর মহাজীবন নাশের জন্য অস্ত্রে শান দিলো এবং তাতে তীব্র ক্রিয়াশীল বিষ মিশাল। বিষ মিশ্রিত তরবারি নিয়ে মদীনা আগমন করে। কিন্তু রাসূল (সা) তাকে দেখেই কাছে ডেকে নিয়ে মক্কায় বসে সাফওয়ান ও তাঁর মধ্যকার গোপন পরামর্শ এবং তার হত্যা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেন। এতে সে হতবাক হয়ে আত্মসমর্পণ করে ও মুসলমান হয়ে যায়। পরে মক্কায় ফিরে গিয়ে তার দাওয়াতে বহু লোক ইসলামে দাখিল হয়।
#৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২৫ খিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে পূর্বের সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী রক্তমূল্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা) বনু নাজিরের ইহুদীদের কাছে এলে অর্থ প্রদানের ওয়াদা দিয়ে তাঁকে বসিয়ে রেখে দেওয়ালের উপর থেকে বড় পাথর ফেলে তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ওহির মাধ্যমে জানতে পেরে রাসূল (সা) সেখান থেকে দ্রুত ফিরে আসেন।
#৬ষ্ঠ হিজরীর মুহাররম মাসে ইয়ামামাহর হানীফা গোত্রের নেতা সুমামাহ বিন আছাল হানাফী ইয়ামামার নেতা মুসায়লামাহর নির্দেশে রাসূলকে হত্যা করার জন্য ছদ্মবেশে মদীনায় আসছিল। কিন্তু পথিমধ্যে সে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর সেনাদলের হাতে ধরা পড়ে যায়। মদীনায় আনার পর তিনদিন মসজিদে নববীতে তাকে বেঁধে রাখা হয়। তারপর তাকে মুক্তি দিলে সে মুসলমান হয়ে মক্কায় ওমরাহ করতে যায় এবং ইসলামের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
#৬ষ্ঠ হিজরীর রমজান মাসে বনু ফাজারাহ গোত্রের একটি শাখার নেত্রী উম্মে কুরফা রাসূলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং এজন্য ৩০ জন সশস্ত্র ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। কিন্তু তারা আবুবকর অথবা যায়েদ বিন হারেসার সেনাদলের হাতে গ্রেফতার হয়ে নিহত হয়।
#৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খয়বর বিজয়ের পরে সেখানেই তাঁর পূর্বপরিচিত ইহুদী নেতা সালাম বিন মুশকিমের স্ত্রী জয়নব বিনতুল হারেছ রাসূলকে হাদিয়া দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় খাদ্য বকরীর ভূনা রান বিষমিশ্রিত করে নিয়ে আসে।মহানবী ও সাহাবিরা খাবার গ্রহণ করেন। মহানবী (সা) খাওয়া মাত্র জেনে যান যে তাতে বিষ মেশানো হয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সাহাবিদের খাবার খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বাশার ইবন বারা মহানবীর সা: সতর্কবাণীর আগেই খাবার গলধঃকরণ করে ফেলেছেন! কিছুক্ষণের মধ্যে তার দেহে তীব্র বিষক্রিয়া শুরু হয়। খাবারে মিশ্রিত বিষ ছিল খুবই তীব্র। ফলে অল্পক্ষণের মধ্যে বাশার রা: শাহাদাত বরণ করেন। মহানবী সা: খাবারে বিষ মেশানোর বিষয়টি ঠিকই অবগত হয়েছিলেন। বিষ মিশ্রিত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও তাঁর পবিত্র অন্ত্রে কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি। ফলে মহানবী সা:-এর প্রাণ রক্ষা হয় এবং ঘাতকের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
#৭ম হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে যাতুর রেক্বা যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বিশ্রাম স্থলের একটি গাছে ঝুলানো রাসূলের তরবারি হাতে নিয়ে গাওরাছ ইবনুল হারেছ নামক জনৈক বেদুঈন রাসূলকে হুমকি দিয়ে বলে, এবার তোমাকে কে রক্ষা করবে? রাসূল (সা) দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ। তখন তরবারি খানা তার হাত থেকে পড়ে যায় এবং পরে সে মুসলমান হয়ে যায়।
#হুনায়েনের যুদ্ধের প্রথম ভাগে শত্রুপক্ষের আকস্মিক হামলায় মুসলিম বাহিনী বিমূঢ় হয়ে পড়ে। শাইবান ইবন উসমান মহানবী সা:-কে হত্যার জন্য অগ্রসর হয়। আর চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে- ‘আজ মুহাম্মাদ সা:-কে হত্যা করে আমি কুরাইশদের সব খুনের বদলা নেব।’ কিন্তু শাইবা হত্যার জন্য মহানবী সা:-এর নিকটবর্তী হওয়ামাত্র ভয়ঙ্কর কিছু দেখে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সে মহানবীকে আঘাত করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। ফলে মহানবী সা: ঘাতকের নিশ্চিত আঘাত থেকে নিরাপদ থাকেন।
#৮ম হিজরীর ১৭ই রমজান মক্কা বিজয়ের পর কাবা গৃহ তাওয়াফকালে ফাযালাহ বিন ওমায়ের রাসূলকে হত্যার জন্য তাঁর নিকটবর্তী হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে তার কুমতলবের কথা ফাঁস করে দিলে সে মুসলমান হয়ে যায়।
#৯ম হিজরীর রমজান মাসে তাবূক অভিযান থেকে ফেরার পথে এক সংকীর্ণ গিরিসংকটে ১২ জন মুখোশধারী মুনাফিকের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নিরিবিলি পেয়ে তাঁকে হত্যার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
#১০ম হিজরী সনে বনু আমের বিন ছা‘ছা‘আহর প্রতিনিধি দলের নেতা ‘আমের বিন তোফায়েল ও আরবাদ বিন ক্বায়েস রাসূলুল্লাহ (সা)-কে মদীনায় মসজিদে নববীতে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তরবারি কোষ হতে বের না হওয়ায় তারা ব্যর্থ হয় এবং রাসূলের বদ দোয়ায় মদীনা থেকে ফেরার পথে তাদের প্রথমজন হঠাৎ ঘাড়ে ফোঁড়া উঠায় এবং দ্বিতীয় জন বজ্রাঘাতে নিহত হয়।
রাসূলুল্লাহ কে যাদু-
হত্যা প্রচেষ্টা ছাড়াও তাঁকে জাদু করে পাগল বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে ষড়যন্ত্রকারীরা। ইহুদীদের মিত্র বনু যুরায়েক্ব গোত্রের লাবীদ ইবনুল আছাম নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েদের মাধ্যমে এই জাদু করে। প্রথমে সে রাসূল (সা) এর বাসার কাজের ছেলের মাধ্যমে কয়েকটি চুল সহ রাসূলের ব্যবহৃত চিরুনীটি সংগ্রহ করে। অতঃপর তার কন্যাদের দ্বারা উক্ত চুলে ১১টি জাদুর ফুঁক দিয়ে ১১টি গিরা দেয় ও তার মধ্যে ১১টি সুচ ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর চুল ও সুচ সমেত চিরুনীটি একটি খেজুরের কাঁদির খোলা আবরণীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে যারওয়ান কুপের তলায় একটি বড় প্রস্তর খন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাখে। আয়েশা (রা) বলেন, উক্ত জাদুর প্রভাবে আল্লাহর রাসূল (সা) মাঝে মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়তেন। যে কাজ করেননি, তা করেছেন বলে অনুভব করতেন। একরাতে স্বপ্নে দুজন ফেরেশতা এসে নিজেদের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাঁকে জাদুর বিষয়ে সবকিছু অবহিত করেন। ফলে পরদিন আলী, যুবায়ের ও আম্মার ইবনে ইয়াসির সহ একদল সাহাবী গিয়ে উক্ত কুপ সেঁচে পাথরের নীচ থেকে খেজুরের কাঁদির খোসা সহ চিরুনীটি বের করে আনেন। ঐ সময় সূরা ফালাক্ব ও নাস নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ দুই সূরার ১১টি আয়াতের প্রতিটি পাঠ শেষে এক একটি গিরা খুলতে থাকেন। অবশেষে সব গিরা খুলে গেলে তিনি স্বস্তি লাভ করেন।লোকেরা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা) নিষেধ করে বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করেছেন (এটাই যথেষ্ট)। লোকদের মধ্যে মন্দ ছড়িয়ে পড়ুক, এটা আমি চাই না’।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন