সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাসুল (সা.) কে হত্যার যত চেষ্টা



#মো. আবু রায়হান
#এক রাতে আবু জেহেল কুরাইশ গোত্রের কয়েকজন মুশরিক বন্ধুদের নিয়ে কাবা চত্বরে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলো সে নিজেই একটি ভারী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে মুহাম্মাদ সা:-এর মাথা গুঁড়িয়ে দেবে।পরদিন আবু জেহেল কাবা শরিফের এক পাশে বিশাল ভারী একখানা পাথর নিয়ে মহানবী (সা)-এর আগমন অপেক্ষায় বসে রইল। অন্য দিনের মতো মহানবী সা: কাবা শরিফে নামাজ আদায় করার জন্য এলেন। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। মহানবী সা: যখন সেজদায় গেলেন তখন আবু জেহেল প্রকাণ্ড ভারী পাথরটিসহ অগ্রসর হলো। কিন্তু পরক্ষণেই ভীতসন্ত্রস্ত ও বিহ্বল অবস্থায় বিবর্ণ চেহারায় পিছু হটে ফিরে এলো। যে পাথরটি তার হাতে ছিল সেটি সে ছুড়ে ফেলে দিলো। এ সময় কুরাইশ বন্ধুদের কয়েকজন তার দিকে এগিয়ে গেল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, কী হে আবুল হাকাম, তোমার কী হলো? সে বলল, আমি মুহাম্মাদের সা: সেজদারত অবস্থায় মাথায় আঘাত করার জন্য কাছাকাছি গিয়ে পাথর মারতে যেই উদ্যত হয়েছি, তখনই বিরাট আকৃতির ভয়ঙ্কর একটি উট আমার সামনে এসে আমাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। আল্লাহর কসম! এমন ভয়ঙ্কর দাঁতাল এবং হিংস্র উট আমি জীবনে আর কখনো দেখিনি।
#দারুন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত-১২ই সেপ্টেম্বর ৬২২ খৃষ্টাব্দ বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে সাবেক কুরায়েশ নেতা কুছাই বিন কিলাব প্রতিষ্ঠিত বৈঠক ঘর দারুন নাদওয়াতে কুরায়েশ-এর অধিকাংশ গোত্রনেতাদের এক জরূরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে (১) বনু মাখযূম গোত্র থেকে আবু জাহল (২) বনু নওফেল বিন আবদে মানাফ থেকে জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম বিন আদী, তু‘আইমা বিন আদী ও হারেছ বিন আমের (৩) বনু আবদে শাম্স বিন আবদে মানাফ থেকে আবু সুফিয়ান বিন হারব এবং রাবী‘আহর দুই পুত্র উৎবা ও শায়বা (৪) বনু আব্দিদ্দার হ’তে নযর ইবনুল হারিছ (৫) বনু আসাদ বিন আব্দুল উযযা থেকে আবুল বুখতারী বিন হেশাম, যাম‘আহ ইবনুল আসওয়াদ ও হাকীম বিন হেযাম (৬) বনু সাহ্ম থেকে হাজ্জাজ-এর দুই পুত্র নাবীহ ও মুনাবিবহ এবং (৭) বনু জুমাহ) থেকে উমাইয়া বিন খালাফ। উল্লেখ্য যে, এই বৈঠকে রাসূলের গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবকে ডাকা হয়নি।উপরোক্ত সাত গোত্রের ১৪ জন নেতা দারুন নাদওয়াতে পূর্বাহ্নে বসে আলোচনা শুরু করে। আবু জাহল প্রস্তাব দিয়ে বলল, প্রতি গোত্র থেকে একজন করে সুঠামদেহী যুবক বাছাই করে তাদেরকে তরবারি দেওয়া হৌক। অতঃপর তারা এসে একসাথে আঘাত করে তাকে শেষ করে দিক। এতে তিনটা লাভ হবে। এক- আমরা তার হাত থেকে বেঁচে যাব। দুই- তার গোত্র আমাদের সব গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস করবে না। তিন- একজনের রক্তমূল্য বাবদ একশত উট আমরা সব গোত্র ভাগ করে দিয়ে দেব। যা কারু জন্য কষ্টকর হবে না’।আবু জাহলের এই প্রস্তাবকে সকলে সানন্দে কবুল করল এবং এর উপরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সবাই নিষ্ক্রান্ত হ’ল।
#হিজরতের রাতে : ১৪শ নববী বর্ষের ২৭শে সফর মোতাবেক ৬২২ খিষ্টাব্দের ১২ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতের পর।কাফেররা তাদের কৌশলে পাকাপোক্ত ছিল। ওদিকে আল্লাহর কৌশল ছিল অন্যরূপ। যেমন তিনি বলেন, وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ أَوْ يَقْتُلُوْكَ أَوْ يُخْرِجُوْكَ وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللهُ وَاللهُ خَيْرُ الْمَاكِرِيْنَ- ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন কাফেররা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল এজন্য যে, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে অথবা বিতাড়িত করবে। এভাবে তারা নিজেদের ষড়যন্ত্র পাকাচ্ছিল, আর আল্লাহ স্বীয় কৌশল করছিলেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ হলেন শ্রেষ্ঠ কৌশলী (আনফাল আয়াত-৩০)।পূর্বাহ্নে যখন দারুন নাদওয়াতে রাসূলকে হত্যার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখনই জিব্রীল মারফত রাসূলকে তা জানিয়ে দেওয়া হয় এবং রাতে নিজ শয্যায় ঘুমাতে নিষেধ করা হয়। এতেই হিজরতের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দুপুরেই আবুবকর (রা)-এর গৃহে তাশরীফ আনেন এবং হিজরতের সময়-সূচী ও অন্যান্য আলোচনা সম্পন্ন করেন। সেমতে আবুবকর (রা) পূর্ণ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন।রাত্রি বেলায় রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত আলীকে তাঁর বিছানায় শুতে বলেন এবং তাঁর নিকটে রক্ষিত প্রতিবেশীদের আমানত সমূহ যথাস্থানে ফেরত দেবার দায়িত্ব দেন।
#পরদিন ১৩ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার সাওর পাহাড়ের গুহামুখে উপস্থিত শত্রুদের ব্যর্থ চেষ্টা। যারা ১০০ উট পাওয়ার লোভে তাঁর সন্ধানে বের হয়েছিল।রাসূলকে না পেয়ে কোরায়েশ নেতারা চারিদিকে অনুসন্ধানী দল পাঠায় এবং ঘোষণা করে দেয় যে, যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ ও আবুবকরকে বা দু’জনের কাউকে জীবিত বা মৃত ধরে আনবে তাকে একশত উট পুরস্কার দেওয়া হবে। সন্ধানী দল এক সময় ছওর গুহার মুখে গিয়ে পৌঁছে। এমনকি আবুবকর (রাঃ) তাদের পা দেখতে পান। তাদের কেউ নীচের দিকে তাকালেই তাদের দেখতে পেত। ফলে তিনি রাসূলের জীবন নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لاَ تحزن إن الله معنا ‘দুঃখিত হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন’। বিষয়টির বর্ণনা আল্লাহ দিয়েছেন এভাবে-
إِلاَّ تَنْصُرُوْهُ فَقَدْ نَصَرَهُ اللهُ إِذْ أَخْرَجَهُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا ثَانِيَ اثْنَيْنِ إِذْ هُمَا فِي الْغَار إِذْ يَقُوْلُ لِصَاحِبِهِ لاَ تَحْزَنْ إِنَّ اللهَ مَعَنَا فَأَنزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُوْدٍ لَّمْ تَرَوْهَا وَجَعَلَ كَلِمَةَ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ السُّفْلَى وَكَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌِ-যদি তোমরা তাকে (রাসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখো আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছিলেন যখন কাফেররা তাকে বহিষ্কার করেছিল। তিনি ছিলেন দু’জনের একজন। যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় ‘সাকীনাহ’ (প্রশান্তি) নাযিল করলেন এবং তার সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখোনি। বস্ত্ততঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথা সদা সমুন্নত। আল্লাহ হ’লেন পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তওবা আয়াত-৪০)।


#৬২২ খৃষ্টাব্দের ১৮ই সেপ্টেম্বর বুধবার বনু মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাক্বা বিন মালেক বিন জুশুম কর্তৃক হিজরতের পথিমধ্যে হামলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা।বনু মুদলিজ গোত্রের নেতা সুরাকা বিন মালেক বিন জু‘শুম জনৈক ব্যক্তির কাছে রাসূল গমনের সংবাদ শুনে পুরস্কারের লোভে দ্রুতগামী ঘোড়া ও তীর-ধনুক নিয়ে রাসূলের পিছে ধাওয়া করল। কিন্তু কাছে যেতেই ঘোড়ার পা দেবে গিয়ে সে চলন্ত ঘোড়া থেকে ছিটকে পড়ল। তখন তীর ছুঁড়তে গিয়ে তার পসন্দনীয় তীরটি খুঁজে পেল না। ইতিমধ্যে মুহাম্মাদী কাফেলা অনেক দূরে চলে গেল। সে পুনরায় ঘোড়া ছুটালো। কিন্তু এবারও একই অবস্থা হ’ল। কাছে পৌঁছতেই ঘোড়ার পা এমনভাবে দেবে গেল যে, তা আর উঠাতে পারে না। আবার সে তীর বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু আগের মতই ব্যর্থ হ’ল। তার পসন্দনীয় তীরটি খুঁজে পেল না। তখনই তার মনে ভয় উপস্থিত হ’ল এবং এ বিশ্বাস দৃঢ় হ’ল যে, মুহাম্মাদকে নাগালে পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে তখন রাসূলের নিকটে নিরাপত্তা প্রার্থনা করল। এ আহবান শুনে মুহাম্মাদী কাফেলা থেমে গেল। সে কাছে গিয়ে রাসূলকে কিছু খাদ্য-সামগ্রী ও আসবাবপত্র দিতে চাইল। রাসূল (সা) কিছুই গ্রহণ করলেন না। সুরাকা বলল, আমাকে একটি ‘নিরাপত্তা নামা’ লিখে দিন। তখন রাসূলের হুকুমে আমের বিন ফুহায়রা একটি চামড়ার উপরে তা লিখে দিলেন। অতঃপর রওয়ানা হ’লেন। লাভ হ’ল এই যে, ফেরার পথে সুরাকা অন্যান্যদের ফিরিয়ে নিয়ে গেল, যারা রাসূলের পিছু নিয়েছিল। এভাবে দিনের প্রথম ভাগে যে ছিল রক্ত পিপাসু দুশমন, দিনের শেষভাগে সেই হল দেহরক্ষী বন্ধু।
#পরদিন ১৯শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সাক্ষাত যমদূত হিসাবে দেখা দেয় বিখ্যাত আরব বীর বুরাইদা আসলামী ও তার ৭০ জনের একটি পুরস্কার লোভী দল।কিন্তু শিকার হাতে পেয়ে তিনিই ফের শিকারে পরিণত হলেন। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে কিছু কথাবার্তাতেই তার মনে দারুণ রেখাপাত করে এবং সেখানেই তার ৭০ জন সাথী সহ ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর মাথার পাগড়ী খুলে বর্শার মাথায় বেঁধে তাকে ঝান্ডা বানিয়ে ঘোষণা বাণী প্রচার করতে করতে চললেন, قدجاء ملك الأمن والسلام، ليملأ الدنيا عدلاً وقسطًا- ‘শান্তি ও নিরাপত্তার বাদশাহ আগমন করেছেন। দুনিয়া এখন ইনছাফ ও ন্যায়বিচারে পূর্ণ হয়ে যাবে’।
#২য় হিজরীর ১৭ই রামাযানে সংঘটিত বদর যুদ্ধের কয়েক দিন পরে মক্কার নেতা সাফওয়ান বিন উমাইয়ার কুপরামর্শে দুষ্টমতি ওমায়ের বিন ওয়াহাব আল-জামহী সে মহানবী সা:-এর মহাজীবন নাশের জন্য অস্ত্রে শান দিলো এবং তাতে তীব্র ক্রিয়াশীল বিষ মিশাল। বিষ মিশ্রিত তরবারি নিয়ে মদীনা আগমন করে। কিন্তু রাসূল (সা) তাকে দেখেই কাছে ডেকে নিয়ে মক্কায় বসে সাফওয়ান ও তাঁর মধ্যকার গোপন পরামর্শ এবং তার হত্যা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দেন। এতে সে হতবাক হয়ে আত্মসমর্পণ করে ও মুসলমান হয়ে যায়। পরে মক্কায় ফিরে গিয়ে তার দাওয়াতে বহু লোক ইসলামে দাখিল হয়।
#৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২৫ খিষ্টাব্দের আগষ্ট মাসে পূর্বের সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী রক্তমূল্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সা) বনু নাজিরের ইহুদীদের কাছে এলে অর্থ প্রদানের ওয়াদা দিয়ে তাঁকে বসিয়ে রেখে দেওয়ালের উপর থেকে বড় পাথর ফেলে তারা তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু ওহির মাধ্যমে জানতে পেরে রাসূল (সা) সেখান থেকে দ্রুত ফিরে আসেন।
#৬ষ্ঠ হিজরীর মুহাররম মাসে ইয়ামামাহর হানীফা গোত্রের নেতা সুমামাহ বিন আছাল হানাফী ইয়ামামার নেতা মুসায়লামাহর নির্দেশে রাসূলকে হত্যা করার জন্য ছদ্মবেশে মদীনায় আসছিল। কিন্তু পথিমধ্যে সে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর সেনাদলের হাতে ধরা পড়ে যায়। মদীনায় আনার পর তিনদিন মসজিদে নববীতে তাকে বেঁধে রাখা হয়। তারপর তাকে মুক্তি দিলে সে মুসলমান হয়ে মক্কায় ওমরাহ করতে যায় এবং ইসলামের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
#৬ষ্ঠ হিজরীর রমজান মাসে বনু ফাজারাহ গোত্রের একটি শাখার নেত্রী উম্মে কুরফা রাসূলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে এবং এজন্য ৩০ জন সশস্ত্র ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। কিন্তু তারা আবুবকর অথবা যায়েদ বিন হারেসার সেনাদলের হাতে গ্রেফতার হয়ে নিহত হয়।
#৭ম হিজরীর মুহাররম মাসে খয়বর বিজয়ের পরে সেখানেই তাঁর পূর্বপরিচিত ইহুদী নেতা সালাম বিন মুশকিমের স্ত্রী জয়নব বিনতুল হারেছ রাসূলকে হাদিয়া দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় খাদ্য বকরীর ভূনা রান বিষমিশ্রিত করে নিয়ে আসে।মহানবী ও সাহাবিরা খাবার গ্রহণ করেন। মহানবী (সা) খাওয়া মাত্র জেনে যান যে তাতে বিষ মেশানো হয়েছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সাহাবিদের খাবার খেতে নিষেধ করেন। কিন্তু ইতোমধ্যে বাশার ইবন বারা মহানবীর সা: সতর্কবাণীর আগেই খাবার গলধঃকরণ করে ফেলেছেন! কিছুক্ষণের মধ্যে তার দেহে তীব্র বিষক্রিয়া শুরু হয়। খাবারে মিশ্রিত বিষ ছিল খুবই তীব্র। ফলে অল্পক্ষণের মধ্যে বাশার রা: শাহাদাত বরণ করেন। মহানবী সা: খাবারে বিষ মেশানোর বিষয়টি ঠিকই অবগত হয়েছিলেন। বিষ মিশ্রিত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও তাঁর পবিত্র অন্ত্রে কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি। ফলে মহানবী সা:-এর প্রাণ রক্ষা হয় এবং ঘাতকের সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
#৭ম হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে যাতুর রেক্বা যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে বিশ্রাম স্থলের একটি গাছে ঝুলানো রাসূলের তরবারি হাতে নিয়ে গাওরাছ ইবনুল হারেছ নামক জনৈক বেদুঈন রাসূলকে হুমকি দিয়ে বলে, এবার তোমাকে কে রক্ষা করবে? রাসূল (সা) দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, আল্লাহ। তখন তরবারি খানা তার হাত থেকে পড়ে যায় এবং পরে সে মুসলমান হয়ে যায়।
#হুনায়েনের যুদ্ধের প্রথম ভাগে শত্রুপক্ষের আকস্মিক হামলায় মুসলিম বাহিনী বিমূঢ় হয়ে পড়ে। শাইবান ইবন উসমান মহানবী সা:-কে হত্যার জন্য অগ্রসর হয়। আর চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে- ‘আজ মুহাম্মাদ সা:-কে হত্যা করে আমি কুরাইশদের সব খুনের বদলা নেব।’ কিন্তু শাইবা হত্যার জন্য মহানবী সা:-এর নিকটবর্তী হওয়ামাত্র ভয়ঙ্কর কিছু দেখে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সে মহানবীকে আঘাত করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলে। ফলে মহানবী সা: ঘাতকের নিশ্চিত আঘাত থেকে নিরাপদ থাকেন।
#৮ম হিজরীর ১৭ই রমজান মক্কা বিজয়ের পর কাবা গৃহ তাওয়াফকালে ফাযালাহ বিন ওমায়ের রাসূলকে হত্যার জন্য তাঁর নিকটবর্তী হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে তার কুমতলবের কথা ফাঁস করে দিলে সে মুসলমান হয়ে যায়।
#৯ম হিজরীর রমজান মাসে তাবূক অভিযান থেকে ফেরার পথে এক সংকীর্ণ গিরিসংকটে ১২ জন মুখোশধারী মুনাফিকের একটি দল রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নিরিবিলি পেয়ে তাঁকে হত্যার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
#১০ম হিজরী সনে বনু আমের বিন ছা‘ছা‘আহর প্রতিনিধি দলের নেতা ‘আমের বিন তোফায়েল ও আরবাদ বিন ক্বায়েস রাসূলুল্লাহ (সা)-কে মদীনায় মসজিদে নববীতে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তরবারি কোষ হতে বের না হওয়ায় তারা ব্যর্থ হয় এবং রাসূলের বদ দোয়ায় মদীনা থেকে ফেরার পথে তাদের প্রথমজন হঠাৎ ঘাড়ে ফোঁড়া উঠায় এবং দ্বিতীয় জন বজ্রাঘাতে নিহত হয়।
রাসূলুল্লাহ কে যাদু-
হত্যা প্রচেষ্টা ছাড়াও তাঁকে জাদু করে পাগল বানিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করে ষড়যন্ত্রকারীরা। ইহুদীদের মিত্র বনু যুরায়েক্ব গোত্রের লাবীদ ইবনুল আছাম নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েদের মাধ্যমে এই জাদু করে। প্রথমে সে রাসূল (সা) এর বাসার কাজের ছেলের মাধ্যমে কয়েকটি চুল সহ রাসূলের ব্যবহৃত চিরুনীটি সংগ্রহ করে। অতঃপর তার কন্যাদের দ্বারা উক্ত চুলে ১১টি জাদুর ফুঁক দিয়ে ১১টি গিরা দেয় ও তার মধ্যে ১১টি সুচ ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর চুল ও সুচ সমেত চিরুনীটি একটি খেজুরের কাঁদির খোলা আবরণীর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে যারওয়ান কুপের তলায় একটি বড় প্রস্তর খন্ডের নীচে চাপা দিয়ে রাখে। আয়েশা (রা) বলেন, উক্ত জাদুর প্রভাবে আল্লাহর রাসূল (সা) মাঝে মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়তেন। যে কাজ করেননি, তা করেছেন বলে অনুভব করতেন। একরাতে স্বপ্নে দুজন ফেরেশতা এসে নিজেদের মধ্যে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তাঁকে জাদুর বিষয়ে সবকিছু অবহিত করেন। ফলে পরদিন আলী, যুবায়ের ও আম্মার ইবনে ইয়াসির সহ একদল সাহাবী গিয়ে উক্ত কুপ সেঁচে পাথরের নীচ থেকে খেজুরের কাঁদির খোসা সহ চিরুনীটি বের করে আনেন। ঐ সময় সূরা ফালাক্ব ও নাস নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ দুই সূরার ১১টি আয়াতের প্রতিটি পাঠ শেষে এক একটি গিরা খুলতে থাকেন। অবশেষে সব গিরা খুলে গেলে তিনি স্বস্তি লাভ করেন।লোকেরা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (সা) নিষেধ করে বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে রোগমুক্ত করেছেন (এটাই যথেষ্ট)। লোকদের মধ্যে মন্দ ছড়িয়ে পড়ুক, এটা আমি চাই না’।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...