হাতি ও বিড়ালের মল থেকে কফি তৈরি
#মো.আবু রায়হান
কফি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয় পানীয়। কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’—মান্না দের জনপ্রিয় গান সবারই শোনা। তাঁর গানের মতো আড্ডা না থাকলেও কফি কিন্তু ঠিকই রয়ে গেছে। একসময় বাঙালিদের মধ্যে কফি খাওয়াটা মোটামুটি অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এত কফিশপও ছিল না। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। এখন তো আড্ডা মানেই যেন কফি! জনপ্রিয় এই পানীয় আবিষ্কারক একজন মুসলিম। তার নাম খালেদি। তিনি কোনো বিজ্ঞানী নন, সাধারণ এক মুসলিম রাখাল। আরব-ইথিওপীয় খালেদি নবম শতকে জনপ্রিয় এই পানীয়র ব্যবহার শুরু করেন। খালেদির মেষগুলো প্রায়ই ক্লান্ত হয়ে যেত। হঠাৎ একদিন তিনি দেখলেন, মেষগুলোর ক্লান্তিভাব দূর হয়ে গেছে। উদ্যম ও চঞ্চলতায় ভরে উঠেছে সেগুলো। কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি লক্ষ করলেন, মেষগুলো লাল জামের মতো মতো কী যেন খাচ্ছে। ধর্মপ্রাণ খালেদি গাছ থেকে কয়েকটি ফল নিয়ে দ্রুত হাজির হলেন স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। ফলগুলো কাঁচা খাওয়া সম্ভব হবে না ভেবে ইমাম পাশে রাখা জ্বলন্ত আগুনে ফেললেন। দেখলেন আগুনের ভেতর থেকে দারুণ সুঘ্রাণ বের হচ্ছে। পরে ইমামের শিষ্যরা ফলগুলো সিদ্ধ করে গরম পানিসহ পান করলেন। এভাবেই পৃথিবীর পানীয় হিসেবে কফির ব্যবহার শুরু হয়। এই পানীয়টি খেয়ে তারা রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা জেগে থাকতে পারছেন। প্রার্থনার জন্য ব্যাপারটি বেশ কার্যকরী মনে হলো তাদের। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো গরম পানীয়টির সুনাম।কেউ কেউ বলেন, ইয়েমেনের এক সুফি সাধকই কফি আবিষ্কার করেছিলেন। তার নাম ঘোতুল আব্দুল নুরুদ্দীন আবুল আল-হাসান আল-সাদিলি।। অনেকে বলেন, ওমর নামে ইয়েমেনেরই একজন শেখ প্রথম আবিষ্কার করেন কফির গাছকে। প্রার্থনার মাধ্যমে অসুস্থকে সুস্থ করার খ্যাতি ছিলো তার। কফি যে শুধু ঘরেই উপভোগ করা হতো, তা কিন্তু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন শহরে কফির দোকানগুলোকে বলা হতো 'কাহভেহ খানেহ।'বৃটিশ কফি অ্যাসোসিয়েশনের মতে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় কফি। প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান করা হয়।
পানির সাথে ফুটিয়ে রান্না করা কফি বীজ নামে পরিচিত এক প্রকার বীজ পুড়িয়ে গুঁড়ো মিশিয়ে কফি তৈরি করা হয়। এই বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। সবুজ কফি বিশ্বের সব থেকে বেশি বিক্রীত কৃষিপণ্যের মধ্যে একটি। কফিতে ক্যাফেইন নামক এক প্রকার উত্তেজক পদার্থ রয়েছে। ৮ আউন্স কফিতে প্রায় ১৩৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। কফির উপাদান ক্যাফেইনের জন্যে কফি মানুষের উপর উত্তেজক প্রভাব ফেলে ও উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। এখন, চায়ের পর কফি বিশ্বের অত্যধিক জনপ্রিয় পানীয়। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দু'টি দেশ - ভারত আর চীন - কফির চেয়ে চা'কেই বেশি প্রাধান্য দেয়।অ্যামেরিকা আর ইউরোপের মূল ভূখণ্ডে কফি জনপ্রিয়; তবে এশিয়া মহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে আর সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে চা'ই এখনো বেশি সমাদৃত।৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ কফি পান করে আসছে।ঐ ধরণের কফির ৫০০ গ্রামের দাম হতে পারে ৭০০ ডলার (প্রায় ৬০ হাজার টাকা) পর্যন্ত।তবে বর্তমানে এই ধরণের কফিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলছে ব্ল্যাক আইভরি কফি। এই কফি তৈরি হয় ব্ল্যাক আইভরি কফি কোম্পানিতে যা গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল নামে পরিচিত থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। বিচিত্র পদ্ধতিতে এই কফি উৎপাদন করা হয়। ব্ল্যাক আইভরি কফি বানানো হয়ে থাকে হাতির মল দিয়ে। প্রথমে হাতিকে কফির ফল খাওয়াতে হয়। ফল হজম হয়ে মল ত্যাগ করতে হাতির সময় লাগে ১৭ ঘণ্টা। এরপর শ্রমিকরা সেই মল থেকে কফির বীজগুলো সংগ্রহ করে। বীজ সংগ্রহ হয়ে যাবার পর কারখানার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে দামি এবং সুস্বাদু ব্ল্যাক আইভরি কফি। ১ কেজি কফি পাওয়ার জন্য হাতিকে প্রায় ৩৩ কেজি কফি ফল খাওয়াতে হয়।ব্লেক ডিঙ্কিন নামের একজন কানাডিয়ান আবিষ্কার করেছিলেন এই ব্ল্যাক আইভরি কফি।যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ গ্রাম পরিমাণ ব্ল্যাক আইভরি কফির মূল্য প্রায় ৮৫ ডলারের কাছাকাছি। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয় ব্রাজিলে, কিন্তু সবচেয়ে বেশি কফি পান করে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার মানুষ। আন্তর্জাতিক কফি সংস্থার মতে, ফিনল্যান্ডের অধিবাসীরা গড়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ কফি পান করে থাকে।ফিনল্যান্ডের একজন ব্যক্তির বছরে গড় কফি গ্রহণের পরিমাণ প্রায় ১২ কেজি।এছাড়া নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মানুষের গড় কফি গ্রহণের পরিমাণ বছরে ৯ কেজির ওপর। ডেনমার্ক ও সুইডেনের অধিবাসীরাও বছরে গড়ে ৮ কেজির বেশি কফি গ্রহণ করে থাকে। প্রতিদিন সারা বিশ্বের মানুষ গড়ে ২২৫ কোটি কাপ কফি পান করে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন