সিফফিনের যুদ্ধ খারেজি ফেরকা ও আলীর শাহাদত





#মো. আবু রায়হান
সিফফিনের যুদ্ধ বা জঙ্গে সিফফিন,৬৫৭ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে,হিজরি ৩৭ সনে ঘটে যাওয়া, একটি বিভীষিকাময় গৃহযুদ্ধ। উষ্ট্রের যুদ্ধের পর, এটি ছিল মুসলিম ইতিহাসের সর্ববৃহৎ গৃহযুদ্ধ। ইউফ্রেটিস তথা ফোরাত নদীর পশ্চিম তীরে সিফফিন নামক প্রান্তরে তৎকালীন চতুর্থ ও সর্বশেষ খোলাফায়ে রাশেদীন হযরত আলী(রা:) ও সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান এর মধ্যে যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। যুদ্ধে দু পক্ষেই রাসূলের (সা) সর্বাধিক অনুগত সাহাবীগণ বিদ্যমান ছিলেন।

পটভূমি
খলিফার প্রতি ভুল বুঝাবুঝি হেতু হযরত ওসমান হত্যার বিচার দাবি করে সিরিয়ার গভর্ণর মুয়াবিয়া বড় আন্দোলন গড়ে তোলেন। যাকে অন্যায় ভাবে মুনাফেক সাবাঈ দল হত্যা করেছিল।নিহত ওসমান (রা) এর রক্তমাখা জামা আর স্ত্রী নায়লার কাটা আঙুলগুলো নিয়ে নুমান বিন বশির মদিনা ত্যাগ করেন। তিনি উমার (রা) কর্তৃক নিয়োগ দেয়া সিরিয়ার গভর্নর হযরত মুয়াবিয়া (রা) এর নিকট উপস্থিত করেন ওগুলো। মুয়াবিয়া তখন সেগুলো সবাইকে দেখাতে মিম্বরে স্থাপন করলেন। সে জামা আর আঙুলগুলো দেখে কান্নাকাটি আর প্রতিশোধের আগুন জেগে ওঠে। উল্লেখ্য উসমান (রা) আর মুয়াবিয়া (রা) ছিলেন আত্মীয়।
এ দিকে আলী (রা) রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কৌশল হেতু বিচার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব করছিলেন। কিন্তু আন্দোলন এত তীব্রাকার ধারণ করছিল যে, আলী (রা) তা সমাধানের জন্য জামালের যুদ্ধ শেষে কুফায় ফিরে এসে ৩৬ হিজরি ১২ রজব সোমবার তিনি জারির ইবনে আব্দিল্লাহ আল-বাজালিকে একটা পত্রসহ মুয়াবিয়ার কাছে সিরিয়া প্রেরণ করেছিলেন।পত্রে তাকে জানান, কিছু লোক আমার সঙ্গে পরামর্শ না করেই তৃতীয় খলিফাকে হত্যা করেছে। এরপর জনগণ আমার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছে। আমার এ চিঠি পাওয়া মাত্র আমার নামে জনগণের বায়াত গ্রহণ করবে এবং তোমার দরবারের গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদেরকে আমার কাছে পাঠাবে। কিন্তু মুয়াবিয়া এ চিঠির প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে উষ্ট্রের বাহিনীর মতো ওসমানের হত্যাকাণ্ডের বিচারকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করিয়ে বলেন, যতক্ষণ ওসমান হত্যার বিচার না হচ্ছে ততক্ষণ শান্ত হবো না। একইসঙ্গে মুয়াবিয়া আলী (রা)কে পরাজিত করে নিজে খলিফা হওয়ার জন্য তার বাহিনী প্রস্তুত করতে থাকেন। মুয়াবিয়া নিজের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নিজেকে খলিফা ঘোষণা করে নিজের নামে জনগণের বায়াত গ্রহণ করেন। এ অবস্থায় আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে কয়েক দফা পত্র বিনিময় হয়। আমিরুল মুমিনিন বেশ কয়েকবার সিরিয়ায় প্রতিনিধি পাঠান।মুসলমানদেরকে একটি ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে হযরত আলীর এ প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং সিফফিনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়।


যুদ্ধের প্রস্তুতি
মুসলমানদেরকে একটি ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ থেকে রক্ষা করতে হযরত আলীর প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় এবং সিফফিনের যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। মুয়াবিয়া (রা:) এর আচরণে ব্যথিত হয়ে,আলী (রা) মালিক ইবনে হাবিব আল- ইয়ারবুইকে নুখায়লাহ উপত্যকায় সৈন্য সমাবেশ করার আদেশ দিলেন, যাতে মুয়াবিয়া (রা) কে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যায়। ফলে কুফার উপকণ্ঠে প্রায় ৮০,০০০ মুসলিম জড়ো হয়। প্রথমে আলী (রা) জিয়াদ ইবনে নদর আল-হারিছির নেতৃত্বে ৮,০০০ এবং সুরাহ ইবনে আল- হারিছির নেতৃত্বে ৪,০০০ সৈন্যের শক্তিশালী বাহিনী সিরিয়া আভিমুখে প্রেরণ করেন। এরপর অবশিষ্ট সৈন্যবাহিনীর নেতৃত্ব নিজে গ্রহণ করে ৫ শাওয়াল বুধবার আলী (রা) সিরিয়া অভিমুখে যাত্রা করেন।এদিকে মুয়াবিয়া ১২০,০০০ সংখ্যক সৈন্য সহ পূর্বেই সিফফিন পৌছে ছাউনি স্থাপন করেন এবং ফোরাত কূল অবরোধ করেন। হযরত আলী সেখানে পৌঁছে মুয়াবিয়াকে অনুরোধ করে পাঠালেন যেন তিনি ফোরাত কূল থেকে সৈন্য সরিয়ে পানি নেয়ার ব্যবস্থা অবরোধমুক্ত করেন। কিন্তু মুয়াবিয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, হযরত আলী এর সৈন্যগন সাহসিকতার সাথে আক্রমণ করে ফরাত কূল দখল করে। তারপর হযরত আলী মুয়াবিয়ার কাছে বশীর ইবনে আমর আল-আনসারি, সাইদ ইবনে কায়েস আল-হামদানি ও শাবাছ ইবনে আত-তামিমীকে প্রেরণ করেন এ জন্য যে, তারা যেন যুদ্ধের ভয়াবহতা তাকে বুঝিয়ে বলে এবং তিনি যেন বায়াত গ্রহণ করে একটি মীমাংসায় আসতে রাজি হন। এ প্রস্তাব মুয়াবিয়া সরাসরি নাকচ করেন এবং ওসমান (রা:)র রক্তের প্রতি তিনি উদাসীন থাকতে পারেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।কাজেই তরবারিই একমাত্র মীমাংসা ও এর কোন বিকল্প নেই। ফলে ৩৬ হিজরির জিলহজ মাসে উভয় পক্ষের যোদ্ধারা একে অপরের মোকাবেলা করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে পড়ে।
যুদ্ধের বর্ণনা
সিফফিনের ময়দানে দু’পক্ষ ঘাঁটি স্থাপন করার পর হযরত আলী (রা.) অনুগামী সৈন্যদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আগে যুদ্ধ শুরু করবেন না। আক্রান্ত হলেই কেবল যুদ্ধ করবেন এবং তাতে আপনাদের কোনো দোষ থাকবে না। পলায়নরত শত্রুদের ওপর হামলা করবেন না। যার হাতে অস্ত্র নেই তাকে আঘাত করবেন না এবং আহত ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না। এক পর্যায়ে হিজরি ৩৬ সালের জিলহজ্ব মাসে সিফফিনের যুদ্ধ শুরু হয়। ওই মাস শেষ হয়ে মহররম শুরু হলে নিষিদ্ধ মাস হওয়ার কারণে একমাসের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রাখে দু’পক্ষ। এই একমাসে যুদ্ধের আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি। সফর মাস শুরু হলে আবার যুদ্ধ শুরু হয়। আলী (রা.) ও তাঁর অনুগত সৈন্যদের অকুতোভয় যুদ্ধে মুয়াবিয়ার বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সিরিয় বাহিনীর পরাজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।এ সময় মুয়াবিয়ার চতুর সেনা কমান্ডার আমর বিন আস সম্ভাব্য পরাজয় প্রতিরোধ করার জন্য বর্ষার মাথায় কুরআন বিদ্ধ করে একদল সেনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে নামিয়ে দেয়। এসব সেনা কুরআনের দোহাই দিয়ে আলী (রা.)-এর অনুগত সৈন্যদের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দেয়।আমর বিন আসের এ কূটকৌশল কাজে লাগে। আলী (রা.)-এর অনুগামী একদল সৈন্য তাঁর কাছে এসে ঘোষণা করে, তারা আর যুদ্ধ করবে না। তারা শুধু কুরআনের নির্দেশ অনুসরণ করবে। এ সময় আমীরুল মুমিনিন তাদের এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, মুয়াবিয়ার বাহিনীর সেনাদের বর্শার মাথায় যা দেখা যাচ্ছে তা ছেঁড়া কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়। কুরআনের মর্মার্থ আমি ভালো জানি। কিন্তু আলী (রা.)-এর নির্বোধ ও অদূরদর্শী সৈন্যরা তা উপলব্ধি করার চেষ্টা না করে সমস্বরে বলতে থাকে, যুদ্ধ বন্ধ না করলে তারা আমীরুল মুমিনিনকে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না।ঠিক এ সময় আলী (রা.)-এর সেনাপতি মালিক আশতার মুয়াবিয়ার তাবুর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমিরুল মুমিনিন তাকে ফিরে আসার নির্দেশ দিতে বাধ্য হন।
যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি
উভয় পক্ষ সিফফিনের যুদ্ধে তিন মাস বিশ দিন অবস্থান করছিলেন। এতে পরস্পর ৯০টি সংঘর্ষ হয়েছিল। এ আত্তঘাতী যুদ্ধে আলী (রা) এর ২৫ হাজার এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) এর ৪৫ হাজার সৈন্য সহ মোট ৭০হাজার মুসলমান সিফফিনের যুদ্ধে শাহাদাত বরন করেন।
মীমাংসা
আলী (রা.) যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা দেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও খলিফা নির্ধারণের জন্য দুই পক্ষ থেকে একজন করে বিচারক নিয়োগের সিদ্ধান্তে সম্মতি জানান। আলী (রা.) চেয়েছিলেন মালিক আশতার বা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাসের যেকোনো একজনকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেবেন। কিন্তু নিজ বাহিনীর সেই বিদ্রোহীরা প্রচণ্ড আপত্তি তুলে আবু মুসা আশয়ারীকে আলী (রা.)-এর পক্ষ থেকে বিচারক নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করে যাতে আমিরুল মুমিনিনের সম্মতি ছিল না। অন্যদিকে মুয়াবিয়ার পক্ষ থেকে নিয়োগ দেয়া হয় কূটচালে অভ্যস্ত আমর বিন আসকে। দু’পক্ষের এই দুই বিচারক নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষ করতে কয়েক মাস সময় নেন। এরপর একদিন উৎসুক জনতার সামনে বেরিয়ে আসেন তারা।"আজরুহ" অথবা দওমাতুল জান্দালে ৪০০ জন সাথী সহকারে মিলিত হলেন। ইতিহাসে এ মীমাংসা সভাকেই ঐতিহাসিক “দুমাতুল জন্দল মীমাংসা” বলা হয়ে থাকে।অনেক কথা কাটাকাটির পর উভয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন যে, হযরত আলী (রা) এবং মুয়াবিয়া উভয়কে তাদের নিজস্ব পদ থেকে অপসারিত করা হবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে নতুন করে খলিফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ঐক্যমত্যের পর উভয়ে সিদ্ধান্ত শুনানোর জন্য জনসম্মুক্ষে আগমন করেন। প্রথমে আবু মুসা আল-আশয়ারী কে সিদ্ধান্ত শুনানোর জন্য আহবান করা হয়। তিনি সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর বললেন অনেক চিন্তা ভাবনা করে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, আমরা আলী (রা) এবং মুয়াবিয়া উভয়কে তাদের নিজস্ব পদ থেকে অপসারিত করলাম এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিমিত্তে নতুন করে খলিফা নির্বাচনের ঘোষনা দেয়া হল। তার পর আমর বিন আস দাড়িয়ে বললেন আবু মুসা আল-আশয়ারী নিজের লোককে অপসারিত করেছেন তা আমি পূর্ন সমর্থন করছি।আর যেহেতু মুয়াবিয়া হযরত ওসমান এর কেসাসের হক আদায় এসেছেন সেহেতু খলিফার শুন্য পদে মুয়াবিয়া কে অধিক যোগ্য মনে করে তাকে উক্ত পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার ঘোষনা করছি। এতে আবু মুসা আল-আশয়ারী উত্তেজিত ও রাগান্নিত হয়ে গাদ্দার,মিথ্যাবাদী বলে চিৎকার করে উঠেন। তাতে উভয় পক্ষের লোক উত্তেজিত হয়ে ব্যাপক হই চই রব উঠে ফলে সিদ্ধান্তটি চাপা পড়ে যায়। ফল শ্রুতিতে কোন সমাধান ছাড়াই সিফফিনের যুদ্ধ পরিসমাপ্তি ঘটে। যুদ্ধটির ফলাফলে আলী (রা)এর রাজনৈতিক পরাজয় হয় বিধায় হযরত মুয়াবিয়া এর হাতে আমর বিন আস সহ সিরিয়াবাসী বায়াত গ্রহন করে।
খারেজিদের উৎপত্তি
মুয়াবিয়া খলিফা ,একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত বিদ্রোহীদের একাংশ স্লোগান দেয়- 'লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ' অর্থাৎ সালিসের একমাত্র মালিক আল্লাহ। ইতিহাসে এদেরকে বলে ‘খারেজ’; যার শাব্দিক অর্থ বের হয়ে আসা। খারেজ শব্দ খেকেই খারেজি শব্দের উৎপত্তি। এরা "হারুরা" নামক স্থানে এসে আবদুল্লাহ আল কাওয়া, ঈতাব বিন আল 'আওয়ার', আবদুল্লাহ বিন ওহাব আর রাশিবী প্রমুখের নেতৃত্বে ১২০০০ সৈন্যের একটি শক্তিশালী দল গঠন করে। তারা খেলাফতের ফয়সালা করার লক্ষ্যে বিচারক নিয়োগ দেয়ার জন্য তওবা করে এবং আলী (রা.)-এর কাছে এসে তাঁকেও তওবা করার আহ্বান জানায়। তারা বলে, তওবা না করলে আলী (রা.) কাফের হয়ে যাবেন। এ সময় আমিরুল মুমিনিন বলেন, আমি তো কোনো অপরাধ করিনি যে তওবা করব। তোমরাই বরং একটি সম্ভাব্য বিজয় থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছ।এরপর খারেজিরা আলী (রা.)-এর খেলাফতের বিরুদ্ধে নয়া তৎপরতা শুরু করে। তারা কুফার মসজিদে প্রবেশ করে কুরআনের কিছু আয়াত উদ্ধৃত করে হযরত আলীকে কাফের ঘোষণা করে। তারা ব্যতীত সকলেই ভুল পথে আছে, কেবল তারাই মুসলিম, আর বাকি সবাই কাফির, তারা তাই মুসলিম নিধন করত কুরআনের নাম দিয়েই।
হযরত আলীর শাহাদত
আমিরুল মুমিনিন আলী (রা.) একদিন খারেজিদের একত্রিত করে তাদের উদ্দেশে উপদেশমূলক ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণ শুনে ১২ হাজার খারেজির মধ্যে আট হাজার সঠিক পথে ফিরে আসে এবং বাকি চার হাজার তাদের বিদ্রোহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। হযরত আলী (রা) এই চার হাজার খারেজিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে তাদের সঙ্গে ইরাকের নাহরাওয়ান এলাকায় আলী (রা.)-এর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাকি সব খারেজি নিহত হয়। মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমিরুল মুমিনিন কুফায় ফিরে যান। খারেজিরা মুসলিম মিল্লাতের জাতীয় শত্রু হিসেবে হযরত আলী, মুয়াবিয়া ও আমর বিন আস কে চিহ্নিত করে তাঁদের একই দিন ও অভিন্ন সময়ে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আসন্ন মাহে রমজানের ১৫ তারিখ ফজরের নামাজের সময় আক্রমণ পরিচালনার সময় নির্ধারিত হয়। আততায়ীরা নির্দিষ্ট সময়ে বয়োবৃদ্ধ তিন সাহাবির ওপর হামলা করে। সৌভাগ্যক্রমে আমর বিন আস অসুস্থতার কারণে সেদিন মসজিদেই যাননি। আর মুয়াবিয়া আততায়ীর আক্রমণে সামান্য আহত হলেও বেঁচে যান। এদের মধ্যে দু’জন তাদের কাজে ব্যর্থ হলেও ৪০ হিজরির ১৯ রমজান ইবনে মুলজাম নামের তৃতীয় খারেজি হযরত আলী (রা.)কে বিষমাখা তরবারীর আঘাতে আহত করতে সক্ষম হয়। এর তিনদিন পর হযরত আলী (রা.) ৬৬১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন। । তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। হযরত হাসান ইবনে আলী (রা.) তাঁর জানাজায় ইমামতি করেন এবং কুফা জামে মসজিদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল