সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইথিওপিয়ায় ইসলাম ও মুসলমান

 



#মো. আবু রায়হান 
ইথিওপিয়া উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র।সরকারি নাম ইথিওপীয় সরকারী গণপ্রজাতন্ত্র। ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বে ইরিত্রিয়া এবং জিবুতি, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে সোমালিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিমে কেনিয়া এবং পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে সুদান। দেশটি নয়টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। ইথিওপিয়া আফ্রিকার প্রাচীনতম স্বাধীন রাষ্ট্র।প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে প্রধান জাতিগত গোষ্ঠী বাস করে। বিংশ শতাব্দী পর্যন্তও দেশটি আবিসিনিয়া নামে পরিচিত ছিল। আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় উপনিবেশ থেকে তারাই প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটিতে মাত্র পাঁচ বছর ইতালির উপনিবেশ ছিল। ভূমিবেষ্টিত এই দেশ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থান নাইজেরিয়ার দখলে।

রাজধানীঃ আদদিস আবাবা রাজধানী ও সর্ববৃহৎ শহর ।
আয়তন: ১১ লাখ চার হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার।
জনসংখ্যাঃ ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮১৯।
জনগোষ্ঠী ওরোমো ৩৪.৫% , এরপর দ্বিতীয় বৃহৎ জনগোষ্ঠী হলো আমারা ২৬.৯%। এছাড়া রয়েছে সোমালি ৬.২% , টিগারাওয়ে ৬.১% , সিডামা ৪, গুরেজ ২.৫% , ওয়েলাইটা ২.৩% , হাদিয়া ১.৭% , আফার ১.৭%, গেডো (১.৩%)।
ধর্মঃ থিওপিয়ন অর্থোডক্স ৪৩.৫% , মুসলমান ৩৩.৯%, প্রোটেস্ট্যান্ট ১৮.৬%, প্রথাগত ২.৬% এবং ক্যাথোলিক ০.৭%।
ভাষাঃ দেশটির সরকারি ভাষা ভাষা আমহারি।এছাড়া রয়েছে সোমালিগ্না, টিগ্রিগ্না, সিডামিগ্না, গুরাগিগ্না, আফারিগ্না, হাডিয়িগ্না। বাইরের ভাষা হিসেবে প্রচলিত আছে আরবি এবং ইংরেজি। দেশটিতে ৭০টিরও বেশি জাতিগত ও ভাষাগত গোষ্ঠীর মানুষের বাস।
মুদ্রা : বির।
জাতিসংঘে যোগদান: ১৩ নভেম্বর, ১৯৪৫ সালে।

ইতিহাস
ইথিওপিয়াকে মানবগোষ্ঠীর সূতিকাগার বলা যেতে পারে।কেননা আধুনিক মানুষের প্রথম বাস ইথিওপিয়ায়ই ছিল।ইথিওপিয়া অঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষ বৎসর আগে আদি মানুষ (Homo sapiens (হোমো স্যাপিয়েন্স)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল। ক্রমে ক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার থেকে মানুষ অভ্যন্তর ভাগে এবং অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার বৎসর আগে আদিম মানুষ ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। এই দলটি আরব উপদ্বীপ ও পারস্য অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছিল ১ লক্ষ ২০ হাজার থাকে ১ লক্ষ বৎসরের মধ্যে । এরপর এদের কিছু মানুষ মঙ্গোলিয়া ঘুরে চীন হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশ করেছিল। অপর দলটি পারস্য হয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। ভারতবর্ষে এরা প্রবেশ করে প্রায় প্রায় ৭৫-৬০ হাজার বৎসর আগে। ভারতবর্ষে প্রবেশ করা আদি মানবগোষ্ঠীকে নেগ্রিটো নামে অভিহিত করা হয়।প্রথম শতাব্দীতে এখানে আকসুম নামের একটি শক্তিশালী খ্রিস্টান সাম্রাজ্যের পত্তন হয়।
আধুনিক ইতিহাস
১৬শ শতকের পরে ইথিওপিয়া অনেকগুলি ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। ১৮৮০-র দশকে রাজা ২য় মেনেলিক-এর অধীনে এগুলি পুনরায় একত্রিত হয়। ১৯৫০-এর দশক থেকে ইরিত্রিয়া ইথিওপিয়ার একটি অংশ ছিল কিন্তু ১৯৯৩ সালে এটি বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে।
মুসলিম ম্মৃতিবিজড়িত ইথিওপিয়া
ইসলামের ইতিহাসে ইথিওপিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মক্কায় কুরাইশ প্রভাবশালীদের অত্যাচারে রাসূল (সা.)-এর নওমুসলিম সাহাবীরা যখন জর্জরিত, রাসূল(সা.) তখন তাদেরকে আফ্রিকার তৎকালীন হাবশা রাজ্যে হিযরতের পরামর্শ দান করেন যাতে করে তারা এই অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পারেন। ইতিহাসে আকসুম রাজ্য নামে পরিচিত এই রাজ্যটি আজকের ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া নিয়ে গঠিত ছিল। নাজ্জাসী উপাধির একজন ন্যায়বিচারক শাসক তখন এই রাজ্যটি পরিচালনা করতেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল প্রথম হিযরত। প্রথম দফায় ৬১৫ সালে ১১ জন পুরুষ ও ৪ নারী হিজরত করেন। তাদের দলনেতা ছিলেন উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ)। তাঁর সাথে ছিলেন নাবী নন্দিনী রুকাইয়্যা (রা)। তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মক্কা থেকে কুরাইশরা প্রতিনিধি পাঠালে রাজা তাদের ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। মুহাম্মদ (সা) এর মদিনায় হিজরত করার পরও মুসলিমরা ইথিওপিয়ায় থেকে যান। হিজরি ৭ম সালে তারা মদিনায় ফিরে আসেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এর প্রিয় সাহাবি ও ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বেলাল ইবনে রাবাহ (রা.) ছিলেন ইথিওপিয়ার অধিবাসী। এখানকার অধিবাসী ছিলেন রাসুল (সা.)-কে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য অর্জনকারী ও প্রিয় নবীর(সা.)-এর পারিবারিক সেবিকা উম্মে আয়মানও(রা.)। ইথিওপিয়ায় অবস্থিত বর্ণিল ও প্রশান্তিময় এক শহর হারার। ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এই শহরটি খ্রিস্টান অধ্যুষিত ইথিওপিয়ার বুকে মুসলমানদের এক আপন বসতি। ‘প্রশান্তির শহর’ হিসেবে খ্যাত এই শহরটির সাথে আফ্রিকায় ইসলাম আগমনের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। রাসূল (সা.)-এর হিজরত করা সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই বর্তমান ইথিওপিয়ার এই হারার শহরেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাদের প্রচারণার মাধ্যমে এই শহরের সকল অধিবাসী ইসলাম গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে আফ্রিকার বুকে ইসলামের প্রথম আবাসভূমি হিসেবে এই শহরটি ইতিহাসের বুকে জায়গা করে নিয়েছে। ফলে ইথিওপিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই শহরটিকে অনেকেই মক্কা, মদীনা ও জেরুজালেমের পর ইসলামের চতুর্থ পবিত্রতম শহর হিসেবে উল্লেখ করে।মাত্র এক বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই শহরের মাঝে ৮২টি মসজিদ ও ১০২টি মাজার আছে। ২০০৬ সালে এই শহরটিকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের নির্দশনের তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। আফ্রিকান ও ইসলামি সংস্কৃতির সমন্বয় শহরটিকে নিজস্ব এক অনন্যতা দান করেছে। বিশেষ করে, ইথিওপিয়ার অন্যান্য শহরের সাথে এই শহরের সাংস্কৃতিক ভিন্নতা শহরটির বিভিন্ন স্থাপনার মাধ্যমে লক্ষ্য করা যায়। ২০০৩ সালে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শান্তিপর্ণ সহাবস্থানের কারণে শহরটি ইউনেস্কো পিস প্রাইজ অর্জন করে।

আবি আহমেদ আলী

ইরিত্রিয়ার সঙ্গে দুই দশকের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী আবি আহমেদ আলী। ১৯৭৬ সালের ১৫ অগাস্ট ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিক কাফা প্রদেশের (বর্তমান নাম ওরোমিয়া রিজন) বেশাশা শহরে জন্মগ্রহণ করেন আবি। তার বাবা আহমেদ আলি ছিলেন মুসলমান ওরোমো সম্প্রদায়ের লোক। আর তার চার স্ত্রীর মধ্যে আবির মা তেজেটা উল্ডে ছিলেন খ্রিস্টান আমহারা সম্প্রদায়ের।মাধ্যমিক শেষ করে ইথিওপিয়া ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সে যোগ দেন আবি। আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১৭ সালে তিনি ফিলসোফিতে পিএইচডি করেন।২০১৫ সালে ওডিপির এজন্য নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন আবি। ওই বছরই তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।পরে ওরোমি অঞ্চল, বিশেষ করে আদ্দিস আবাবার চারপাশে অবৈধভাবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকায় চলে আসেন আবি। আন্দোলনের মুখে জমি অধিগ্রহণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।টানা তিন বছরের আন্দোলন এবং বিক্ষোভের মুখে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ইথিওপিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিলেমারিয়াম দেসালেং পদত্যাগে বাধ্য হন। সেই সঙ্গে তিনি দেশটির ক্ষমতাসীন জোট ইপিআরডিএফ এর প্রধানের পদও হারান।ইথিওপিয়ার অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন জোটের প্রধানই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দেশটির চার দল ওডিপি, এডিপি, এসইপিডিএম এবং টিপিএলএফ মিলেই এ জোট।
হিলেমারিয়ামের পদত্যাগের পর প্রথমবারের মত ইপিআরপিএফ জোটের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট হয়। ওই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ওডিপি প্রধান লেমা মেগেরসা এবং আবি আহমেদকে এগিয়ে রেখেছিলেন।
লেমা মেগেরসা দলীয় প্রধান হলেও পার্লামেন্ট সদস্য ছিলেন না। আর ইথিওপিয়ার সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হতে হলে অবশ্যই পার্লামেন্ট সদস্য হতে হবে। যে কারণে লেমা মেগেরসার বদলে আবি আহমেদকেই ওডিপি প্রধান ঘোষণা করা হয়।আবি আহমেদ ২০১৮ সালের ২ এপ্রিল দেশটির চতুর্থ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ইথিওপিয়ায় ব্যাপক উদারীকরণ সংস্কার করেন আবি আহমেদ। দেশটির কঠোর নিয়ন্ত্রীত সমাজ ব্যবস্থায় তিনি বড় ধরনের একটা নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছেন।কারাগার থেকে কয়েক হাজার বিরোধী দলীয় নেতাকে তিনি মুক্ত করে দেন।তিনি বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের কেবল কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাদের ওপর চালানো রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন ও নৃশংসতার জন্য ক্ষমাও চান।
২০১০ সালে ওরোমো ডেমক্রেটিক পার্টি (ওডিপি) থেকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন আবি। ওই সময়ে তার জন্মস্থান ‘জিম্মা জোনে’ মুসলমান ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে হরহামেশাই দাঙ্গা বেঁধে থাকত। সেই দাঙ্গায় বহু মানুষ নিহত হয়।আলী ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যকে দেখে আসছেন খুব কাছ থেকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফ্রিকার হর্ন নামে খ্যাত এই দেশে বাস করে তিনি বুঝতে শিখেছেন যে, যুদ্ধ শুধু ধ্বংসাত্মক এক লীলাখেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। শান্তি আর সৃষ্টির উল্লাসে যে কী অপরিসীম আনন্দ তা হয়তো তিনি বাল্যকাল থেকেই খুঁজে চলেছিলেন। পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে দাঙ্গা ঠেকাতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন আবি। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। এজন্য তিনি ‘রিলিজিয়াস ফোরাম ফর পিস’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।ক্ষমতা নেওয়ার পর রাজনৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে ইথিওপিয়ার জনগণের মধ্যে ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া সীমান্তে যুদ্ধের অবসানে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি দেন আবি।
আফ্রিকার দরিদ্র এ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১৯৯৮ সালের মে মাস থেকে ২০০০ সালের জুন মাস পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। তার রেশ চলে পরের দেড় যুগ ধরে।ওই যুদ্ধে ৭০ হাজারের বেশি লোক নিহত হন।আবি আহমেদের উদ্যোগে ২০১৮ সালে দুই দেশ একটি শান্তি চুক্তিতে উপনীত হয়, যা তাকে নোবেল পুরস্কার এনে দিল।গরিব কৃষকের সন্তান, গোয়েন্দা কর্মকর্তা থেকে আফ্রিকার দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির সংস্কারের নেপথ্য নায়কে পরিণত হয়েছেন।বিদ্যুৎ ও পানির স্বল্পতা ছিল তাদের বাড়িতে। এমনকি তাকে ফ্লোরে ঘুমিয়ে বড় হতে হয়েছে।সরকারে ঢোকার আগে তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদবি পেয়েছিলেন। ইথিওপিয়ার সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি এজেন্সির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ছিলেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...