ভারতের লক্ষাদ্বীপে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বাস
#মো. আবু রায়হান
আরব সাগরে অবস্থিত লক্ষাদ্বীপ, ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অংশ এবং ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে।যা ৩৬টি দ্বীপকে নিয়ে গঠিত আরব সাগরের এই দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের একটি মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা ভারতের মূল ভূ-খণ্ড থেকে ২০০-৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে মালাবার উপকূলে অবস্থিত। লক্ষাদ্বীপ অর্থ লক্ষ দ্বীপ। যদিও এই অঞ্চলটি লক্ষাদ্বীপ নামে পরিচিত, আসলে এটি কেবল ভৌগোলিকভাবে দ্বীপপুঞ্জের কেন্দ্রীয় দ্বীপসমূহর নাম।ভৌগোলিক মতবাদ অনুসারে, অসংখ্য মৃত প্রবাল কীটের দেহাবশেষ সঞ্চিত হয়ে সমুদ্র মধ্যে এই দ্বীপসমূহের সৃষ্টি হয় তাই এই দ্বীপপুঞ্জকে প্রবাল দ্বীপও বলা হয়ে থাকে।লক্ষাদ্বীপের প্রধান দ্বীপসমূহ হল কাবারট্টী, আগাটি, মিনিকয় এবং আমিনী। দ্বীপপুঞ্জটির দশটা দ্বীপে মানুষের বসতি আছে ও ১৭টি জনশুন্য দ্বীপ আছে ।
দ্বীপপুঞ্জটিতে কোনো প্রাচীন আদিবাসী বাসিন্দা নেই। ইতিহাসবিদরা এই দ্বীপপুঞ্জটিতে বসতি স্থাপনের ইতিহাস সম্পর্কে ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে অঞ্চলটিতে মানব বসতির পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। দ্বীপপুঞ্জটি প্রাচীন কাল থেকে নাবিকদের মধ্যে পরিচিত ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের বৌদ্ধ জাতকের কাহিনীতে এই দ্বীপপুঞ্জটির কথা উল্লেখ আছে। সম্ভবত সপ্তম শতকে এই অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে এবং এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। মধ্যযুগে এই অঞ্চলটি চোল সাম্রাজ্য এবং কান্নুরের রাজ্য দ্বারা শাসিত ছিল। ক্যাথলিক পর্তুগীজদের এখানে আগমন হয় ১৪৯৮ সালে, পরে ১৫৪৫ সালে দ্বীপটি থেকে তাঁদেরকে বহিষ্কৃত করা হয়। এর পর অঞ্চলটি প্রথমে আরাক্কালের মুসলিম হাউজ এবং তার পর টিপু সুলতান দ্বারা শাসিত হয়। ১৭৯৯ সালে টিপু সুলতানের মৃত্যুর পর এই অঞ্চলটির অধিকাংশই ব্রিটিশদের হাতে যায়। ব্রিটিশদের প্রস্থানের পর ১৯৫৬ সালে দ্বীপপুঞ্জটি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পায়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তিনটি খণ্ডে বিভক্ত, সেগুলি হলো লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ, মিনিকয় ও আমিনদিভি৷ লক্ষাদ্বীপের সমগ্র অঞ্চলটিকে নিয়ে একটি জেলা গঠন করা হয়েছে। জেলাটি ভারতের সংবিধানর ২৩৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত প্রশাসক দ্বারা পরিচালিত হয়।
জাতিগতভাবে দ্বীপপুঞ্জটির জনগণের মিল ভারতের নিকটতম রাজ্য কেরালার মালয়ালী জনগণের সঙ্গে আছে। এর বেশিরভাগ জনগণই মালয়ালম ভাষা এবং জেসেরী নামক একটি মালয়ালম উপভাষা ব্যবহার করে। কেবল মিনিকয় দ্বীপে সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাটি হল মাহি বা ধিবেহী ভাষা। এই সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপপুঞ্জের লোকদের প্রধান পেশা হল মাছ ধরা এবং নারকেলের চাষ করা। টুনা মাছ হল এই দ্বীপসমূহ থেকে মূল ভারত ভূখন্ডে রপ্তানি করা প্রধান সামগ্রী ।
৩২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের লক্ষাদ্বীপ হল ভারতের সবচেয়ে ছোট কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চল। লক্ষাদ্বীপের রাজধানী হল কাভারাত্তি । সমগ্র অঞ্চলটি একটি জেলা ও ১০টা মহকুমায় বিভক্ত।বর্তমানে লক্ষাদ্বীপের দশটি দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। দশটি দ্বীপ আন্দ্রোত, আমিনি, আগত্তি, বিত্রা, চেট্টলাট, কাডমট, কালপেনি, কাভারত্তি, কিলত্তন এবং মিনিকয়।২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলটির জনসংখ্যা ৬৪,৪৭৩ জন। তবে এখন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজারে। অঞ্চলটির সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারি। ৯৬.৫৮% ইসলাম ধর্ম পালন করে। এছাড়া হিন্দু ২.৭৭%, খ্রিষ্টান ০.৪৯%, বৌদ্ধ ০.০২%, জৈন ০.০২%, শিখ ০.০১% ধর্ম ও পালন করে। একমাত্র এমপিও মুসলিম। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে লক্ষাদ্বীপ থেকে জয় পেয়েছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) মোহাম্মদ ফয়জল। এখানে বিজেপিসহ প্রায় সব দলই তাদের প্রার্থী দেয় মুসলিম সম্প্রদায় থেকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সপ্তম শতকে এই অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে এবং এখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। Muslim missionary activity in the 7th century and continued contact with Arab traders eventually led to the conversion of all the islanders to Islam.(Britannica) লক্ষাদ্বীপে ইসলামের ইতিহাস সপ্তম শতাব্দীর পুরনো যখন দরবেশ উবায়দুল্লাহ ইসলাম ধর্মের প্রচারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতেন। তার জাহাজটি ভেঙ্গে পড়ায় তিনি নিজেকে এই দ্বীপটিতে খুঁজে পান এবং এভাবেই তিনি এখানে পৌঁছান। এখানেই তিনি বিবাহ করেন এবং সাফল্যের সঙ্গে এখানকার মানুষদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করেন। আন্দ্রোতে তার কবরটি এখনও রয়েছে এবং এখন সেটি একটি পবিত্র স্থান। In 661 AD, a pious person by the name Sheikh Ubaidullah reached there upon a shipwreck. He was almost contemporary to the prophet Muhammad (saww) since he died in 632 AD. Sheikh Ubaidullah preached Islam to the people. Gradually, most of the people entered into Islam. Islam flourished to all the islands in spite of hindu rulers.পর্তুগীজদের আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষাদ্বীপে (পূর্বে লাক্ষাদ্বীপ নামে পরিচিত) লুঠতরাজ শুরু হয়ে যায়। তারা অযথা কর্তৃত্ব স্থাপণে আগ্রহী ছিল। যদিও পর্তুগীজরা খুব বেশি দিন কর্তৃত্ব করতে পারে নি। এটি অনুমান করা হয় যে, স্থানীয় মানুষেরা তাদেরকে বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যা করেন।
লক্ষাদ্বীপে বেশ কয়েকটি আকর্ষণীয় মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে উজরা, জুমা মসজিদ, উবায়দুল্লাহ মসজিদ, আগাট্টি মসজিদ বেশি প্রসিদ্ধ। শুধু রাজধানী কাভারাট্টিতে ৫২টি মসজিদ রয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে পৃথিবীর আর কোথাও এত বেশি মসজিদ আছে কি-না জানা নেই।মসজিদসংলগ্ন মাদ্রাসাগুলোতে কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। লক্ষাদ্বীপে রয়েছে দেওবন্দের সিলেবাস অনুসরণে পরিচালিত কয়েকটি মাদ্রাসাও। নারীরা হিজাব পরিধান করে ঘর-সংসারের কাজ সামাল দেন। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ না হওয়া সত্ত্বেও অনেকে লক্ষাদ্বীপকে নারীর রাজ্য বলে অভিহিত করেন। কারণ, সংসার দেখাশোনা থেকে শুরু করে সবকিছু নারীকেই করতে হয়। পুরুষরা কৃষিকাজ ও মাছ ধরাসহ নানা কাজে বাইরেই বেশি থাকেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন