সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান


মো.আবু রায়হানঃওশেনিয়া হিসাবে পরিচিত অঞ্চলটিতে হাজার হাজার ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা কোনও মহাদেশের অংশ নয়, প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে পলিনেশিয়া, মেলোনেশিয়া আর মাইক্রোনেশিয়া; প্রশান্ত মহাসাগরের এই তিন অঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড নিয়ে ওশেনিয়া বা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ। ওশেনিয়া বিস্তৃত ভৌগলিক মহাদেশের একটি সাধারণ শব্দ যার মধ্যে অস্ট্রেলাসিয়া, মেলেনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া রয়েছে।অস্ট্রেলিয়া ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি মহাদেশ ।ওশেনিয়ার সীমানা বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়। বেশিরভাগ সংজ্ঞায় অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং নিউগিনি এবং মেরিটাইম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওশেনিয়াতে ১৪ টি দেশ রয়েছে- অস্ট্রেলিয়া, মাইক্রোনেশিয়া, ফিজি, কিরিবাতি, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, নাউরু, নিউজিল্যান্ড, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টঙ্গা, টুভালু এবং ভানুয়াতু।

ওশেনিয়া মহাদেশ এর আয়তন ৮১ লাখ ১২ হাজার বর্গ কিমি |ওশেনিয়ার ইসলাম বলতে ওশেনিয়ার ইসলাম এবং মুসলমানদের বোঝায়। বর্তমান অনুমান অনুসারে ওশেনিয়ায় মোট মুসলমান ৬২০,১৫৬ অস্ট্রেলিয়ায় ৪৭৬,৬০০, নিউজিল্যান্ডে ৪৮,১৫১, ফিজিতে ৫২,৫২০, নিউ ক্যালেডোনিয়ায় ৬,৩৫২, পাপুয়া নিউগিনিতে ২,২০০, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ৩৬০, ভানুয়াতুতে ২২১, টঙ্গায় ১১০। কিরিবাতি, সামোয়া অল্পসংখ্যক মুসলমান রয়েছেন। ছাড়া পলিনেশিয়ার স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র পালাউয়ে ৫০০ মুসলমান অধিবাসী রয়েছেন। সেখানে মার্কিন কুখ্যাত কারাগার গুয়ানতানামো বে থেকে কিছু মুসলমানকে পালাউয়ে বসবাসের অনুমতি দিয়েছে দেশটির সরকার। এসব মুসলমান চীনের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ জিনজিয়াংয়ের উইঘুর সম্প্রদায়ের। তাছাড়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় মার্কিন মালিকানাধীন দ্বীপ মার্শাল আইল্যান্ডসে ১০ জন মুসলমান বাস করেন। ক্ষুদ্র দ্বীপ নাউরুতে ১৯৪৭ সালে ১৪৭৬ জন অধিবাসীর মধ্যে ৩৪ জন ছিলেন মুসলিম। অথচ, ২০০২ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ১০ হাজারেরও বেশি অধিবাসীর মধ্যে একজনও মুসলমান নেই।পলিনেশিয়ার কুক আইল্যান্ডে ৬ জন মুসলমানের বাস। আমেরিকান সামোয়াতে ১৯৯০ সালের হিসেব অনুযায়ী ১২ জন মুসলমানের বাস ছিল দ্বীপটিতে।
পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া ও মেলোনেশিয়ার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব দ্বীপের অনেকগুলোতেই মানব বসতি নেই। যেগুলোতে আছে সেগুলোতেও মিশ্র সংস্কৃতির মানুষ। সেখানে মুসলমানদের উপস্থিতি বিস্ময়কর, ছোট ছোট এসব দ্বীপে রয়েছে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। পলিনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া আর মেলোনেশিয়ায় ইসলামের আগমন প্রায় ৪০০ বছর আগে। ১৬০০ শতকে নিউগিনি (বর্তমানে পাপুয়া নিউগিনি) থেকেই মূলত ইসলামের প্রসার হয় এসব ক্ষুদ্র দ্বীপে। Islam has been in some parts of Oceania for at least 400 years (since the 17th century). When the people of New Guinea traded with China and the Malay empire, in the early 17th century, the presence of Islam was felt in Oceania for the first time. পাপুয়া নিউগিনি হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সীমানাঘেঁষা ওশেনিয়ার অন্তর্ভুক্ত একটি বড় ধরনের দ্বীপরাষ্ট্র। প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়ায় সেখানে ইসলামের আলো পৌঁছে খুব সহজেই। আর সেখান থেকেই মূলত পলিনেশিয়ার ক্ষুদ্র দ্বীপগুলোতে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে। নিউগিনির মুসলিম ব্যবসায়ীরা যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাণিজ্য করতেন তখন মূলত তারা এসব ক্ষুদ্র দ্বীপে ইসলামের প্রসার ঘটান পলিনেশিয়ার নিভৃত এসব দ্বীপে মুসলমানরা বাস করে আসছেন শত শত বছর ধরে। যদিও বিষয়টি অনেকের কাছেই অজানা। আন্তর্জাতিক সাইটগুলোতে ব্যাপক ঘাটাঘাটি করেও পলিনেশিয়ান মুসলমানদের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে এটা জানা গেছে যে, ইতিহাস থেকে মুসলমানদের নাম মুছে ফেলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফরাসিরা যখন পলিনেশিয়ার দ্বীপগুলো দখল করে নেয় তখন মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। তবুও প্রশান্ত মহাসাগরের পলিনেশিয়া, মেলোনেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া তথা গোটা ওশেনিয়া মহাদেশেই ইসলাম একটি বর্ধনশীল । ‘প্যাসিফিক ম্যাগাজিন’ নামের একটি সাময়িকী ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ওশেনিয়ায় এখন দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। ওশেনিয়ায় ইসলামের এই প্রসারকে ‘গ্রিন মুন রাইজিং’ নামে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। সেখানে বলা হয়েছে, ভানুয়াতু, ফিজি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, পাপুয়া নিউগিনি ও নিউ ক্যালিডোনিয়ায় ইসলাম খুব দ্রুত প্রসার পাচ্ছে। মেলোনেশিয়ার দ্বীপগুলোতে কয়েক হাজার মুসলমান রয়েছেন, যারা আদিবাসী সম্প্রদায়ের, তারা একসময় প্রকৃতি পূজা করতেন। ( Islam has seen a substantial increase in adherents amongst the peoples of Vanuatu, Fiji, Solomon Islands, Papua New Guinea and New Caledonia. There have been thousands of indigenous converts to Islam in Melanesia.There are also approximately 400 Muslims in Palau, whose government recently allowed a few Uyghurs detained in Guantanamo Bay to settle in the island nation.)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...