সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে ইসলামের আগমন
১৯৬৬ খৃস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশানাল ইসলামিক সেন্টার |
#মো.আবু রায়হান
সূর্যোদয়ের দেশ জাপান হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোৎস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত।ছয় হাজার ৮৫২টি দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এই দেশ।।জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইডো, কিংশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত।জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি৮ ও জি২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য।জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিপর্যয়ের পরও বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে দারুণ অগ্রগতি অর্জন করে দেশটি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী ৪র্থ-বৃহত্তম অর্থনীতি। জাপান বিশ্বের ৫ম-বৃহত্তম রফতানিকারক এবং ৫ম বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। সরকারিভাবে জাপান যুদ্ধ ঘোষণা অধিকার বর্জন করলেও এই দেশটি একটি আধুনিক সামরিক বাহিনী রেখেছে।এদেশের সামরিক বাজেট বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম সামরিক বাজেট। অবশ্য জাপানের সামরিক বাহিনীর কাজ হল আত্মরক্ষা ও শান্তিরক্ষা।এখানে জীবনযাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচক উচ্চ। সারা বিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন।বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ। জাপানি ভাষা জাপানের সরকারি ভাষা। এই ভাষাতে জাপানের প্রায় ৯৮% লোক কথা বলেন। এছাড়াও জাপানে প্রায় ৭ লক্ষ কোরীয় ভাষাতে কথা বলেন। জাপানের অধীনস্থ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জে রিউকিউয়ান ভাষাসমূহ প্রচলিত; প্রায় ৯ লক্ষ লোক কথা বলেন।
জাপানের আয়তন তিন লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬৮ লাখ ৮০ হাজার। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন। জাতিগোষ্ঠী জাপানি ৯৮.৫%, কোরিয়ান .৫%, চীনা .৪% , অন্যান্য .৬%।২০০৭ সালের জরিপ অনুযায়ী প্রোটেস্ট্যান্ট ৪৫ শতাংশ, হিন্দু ২৭.৯ শতাংশ, রোমান ক্যাথলিক ৯.১ শতাংশ, মুসলিম ৬.৩ শতাংশ ও শিখ ০.৩ শতাংশ । জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম। প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের প্রাচীন উপাসনার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শিন্তো ধর্মের ভিত্তি।জাপানে মুসলমানের সংখ্যা কত তার সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এ সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার বলে ধারণা করা হয়। মুসলমানদের ১০ শতাংশই জাপানি বংশোদ্ভূত। জাপানে বর্তমান মুসলিম জনসংখ্যার প্রকৃত আকার অনুমানের বিষয় হিসাবে রয়ে গেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চ-এর হিরোশি কোজিমা এবং ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেইকো সাকুরাইয়ের মতো জাপানি পন্ডিতরা মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ৭০,০০০ জন। যার মধ্যে সম্ভবত 90% অভিবাসি এবং প্রায় ১০% স্থানীয় জাপানি রয়েছে। অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে, জনসংখ্যার আকার অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ান, ভারতীয়, পাকিস্তানি, বাংলাদেশী এবং ইরানিরা রয়েছে।পিউ গবেষণা কেন্দ্র অনুমান করেছে যে ২০১০ সালে জাপানে ১৮৫,০০০ মুসলমান ছিল।
জাপানের ইসলামের ইতিহাস নিকটবর্তী অন্যান্য দেশগুলিতে এই ধর্মের দীর্ঘকালীন উপস্থিতির সাথে তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত।ইসলাম জাপানের অন্যতম ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু ধর্ম,খ্রিস্টান ধর্মের চেয়ে কম।১৯ শতকের আগে জাপানে মুসলমানরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল।জাপানে বর্তমানে মুসলমানরা বেশিরভাগ অভিবাসী সম্প্রদায় এবং সংখ্যায় কম হলেও জাতিগত জাপানি সম্প্রদায় নিয়ে তারা পাশাপাশি বসবাস করছে।জাপানে কবে ইসলামের আলো প্রবেশ করেছে সেটা অজানা।১৮৫৩ সালে সম্ভবত দেশটির শুরুর আগে ইসলাম ও জাপানের মধ্যে বিচ্ছিন্ন যোগাযোগের রেকর্ড রয়েছে। ১৭০০ এর দশকের প্রথম দিকে; কিছু মুসলিম আগের শতাব্দীতে এসেছিল যদিও এগুলি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল। ধারণা করা হয়, অষ্টম শতাব্দীতেই জাপানে ইসলামের বাণী পৌঁছে । তবে মেইজি শাসনামলে (১৮৬৮-১৮৯০) জাপান যখন বিশ্বব্যাপী তাদের উপস্থিতির অংশ হিসেবে ওসমানীয় সাম্রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য ও তথ্যবিনিময় মিশন শুরু করে, তখন থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্পর্শে আসতে শুরু করে। কারণ, মুসলমানদের ইতিহাস যেটুকু পাওয়া যায়, তা এ সময় থেকেই।উসমানি খেলাফতের সময় সুলতান প্রথম আব্দুল হামিদ (২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮) সর্বপ্রথম ১৮৯০ খৃস্টাব্দে নৌপথে তাঁর জাহাজ ‘আর্তগর্ল'- সৌজন্যমূলক মিশন জাপানে পাঠিয়েছিলেন।বাহ্যত তার উদ্দেশ্য ছিল, এ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াতের সম্ভাবনা সম্পর্কে সমীক্ষা চালানো। প্রতিনিধি দলটি জাপানে খুব ভাল প্রভাব সৃষ্টি করে। মূলত তারা এ অঞ্চলে ইসলাম কবুলের বীজ বপন করে যান। কিন্তু এটি একটি ট্রাজেডী যে, এ প্রতিনিধি দল যখন তুরস্কে ফিরে যাচ্ছিলেন,তখন জাপানেরই সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড়ের আঘাতে জাহাজটি ডুবে যায়।ছয়শ’ নয় জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র ৬৯ জন জীবিত ছিলেন। অবশিষ্ট সবাই শহীদ হন এদের মধ্যে সুলতানের ভাইও ছিলো। দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের আঁধারে। নিকটবর্তী দ্বীপের জাপানী অধিবাসীরা দুর্ঘটনা কবলিত লোকদের অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সাহায্য করেন।ভারত,চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও অনেক মুসলমান জাপানে এসে বসবাস শুরু করেন।সর্বপ্রথম সম্ভবত ১৯৬৭ সালে জাম্বিয়া থেকে একটি তাবলিগ জামাতের আগমন হয়। তারাই ধর্মের প্রতি ফিরে আসার প্রেরণা জাগিয়ে তোলেন। এখানকার অধিবাসীরাও তাদের ধর্মীয় কর্তব্যের কথা জানতে পারে। নতুন নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। সেখানে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জাপানকে অনেক মুসলিম দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। যুদ্ধ শেষে শিল্পের উন্নতির জন্য তেল উৎপাদনকারী মুসলিম দেশের সাথে তার সম্পর্ক আরো স্বাভাবিক হয়। এর ফলে জাপানে মুসলমানদের যাতায়াত বৃদ্ধি পায়। জাপানী অধিবাসীরাও মুসলিম দেশসমূহে আসে। এমনি করে দু’ তরফাভাবে জাপানে ইসলামের প্রসার দ্রুত হয়।সর্বপ্রথম সম্ভবত ১৯৬৭ সালে জাম্বিয়া থেকে একটি তাবলিগ জামাতের আগমন হয়। তারাই ধর্মের প্রতি ফিরে আসার প্রেরণা জাগিয়ে তোলেন। এখানকার অধিবাসীরাও তাদের ধর্মীয় কর্তব্যের কথা জানতে পারে। নতুন নতুন মসজিদ নির্মাণ শুরু হয়। সেখানে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয়।এ সময় জাপানী মুসলমানগণ কিছু সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করেন। জাপানী ভাষায় পবিত্র কুরআনের কয়েকটি অনুবাদ প্রকাশ করা হয়। ইসলামী তথ্য সমন্বিত কিতাব প্রকাশ করা হয়।
১৯৬৬ খৃস্টাব্দে একটি ইন্টারন্যাশানাল ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ১৯৭৪ সালে ইসলামিক সেন্টার জাপানের সঙ্গে সংযুক্ত হয়।সেন্টারটি একটি বোর্ড অব ডিরেক্টর এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।তার সদস্যদের মধ্যে আরবী,পাকিস্তানি,তুর্কী ও খোদ জাপানী মুসলমানগণ অন্তর্ভুক্ত আছে।সেন্টারটির পক্ষ থেকে অনেক বই জাপানী ভাষায় প্রকাশ করা হয়েছে,এর মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র কুরআনুল কারীমের তরজমা। ‘আসসালাম’ নামে কটি ত্রৈমাসিক পত্রিকাও প্রকাশিত হয়। এর পক্ষ থেকে জাপানী শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা ও হজ্জ ইচ্ছুকদের হজ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।জাপানে দ্রুত প্রসার হচ্ছে ইসলাম ধর্ম, ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত জাপানে মুসলমানদের সংখ্যা ৩ হাজার বলা হতো,এখন সরকারী হিসাব মতে সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা ৫০ হাজার। তাছাড়া যে সমস্ত মুসলমান অন্যান্য দেশ থেকে এসে এখানে অধিবাস গ্রহণ করেছেন,তাদের সংখ্যা দু’লাখে পৌঁছেছে। এর অর্থ এই যে, জাপানে সর্বমোট আড়াই লাখ মুসলমান রয়েছে।
জাপানে মসজিদ নির্মাণের রয়েছে অনেক লম্বা ইতিহাস। ভারতীয় মুসলিম অভিবাসীরা ১৯৩১ সালে 'নাগোয়া মসজিদ' এবং ১৯৩৫ সালে 'কোবে মসজিদ' নির্মাণ করেন। রাশিয়ায় বিপল্গব সংঘটিত হলে সেখান থেকে তাতার মুসলিমরা পালিয়ে জাপানে আসে এবং পরে এখানে একটি বৃহত্তম জাতিগত গ্রুপ তৈরি করে। ১৯৩৮ সালে তারা টোকিওর মূল মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত করে।মসজিদটি নির্মাণে শুধু জাপান সরকারই সহায়তা করেনি, জাপানি অনেক কোম্পানিও আর্থিকভবে সাহায্য করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি।১৯৭০ সালের দিকে টোকিওতে মসজিদের সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি। এখন এখানে ২০০টি মসজিদ ও মুসাল্লা (অস্থায়ী নামাজঘর) আছে।
জাপানি ভাষায় প্রথম কুরআন অনুবাদক হাজি ওমর মিতা |
১৯৫৭ সালে জাপানের একটি বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআনের জাপানি অনুবাদ প্রকাশিত হয়, যা জাপানি মুসলিম-অমুসলিম সবার মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। অবশ্য ১৯২০, ১৯৩৭ ও ১৯৫০ সালে কোরআনের আরো তিনটি অনুবাদ জাপানি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই চারটি অনুবাদই ছিল অমুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা এবং তা করা হয়েছিল ইংরেজি ভাষা থেকে। ফলে তাতে বেশ কিছু অসংগতি ও ত্রুটি থেকে যায়। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় জাপানি ভাষায় আল-কোরআনের সার্থক অনুবাদ।
জাপানে প্রতিষ্ঠিত সর্বপ্রথম মসজিদটির রয়েছে এক দুর্লভ কাহিনি। এটি ‘কোবে মসজিদ’ নামে প্রসিদ্ধ। মসজিদটি কোবে শহরে অবস্থিত। কোবে জাপানের ষষ্ঠ বৃহত্তম নগরী। এটি হনশো দ্বীপের দক্ষিণ দিকে ও অকাসা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর দিকে অবস্থিত। এটি ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যময় একটি নগরী।জাপানে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা, বিশেষত ভারতীয় কয়েকজন নিষ্ঠাবান ব্যবসায়ীর প্রচেষ্টা ও অর্থায়নে এই কোবে মসজিদ নির্মিত হয়। কোবে মুসলিম সেন্টার নামেও এর বেশ পরিচিতি রয়েছে। মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে অর্থ সংগ্রহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কাজ চলতে থাকে। অবশেষে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণকাজ পূর্ণতা লাভ করে। তুরস্কের নির্মাণকৌশল অবলম্বনে নির্মিত মসজিদটি একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যে পরিণত হয়।সূচনালগ্ন থেকে আজ অবধি মসজিদটি ইতিহাসের একটি বিরাট দলিল ও সাক্ষী হয়ে আছে। এটি জাপানের পুরনো ঐতিহাসিক নিদর্শনাদির অন্যতম।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯৪৫ সালে আমেরিকান সৈন্যরা পুরো কোবে বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। শহরের সবগুলো দালান ও স্থাপত্য তারা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। কিন্তু অবাক করার মতো ব্যাপার হলো, কোবে শহরের এই মসজিদ স্বমহিমায় টিকে রয়েছে। শুধু কাচের কয়েকটি জানালা ও কিছু আস্তর খসে পড়েছিল। সে সময় আমেরিকান সেনাবাহিনীর এমন বর্বরতা ও আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য জাপানের যোদ্ধারা এই মসজিদের ভূগর্ভস্থ কক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মসজিদ ছাড়া লুকানোর মতো তাঁদের কোনো বিকল্প ছিল না। এভাবে মসজিদটি সব জাতির মানুষের জন্য আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল।মসজিদটির দুর্লভ ইতিহাসের এখানেই সমাপ্তি নয়। ১৯৯৫ সালে জাপানে যে ভূমিকম্প হয়েছিল, বড় হেনশিন বা কোবে ভূমিকম্প নামক ওই দুর্যোগকে জাপানের ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভূমিকম্প হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সেই ভূমিকম্পে আশপাশের সব বিল্ডিং মাটির সঙ্গে মিশে গেলেও এই মসজিদ স্বস্থানে নিরাপদে বহাল থাকে। যার কারণে আজও জাপানিরা এই মসজিদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।
প্রতিবছর কয়েক লাখ মুসলিম পর্যটক জাপান ভ্রমণ করে। ২০১৭ সালে শুধু তিন লাখ ৬০ হাজার ইন্দোনেশিয়ান মুসলিম জাপানে যায়। মুসলিম পর্যটকদের এই স্রোত আরো বৃদ্ধি করতে হালাল ট্যুরিজমের প্রতি ঝুঁকছে জাপানের ট্যুর এজেন্সিগুলো। তারা আরো বেশি পরিমাণে হালাল রেস্টুরেন্ট ও শরিয়াহবান্ধব হোটেল স্থাপন করছে। জাপানের ফুজি পর্বতের ওপর শরিয়াহবান্ধব একটি হোটেল এরই মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মুসলিম পর্যটকদের কাছে।
মুসলিম পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জাপান গত ১০ বছরে পর্যটনশিল্পে মৌলিক অনেক পরিবর্তন এনেছে। যেমন—জাপান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ‘সুরাউ’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেছে, যা মুসলিম পর্যটকদের হালাল খাবার সরবরাহ করে থাকে। মুসলিম পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছুদিন আগে মুসলিম নারীদের জন্য ফ্যাশন শোর আয়োজন করে, যেখানে ১০টির মতো কম্পানি মুসলিম নারীদের জন্য শরিয়তসম্মত বিভিন্ন পোশাকের ডিজাইন উপস্থাপন করে।জাপানের হালাল হোটেলের প্রতিটি কক্ষে কিবলাকে চিহ্নিত করা হয়, কিচেনগুলো হালাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে এবং তা হয় অ্যালকোহলমুক্ত।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন