অস্ট্রেলিয়ায় ইসলাম ও মুসলমান
মো.আবু রায়হানঃঅস্ট্রেলিয়া একটি দ্বীপ-মহাদেশ।এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, কিন্তু ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। কাছের তাসমানিয়া দ্বীপ নিয়ে এটি কমনওয়েল্থ অফ অস্ট্রেলিয়া গঠন করেছে। দেশটির উত্তরে তিমুর সাগর, আরাফুরা সাগর, ও টরেস প্রণালী, পূর্বে প্রবাল সাগর এবং তাসমান সাগর; দক্ষিণে ব্যাস প্রণালী ও ভারত মহাসাগর; পশ্চিমে ভারত মহাসাগর। অস্ট্রেলিয়া ৬টি অঙ্গরাজ্য নিয়ে গঠিত - নিউ সাউথ ওয়েল্স, কুইন্সল্যান্ড, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া, ভিক্টোরিয়া, ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া। এছাড়াও আছে দুইটি টেরিটরি — অস্ট্রেলীয় রাজধানী টেরিটরি এবং উত্তর টেরিটরি। বহিঃস্থ নির্ভরশীল অঞ্চলের মধ্যে আছে অ্যাশমোর ও কার্টিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলীয় অ্যান্টার্কটিকা, ক্রিসমাস দ্বীপ, কোকোস দ্বীপপুঞ্জ, কোরাল সি দ্বীপপুঞ্জ, হার্ড দ্বীপ ও ম্যাকডনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ, এবং নরফোক দ্বীপ। সিডনী বৃহত্তম শহর। দুইটি শহরই দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। সিডনী বৃহত্তম শহর। দুইটি শহরই দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। ১৭শ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্বের কাছে অস্ট্রেলিয়া অজানা ছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম অধিবাসী, মূলত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ কয়েক হাজার বছর আগে এশিয়া থেকে অভিবাসী হিসেবে ওই ভূখণ্ডে পা ফেলে। ব্রিটিশরা সেখানে বসতি স্থাপন করে ১৭৮৮ সালে।এটিই পরবর্তীকালে বড় হয়ে সিডনী শহরে পরিণত হয়। ১৯শ শতক জুড়ে অস্ট্রেলিয়া এক গুচ্ছ ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে কাজ করত। ১৯০১ সালে এগুলি একত্র হয়ে স্বাধীন অস্ট্রেলিয়া গঠন করে।
অস্ট্রেলিয়ার আয়তন ৭৬ লাখ ৯২ হাজার ২৪ বর্গ কিলোমিটার।অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার।২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ৫২.১% অস্ট্রেলিয়ান নিজেদের খ্রিস্টান, ২২..৬% নিজেকে ক্যাথলিক এবং ১৩.৩% অ্যাঙ্গেলিকান হিসাবে পরিচয় দেয়। আরও ৮.২% অস্ট্রেলিয়ান নিজেকে খ্রিস্টানবিহীন ধর্মের অনুসারী হিসাবে পরিচয় দেন। অন্য জরিপে মোট জনসংখ্যার শতকরা ২২ ভাগ কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যার শতকরা ২২ ভাগ বা প্রায় ৪৮ লাখ নাগরিক বলছেন, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন নাস্তিক বা সৃষ্টিকর্তায় অবিশ্বাসী, কথিত মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী ইত্যাদি। ২০০৬ সালের পর থেকে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন এমন নাগরিকের সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ২৯ ভাগ। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার শতকরা ১৮ ভাগ নাগরিক (৩৭ লাখ) বলেছিলেন, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করেন না। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খ্রিস্টান ৬৪ ভাগ, ধর্মহীন ২২ ভাগ, বৌদ্ধ ২ দশমিক ৫ ভাগ ও মুসলমান ২ দশমিক ২ ভাগ। কমে আসছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাও। ১৯১১ সালে দেশটির শতকরা ৯৬ ভাগ নাগরিক ছিলেন খ্রিস্টান। ১৯৭৬ সালে এ হার ছিল শতকরা ৮৯ ভাগ। ৩৫ বছর পর এখন দেশটিতে এ হার ৬১ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী কয়েকটি ধর্ম রয়েছে। এসব ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ৭ হাজার ৩৬৩। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ৬০ টিরও বেশি দেশের মুসলমানরা অস্ট্রেলিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল। এদের মধ্যে বেশিরভাগ বসনিয়া, তুরস্ক এবং লেবানন থেকে আগত হলেও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ইরান, ফিজি, আলবেনিয়া, সুদান, সোমালিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের মুসলমানরা রয়েছে ।২০১১ সালের আদমশুমারির পরে, ৪৭৬,০০০ অস্ট্রেলিয়ান (জনসংখ্যার ২.২ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী) তাদের ধর্ম ইসলাম বলে জানিয়েছিল। ২০১৬ সালের অস্ট্রেলিয়ান আদমশুমারি অনুসারে, অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমান হিসাবে পরিচয় প্রদানকারি মানুষের সংখ্যা ৬০৪,২০০ যা মোট অস্ট্রোলিয়ার জনসংখ্যার ২.৬%।বেসরকারী হিসেব মতে মুসলমানদের সংখ্যা ৫ লাখের কাছাকাছি।দেশটির সাম্প্রতিক আদমশুমারিতে দেখা গেছে, ২০০৬ সালের পর থেকে সেখানে মুসলমানের সংখ্যা শতকরা ৪০ ভাগ বেড়েছে। অন্যদিকে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা ১৯৭৬ সালের পর থেকে গত ৩৫ বছরে কমে শতকরা ৬১ ভাগে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪৪ হাজার ৭১ জন।গত ৫ বছরে তাদের সংখ্যা বেড়েছে শতকরা ৪০ ভাগ।মুসলমানদের মধ্যে ৪২% গ্রেটার সিডনিতে, গ্রেটার মেলবোর্নে ৩১% এবং গ্রেটার পার্থে ৮% বাস করেন। সবচেয়ে বেশি অনুপাত সহ মুসলিম এলাকা হ'ল নিউ সাউথ ওয়েলস ৩. ৫৮% এবং ভিক্টোরিয়া ৩.৩২%, যেখানে সবচেয়ে কম সংখ্যক মুসলমান বাস করে কুইন্সল্যান্ড ০.৯৫% এবং তাসমানিয়া ০.৪৯%। গ্রেটার মেলবোর্নের ৪.২% মানুষ মুসলমান।
অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে ১৭ শতকে। কাশ্মীরের উট ব্যবসায়ী দোস্ত মুহাম্মাদ তাঁর উটের পাল নিয়ে ১৮৬০ সালে প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় গমন করেন। তাঁর মাধ্যমে দেশটিতে ইসলাম প্রচার শুরু হয়।The first Muslims to settle permanently in Australia were the cameleers, mainly from Afghanistan. Between the 1860s and 1920s, the Muslim camelmen worked the inland tracks and developed relationships with local Aboriginal people.তাছাড়া এর কাছাকাছি সময় ইন্দোনেশিয়ার মাকাসসার থেকে একদল মুসলিম জেলে অস্ট্রেলিয়ায় গমন করেন। তাঁরা অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন।১৯ শতকে আফগানিস্তান, ভারত এবং পাকিস্তান থেকে আগত মুসলমানরা দেশটিতে গমন করেন এবং ইসলাম প্রচার ও প্রসারে অবদান রাখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মালয়েশিয়া, আলবেনিয়া ও তুরস্ক থেকে মুসলিম অভিবাসীরা অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান। যারা অস্ট্রেলিয়ান সমাজ ইসলাম প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অস্ট্রেলিয়াবাসীর মধ্যে প্রভাব বলয় তৈরি করে এবং ধীরে ধীরে সে দেশের মানুষ ইসলামে আকৃষ্ট হতে থাকে।
ক্যাপ্টেন কুকের অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের অন্তত ৬শ’ বছর আগে এই দেশটির সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। সেখানকার অধিবাসীদের মুসলিম সভ্যতার সঙ্গে সরাসরি পরিচয় ঘটেছিল। আফ্রিকার মুসলিম সালতানাতের সময়কার পাঁচটি তাম্র মুদ্রা আবিষ্কারের পর এ ধারণার জন্ম হয়েছে। তাম্র মুদ্রা পাঁচটি অস্ট্রেলিয়ার উত্তর উপক‚লে বালুর ভেতর পাওয়া গেছে ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। ম্যরে আইজেনবার্গ নামের একজন সৈনিক সেগুলো খুঁজে পান। ১৯৭৯ সালে ম্যরে আইজেনবার্গ মুদ্রা পাঁচটি একটি জাদুঘরে জমা দেন।দুর্লভ ওই মুদ্রাগুলো অস্ট্রেলিয়ায় গেল কিভাবে, গবেষকরা সেটা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছেন। প্রচলিত মত এই যে, অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করেন ক্যাপ্টেন কুক নামের একজন নাবিক। কিন্তু আবিষ্কৃত মুদ্রাগুলো বিবেচনায় নিলে বলতে হবে, তারও বহু আগে মুসলমানরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও যোগাযোগ গড়ে তুলেছিল। তারাই হয়তো মুদ্রাগুলো সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় ডাচদের আগমন ঘটে ১৬৯০ সালে। এ থেকে এটা স্পষ্ট হয় ক্যাপ্টেন কুকেরও বেশ আগে ডাচরা সেখানে যায়। এই হিসাবে ক্যাপ্টেন কুককে অস্ট্রেলিয়ার আবিষ্কর্তা বলা যায় কি না সেটা ভেবে দেখার বিষয়। আফ্রিকার মুসলিম শাসকদের আমলে প্রচলিত মুদ্রা আবিষ্কারের পর ক্যাপ্টেন কুক কেন, ডাচদের দাবিও আর টেকে না। জানা যায়, আফ্রিকার মুসলিম সালতানাতের সঙ্গে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও জাতির নৌ-বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াও তার বাইরে ছিল না, তাম্র মুদ্রা আবিষ্কার তারই প্রমাণ বহন করে। অস্ট্রেলিয়ার গবেষক ও বিজ্ঞানী ম্যাকনটোসের মতে, আফ্রিকার মুসলিম শাসনামলেই মুদ্রাগুলো অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিল। এটা এও প্রমাণ করে, পূর্ব আফ্রিকা, ভারত, আরব প্রভৃতি দেশের মধ্যে পারস্পরিক নৌ-বাণিজ্য চালু ছিল। বলাবাহুল্য, ম্যাকনটোসের এই অভিমত যদি সত্য হয়, তাহলে ইতিহাসের প্রচলিত ধারা ও ধারণা পাল্টে যেতে পারে। ইসলামের আবির্ভাবের পর আরব বিশ্বের সঙ্গে এবং পরবর্তীকালে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিস্তার লাভ করে। এই মুসলিম বণিকদের সঙ্গে ইসলাম প্রচারকরা বিশ্বের দেশে দেশে গমন করে। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দেশটিকে প্রথম মসজিদ আফগান উটচালকদের উদ্যোগে এডিলেডে ১৮৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর সিডনি শহরের প্রথম মসজিদটি নির্মিত হয় ১৯৬০ সালের দিকে সারি হিলস এলাকায়। তবে সবচেয়ে বড় মসজিদ লাকেম্বা ও অবার্নে। অবার্ন মসজিদের নাম গ্যালিপলি মসজিদ, যা তুর্কি অভিবাসিরা তৈরি করেছেন। এ মসজিদে একসঙ্গে পাঁচ হাজার লোক নামাজ আদায় করতে পারেন। লাকেম্বা মসজিদটি লেবাননি মুসলমানেরা তৈরি করেছেন। সাধারণত অস্ট্রেলিয়ায় মসজিদের ভেতরে ছোট করে আজান দেয়া হয়। বড় মসজিদ এবং ঈদের নামাজের সময় ছোট মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়। কিন্তু করোনার কারণে এই প্রথম উচ্চস্বরে অস্ট্রেলিয়ায় আজানের অনুমতি মিলল।
অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ মানুষ ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। তাদের মতে, মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তিতে অস্ট্রেলিয়া আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। মুসলমানরা তাদের কর্মপ্রচেষ্টা, জ্ঞান ও কলাকৌশল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মূলস্রোতে মিশে গেছেন।যুগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা উদ্যোগী হয়েছেন, মুসলমানদের জন্য আলাদা একটি বিশেষ টেলিভিশন চ্যানেল চালু করার। চ্যানেলটির নাম- One Path Network (একক পথ)। সম্প্রতি সম্পূর্ণ অলাভজনক এ চ্যানেলটি চালুও করা হয়েছে।অস্ট্রেলিয়ার সিডনির কিছু চিন্তাশীল মুসলমানদের উদ্যোগে নিজেদের ধর্ম রক্ষার্থে এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রচারিত ভ্রান্তি ধারণা প্রচারের প্রতিবাদে এ বিশেষ টেলিভিশন চ্যানেলটি চালু করেছে।
মুসলিম অধ্যুষিত কোকোস (কিলিং)দ্বীপপুঞ্জ অস্ট্রেলীয় বাহ্যিক সীমানার মধ্যে ভারত মহাসাগর সমন্বয়ে গঠিত একটি ছোট দ্বীপমালা। এরকম দশটি অস্ট্রেলিয়ান অঞ্চল হ'ল অস্ট্রেলিয়ান রাজধানী অঞ্চল, জার্ভিস বে, উত্তর টেরিটরি, নরফোক দ্বীপ, অ্যাশমোর এবং কারটিয়ার দ্বীপপুঞ্জ, অস্ট্রেলিয়ান অ্যান্টার্কটিক অঞ্চল, হার্ড এবং ম্যাকডোনাল্ড দ্বীপপুঞ্জ, কোকোস (কেলিং) দ্বীপপুঞ্জ, ক্রিসমাস দ্বীপ এবং কোরাল সাগর দ্বীপপুঞ্জ।অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা এবং কাছাকাছি ইন্দোনেশীয় দ্বীপ সুমাত্রার প্রায় মাঝপথে কোকোস(কিলিং)দ্বীপপুঞ্জ অবস্থিত। এই দ্বীপটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ গোলার্ধের মধ্যবর্তী একটি অংশ। ১৯৫৫ সালে সরকারি সীমানার এই দ্বীপের দুইটি নামকরণ করা হয়েছিল; যা হলো কোকোস দ্বীপপুঞ্জ বা কিলিং দ্বীপ।১৬২২ সালে আবিষ্কৃত হয় কোকোস দ্বীপপুঞ্জ এবং ১৭০৩ সালে খোঁজ পাওয়া যায় কিলিং দ্বীপের।এই দ্বীপটি আবিষ্কার করেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির অধিনায়ক উইলিয়াম কিলিং।পরে ১৮০৫ সালে কোকোস দ্বীপপুঞ্জ ও কিলিং দ্বীপ মিলিত হয়ে উনিশ শতকে একটি যৌথ দ্বীপরাষ্ট্র গঠন করে, আর নাম দেওয়া হয় কোকোস-কিলিং দ্বীপ। এই অঞ্চলের দুটি অংশ রয়েছে। এর মধ্যে একটিকে বলা হয় ওয়েস্ট আইল্যান্ড, অন্যটি হোম আইল্যান্ড।দ্বীপটির আয়তন মাত্র ১৪ বর্গ কিলোমিটার।
১৮৫৭ সাল থেকে দেশটি ব্রিটিশ দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। ১৯৫৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে স্থানান্তরিত হয় এবং সরকারিভাবে কোকোস দ্বীপপুঞ্জ নামকরণ করা হয়।উনিশ শতকের প্রথম দিকেও এখানে কোনো বসতি ছিল না। উনিশ শতকের শুরুতে এখানে একজন স্কটিশ ব্যবসায়ী—ক্লুনিস রস বসতি স্থাপন করেন। তারপর তাঁর ব্যবসার কাজে মালভূমি থেকে কিছু শ্রমিক আনা হয়েছিল। দ্বীপের বর্তমান জনসংখ্যার বেশির ভাগই একসময় মালভূমি থেকে আসা।জনসংখ্যা প্রায় ৬০০। এর মধ্যে ১৪০ জন বাস করে ওয়েস্ট আইল্যান্ডে, অন্যরা থাকে হোম আইল্যান্ডে।কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জের ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম। ২০১৬ সালের আদমশুমারি অনুসারে জনসংখ্যার ৭৫% মুসলিম ছিলেন।অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো এরাও বেশ ধর্মসচেতন।দ্বীপের মূল মুসলিম সংগঠন হল ইসলামিক কাউন্সিল অফ কোকোস কিলিং আইল্যান্ডস।দ্বীপপুঞ্জের তিনটি মসজিদ রয়েছে যার মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিকতম ঐতিহ্য-তালিকাভুক্ত পশ্চিম দ্বীপ মসজিদ। কোকোস (কিলিং) দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম আলেকজান্ডার স্ট্রিটের একটি ঐতিহ্যবাহী তালিকাভুক্ত মসজিদ। মসজিদটি অস্ট্রেলিয়ান কমনওয়েলথ হেরিটেজ তালিকায় ২২ জুন ২০০৪ এ যুক্ত হয়। এখানকার প্রায় ৬৮.৮ শতাংশ মানুষ মালয় ভাষায় কথা বলে। ইংরেজি ভাষায় কথা বলে ২২.৩ শতাংশ। অন্যান্য ভাষায় কথা বলে ৮.৯ শতাংশ।এ অঞ্চলটি অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল সরকারের অবকাঠামো ও আঞ্চলিক উন্নয়ন বিভাগের দ্বারা পরিচালিত হয়। স্থানীয় শাইবার কাউন্সিলের মাধ্যমে দ্বীপপুঞ্জের একটি স্বতন্ত্র সরকার রয়েছে।কোকোস দ্বীপে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ জন্মে থাকে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন