সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কানাডায় ইসলাম ও মুসলিম


মসজিদ আল রাশিদ

মো.আবু রায়হানঃ বহুকৃষ্টির দেশ কানাডা উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশে অবস্থিত একটি দেশ। দেশটির দশটি প্রদেশ (আলবার্তা, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, মনিটোবা, নিউ ব্রুনসউইক, নিউফাউন্ডল্যান্ড এবং ল্যাব্রাডার, নোভা স্কশিয়া, অন্টারিও, প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ, কুইবেক, এবং সাসকাচুয়ান) ও তিনটি অধীন অঞ্চল(উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, নুনাভাট এবং য়ুকন) আটলান্টিক মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত, যা এটিকে মোট আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তর দেশে পরিণত করেছে।কানাডার অধিকৃত ভূমি প্রথম বসবাসের জন্য চেষ্টা চালায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীসমূহ। পঞ্চদশ শতকের শুরুতে ইংরেজ এবং ফরাসি অভিযাত্রীরা আটলান্টিক উপকূল আবিষ্কার করে এবং পরে বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কানাডায় ফরাসি উপনিবেশকে নব্য ফ্রান্স বলা হত, যার বিস্তৃতি ছিল সেন্ট লরেন্স নদী থেকে গ্রেইট লেইকসের উত্তর উপকূল পর্যন্ত।ফ্রান্স দীর্ঘ সাত বছরের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলস্বরূপ ১৭৬৩ সালে উত্তর আমেরিকায় তাদের সব উপনিবেশ ইংরেজদের কাছে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে, ১৮৪১ সাল পর্যন্ত, এটি যথাক্রমে "উচ্চ কানাডা" এবং "নিম্ন কানাডা" নামক দুটি ইংরেজ উপনিবেশে বিভক্ত থাকে। ১৮৬৭ সালে, মিত্রতার মধ্য দিয়ে চারটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ নিয়ে দেশ হিসেবে কানাডা গঠন করা হয়। এর ফলে আরো প্রদেশ এবং অঞ্চল সংযোজনের পথ সুগম, এবং ইংল্যান্ড থেকে স্বায়ত্তশাসন পাওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। ১৯৮২ সালে জারীকৃত কানাডা অ্যাক্ট অনুসারে, দশটি প্রদেশ এবং তিনটি অঞ্চল নিয়ে গঠিত কানাডা সংসদীয় গণতন্ত্র এবং আইনগত রাজ্যতন্ত্র উভয়ই মেনে চলে। রাষ্ট্রের প্রধান রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কানাডা দ্বিভাষিক ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা দুটোই সরকারি ভাষা। কানাডা অ্যাক্ট ১৯৮২ অনুসারে, "কানাডা"ই একমাত্র আইনগত এবং দ্বিভাষিক নাম। কানাডার কুইবেক প্রদেশে ফরাসি ভাষা প্রাদেশিক সরকারি ভাষা ১৯৮২ সালে সরকারী ছুটি ডোমিনিয়ান ডে কে পরিবর্তন করে কানাডা ডে করা হয়।পূর্বে কানাডা ১৮৬৭ সালে প্রণীত ব্রিটিশ উত্তর আমেরিকা অধ্যাদেশবলে পরিচালিত হত। কানাডার বর্তমান সংবিধান ১৯৮২ সালে রচিত হয়। কানাডা একটি ফেডারেশন যাতে সংসদীয় গণতন্ত্রভিত্তিক সরকারব্যবস্থা এবং একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রচলিত। কানাডার সরকার দুই ভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সরকার। প্রশাসনিক অঞ্চলগুলির তুলনায় প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসনের পরিমাণ বেশি।

৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৬৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কানাডা দেশটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রায় ৪১% নিয়ে গঠিত।কানাডা হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং শীতলতম দেশ।জাতিসংঘের ২০২০ সালের মধ্যবর্ষের তথ্য অনুযায়ী কানাডার জনসংখ্যার হিসেব করা হয়েছে ৩৭,৭৪২,১৫৪ জন। কানাডার জনসংখ্যা বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার ০.৪৮% এর সমান। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কানাডাবিশ্বে ৩৯ তম ।২০১১ সালের শুমারি মতে খ্রিস্টান ধর্ম কানাডার বৃহত্তম ধর্ম, যেখানে রোমান ক্যাথলিকরা ৬৭.৩% জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করেন। মোট জনসংখ্যার ২৩.৯% লোকের কোনো ধর্ম নেই। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, মুসলমানের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে ২০১০ সালের আগে। কানাডার ২০১১ সালের জাতীয় গৃহস্থালির সমীক্ষা অনুসারে, কানাডার ১,০৫৩,৯৪৫ জন মুসলিম যা প্রায় ৩.২% ।মুসলমান খ্রিস্টধর্মের পরে দেশটিকে দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। কানাডার সবচেয়ে দ্রুত বর্ধশীল ধর্ম ইসলাম।কানাডার বেশিরভাগ মুসলমান সুন্নি ইসলামকে অনুসরণ করেন এবং তাদের মধ্যে একটি সংখ্যালঘু শিয়া ইসলাম এবং আহমদিয়া ইসলামকে অনুসরণ করেন। ১৯৬০ সালের পর থেকে মুসলমান ইমিগ্রেটদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৮১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, কানাডায় মুসলমানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ হাজার ৮৭০ জন। ১৯৯১ সালে সে সংখ্যা বেড়ে হয় দুই লাখ ৫৩ হাজার। এর এক দশক পরে, অর্থাৎ ২০০১ সালে তা বেড়ে হয় দ্বিগুণের বেশি। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০৩০ সাল নাগাদ কানাডায় মুসলমান জনসংখ্যা তিন মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো কানাডায়ও মুসলমান ও ইসলামের বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে। কানাডায় মুসলমানদের আগমন শতাধিক বছর আগে। কানাডায় প্রথম এসেছিলেন জেমস এবং অ্যাগনেস ১৮৫১ সালে।কানাডায় অভিবাসি হওয়ার আগে তারা স্কটল্যান্ডে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।১৮৭১ সালের কানাডিয়ান আদমশুমারিতে প্রথম মুসলমানদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই শুমারিতে সংখ্যায় মাত্র ১৩ জন মুসলমানের উল্লেখ পাওয়া যায়।জানা যায়, কানাডিয়ান প্যাসিফিক রেলওয়ে স্থাপনের সময় অনেক মুসলমান এ দেশে আগমন করেন। এ ছাড়া আলবার্টায় কৃষিকাজে এবং অন্যান্য প্রদেশে শিল্প-কারখানায় কাজের সন্ধানে উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে এসেছেন। পরবর্তী সময়ে তাঁরা দেশের বিভিন্ন উচ্চপদে আসীন হতে থাকেন।১৯৫২ সালে মনট্রিয়ালের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পাঠ্যক্রমে ইসলামিক স্টাডিজ অন্তর্ভুক্ত করলে অনেক মুসলমান শিক্ষার্থী কানাডায় আসেন। ১০ বছর পর টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ও একই বিষয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করলে সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্রমান্বয়ে মুসলিম শিক্ষার্থী, দক্ষ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
কানাডায় মসজিদের সংখ্যা প্রায় এক হাজার ১০০। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে। ৭০ শতাংশের বেশি মুসলমান নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করেন। ১৯৩৮ সালে আলবার্টার রাজধানী এডমন্টনে প্রথম মসজিদ আল রাশিদ স্থাপিত হয়।মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন কানাডায় মুসলিমের সংখ্যা মাত্র ৬৪৫ জন। এডমন্টন শহরটিই তখন সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। সে সময়ে মুসলিমরা নিজেদের আকিদা-বিশ্বাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সভ্যতা-সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখতে এবং নিজেদের সন্তানদের সে অনুযায়ী গড়ে তুলতে মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন অনুভব করেন। অন্যদিকে তখন আবার নামাজ পড়ার জন্য আলাদা নামাজঘরেরও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সে কারণে কানাডার মুসলমানরা তখন মসজিদ-ব্যবস্থার কাজ শুরু করেছিলেন।পরামর্শ ও পরিকল্পনার পর ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্যে একটি জমি ক্রয় করা হয়। তৎকালীন সময়ে যার মূল্য ছিল ৫ হাজার ডলার।উল্লেখ্য হিলউয়ি হাদমন নামক একজন মহিলা এডমন্টনের মেয়র জন ফ্রাই সাথে সর্বপ্রথমক মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের জন্য আলোচনা শুরু করেন। মুসলিমদের বিশ্বাস ছিল এটিই হবে কানাডার ইতিহাসে প্রথম মসজিদ।রাজধানী টরন্টোর সর্ববৃহৎ ইসলামী ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্সের অধীনে প্রায় পাঁচ হাজার মুসল্লি একত্রে জুমার নামাজ আদায় করতে পারেন—এমন সুবিশাল একটি মসজিদ রয়েছে। বিশাল এলাকা নিয়ে পার্কিং লট, ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলার মাঠ এবং ইসলামী স্কুলও রয়েছে। প্রায় ৫০ বিঘার ওপর পাঁচ শতাধিক গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। বর্তমানে কানাডার প্রায় প্রতিটি শহরে বিভিন্ন কমিউনিটিকেন্দ্রিক ইসলামিক সেন্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শুধু টরন্টো নগরীতে এ ধরনের প্রায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান ও বড় কয়েকটি মাদরাসাও রয়েছে। টরন্টোয় তাবলিগ জামাতের প্রধান মারকাজ হলো আল-হেদায়েত মসজিদ। এই মারকাজ বিশাল এলাকা নিয়ে সুবিশাল পার্কসমৃদ্ধ। প্রায় চার মিলিয়ন ডলার দিয়ে ওয়্যারহাউস খরিদ করে নির্মাণ করা হয়। মারকাজের মুরব্বিদের মধ্যে সোমালিয়ান, গুজরাটি ও পাকিস্তানিদের আধিপত্য বেশি। তারপর রয়েছে বাংলাদেশিদের অবস্থান। প্রতিবছরের ডিসেম্বরে তাদের বার্ষিক ইজতেমা হয়। বেইসমেন্টে প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক মুসল্লির একসঙ্গে বসে ইজতেমার বয়ান শোনার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে জামাত আসে এবং আবার এখান থেকে জামাতবন্দি হয়ে বিভিন্ন শহরে ছুটে চলে।প্রায় ৬০ শতাংশ মুসলমান বাস করে ওন্টারিও প্রদেশে। বিশেষ করে টরন্টো ও অটোয়ায়। ২০ শতাংশের বেশি বাস করে কুইবেক প্রদেশে, যার বেশির ভাগই মন্ট্রিয়লে। স্থানীয় মুসলমান জনগোষ্ঠীর তিন-চতুর্থাংশই ইমিগ্র্যান্ট। তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এসেছে গত এক দশকে। আরব দেশ ছাড়াও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মুসলমান এসেছে পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশ থেকে। ফরাসি ভাষাভাষী আরবীয়রা, বিশেষ করে আলজেরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো ইত্যাদি এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে আগত মুসলমানরা সাধারণত ভাষাগত কারণে মন্ট্রিয়লে বসবাস করে।কানাডার মুসলিম নারী, কিশোরী-যুবতীরা হিজাব পরে চলাচল করে অবাধে ও নিঃসংকোচে। বিভিন্ন শহরে ভারতের গুজরাটি মুসলমানরা বেশ কিছু মসজিদ-মাদরাসা, ইসলামী স্কুল ও ইসলামী গবেষণাকেন্দ্র চালু করেছেন।

১৯৯৩ সালে একজন নারীসহ ১০ জন মুসলমান ব্যবসায়ী কানাডিয়ান বিজনেস অ্যাওয়ার্ড লাভ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। দেশীয় গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্বের ক্ষেত্রে অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চেয়ে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এগিয়ে রয়েছেন কানাডীয় মুসলমানরা। অন্যদিকে দেখা গেছে, শিক্ষাঙ্গনে ৩১ শতাংশ স্নাতকধারী মুসলমান, যেখানে কানাডার মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৭ শতাংশ স্নাতকধারী।কানাডায় প্রতি বছর অক্টোবর মাসজুড়ে উদযাপন করা হয় ইসলামী ইতিহাস মাস। ২০০৭ সালে কানাডার সরকার কর্তৃক প্রথমবারের মত স্বীকৃতি পাবার পর থেকেই, এই মাসটি দেশের মুসলিম কমিউনিটিকে সম্মান জানানোর এবং দেশকে গড়ায় মুসলমানদের অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য এ মাসটি পালিত হয়ে আসছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...