স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলে ইসলাম ও মুসলমান

 




মো.আবু রায়হানঃস্ক্যান্ডিনেভিয়া উত্তর ইউরোপের তিনটি দেশ তথা - নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্কের জন্য দেয়া নাম। এদের মধ্যে নরওয়ে ও সুইডেন স্ক্যান্ডিনেভীয় উপদ্বীপ গঠন করেছে। দেশ তিনটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত দিক থেকে পরস্পরের সাথে সম্পর্কিত। অনেক সময় আইসল্যান্ড , ফারো দ্বীপপুঞ্জ, ডেনমার্কর অধীন গ্রীণল্যান্ডকেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কখনো কখনো ফিনল্যান্ডকেও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অংশ মনে করা হয়, যদিও বাকী দেশগুলির সাথে ফিনল্যান্ডের কোন ভাষাগত সাদৃশ্য নেই। অধুনা উত্তর ইউরোপের পাঁচটি দেশ নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড ও আইসল্যান্ডের জন্য নর্ডীয় রাষ্ট্রসমূহ পরিভাষাটি বেশি ব্যবহৃত হয়। দেশগুলি ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পরস্পর একতাবদ্ধ।স্ক্যান্ডিনেভিয়ার আয়তন ৩,৪২৫,৮০৪ বর্গকিলোমিটার। ২০১৭ সালের অনুমানের ভিত্তিতে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় প্রায় ২১ মিলিয়ন মানুষ রয়েছে। এই অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গমাইলে ৬০ জনেরও কম।
নিশীথ সূর্যের দেশ হিসেবে পরিচিত নরওয়ে, যেখানে মধ্যরাতেও সূর্যের দেখা মেলে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের দেশ নরওয়ের কিছু অঞ্চলে দুই থেকে চার মাস পর্যন্ত একটানা সূর্যের আলো বিদ্যমান থাকে এবং রাতের অন্ধকারের পরিবর্তে আকাশে গোধূলির আলো ফুটে থাকে। আবার শীতকালে অঞ্চলটি থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। আর এ সময়ই নরওয়ের আকাশকে সাজিয়ে রাখে বর্ণিল আলোর খেলা। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের অন্ধকার রাতগুলোতে নরওয়ের আকাশে দেখা যায় এই আলোর খেলা।বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে নরওয়ে। নরওয়ে উত্তর ইউরোপের একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র,এর রাজধানী শহরের নাম অসলো ।নরওয়ের পূর্বে সুইডেন, দক্ষিণে ফিনল্যান্ড ও পশ্চিমে রাশিয়া অবস্থিত। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ও ব্যারেন্টস সাগরের নরওয়ের জলসীমা আছে। নরওয়ের আয়তন ৩,৮৫,২৫২ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৫৫ লাখ। নরওয়ে পৃথিবীর ১১৯তম জনবহুল দেশ। ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন জন ঘনত্ব বিশিষ্ট রাষ্ট্র নরওয়ে। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৬.৫৩ জন মানুষ বাস করে।ইসলাম নরওয়ের একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। খ্রিস্টান ধর্মের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম।নরওয়েতে ইসলামের সূচনা ১২৬০ সালে, যখন তিউনিশিয়ার সুলতান নরওয়ের রাজা হকন হকন্সসনের জন্য মূল্যবান উপহার পাঠিয়েছিলেন; যদিও বিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত নরওয়েতে মুসলমানদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য ছিল না। Muslims arrived in Norway in greater numbers in the 1960s, mainly as labor immigrants. Among the first to organize themselves as Muslims was the Ahmadiyya community, who came to Norway through the missionary Yousuf Kamal, who introduced Ahmadiyya in Scandinavia in the mid-1950s.পরবর্তী সময় ইসলামের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করেছে তারা।১৯৯০ সালে নরওয়েতে মুসলমানের সংখ্যা ৫০০ জন থেকে বেড়ে তিন হাজারে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১১ সালে নরওয়েতে সরকারিভাবে নিবন্ধিত মুসলিমের সংখ্যা ছিল, ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫ জন। যা পুরো দেশের জন্যসংখ্যার প্রায় ২.৩ শতাংশ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১০ সালে নরওয়েতে ৩.৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৫.৭ শতাংশ মুসলিম ছিল।একটি বেসরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী নরওয়েতে ২০০৫ সালে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজারের মতো এবং ২০০৯ সালে ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজারের মতো।মুসলমান সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ অংশে অভিবাসী ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, পাকিস্তানি বংশের নরওয়েবাসী সবচেয়ে দৃশ্যমান এবং সুপরিচিত গোষ্ঠী। শতকরা প্রায় ৫৫ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায় অসলো ও আকেরশাসের কাউন্টিতে বসবাস করেন।বর্তমানে নরওয়েতে ধর্ম পরিবর্তন ও প্রবাসীদের মাধ্যমে মুসলমানদের সংখ্যা (বেসরকারিভাবে) ২ লাখের কাছাকাছি পৌঁছেছে। এদের অনেকেই পাকিস্তান, সোমালিয়া, ইরাক ও মরক্কো বংশোদ্ভূত।কিন্তু দিন দিন সেখানকার সচেতন নাগরিকদের কাছে জনপ্রিয় ধর্ম হয়ে উঠছে ইসলাম। উত্তম জীবনপন্থার খোঁজে ইসলাম নিয়েই বেশি গবেষণা করছে নরওয়ের লোকজন।দেশটিতে ব্যাপক প্রচারিত সংবাদপত্র ভার্ডেনস গ্যাং বলছে, ২০১৮ সালে নরওয়েতে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা তিন হাজারে পৌঁছেছে।যা ১৯৯০ সালের সময় থেকে ৬ গুণেরও বেশি।নরওয়েতে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন ভিন্নধর্মী লোক মুসলমান হচ্ছে।২০১২ সালে নরওয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন একজন মুসলিম তরুণী হাদিয়া তাজিক। তাঁকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টেলটেনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা নতুন মূল্যবোধ, শক্তি ও ভাবনাগুলোকে জায়গা করে দেওয়ার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ (রয়টার্স)। হাদিয়া তাজিক লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য ছিলেন। তখন তিনি ছিলেন নরওয়ের সবচেয়ে কম বয়স্ক মন্ত্রী। এর আগে ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তিনি বিচারপতি কোনাট স্টোরবার্গেট মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন। একই সঙ্গে মুসলিম মহিলা পুলিশের কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরিধান অনুমোদনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। নরওয়েতে মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলাম ধর্মের প্রতি তাদের আকর্ষণ ক্রমান্বয়ে বাড়ার কারণে ইসলামকে জীবনের সঠিক পন্থা হিসেবে নির্বাচন করছেন নরওয়ের মানুষেরা।নরওয়েরে প্রথম মসজিদটি মুসলমানদের জন্য একটি ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল। ১৯৭৪ সালে রাজধানী অসলোতে এটি উদ্বোধন করা হয়।
সুইডেন ইউরোপের গুরুত্বপূর্ণ দেশ।দেশটির উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে ফিনল্যান্ড, পশ্চিমে নরওয়ে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ওরেসুন্দ ব্রিজ, যেটা দিয়ে ডেনমার্কে যাতায়াতের ব্যবস্থা রয়েছে। সুইডেনের সর্ববৃহৎ শহর এবং রাজধানী হল স্টকহোম । সুইডেনের আয়তন ৪,৫০,২৯৫ বর্গকিলোমিটার। স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশেগুলোর মধ্যে সুইডেন বৃহত্তম এবং ইউরোপের তৃতীয় সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র।মাত্র ৯৫ লক্ষ জনসংখ্যার কারণে সুইডেন ইউরোপের অন্যতম কম জনসংখ্যার ঘনত্বপূর্ণ অঞ্চল। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ২১ জন মানুষ বসবাস করে। সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সির ২০১১ সালের পরিসংখ্যা অনুসারে সুইডেনের মোট জনসংখ্যার সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ মুসলিম। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মতে (২০১১ সালের) সুইডেনে বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ মুসলমান বসবাস করে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্যমতে, বিগত কয়েক দশকে সুইডেনে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৫০ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০০। যা বর্তমানে আট লাখে উন্নীত হয়েছে। সুইডেনের জনসংখ্যার ৮.১ শতাংশ মুসলিম।সুইডেনে ১৯৯৮ সালে ৩.২১ শতাংশ মুসলিম ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের মধ্যেই এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণে এসে দাঁড়ায়। সম্প্রতি প্রকাশিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অন্য ধর্মাবলম্বীরা যে হারে ইসলামের প্রতি ধাবিত হচ্ছে, সে ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই সুইডেনে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ হবে মুসলিম। ২০১৮ সালের জুনে সুইডেনের স্টেট স্ট্যাটিসটিকস অর্গানাইজেশন কর্তৃক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, দেশটির প্রায় এক কোটি জনসংখ্যার ২৪ শতাংশ অভিবাসী। এদের কারণেও সুইডেনে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।The first Muslims to organize themselves in Sweden were a small group of immigrants, primarily of Tatar origin, coming from Russia, Estonia, and Finland. The first in the group to establish himself in Sweden was Ebrahim Umerkajeff (1877–1954), from Penza in Russia, who came to Stockholm in 1897 or 1898, later to be followed by the Turk Akif Arhan (1905–1981) in 1928. From 1944 and the years to follow, more Muslims of Tatar and Turkish origin established themselves in Sweden, and in 1949, they formed the first Muslim association in Sweden, the Turk-Islam Association for Religion and Culture, which comprised 50 to 60 persons.মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সঙ্গে সুইডেনের বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অনেক দিনের। ১৭ ও ১৮ শতকে ওসমানীয় শাসকদের সঙ্গে সুইডেনের সম্পর্ক ছিল গভীর। ইউরোপে ওসমানী রাজ্য অনেক শক্তিশালী ছিল। সুইডিস রাজারা তাদের আনুকূল্য লাভের জন্য সে সময় তুরস্কে তাদের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে। তখন থেকে মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে সুইডেনের পরিচয় হতে থাকে। তবে সুইডেনে মুসলিমদের উপস্থিতি সাম্প্রতিক কয়েক দশকের। সুইডেনে সর্বপ্রথম ১৯৩০ সালে ১৫ জন ব্যক্তি নিজেদের মুসলিম বলে চিহ্নিত করে। তারা প্রাথমিকভাবে বাল্টিক তাতারদের মধ্য থেকে সুইডেনে এসেছিল। সুইডেনের মুসলিমরা মিশ্র জনগোষ্ঠীর। চল্লিশটিরও বেশি দেশ থেকে তারা এখানে এসেছে। প্রথম গ্রুপটি আসে ১৯৬০ সালে। তুরস্ক থেকে অতিথি শ্রমিক হিসেবে। সুইডেনে থাকার ইচ্ছে না থাকলেও তাদের অনেকে থেকে যায়। পরে ১৯৭০ ও ১৯৮০ সালের দিকে তাদের পরিবার আসতে শুরু করে। ধর্ম ও সংস্কৃতি অক্ষুণœ রাখতে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করে। ফলে কিছু মুসলিম স্কুল প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
১৯৮০ সালে দিকে মুসলিম অভিবাসীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তুর্কি মুসলিমদের সংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলে। সবচেয়ে বেশি আসে ইরাক, ইরান, সোমালিয়া, বলকান ও পাকিস্তান থেকে। এ ছাড়া ৭০-এর দশকের পর থেকে বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার থেকে অনেক মুসলিম সুইডেনে যাওয়া শুরু করে।মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ইসলাম বর্তমানে দ্বিতীয় অফিশিয়াল ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। অধিকাংশ সুইডিশ মুসলিম তিনটি বড় শহর স্টকহোম, মালমো ও গোথেনবার্গে বসবাস করে। তাদের অনেকেই বেশির ভাগই আবার শহরতলিতে বসবাস করে। স্টকহোমের রিংকেবি, টেনেস্তা, খারহোলমেন এবং গোথেনবার্গের হাম্মারকুল্লেন ও ইয়ালবো এবং মালমোর রোজেনগর্ড ইত্যাদিতে তাদের বাড়িঘর রয়েছে।আরো অন্যান্য তথ্যে দেখা গেছে, ইসলামফোবিয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মুসলিমদের মুগ্ধকর আচার-আচরণে অন্যরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।আনন্দের বিষয় হলো, ইসলামফোবিয়া বাড়লেও সুইডেনে ইসলাম ও মুসলমানদের অবস্থা দিন দিন ভালোর দিকে যাচ্ছে। এখন সুইডিশ পার্লামেন্টে ৭ জন মুসলিম পার্লামেন্ট সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী সদস্য। সাতজনের ছয়জন কুর্দি মুসলিম, অন্যজন সোমালিয়ান বংশোদ্ভুত লায়লা আলি আলমি। ২০১৮ সালের দেশটিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তারা বিজয়ী হন। যথাক্রমে তারা হলেন- সুইডেন ডেমোক্র্যাটসের সারা সেপ্পালা, লিবারেল পার্টির গুলান আফগি, লেফটিস্ট পার্টির আমিনাহ কাকাবাভে, রোজা গোকলো হেইদেইন, সোস্যাল ডেমোক্র্যাটসের সারকান কোসা, লাওয়েন রিদর ও কাদির কাসিরকা।
ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই সুইডেন একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান বজিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি কোনো প্রকার যুদ্ধে জড়ানো থেকেও বিরত থেকেছে। কিন্তু ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, অদৃশ্য কোনো কারণে শান্তিপূর্ণ এ দেশে মসজিদের ওপর হামলার হার ৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।গত ২৮ শে অগাস্ট ২০১৮ সুইডেনের সর্বদক্ষিণে, ডেনমার্কের সীমান্তবর্তী তৃতীয় বৃহত্তম শহর মালমোতে কোরান পোড়ানোর জেরে কয়েকশ ক্ষুদ্ধ মুসলিম সহিংস বিক্ষোভ করেছে। পাশ্ববর্তী দেশ ডেনমার্কের কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক রাসমুস পালাদুন কোরান পোড়ানোর পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন। তিনি নিজেও এই পোড়ানো কাজে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাধ সাধে সুইডেনের পুলিশ; তাকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দেওয়া হয়নি।কোরান পোড়ানোর পক্ষের লোকদের যুক্তি হল মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অংশ হিসেবে তারা এই কাজ করেছে। এই কাজ করেই তারা থেমে থাকেনি। তারা কোরান পোড়ানোর দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিয়েছে। অথচ সুইডেন বা ডেনমার্কে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার নামে ঘৃণা ছড়ানোর অধিকার কারও নাই। ডেনমার্কে এই কট্টর রাজনীতিক রাসমুস পালাদুন ইতিপূর্বে বর্ণবাদ এবং অন্যান্য অপরাধে সাজা ভোগ করেছিলেন। সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় ইতিহাসের শিক্ষক ম্যাটিয়াস গার্ডেল এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেন, ইসলামফোবিয়ার ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, সুইডেনে ২০১৮ সালে ইসলামফোবিয়া নজিরহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে মুসলমান ও তাদের মসজিদের ওপর হামলার ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলছে। প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় মুসলিমরা বেশি পরিমাণে হামলার শিকার হচ্ছে। এ বর্ণবাদী হামলা এখন সুইডেনের সামাজিক জীবনে দুর্নামের তিলকে পরিণত হয়েছে। সরকারিভাবে ধর্মান্তরিত মুসলিমদের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। তবে মালমো কলেজের ইতিহাসবিদ আন-সোফি রোয়ার্ল্ডের মতে ১৯৬০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৫০০ জন খ্রিস্টান ইসলাম গ্রহণ করেছে। সুইডেনে ছোট-বড় ২৫০টির বেশি মসজিদ রয়েছ। তবে অধিকাংশ মসজিদই বিল্ডিংয়ের বেসমেন্টে এক বা দুটি রুম নিয়ে গঠিত।দক্ষিণ সুইডেনের স্কুরুপ পৌরসভা কর্তৃপক্ষ একটি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মীদের জন্য হিজাব পরিধান নিষিদ্ধ করে। ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ‘সুইডেন ডেমোক্রেটের’ প্রস্তাব অনুযায়ী পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ডেনমার্ক উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের একটি রাষ্ট্র।সরকারিভাবে এটি কিংডম অফ ডেনমার্ক নামে পরিচিত।ডেনমার্ক ধনী ও অত্যন্ত আধুনিক একটি দেশ। এখানকার নাগরিকেরা ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু জীবনযাত্রার মানগুলির একটি উপভোগ করেন। বর্তমানে ডেনমার্ক জুটলান্ড উপদ্বীপের অধিকাংশ এলাকার উপর অবস্থতি একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। এছাড়াও রাষ্ট্রটি ডেনীয় দ্বীপপুঞ্জের বহু শত দ্বীপ নিয়ন্ত্রণ করে। জুটলান্ডের দক্ষিণ সীমান্ত জার্মানিকে স্পর্শ করেছে।পূর্বে জুটলান্ড ও সুইডেনের মাঝে ডেনমার্কের প্রধান দ্বীপগুলি অবস্থিত। এদের মধ্যে জেলান্ড দ্বীপটি সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। ডেনমার্কের ৬০০ বছরের রাজধানী কোপেনহাগেনের বৃহত্তর অংশ জেলান্ডের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত।এছাড়াও স্কটল্যান্ডেরউত্তর-পশ্চিমে ১৮টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ফারো দ্বীপপুঞ্জ এবং তারও অনেক উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অধীন। রাজনৈতিকভাবে ফারো দ্বীপপুঞ্জ ও গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কের অংশ হলেও প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারগুলি বাদে এরা স্বশাসিত।ডেনমার্কের রাষ্ট্র ভাষা ‘ডেনীয়’। এখানকার প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। এছাড়া কানাডা, জার্মানি, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও এ ভাষার প্রচলন রয়েছে। বিশ্বজুড়ে ডেনীয় ভাষাভাষীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।ডেনমার্কের আয়তন ৪২ হাজার ৯২৪ বর্গকিলোমিটার।দেশটির মোট জনসংখ্যা ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার, যার অধিকাংশ খ্রিস্টান।দুই লাখ মুসলমান বাস করে দেশটিতে। গবেষকরা আরো জানান দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারও বেশি। ডেনমার্কে ৭ শতাংশ মুসলমান রয়েছে।সংখ্যার দিক দিয়ে ডেনমার্কে মুসলমানরা সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সংখ্যালঘু।সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধুমাত্র গত ১৬ বছরে ডেনমার্কে মুসলিমের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। We know of Muslim travelers visiting what today is Denmark already during the so-called Viking age and there are traces of connections between the Muslim world and Denmark since the Middle Ages.রাজধানী কোপেনহেগেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা গ্রিটিতে ২০১৪ সালের জুন মাসে ডেনমার্কে প্রথমবারের মতো মসজিদ নির্মাণ করা হয়।সজিদটি নির্মাণে কাতার দুই কোটি ৭২ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছে। ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন ও ব্যাপক সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলোর একটি। কোপেনহেগেনের মুসলিম কমিউনিটি অনেক আগে থেকেই ৭২ হাজার ১১৮ বর্গফুটের একটি মসজিদ কমপ্লেক্সের দাবি করে আসছিল। মুসলমানদের এই দাবি অনুযায়ীই কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মসজিদ, একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, একটি টেলিভিশন স্টুডিও, রেস্তোরাঁ, ক্লাসরুম, চাইল্ডকেয়ার সেন্টার, একটি ব্যায়ামাগারসহ অফিস, মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের আয়তন ছয় হাজার ৭০০ বর্গমিটার। ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যাপারে অন্য ধর্ম ও মতালম্বীদের আগ্রহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি উদ্বেগ এবং পেরেশানিরও শেষ নেই। ডেনমার্কে আরহুশ ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেশটিতে মসজিদের সংখ্যা ও মুসলিম অধিবাসীদের বৃদ্ধি সম্পর্কিত বিষয়ে গবেষণা করছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত দশকে ৪৮ শতাংশ হারে মসজিদ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর ওয়াল্ড বুলেটিন।স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ ডেনমার্কের গবেষকদের গবেষণায় দেখা যায়, ২০০৬ সালে দেশটির মসজিদের সংখ্যা ছিল ১১৫। ২০১৭ সাল পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭০-এ। গত দশকে ডেনমার্কে মসজিদ বৃদ্ধির হার ৪৮ শতাংশ।২০১৮ সালে ডেনমার্কের সংসদে জনসমক্ষে মুখ ঢেকে চলা বা নেকাব ব্যবহার নিষিদ্ধের আইন পাস হয়েছে৷ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের মতো ডেনমার্কের সংসদেও এ সংক্রান্ত আইন পাস হয়৷ ইউরোপের ইসলামোফোবিয়া নিয়ে দিন দিন যে উদ্বেগ বাড়ছে, তারই প্রেক্ষিতে ডেনমার্ক এ আইন পাস করল। ইসলামকে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেছেন ডেনমার্কের স্ট্রাম কুর্স দলের কট্টরপন্থী নেতা রাসমুস পলদান।গতমাসে এই দলের সদস্যরা কোরআন পুড়িয়ে ফেলার পর নেতা রাসমুস পলদান এই মন্তব্য করেন।এছাড়া রাসমুস পলদান সামাজিক মাধ্যমে কোরআন পোড়ানোর ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যায়, এক ব্যক্তি কোরআন পুড়িয়ে ফেলছে।সামাজিক মাধ্যমে রাসমুস পলদান লিখেছেন, অনেক পাপী বলেছিল আমরা কখনোই এটি (কোরআন পোড়ানো) করতে পারবো না। কিন্তু আমরা তা করেছি। ইসলাম একটি 'বাজে' এবং আদিম ধর্ম ,যার ডেনমার্ক, সুইডেন কিংবা কোন সভ্য সমাজে স্থান নেই।

হাজার হ্রদের দেশ’ হিসেবে বিখ্যাত ফিনল্যান্ড ।ফিনল্যান্ড উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে বাল্টিক সাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ফিনল্যান্ড ইউরোপের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত দেশগুলির একটি। হেলসিঙ্কি ফিনল্যান্ডের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।ফিনল্যান্ড উত্তর দিকে স্থলবেষ্টিত। উত্তরে নরওয়ে ও পূর্বে রাশিয়ার সাথে এর সীমান্ত আছে। দক্ষিণে ফিনল্যান্ড উপসাগর এবং পশ্চিমে বথনিয়া উপসাগর। ফিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে হাজার হাজার ক্ষুদ্র, পাথুরে দ্বীপ আছে।৭০০ বছর সুইডেনের অধীনে শাসিন হবার পর ১৮০৯ সালে এটি রুশদের করায়ত্ত হয়। রুশ বিপ্লবের পর ১৯১৭ সালে এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্ম নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৮ সালে ফিনল্যান্ড ও রাশিয়া বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার একটি চুক্তি সম্পাদন করে এবং ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশ দুইটির মধ্যে দৃঢ় অর্থনৈতিক বন্ধন ছিল। ১৯৯১ সালের পরে ফিনল্যান্ড ইউরোপমুখী হয় এবং ১৯৯৫ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে।ফিনল্যান্ডের এক দশমাংশই জলাশয় আর দুই তৃতীয়াংশ হচ্ছে বনভূমি। মোট আয়তন ৩ লাখ ৩৮ হাজার ১৪৫ বর্গ কিলোমিটার। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, (জুলাই ২০১৮) জনসংখ্যা ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার ৩৬৪ জন।ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দিক দিয়ে ফিনল্যান্ডের অবস্থান তৃতীয়। প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে মাত্র ১৬ জন মানুষ বসবাস করে। সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা লাখেরও বেশি। এদের বেশিরভাগ অভিবাসী। তবে স্থানীয় ও ফিনিশ মুসলমানের সংখ্যাও রয়েছে বেশ।মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ মুসলমান।পিউ রিসার্চ সেন্টার ২০১৬ সালের জরিপ মতে ফিনল্যান্ডের ৫.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ২.৭% মুসলিম।সমস্ত ভাষাভাষী একত্রে গণনা করা হলে ১.৮% বলে জানানো হয়। উচ্চ অভিবাসনের দৃশ্যে, ফিনল্যান্ডের মুসলিম জনসংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৫% হতে পারে যা ফিনল্যান্ডের প্রায় এক মিলিয়ন মুসলমানের সমান হবে।ফিনল্যান্ডে সর্বপ্রথম ইসলামের আগমন ঘটে ১৮০৯ সালে। তখন কিছু তাতার মুসলিম সৈনিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে ফিনল্যান্ডে পা রাখে। তাদের নেতৃত্বে ১৮৩০ সালে ফিনল্যান্ডে প্রথম মুসলিম সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়।১৯১৭ সালে রাশিয়া থেকে স্বাধীন হওয়ার পর সেই মুসলিমরা ফিনল্যান্ডে থেকে যায়। পরে ধারাবাহিকভাবে যুগোশ্লাভিয়া, মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, তুরস্ক, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে থেকে মুসলমানরা ফিনল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করে। ১৯২৫ সালে ফিনল্যান্ডের মুসলিমরা সাইয়েদ উমর আবদুর রহিমের নেতৃত্বে সরকারের কাছে স্বীকৃতি চায়। সে বছরই দেশের সরকার ইসলাম ধর্মকে স্বীকৃতি দেয়।১৯৭১ সালে সে দেশে মুসলিমের সংখ্যা ছিল মাত্র তিন হাজার জনের মতো। কিন্তু এরপর ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে সংখ্যা। মুসলমানদের সংখ্যা অন্য ধর্মাবলম্বী ও ধর্মহীনদের তুলনায় কম হলেও তাদের দৈনন্দিন জীবনাচার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক বন্ধন ও ধর্মীয় ঐতিহ্যে মুগ্ধ হয়ে বহু ফিনিশ ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছেন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রতি বছর ইসলাম গ্রহণকারী ফিনিশদের সংখ্যা গড়ে এক হাজার। এদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি। তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম পুরুষদের বিয়ে করে সংসার গড়ছে।
ধর্মচর্চা ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য ফিনল্যান্ডের মুসলমানরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার নির্মাণ করেছেন।১৯৪০ দশকের গোড়ার দিকে ইয়ারভেনপা শহরে প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রম ও আর্থিক সহযোগিতায় এটির নির্মাণখরচ বহন করা হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে এই মসজিদটির সংস্কার হয়।মুসলিম সংগঠনগুলোর ব্যবস্থাপনায় রাজধানী হেলসিঙ্কি, তামপেরে, তুর্কু, অউলু, জাইভাসকিলা, লাহতি প্রভৃতি অঞ্চলে অনেকগুলো মসজিদ রয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে ও বাসাবাড়িতে সম্মিলিত নামাজঘর রয়েছে ।বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ধর্মচর্চা, ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ ও ধর্ম প্রচারের সুযোগ রয়েছে ফিনল্যান্ডে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এভানজেলিক্যাল লুথেরান গির্জা এখানেই অবস্থিত। অবশ্য দেশের শতকরা ২০ ভাগ মানুষের কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই।হিজাব পরার ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডে সরকারি কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। হেলসিঙ্কির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে, পথঘাট ও শপিংসেন্টারে ইসলামী পোশাকে মেয়েদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও মুসলমানদের রয়েছে চমত্কার সম্পর্ক। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ফিনল্যান্ড সরকার ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি মুসলিমবান্ধব।ফিনল্যান্ডের মুসলিমরা আধুনিক ইসলামী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে প্রথম ১৯৫২ সালে। এর নাম ফিনিশ ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে আরব বংশোদ্ভূত মুসলমানদের মাধ্যমে পরিচালিত সংগঠন ইসলামিক সোসাইটি অব ফিনল্যান্ড ও রয়েছে। ১৯৮৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।তাছাড়া মুসলিমরা হেলসিঙ্কিতে ইসলামিক সেন্টার ও যুব ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করেছে। মসজিদ, শিশুদের স্কুল, দেশীয় অনুষ্ঠানের ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আলাদা আলাদা কনভেনশন সেন্টার, পাঠাগার ও অভ্যর্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি ইসলামিক সেন্টারের আওতাধীন রয়েছে। তারা ফিনল্যান্ডের ভাষায় পবিত্র কোরআনও অনুবাদ করেছে।
আইসল্যান্ড সরকারী নাম আইসল্যান্ড প্রজাতন্ত্র । ইউরোপ মহাদেশের একটি প্রজাতান্ত্রিক দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম রেইকিয়াভিক। দেশটি উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে গ্রীনল্যান্ড, নরওয়ে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, এবং ফারো দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সদাসক্রিয় ভূ-গাঠনিক প্লেটগুলির সীমারেখার ঠিক উপরে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ।আইসল্যান্ডের আয়তন প্রায় ৪০ হাজার বর্গকিলোমিটার। যা বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতিয়াংশের সমান। দেশটিতে মাত্র তিন লাখ ৪৮ হাজারের কিছু সংখ্যক বেশি মানুষ বসবাস করে। এর মধ্যে রাজধানী রিকজাভিকেই বসবাস করে প্রায় অর্ধেক মানুষ।আইসল্যান্ডে ইসলাম একটি সংখ্যালঘু ধর্ম। পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুমান করেছে যে আইসল্যান্ডে মুসলমান সংখ্যা তার ১০,০০০ ন্যূনতম প্রান্তিকের নীচে ছিল এবং সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে এই সংখ্যাটি ১,৩০০ এর নিচে বা মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.৪% ছিল।আইসল্যান্ডে প্রথম মুসলমানদের আগমন সম্ভবত ১৬২৭ সালে ঘটেছিল, যখন ডাচ মুসলিম জন জানসুন এবং তার বার্বারি জলদস্যুরা দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল, ভেস্তমান্নায়জার এবং পূর্ব ফিজার্ডস সহ আইসল্যান্ডের কিছু অংশে আক্রমণ করেছিল। এই ঘটনায় আইসল্যান্ডিক ইতিহাসে টাইরকজারানি (তুর্কি অপহরণ) নামে পরিচিত। এতে আনুমানিক ৪০০-৮০০ আইসল্যান্ডারকে দাস হিসাবে বিক্রি করা হয়েছিল।১৯৭০ এর দশকের দিকে ইসলাম আইসল্যান্ডিক সংস্কৃতিতে উপস্থিতি অর্জন শুরু করেছিল, আংশিকভাবে ইসলামী বিশ্ব থেকে অভিবাসন এবং আংশিকভাবে আইসল্যান্ডদের ভ্রমণকালে ইসলামি সংস্কৃতিতে প্রকাশের মধ্য দিয়ে । কিছু অভিবাসী কেবল তাদের নিজস্ব মতামত নিয়ে আসে; অন্যরা শরণার্থী হিসাবে এসেছিল। ১৯৯৩ সালে কোরান প্রথম আইসল্যান্ডিক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল, ২০০৩ সালে একটি সংশোধিত সংস্করণসহ প্রকাশ করা হয়।আইসল্যান্ডের মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন (Félag múslima á Íslandi) ১৯৯৭ সালে ফিলিস্তিনি অভিবাসী সালমান তামিমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারিতে স্বীকৃতি পায়।২০১০ সাল থেকে সভাপতি ছিলেন ইব্রাহিম সোভেরির অগ্নারসন।২০১৪ হিসাবে সমিতির ৪৬৫ জন সদস্য রয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি আইসল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন; সম্ভবত ৪০-৫০ জন অমুসলিম পিতা-মাতার সন্তান।সবচেয়ে দীর্ঘ রোজা হচ্ছে গ্রিনল্যান্ড, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডের মুসলিমদের।গ্রিনল্যান্ডে ২২ ঘণ্টা, নরওয়ে ও ফিনল্যান্ডের মুসলিমদের প্রায় ২১ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল