ইতালির মুসলমানদের সংকট ও দিনকাল




মো আবু রায়হানঃইতালি পশ্চিম ইউরোপের একটি একীভুত প্রজাতান্ত্রিক সংসদীয় রাষ্ট্র। ইতালির উত্তর সীমান্তে আল্পস্ পর্বতমালা সংলগ্ন ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া ও স্লোভেনিয়া অবস্থিত এবং দক্ষিণে সম্পূর্ণ ইতালীয় উপদ্বীপ, মেডিটারিয়ান সমুদ্র সংলগ্ন দুই মহাদ্বীপ সিসিলী ও সারদিনিয়া এবং আরো অনেক ছোট ছোট দ্বীপে পরিবেষ্টিত। সান মারিনো ও ভ্যাটিক্যান সিটি নামের দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ইতালি অধিভুক্ত। ইতালীর আয়তন প্রায় ৩,০১,৩৩৮ বর্গ কিলোমিটার।সাড়ে ছয় কোটির উপরে অধিবাসী সংবলিত ইতালি জনসংখ্যার দিকে ইউরোপে পঞ্চম ও বিশ্বে ২৩তম জনবহুল দেশ। এটাকে বিশ্বের ২৩তম উন্নত দেশ রূপে গণনা করা হয় ও জীবনের মান নির্দেশ বিচারে বিশ্বের সেরা দশে ইহার স্থান। ইতালীয়রা খুব উন্নত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত এবং প্রতি কাপিটাতে আছে উচ্চ নমিনাল জিডিপি । ইতালি হচ্ছে ইউরোপিয়া ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এটি ইউরোজোনেরও একটি অংশ। এছাড়াও এটির জি-৮, জি-২০ এবং ন্যাটোর সদস্যপদ রয়েছে। ইতালির রয়েছে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ডিফেন্স বাজেট এবং ন্যাটো নিউক্লিয়ার সরঞ্জামের অংশীদারত্ব। ইতালির ইউরোপীয় ও পৃথিবীব্যাপী সামরিক, সাংস্কৃতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কে বিশাল ভূমিকা পালন করে। ইউরোপীয় রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব দেশটিকে দিয়েছে আঞ্চলিক শক্তি।রোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ছিল ইতালি। আধুনিক ইতালির জন্ম হয় সাভোয়ার রাজা দ্বিতীয় ভিক্টর ইমানুয়েলের সময় থেকে।স্বৈরাশাসক মুসোলিনি ১৯২২ সালের ৩০ অক্টোবরে ইতালির ৪০ তম প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন ১৯২৫ সালের ৩ জানুয়ারি।তার রাজনৈতিক দলের নাম ছিল National Fascist Party ফ্যাসিজমের জনক মুসোলিনিকে ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল হত্যা করা হয়।ইতালির মানচিত্র বুটের মত দেখতে। ইতালির রাজা ১৯৪৬ সালের ২ জুন ক্ষমতা ত্যাগ করলে ইতালি প্রজাতন্ত্রে প্রবেশ করে।‘রেনেসাঁস’ একটি  ইতালিয়ান শব্দ। এর অর্থ পুনর্জীবন বা নবজীবন।এর ব্যাপ্তিকাল ছিল চতুর্দশ থেকে সপ্তদম শতক পর্যন্ত।ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয় ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে।

ইতালির অধিকাংশ ব্যক্তি খ্রিস্টান এবং রোমান ক্যাথলিক মতে বিশ্বাসী। ইতালির রোমের ভ্যাটিকান সিটিতে খ্রিস্টধর্মের রোমান ক্যাথলিক অংশের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ বাস করেন।২০১২ সালের পিউ ফোরামের করা ধর্ম ও জন জীবন সম্পর্কিত গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ জরিপ অনুযায়ী, ইতালীয় নাগরিকদের মধ্যে ৮৩.৩% খ্রিস্টান, ১২.৪% ধর্মবহির্ভূত, নাস্তিক, বা আজ্ঞেয়বাদী, ৩.৭% মুসলমান এবং ০.৬ঁ% অন্যান্য ধর্মালম্বী।ইতালিতে মুসলমানদের উপস্থিতি নবম শতাব্দীতে যখন সিসিলি আব্বাসীয় খিলাফতের নিয়ন্ত্রণে আসে।দ্বাদশ শতাব্দী অবধি ইতালিতে অসংখ্য মুসলমানের উপস্থিতি ছিল। সিসিলির নরম্যান বিজয় উত্তর আফ্রিকার দিকে মুসলমানদের ধর্মান্তরকরণ এবং দেশত্যাগের কারণে ধীরে ধীরে ইসলামের পতন ঘটায়। একটি ছোট মুসলিম সম্প্রদায় যদিও কমপক্ষে ১৩০০ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিল। তারপরে, বিশ শতক অবধি, ইতালিতে কার্যত ইসলামের অস্তিত্ব ছিল না। In the Middle Ages, Italy played host to an Islamic presence that left a lasting impact. For nearly five centuries, from 827 to 1300, Islam’s presence in Sicily and other parts of the Mezzogiorno1 enabled Italy to play a central role in a Mediterranean society endowed with considerable ethnic and religious diversity. The richness of Italian culture, art, and economics—all of which approached their zenith during this period—was enhanced by the contributions of the Muslim community. বিংশ শতাব্দীতে, সোমালিয়া থেকে প্রথম সোমালি অভিবাসীরা আসতে শুরু করেছিল। পরবর্তী বছরগুলিতে পাকিস্তান, বালকান, বাংলাদেশ, ভারত, মরোক্কো, মিশর এবং তিউনিসিয়া থেকে অভিবাসি হয়েছে। ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী ইতালিতে বসবাস করলেও ইসলামকে ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না রাষ্ট্রটি। Unlike Christianity and Judaism, Islam isn’t formally recognized in Italy. This means that mosques cannot receive public funds, Islamic weddings have no legal value and Muslim workers aren’t entitled to take days off for religious holidays.ইতালীয় সরকারের তরফ থেকে ক্যাথলিক ধর্ম থেকে আলাদা একটি ধর্মের সরকারী স্বীকৃতি প্রকৃতপক্ষে প্রস্তাবিত ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং সরকারের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির পরে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির দ্বারা অনুমোদিত হয় । এই জাতীয় স্বীকৃতি কেবলমাত্র একটি প্রদত্ত ধর্মের অনুসারীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে না বরং প্রস্তাবিত ধর্মের নীতিগুলি এবং সংবিধানের মধ্যে সাদৃশ্য হওয়া প্রয়োজন । সরকারী স্বীকৃতি একটি সংগঠিত ধর্মকে জাতীয় "ধর্ম কর" থেকে উপকারের সুযোগ দেয় । ২০০৪ এর শেষদিকে, ইতালির মন্ত্রী গিউসেপ্পে পিসানু মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব তৈরির প্রয়াসে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।ইতালি কর্তৃপক্ষ ২০০৫ সালে অভিবাসী মুসলমানদের নাগরিক সুবিধা বাড়ানো এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য একটি কাউন্সিল গঠন করেছে। এ কাউন্সিল অভিবাসী মুসলমানদের সব বিষয় দেখভাল করে।কাউন্সিলটি মুসলিম জনসংখ্যার ১৬ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত, যা আন্তঃরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দ্বারা নির্বাচিত হয়। এই কাউন্সিলের লক্ষ্য ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে ইতালীয় সরকারের সাথে ঘন ঘন আলাপ-আলোচনা করা। বাধ্যবাধক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোনও বাস্তব ক্ষমতা কাউন্সিলের নেই। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে বিদ্যমান ।কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে মতভেদ কাজকে মন্থর করে দেয়।

মস্ক অফ রোম
১৯৭০ সালে দেশটিতে মাত্র দুই থেকে তিন হাজার মুসলমান বসবাস করত। সেখানে ৫০ বছর পরে ২০১৫ সালে দেশটিতে মুসলমানের সংখ্যা ২০ লাখে এসে পৌঁছেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখে জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর নিউ রিলিজিয়নস স্টাডিসের (সেসনার) পরিচালক সমাজবিজ্ঞানী ম্যাসিমো ইনট্রোভিন হতবাক হয়ে গেছেন।ম্যাসিমো ইনট্রোভিন বলেন,মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বেশ আশ্চর্যজনক। কেননা তিনি বলেন, ইতালিতে মুসলমানদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পর ইতালির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম হিসেবে অবস্থান করছে ইসলাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইতালিতে অভিবাসীদের অব্যাহত আগমনের ফলে মুসলমানদের সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়বে। গত ৩ বছরে খ্রিস্টান ও মুসলমান মিলিয়ে ৪ লাখের বেশি অভিবাসী গ্রহণ করেছে ইতালি।গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপ সার্ভে ২০১২ মতে ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ। তবে পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে ইতালিতে মুসলমানের হার ক্রমবর্ধমান। তাদের মতে ২০২০ সালে মুসলমানের হার ৪.৯ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে তা ৯.৫ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০১৬ সালের পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ইতালিতে ১,৪০০,০০০ জন মুসলমান (ইতালিয়ান জনসংখ্যার ২.৩%) রয়েছেন, ইতালির বিদেশী জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ (২৫০.০০০ জন ইতালীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন)। ইতালির বেশিরভাগ মুসলমান হলেন সুন্নি, শিয়া সংখ্যালঘু্‌, কয়েকজন আহমদী মুসলমানও রয়েছে। এই বৈচিত্রটি পুরো ইতালীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জুড়ে সংগঠনের অভাবকে প্ররোচিত করেছে। সমস্ত ইউরোপে যখন ইসলাম নিয়ে আতংক ছড়ানো হচ্ছে তখনও ইসলাম গ্রহণের হার কমেনি।ইউরোপে ইসলাম সর্ম্পকে মানুষের জানার আগ্রহ আরো বাড়ছে। বাড়ছে ইসলাম গ্রহণকারীর সংখ্যা। বাড়ছে মুসলিম জনসংখ্যা।ইতালীর সরকারি সংস্থার হিসাবে দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় বিশ হাজার অন্যান্য ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছেন।ইতালির এই চিত্র প্রমাণ করে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রসার ঘটছে।২০১৬ সালে ইতালির সাবেক একজন পার্লামেন্ট সদস্যর মেয়ের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে দেশটিতে সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাপক তোলপাড়। ম্যানুয়েলা ফ্রাংকো বারবাতো নামের এই তরুণীর এখন নতুন নাম আয়েশা।ইসলাম গ্রহণের পর ইসলামের অনুশাসন তিনি মানছেন। পূর্ণাঙ্গ হিজাবী এই নারী ইতালির এক সাবেক এমপি ফ্রাংকো বারবাতোর মেয়ে। তিনি তার বাবার খ্রিষ্টধর্ম থেকে ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন।ম্যানুয়েলার এই ইসলাম গ্রহণের ঘটনা এখন ইতালিতে আলোচনার বিষয়। খ্রিষ্টান উগ্রপন্থীরা কঠোরভাবে সমালোচনা করছেন তার। সমালোচনা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তার বাবাও। ফ্রাংকো বারবাতোকে হাফিংটন পোস্টের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার মেয়ে তো মুসলমান হয়ে গেল, এখন আপনার কেমন লাগছে?তার উত্তর ছিল, ‘শুধু খারাপ না, খুবই খারাপ লাগছে। কারণ এটি একটি অত্যন্ত কঠোর ধর্ম, খুবই চরমপন্থী, একদম সেকেলে! এই ধর্মটি মৌলবাদী। আমার মেয়ে আমার সাথে থাকাবস্থায় আমি নিজে দেখেছি। প্রতিদিন দেখেছি নামাজের সময় হলে সে সন্তানের কথাও ভুলে যায়!এজন্য আমি তার প্রতি রাগ করতাম। সে যা নিজের জন্য পছন্দ করেছে আমি তাতে খুবই ব্যাথিত। তবে আয়েশা ইসলাম গ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত, সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমার আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য আমি গর্বিত।এসব আল্লাহর নিয়ম, আমার অভিযোগ করার কী আছে?’ নিজের হিজাব পরিধান নিয়ে চারপাশে যত কথা। তার উত্তরে আয়েশা বলেন, ‘হিজাব আমার জীবনের অংশ, যা আল্লাহ আমার জন্য পছন্দ করে দিয়েছেন।’আয়েশা আগে বাবার সাথে থাকলেও প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়ার পর তার স্বামীকে নিয়ে ভারতে চলে গেছেন। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের গ্রাজুয়েশন করছেন।
ইউরোপে থাকা মুসলিমদের বড় একটি অংশ বসবাস করেন ইতালিতে। ইউরোপের চতুর্থ সর্বোচ্চ মুসলিমের বসবাস দেশটিতে। অথচ সেখানে মসজিদ আছে মাত্র ৮টি। ইতালির তুলনায় ফ্রান্সে তিন থেকে চার গুণ বেশি মুসলিম আছে। দেশটিতে মসজিদ আছে দুই হাজার ২০০টি। ইউরোপের আরেক দেশ যুক্তরাজ্যে ইতালির চেয়ে দ্বিগুণ মুসলমান রয়েছে। দেশটিতে মসজিদ আছে এক হাজার ৫০০টি।২০০৮ সালের পর বহু মসজিদের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইতালিতে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়লেও দেশটিতে মাত্র চারটি মসজিদ সরকারের নিবন্ধন পেয়েছে। আর ৮টি মসজিদ রয়েছে অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ ছাড়া সারাদেশে প্রায় ২ হাজার অনিবন্ধিত মসজিদ ও নামাজের জায়গা রয়েছে। বিভিন্ন কারণে ইতালিতে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। তাই বিকল্প হিসেবে গ্যারেজ, ভবনের নিচতলা কিংবা গুদামকে নামাজের জন্য ব্যবহার করেন ইতালির মুসলিমরা।নামাজের জন্য ব্যবহৃত এসব স্থানকে মুসাল্লা বলা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে মুসলিমদের বেশকিছু ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোও নামাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। গোটা ইতালিতে এমন ৮০০ ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মুসাল্লা রয়েছে।ইতালিতে মসজিদ সংকটের অন্যতম কারণ হলো, দেশটিতে ইসলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত কোনো ধর্ম নয়। কোনো ধর্ম রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেলে ওই ধর্মের উপাসনালয়গুলো নিরাপত্তা পায়। এ ছাড়া উপাসনালয় নির্মাণে সরকারি সহায়তাও পাওয়া যায়। কিন্তু ইতালিতে মুসলিমরা এ ধরনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত।দ্বিতীয়ত, ইতালিতে মসজিদ নির্মাণের অনুমতি পাওয়া বেশ কঠিন বিষয়। মসজিদ নির্মাণের আগে স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখেও পড়তে হয়। স্থানীয়দের রোষানলে না পড়তে ইতালির মসজিদগুলোতে মিনার বা গম্বুজ দেওয়া হয় না।ইতালির মসজিদের সিংহভাগই রাজধানী রোমে অবস্থিত। তাই ইতালির মুসলমানরা চেষ্টা করছেন অন্য শহরগুলোতে মসজিদ নির্মাণের। এরই সূত্র ধরে ২০১৫ সালে ইতালির ঐতিহ্যের শহর ভেনিসে নির্মাণ করা হয়েছে কাতার সরকারের অর্থায়নে প্রথম মসজিদ। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে বন্ধ থাকা শান্ত মারিয়া দেলা মিজেরিকডিয়া গির্জাটি ক্রয় করে ওই মসজিদটি বানানো হয়।মস্ক অফ রোম হলো ইতালি ও ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। যা আফগানিস্তানের রাজপুত্র মুহাম্মদ হাসান ও তার স্ত্রী রাজিয়া বেগমের উদ্যোগে সৌদি আরবের যুবরাজ ফয়সালের অর্থায়নে নির্মিত হয়। এ মসজিদের আয়তন ৩০০০ বর্গমিটার(৩২০,০০০ বর্গফুট)। এখানে একত্রে প্রায় ১২০০০ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন।১৯৭৪ সালে এ মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা গৃহিত হয়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৮৪ সালে। নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তৎকালীন ইতালিয়ান প্রধানমন্ত্রী স্যান্ড্রো পার্টিনি। ১৯৯৪ সালে মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়। ১৯৯৫ সালের ১ জুলাই মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।
ইতালির বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ইতালির ৬০ হাজার বন্দির মধ্যে ১০ হাজারই বিদেশি। তাদের বেশির ভাগ মরক্কো, তিউনিশিয়া ও রোমানিয়ার নাগরিক। ইতালির বন্দিদের মধ্যে সাত হাজার ২০০ জন মুসলিম। ২০১৩ সালের হিসাবে, ইতালিতে মোট ৮৭৬০০ জন বন্দীর মধ্যে আনুমানিক ১৩,৫০০ (২০.৮%) মুসলিম দেশগুলি থেকে এসেছিল, বেশিরভাগ মরক্কো এবং তিউনিসিয়ার।রোমে কমপক্ষে ৩৫% ইতালীয় বন্দী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে আসে এবং প্রায় এক চতুর্দশ ইতালীয় কারাগারে এরা নামাজে অংশ নেয়। তাদের জন্য ৯৭ জন ধর্মীয় শিক্ষক রয়েছেন। ৪৪ জন বন্দি দাবি করেন, তারা জেলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইতালির সম্প্রতি ইতালি সরকার ও ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিটিজ অ্যান্ড অরগানাইজেশন ইন ইতালির (ইউসিওআইআই) মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যার অধীনে ইমামরা কারাগারের মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়ার ও সেখানে নামাজের ইমামতি করার সুযোগ পাবেন। চুক্তি অনুযায়ী ইউসিওআইআই ইতালিতে ইমামের দায়িত্ব পালনকারীদের একটি তালিকা দেবে, যারা সারা দেশের কারাগারের মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন এবং তাদের নামাজের ইমামতি করবেন। কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে ইমামদের মতামত নেওয়া হবে।ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কমিউনিটির হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মুসলিমদের জন্য মাত্র ৭৬টি কবরস্থান রয়েছে।
যদিও ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন এবং স্পেনের অংশীদারদের তুলনায় ইতালিতে মুসলিম জনসংখ্যা খুব কম, ইটালিয়ান ও মুসলমানদের মধ্যে অতীতের উত্তেজনার কারণে ইতালিতে ইসলামবিরোধী অনুভূতি বেশি, যা ১১ ই সেপ্টেম্বরের পরে স্পষ্ট হয়ে উঠে । ৭ জুলাই ২০০৫ লন্ডন বোমা হামলা আরো তীব্র করে তোলে। ২০১৯ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টারের দ্বারা প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে ৫৫% ইটালিয়ান মুসলমানদের সম্পর্কে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছে।বেশিরভাগ স্থানীয় মিডিয়া পরোক্ষভাবে পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদের সাথে ইসলামকে সংযুক্ত করে। গত বছর রাজধানী রোম থেকে ১৮৬ কিলোমিটার উত্তরে সিয়ানা এলাকায় মুসলমানদের গ্রান্ড মসজিদে ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা নিয়েছিল দেশটির উগ্রপন্থী ফার রাইট খ্রিস্টানরা । এজন্য মজুদ করে ছিলো বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, বোমা ও ডেটোনেটর। নামাজের সময় পুরো মসজিদ উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিলো তাদের।উগ্র খ্রিস্টানদের এই ভয়াবহ হামলার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যাওয়াতে ভয়ানক এক বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে ইতালির মুসলিমরা ।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল