সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

গ্রিসের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ক্রিট | ইউরোপের মুল ভূখণ্ড থেকে ক্রিট দ্বীপের দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার; এশিয়া থেকে ১৭৯ কিলোমিটার ও আফ্রিকা থেকে এই দ্বীপের ন্যুনতম দূরত্ব ২৮৪ কিলোমিটার।৮৩৩৬ বর্গ কিলোমিটারের এই দ্বীপে ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী ক্রিটের জনসংখ্যা ৬,২৩,০৬৫ জন। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আয়তনের দিক থেকে সিসিলি, সার্ডিনিয়া, সাইপ্রাস ও কর্সিকার পরেই এটি ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পঞ্চম বৃহত্তম দ্বীপ। এখানকার নাগরিকদের বলা হয় ‘ক্রিটান’। গ্রিকের পাশাপাশি এখানে ইংরেজি, জার্মান, ফ্রেঞ্চ ভাষারও চল আছে।দ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও আশপাশের ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে ‘ক্রিট প্রশাসনিক অঞ্চল’ গঠিত। এটি গ্রিসের ১৩টি প্রধান প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্যতম। এ অঞ্চলের মূল কেন্দ্র বা রাজধানী হেরাক্লিওন।ক্রিটের সবচেয়ে বড় শহর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হল হেরাক্লিওন। গ্রিসের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে ক্রিটের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। মূল গ্রিক সংস্কৃতি থেকে বেশ কিছুটা স্বতন্ত্র এই দ্বীপের নিজস্ব কাব্য ও সঙ্গীত এই অঞ্চলের আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুপ্রাচীন মিনোয়ান সভ্যতার (মোটামুটি ২৭০০ - ১৪২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ধাত্রীভূমি এই ক্রিট দ্বীপই। বর্তমানে এই সভ্যতাকে ইউরোপ ভূখণ্ডের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক সভ্যতা বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।

সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মুসলিম বিজয়ের প্রথম অবস্থা থেকেই ক্রীট মুসলিম বাহিনী দ্বারা অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।তারা প্রথম ৬৫৪ সালে এবং তারপরে আরেকটি ৬৭৪/৬৭৫ সালে আক্রমণ চালায় এবং দ্বীপের কিছু অংশ উমাইয়া খলিফা আল-ওয়ালিদ প্রথম( ৭০৫–৭১৫) এর রাজত্বকালে সাময়িকভাবে দখল করা হয়েছিল। যাইহোক, তৎকালীন সময়ে এই দ্বীপটি জয় করা যায়নি এবং ৮ম শতাব্দীতে মাঝে মাঝে অভিযান সত্ত্বেও, এটি বাইজেন্টাইন হাতে সুরক্ষিত ছিল। আরব নৌঘাঁটি লেভেন্টে থেকে কার্যকরভাবে অভিযান পরিচালনার জন্য খুব দূরে ছিল ক্রীট ।দীর্ঘদিন পর আবু হাফস উমর-ইকরিতিশির নেতৃত্বে একদল নির্বাসিত আন্দালুশিয়ান ক্রীটের কিছু অংশ জয় করেছিলেন। ৮২৪ বা ৮২৭/৮২৮ একটি স্বাধীন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। ক্রীট আমিরাত ছিল একটি মুসলিম রাষ্ট্র যা ৮২০ এর দশকের শেষভাগ থেকে ৯৬১ সালে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দ্বারা দ্বীপটিকে পুনরায় দখল করার আগ পর্যন্ত ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপে ক্রীট আমিরাতের অস্তিত্ব ছিল।ক্রীট আমিরাতের আব্বাসিয় খিলাফাতের সঙ্গে সম্পর্ক ও তুলিন বংশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। ক্রীট আমিরাত মুলত স্বাধীন ছিল।বাইজান্টাইনরা একটি প্রচারণা শুরু করেছিল যা বেশিরভাগ দ্বীপের বেশিরভাগ অংশ ৮৪২ এবং ৮৪৩ সালে থিওটিস্টোসের অধীনে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু পুনঃতফসিলটি সম্পন্ন হয়নি এবং শীঘ্রই তার বিপরীত পরিবর্তন ঘটে। পরে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দ্বীপটি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল এবং এর অস্তিত্বের প্রায় ১৩৫ বছর ধরে আমিরাত বাইজান্টিয়ামের অন্যতম প্রধান শত্রু ছিল। ক্রীট ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্রের লেনের কমান্ড দিয়েছিল এবং এজেনিয়ান সমুদ্রের বাইজেন্টাইন-নিয়ন্ত্রিত উপকূলে বিধ্বস্ত হওয়া মুসলিম কর্সার বহরের জন্য একটি অগ্রণী বেস এবং আশ্রয়স্থল হিসাবে কাজ করেছিল। আমিরাতের অভ্যন্তরীণ ইতিহাস কম সুপরিচিত, তবে সমস্ত বিবরণ কেবল জলদস্যুতা থেকে নয়, ব্যাপক বাণিজ্য ও কৃষিক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত সমৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে । নাইকফরোস ফোকাস ৯৬০-৯৬১ সালে ক্রীটের বিরুদ্ধে একটি বিশাল প্রচার শুরু করেছিল যার দ্বারা আমিরাতের অবসান ঘটিয়েছিল। ১৬৪৫ সালে শুরু করে অটোমান সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে ক্রিটকে ভেনিস প্রজাতন্ত্রের কাছ থেকে নিয়ে নেয়, যা এটি ১২০৪ সাল থেকে শাসন করে। চূড়ান্ত বড় পরাজয়ের পরে ক্যান্ডিয়া (আধুনিক ইরাকলিয়ন) ১৬৬৯ সালে অটোম্যানদের কাছে পতিত হয় (যদিও কিছু সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জ ১৭১৫অবধি ভিনিশিয়ান ছিল)।ক্রীট ১৮৯৭ অবধি অটোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...