সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাশিয়ায় ইসলাম ও মুসলিম

 



মো. আবু রায়হানঃ রাশিয়া সরকারিভাবে রুশ ফেডারেশন নামে পরিচিত যেটা পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত।রাশিয়া আয়তনের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র।বর্তমান আয়তন ১,৭১,২৫,১৯১ বর্গ কি.মি., যা বিশ্বের মোট ভূমির এক–অষ্টমাংশ। ইউরেশিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত রাশিয়া আয়তনের দিক থেকে ইউরোপ, ওশেনিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ তিনটির চেয়ে বড় এবং দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের চেয়ে সামান্য ছোট! আয়তনের দিক থেকে ইউরোপ ও এশিয়া উভয় মহাদেশের বৃহত্তম এই রাষ্ট্রটিকে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে বলা যায়, বাংলাদেশের সমান ১১৬টি ভূখণ্ডকে একত্রিত করলে সেই সম্মিলিত ভূখণ্ডটি রাশিয়ার সমান হবে! রাশিয়ার রাজধানী মস্কো দেশটির প্রশাসনিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। রাশিয়া বর্তমানে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই দেশটি অর্ধ প্রেসিডেনসিয়াল ফেডারেল প্রজাতন্ত্র যার সংবিধান ৮৩ টি ফেডারেল বিষয় দ্বারা গঠিত।রাশিয়ার বিশাল ভূখণ্ড পশ্চিমে বাল্টিক সাগর থেকে পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত এবং উত্তরে আর্কটিক মহাসাগর থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণসাগর ও ককেশাস পর্বতমালা পর্যন্ত বিস্তৃত।রাশিয়ার সঙ্গে ১৬টি রাষ্ট্রের স্থল সীমান্ত রয়েছে।রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব পর্যন্ত নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ড (উভয় দেশই কালিনিনগ্রাদ অব্লাস্ত সীমান্ত দিয়ে যুক্ত), বেলারুশ, ইউক্রেন, জর্জিয়া, আজারবাইজান, কাজাখস্তান, চীন, মঙ্গোলিয়া ও উত্তর কোরিয়ার সাথে সীমান্ত আছে। এর পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে দুইটি রাষ্ট্রের জল সীমান্ত রয়েছে: জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত রুশ জাতি বিজয়, আত্মসাৎ এবং অন্বেষণের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করে ইউরোপের পোল্যান্ড থেকে উত্তর আমেরিকার আলাস্কা পর্যন্ত যা ছিল ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম সাম্রাজ্য।রুশ বিপ্লবের পর রুশীয় সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের বৃহত্তম, নেতৃস্থানীয় ও প্রয়োজনীয় সদস্য হয়ে ওঠে যা সংবিধান অনুযায়ী একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ। এসময় এটি অত্যন্ত শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিষ্পত্তিমূলক ভূমিকা পালন করে । সোভিয়েত যুগ বিংশ শতকের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত সাফল্য পেয়েছিল যার মধ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম মহাকাশযান ও প্রথম নভোচারী। ১৯৯১ সালের ২৫ শে ডিসেম্বর সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন এবং এতে তদস্থলে ১৫টি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, যাদের মধ্যে বৃহত্তম রাষ্ট্র রুশ ফেডারেশন। এগুলো ছিল- আর্মেনিয়া প্রজাতন্ত্র, আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র, বেলারুশ প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া প্রজাতন্ত্র, জর্জিয়া প্রজাতন্ত্র, কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্র, কিরগিজিস্তান প্রজাতন্ত্র, লাটভিয়া প্রজাতন্ত্র, লিথুয়ানিয়া প্রজাতন্ত্র, মলদোভিয়া প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া প্রজাতন্ত্র, তাজিকিস্তান প্রজাতন্ত্র, তুর্কমেনিস্তান প্রজাতন্ত্র, ইউক্রেন প্রজাতন্ত্র, উজবেকিস্তান প্রজাতন্ত্র।প্রায় ৫০ লক্ষ বর্গ কি.মি. ভূমি হারানোর পরও রাশিয়া এখনো বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্র।রাশিয়ার ব্যাপক খনিজ ও জ্বালানি সম্পদ একে বিশ্বের বৃহত্তম মজুদদার হিসেবে তৈরি করেছে। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ। দেশটি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন আটটি স্বীকৃত দেশের মধ্যে অন্যতম এবং দেশটির বিশ্বের বৃহত্তম ধ্বংসাত্মক অস্ত্রভাণ্ডার রয়েছে। রাশিয়া একটি পরাক্রমশালী রাষ্ট্র যেটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং জি-৮, জি-২০, The Council of Europe, The Asia-Pacific Economic Cooperation (APEC), সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, ইউরেশীয় অর্থনৈতিক কমিউনিটি, ইউরোপ নিরাপত্তা সংগঠন কাউন্সিল (ওএসসিই) , বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের কমনওয়েলথের অন্যতম সদস্য।

রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৬০ লাখ।Russian Public Opinion Research Center-এর তথ্য মতে, ২০০৭ সালে রাশিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ছিল ৯৪ লাখ; যা মোট জনসংখ্যার ৮%। কিন্তু বর্তমানে ২০১৭ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী এই সংখ্যার পরিমাণ আড়াই কোটিরও উপরে উন্নীত হয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫%। রাশিয়ার ইসলাম হ'ল দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম বলে প্রচারিত ধর্ম। ২০১৩ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার মুসলমানরা মোট জনসংখ্যার ১৪,২২০,০০০ বা ১০%। ২০১২ সালে পরিচালিত একটি বিস্তৃত সমীক্ষা অনুসারে, রাশিয়ার জনসংখ্যার ৬.৫% মুসলমান ছিল।রাশিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে চলেছে। বিভিন্ন নৃতাত্বিক মুসলিম গোষ্ঠী বিশেষতঃ তাতার, উত্তর ককেশাস ও দাগিস্তান বংশোদ্ভুত স্থানীয় জনগনের মাঝে জন্মহার বেশী। ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক মূল্যবোধ মেনে চলার ফলে রাশিয়ার মুসলমানদের জীবনধারা সুশৃংখল ও সুনিয়ন্ত্রিত। অনেক নৃতাত্বিক স্লাভ গোষ্ঠী সুস্থ জীবনধারার সন্ধানে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিচ্ছেন। এটা সন্দেহাতীতভাবে ইসলামের ক্রমবিকাশ ধারায় ইতিবাচক অগ্রগতি। সমাজতত্ত্ববিদগন পূর্বাভাস দিয়েছেন যে, জনসংখ্যা বিষয়ক এ প্রবনতা যদি আগামী দিনগুলোতে অব্যাহত থাকে তাহলে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যার হার ১৫% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫১% এ উন্নীত হবে। মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে রাশিয়ায়। ইসলাম ধর্মের দিকে ঝুঁকছেন ইউরেশিয়ার বৃহৎ এই দেশটির মানুষেরা।এ বিষয়ে রাশিয়ার গ্র্যান্ড মুফতি রাভিল জাইনুদ্দিন বলেছেন, ২০৩৪ সালে রাশিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগই হবে মুসলিম।
১৯৯৭ সালে রুশ সংবিধানে খ্রিস্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং ইহুদিধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মকেও রাশিয়ার 'সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে'র অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। রুশ মুসলিমদের ইতিহাস রাশিয়াতে প্রায় ১,১০০ বছরের! রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতেই কমপক্ষে ২৫-৩৫ লক্ষের মত মুসলিমের বসবাস! এখানকার রাশিয়ার মুসলিম এলাকাগুলো হচ্ছে- চেচনিয়া, ইংগুশেতিয়া, দাগেস্তান, তাতারস্থান ও কারাজাই চেরকেশিয়া।ইংগুশেতিয়ার ৯৬ শতাংশ মানুষ মুসলিম। দাগেস্তানের মুসলিম জনসংখ্যা ৯২ শতাংশ। তাতারস্থান ও কারজাই এলাকায় ৫০ শতাংশের বেশি মুসলিম। রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও মুসলিম আছে। খ্রিস্টধর্মের পূর্বে ইসলাম ধর্ম রুশ ভূমিতে পৌঁছায়।

ইসলাম প্রথম রাশিয়ে ঢুকে ৮ম শতাব্দীতে দাগেস্তান হয়ে। এরপর ৯২২ সালে রাশিয়ার ভলগা-বুলগেরিয়ায় প্রথম ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত।পরবর্তীতে চেঙ্গিস খানের নাতি বাতু খান ১২৩০-এর দশকে রাশিয়া জয় করে। পরে মঙ্গলরা (তাতার) ইসলাম গ্রহণ করলে রাশিয়ায় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২৩৬ থেকে ১২৩৭ সালের মধ্যে মোঙ্গলরা ভোলগা বুলগার রাষ্ট্র ধ্বংস করে দেয় এবং এরপর সমগ্র রুশ ভূমিকে পদানত করে। ১৩২৭ সালে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক উজবেক খান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এর ফলে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের জন্য রুশ ভূমিসমূহের কর্তৃত্ব মুসলিমদের হাতে ন্যস্ত হয়। এরপর মাস্কোে ও গোল্ডেন হোর্ডের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকলে মস্কোর রাজপুরুষেরা ক্রমাগত গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সংঘর্ষে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন।১৫৫২ সালে রাশিয়ার জার চতুর্থ আইভান গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরসূরি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র কাজান দখল করেন এবং ভৌগোলিক সম্প্রসারণের এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া আরম্ভ করেন।ক্রমে ক্রিমিয়া, ককেশাস এবং মধ্য এশিয়া রাশিয়ার পদানত হয় এবং এর ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে বহু মুসলিম জাতি রুশ শাসনাধীনে আসে। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ায় সব ধর্ম ও ধর্মীয় কর্ম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। মসজিদ, ধর্মীয় উপসনালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো হয়তো ভেঙ্গে ফেলা হয় নয়তো অফিস বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাস্তিক কমিউনিষ্টদের নিবর্তনমূলক শাসনের ফলে রাশিয়ায় ইসলাম ধর্ম ৭০ বছর যাবত প্রকাশ্যে বিকশিত হতে পারেনি। ইসলামের প্রচার-প্রসার, দাওয়াত ও তাবলীগ সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকে। রুশ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংস্কৃতিক রীতি-নীতি পালন স্থগিত হয়ে যায়।রাশিয়ায় ইসলামী শিক্ষার ইতিহাস বড়ই করুন ও মর্মবিদারী। সমাজতান্ত্রিক সরকার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহ দখল করে ফেললে বিদগ্ধ মুসলিম পন্ডিতদের হয়তো হত্যা করা হয় নয়তো কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় অধিকাংশ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। উনবিংশ শতব্দীর শেষে এবং বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে কিছু কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। বলশেভিকগণ এমন একটি নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্রের গোড়া পত্তন করেন যা আধুনিক ইতিহাসে এই প্রথম। কেবল ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয় বরং সব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ করে দেয়। মহান আল্লাহর ইচ্ছায় নাস্তিক্যবাদী রাজত্বের অবসান ঘটলে ধর্মীয় স্বাধীনতা পূণরুজ্জীবিত হয়। বর্তমানে রাশিয়ার মুসলমানগণ নানা অসুবিধা স্বত্ত্বেও ইসলামী শিক্ষা পূণ প্রবর্তনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একজন ইসলাম অনুরাগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি সব সময় রাশিয়ার মুসলিমদের সমর্থনের পাশাপাশি সব রকম সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। তিনি ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যাথিড্রাল মসজিদ নামে একটি মসজিদ উদ্বোধন করেন। যা রাশিয়া তথা ইউরোপের মধ্যে সর্বোবৃহত্ মসজিদ। যেখানে এক সাথে ১০ হাজার লোকের নামাজ পড়া সম্ভব।ভ্লাদিমির পুতিন এক টিভি সংবাদ সম্মেলনে বলেন-‘Islam is a great world religion rooted in the history of Russia, Islam and Christianity are very close, and our Government should support the Muslims organizations.(’ইসলাম রাশিয়ার ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত একটি বিরাট বিশ্বধর্ম। ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্ম অত্যন্ত ঘনিষ্ট এবং আমাদের সরকার মুসলিম সংগঠন গুলোকে সহায়তা দিয়ে যাবে)।’সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়াতে ইসলামের জাগরণ বেড়েছে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত রাশিয়াতে ছিল মোটে ৩০০ টি মসজিদ আর এখন ৮,০০০—এরও বেশি মসজিদ আছে আরো নিত্য নতুন মসজিদ নির্মান হচ্ছে। ১৯৯১ সালের আগে রাশিয়াতে কোন মাদ্রাসা ছিল না আর এখন ৫০-৬০ টি মাদ্রাসা আছে এবং সেগুলোতে কমপক্ষে ৫০,০০০ ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করছে। ১৯৯১ সালে রাশিয়া থেকে হজ্জ যাত্রীর সংখ্যা ছিল মোটে ৪০! আর এবছর ১৮,০০০-এরও বেশি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...