বিশ্বজয়ে বাংলা ভাষা



মো.আবু রায়হানঃমা মাতৃভাষা আর মাতৃভূমি অতি আবেগ ও অস্তিত্বের তিনটি অবলম্বন । তিনটি বিষয়ে মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন ও অশেষ। এরমধ্যে মাতৃভাষা হলো শিশুকাল থেকে বার্ধক্য এমনকি বংশ পরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ভাবের বাহন।দৈনন্দিন জীবনে ভাব আদান প্রদানে মাতৃভাষা্র গুরুত্ব অনন্য।এদেশের আলো বাতাসে জন্মগ্রহণ করায় বিদ্যমান বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস প্রায় ১৩০০ বছরের পুরনো। চর্যাপদ হলো বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে বাংলা ভাষা পূর্ণতা পেয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।পৃথিবীর একমাত্র জাতি হিসেবে বাঙালিরাই মায়ের ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে জীবন উৎসর্গ করেছেন। বাংলা ভাষার ওপর ভিত্তি করেই ১৯৭১ সালে ভাষা ভিত্তিক জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছিল। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের ভূখন্ডের বাইরেও বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিরাই জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।৫২ 'র ভাষা আন্দোলনের এক দশক না পেরুতেই ১৯৬১ সালে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ভারতের আসামের বরাক উপত্যকার জনতা প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠে। সরকার বাংলাভাষী এলাকা বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষাকে আনুষ্ঠানিক ভাষা বলে ঘোষণা করলে দলমত নির্বিশেষে বরাক উপত্যকার জনগণ আন্দোলনে নেমেছিলেন। গণবিরোধী পদক্ষেপের প্রতিবাদে ১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাকে হরতালের ডাক দেওয়া হয়। হরতাল চলাকালে আসামের পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে সেদিন মোট ১১ জন নিহত হন।শেষমেশ সরকার সেই বাংলা ভাষা বিরোধী ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল।এই ঘটনা যেন পাকিস্তান আমলে ঘটে যাওয়া ৫২ 'র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। সেই সময় গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারও শেষ পর্যন্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষার স্বীকৃতি হিসেবে প্রথম ধাপে ১৯৫৪ সালের ৭ই মে পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গৃহীত হয় এবং দ্বিতীয় ধাপে দুবছরের মাথায় ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান প্রণীত হলে ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি ছিল ; "The state languages of Pakistan shall be Urdu & Bengali."বর্তমানে বাংলা বিশ্বের তিনটি দেশ বাংলাদেশ,ভারত ও সিয়েরা লিওনের দাফতরিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত। ১৯৫০ সালে গৃহীত ভারতীয় সংবিধানে বাংলা ভাষা অন্যতম সরকারি ভাষার মর্যাদা লাভ করেছে। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলে তালিকাবদ্ধ ২৩টি সরকারি ভাষার মধ্যে বাংলা অন্যতম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা বাংলা।বিপুল বাঙালি-অধ্যুষিত ঝাড়খন্ড রাজ্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাকে দ্বিতীয় দাফতরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে।বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ।ভারতে হিন্দি ভাষার পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা।২০১১ সালে ভারতে বেড়েছে হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা। বেড়েছে বাংলাভাষীর সংখ্যাও। হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪১.০৩ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩.৬৩ শতাংশ। আর বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮.১১ শতাংশ থেকে ৮.৩ শতাংশ। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত এবং ভারতের জাতীয় স্তোত বাংলা ভাষাতেই রচিত। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মোট বাংলা ভাষী জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসী।যে পাকিস্তান বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল সেই পাকিস্থানের সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচিতে প্রায় ২০ লাখ বাঙালির বসবাস। সে কারণে করাচি সিটি করপোরেশনের অন্যতম স্বীকৃত দ্বিতীয় ভাষা হচ্ছে বাংলা। যুক্তরাজ্যে স্বীকৃত ১০টি অভিবাসী ভাষা রয়েছে, বাংলা তার পঞ্চম। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায় যুক্তরাজ্যে প্রায় সাত লাখ বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে, যারা দৈনন্দিন জীবনে বাংলা ব্যবহার করেন। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী অভিবাসী রয়েছে।
বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা বাংলা। গ্ণপ্রজাত বাংলাদেশের সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, 'প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা ভাষা সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক পরিচয় পায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে তার বাংলা কাব্যগ্রন্থ “গীতাঞ্জলী“র জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে’র নোবেল জয়ে বিশ্ব সাহিত্যাকাশে বাংলা ভাষা পরিচিতি অর্জন করে। ১৯৭৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সর্বসম্মত অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬ তম দেশ হিসাবে সদস্যপদ লাভ করার সপ্তাহান্ত ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৯ তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুই প্রথম রাষ্ট্রনায়ক, যিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করেন। বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই অনুরোধ করা হয়েছিল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি দরদ ও সুগভীর মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই। ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রথমবারের বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রতিবছর ২৫ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশি ইমিগ্র্যান্ট ডে’ বা ‘বাংলাদেশি অভিবাসী দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৯২ সালে বাং সত্যজিৎ রায় একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন।তিনি আজীবন সন্মাননা স্বরূপ অস্কার পুরস্কার লাভ করেন তাঁর নির্মিত বাংলা চলচিত্রর জন্য।বিশ্বের দরবারের বাংলা ভাষাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার নেপথ্যের নায়ক কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালামের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম যেন ১৯৫২ সালের শহিদ রফিক ও শফিকের প্রতিচ্ছবি। এই প্রজন্মের ভাষা সৈনিক। তারা প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবিতে ১৯৯৮ সালে তৎকালীন
জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।শুধু তাই নয় আব্দুস সালাম ও রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন সুহৃদ সহযোদ্ধা নিয়ে এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করিয়েছিলেন।সেই সংগঠনের কার্যকর ভূমিকায় ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সভায় একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে ১৮৮টি দেশ এতে সাথে সাথেই প্রস্তাবে সমর্থন জানায়। কোন দেশই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেনি, এমনকি খোদ পাকিস্তানও সর্বসম্মতিক্রমে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গৃহীত হলো ইউনেস্কোর সভায়।এরপর ২০০০ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ বিশেষ মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করে আসছে। এখন জাতিসংঘ ভুক্ত বিশ্বের প্রায় ১৯৩টি দেশে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।২০০২ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ক্ষুদ্র দেশ সিয়েরালিওন আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মানসূচক তাদের সরকারি ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনের অংশ হিসেবে দেশটিতে পাঁচ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সৈন্য মোতায়েন ছিল,শেষ অবধি শান্তিরক্ষী মিশনে সর্বমোট প্রায় ১২ হাজার সেনা সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করেন। তারা সিয়েরা লিওনের শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশি সেনাবাহিনীর এই অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ ২০০২ সালের ১২ ডিসেম্বর সিয়েরা লিওনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বা বাংলা ভাষাকে সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন।বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে সুদূর আফ্রিকার সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার দাফতরিক ভাষার স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে আমাদের বড় কিছু পাওয়া।
ইউনেস্কোর শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি বাংলা ভাষার রূপ মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে ইউনেস্কো ২০১০ সালে বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি ভাষার স্বীকৃতিও দিয়েছে। সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা বাংলা এটা ইউনেস্কোর একটা সমীক্ষায় উঠে এসেছে।২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি উত্থাপন করে বাংলাদেশ।এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।এখন প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে জাতিসংঘ। মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতেও প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছে।এটি আমাদের বিস্ময়াভূত করে যে একদিন যারা বাংলা ভাষাভাষী জনপদের শাসক ছিলেন, আজ সেই জনপদের ভাষাকেই তারা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।ব্রিটেনের হিথরো বিমানবন্দরে বাংলাতে ঘোষণা দেওয়া হয়।বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানিয়ে এবছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে “ইউএন বাংলা ফন্ট” ও ২০১৯ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ বাংলায় প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।ইউএনডিপি জানিয়েছে , বাংলা বর্ণমালার যুক্তাক্ষর ও মাত্রাসহ অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে এ ফন্ট তৈরি করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে ও ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে।এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগের দিন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের ওয়েবসাইটে বাংলা সংস্করণ চালু করেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে তারা এই সংস্করণ চালু করেছে।বিশ্বের নামকরা শহর লন্ডন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, নিউইয়র্কসহ বেশ কিছু শহরে বাংলা সংবাদপত্র, টিভি ও রেডিও সম্প্রচার করা হচ্ছে। সেসব শহরে বাংলা মাধ্যম শিক্ষালয়ও রয়েছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা শেখানো হয়। বিদেশের বুকে এসব শহর যেন একখন্ড বাংলাদেশও বাংলাভাষী জনপদ।বর্তমানে বাঙালিরা সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিতিয়ে আছে । ফলে বাংলা ভাষার পরিধিও প্রতিনিয়ত প্রসারিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এখন বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ কথা বলে পরিসংখ্যানবিদদের অনুমান ২০৫০ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে বাংলা ভাষী মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১ কোটি ৬০ লাখ। প্রচলিত ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান চতুর্থ। আর ভাষিক বিচারে বাংলার স্থান সপ্তম। বিশ্বে এথনোলগ-এর ২০ তম সংস্করণের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষা স্বমর্যাদায় ৫ম স্থান অধিকার করে আছে।পৃথিবীতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলাভাষী। প্রচলিত ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলার স্থান চতুর্থ। আর ভাষিক বিচারে বাংলার স্থান সপ্তম।
বিশ্বজুড়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষার স্থান সবার ওপরে। ইংরেজি ভাষার এই আধিপত্য বিস্তার সম্ভব হয়েছে কয়েকটি কারণে।প্রথমতঃ১৮শ শতক থেকে ২০শ শতক পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তে ইংরেজরা উপনিবেশ গড়ে তুললে।দত্তিয় ইংল্যান্ড ও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে বিশ্বের অন্য যেকোন ভাষার চেয়ে ইংরেজিই বেশি বিস্তার লাভ করে।ইংরেজি বিশ্বের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় তথা সহসরকারি ভাষায় পরিণত হয়।ত্রতিবর্তমান সময়ের বেশিরভাগ প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো এসেছে ইংরেজি ভাষার দেশগুলো থেকে। Internet (ইন্টারনেট) এবং iPhone (আইফোন) এই শব্দ দুইটি লক্ষ্য করুন, এগুলো এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়।সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির নতুন নতুন আন্তর্জাতিক পরিভাষার অধিকাংশই ইংরেজি থেকে এসেছে।দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরের মতো প্রাক্তন বহুভাষী ইংরেজ উপনিবেশগুলো স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ইংরেজিকে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা ।ইংরেজি প্রায় ৫২টি দেশের জাতীয় বা সরকারী ভাষা। বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশই ইংরেজি ভাষী। আধুনিক যোগাযোগে ও বিভিন্ন পেশায় ইংরেজির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অধীত দ্বিতীয় ভাষা।সারা বিশ্বে যে ভাষাটি দাপটে বিরাজ করছে ও অন্য অনেক ভাষাকে কোণঠাসা করে এগিয়ে চলেছে সেটি ইংরেজি। জাতিসংঘ অনেক ভাষাকে স্বীকৃতি দিলেও তার কাজকর্মের মূল ভাষা ইংরেজি।
ইংরেজি চর্চার ঝোঁক সারা বিশ্বে সর্বত্র বেড়েছে।উপরোক্ত সূচকের উপর ভিত্তি করে তিনি এই উপসংহারে আসেন যে সব মিলিয়ে ইংরেজি সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা।২০৫০ সালের মধ্যেও ইংরেজি ভাষাই সবচেয়ে শক্তিশালী ভাষা থাকবে।তবে স্প্যানিশ তৃতীয় স্থানে উঠে আসবে এবং ফরাসি আর আরবি যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান দখলে নেবে।১০৬৬ সালে নর্মানদের ইংল্যান্ড-বিজয়ের পর ফরাসী ভাষা ব্রিটেনের অভিজাত লোকদের ভাষায় পরিণত হয়। জার্মান ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সরকারি ভাষা। ১৮টি দেশে কমবেশি জার্মান চর্চা হয়। বর্তমানে জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে। এগুলো হলো- ইংরেজি, আরবি, চাইনিজ, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান এবং স্প্যানিশ।জাতিসংঘের বৈঠকে ব্যবহৃত ছয়টি ভাষাকে বলা হয় জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা। জাতিসংঘের সকল আনুষ্ঠানিক দলিল দস্তাবেজগুলোও এই ছয়টি ভাষায় লিখা হয় ।বাংলা ভাষাকে আজ জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়েছে।বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে নিবন্ধিত করতে সরকার কাজ করছে।খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। তাঁর এ দাবির সমর্থনে জাতীয় সংসদে ২০০৯ সালে একটি রেজুলেশন পাস করা হয় এবং এর অনুসরণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংসদেও একটি যুগপ রেজুলেশন পাস করা হয়।ইংরেজী, ফরাসী, রুশ এবং ম্যান্ডারিন ১৯৪৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে ইংরেজী ও ফরাসী ভাষাকে ঐ বছরেরই ২৪শে জুন থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়। ১৯৬৯ সালের ২২শে জানুয়ারী নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে স্থান পায় রুশ এবং স্প্যানিশ ভাষা। ১৯৭৪ সাল থেকে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষাও নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়। আরবী ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘের ষষ্ঠ দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের ভাষা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।নানান দেশের নানান ভাষা/ বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা\' নিধু গুপ্ত

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল