সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মহানবি (সা.) কে কেন টার্গেট করা হচ্ছে ?




মো আবু রায়হানঃমুসলিম উম্মাহকে বিপথগামী করতে, বিশ্বের বুকে তাদের মনোবলকে ভেঙে দিতেই যুগে যুগে ইসলাম বিদ্বেষীরা কখনো ইসলামের উপর আক্রমণ করেছে। আবার কখনো বিশ্বনবির ব্যঙ্গ চিত্র প্রকাশ করে চালিয়েছে ঘৃণ্য অপপ্রয়াস। ফ্যান্সের বিতর্কিত ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো বিশ্বনবি (সা) কার্টুন প্রকাশ করে শুধু বিশ্বনবিকেই অপমান করেনি বরং কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়ে ও অনুভূতিতে আঘাত করেছে, অপমান করেছে। মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর রাসুলকে নিয়ে কটাক্ষ করত। তারা কখনো আল্লাহর নবি সম্পর্কে বলত, তিনি নাকি কবি! কখনো তারা কটূক্তি করে তাঁকে পাগল বা জাদুকর বলত। এ ধারা এখনো অব্যাহত।
কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু ,কবির ও নানক নয়, সব অপরাধ শুধু নবি মুহাম্মদ (সা)র ! কেন ? বিশ্বাসী -অবিশ্বাসী , মুসলিম -অমুসলিম, সবার মনেই এই প্রশ্ন, কেন নবি মুহাম্মদ (সা) এর এত বদনাম ? কেন তাকে অপমান করার চেষ্টা করতে হবে? যখন উগ্রবাদী শিবসেনা, গো রক্ষকরা ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন করে, ভারতের হিন্দু সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে কাশ্মীরি মুসলমানদের হত্যা করে, তখন কেউ কিন্তু কৃষ্ণকে এইজন্য দায়ী করে না ।যখন বার্মায় রোহিঙ্গাদের উপর পাশবিক গণহত্যা হলো, লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা ঘর ছাড়া হলো তখন কেউ এই গণহত্যার জন্য গৌতম বুদ্ধকে অপমান করার চেষ্টা করেনি I একইভাবে, ১.৫ মিলিয়ন ইরাকি ও হাজার হাজার আফগানীদের হত্যার দায়ও যীশুর নেই I
প্রশ্ন হলো, নবী মুহাম্মদ (সা) র এত বদনাম কেন ? তাঁর কি অপরাধ? কারণ হলো, নবি মুহাম্মদ (সা), অন্যদের মত, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশুর মত শুধুমাত্র একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন না I তিনি এই পৃথিবীতে এক ধরণের বিপ্লব নিয়ে এসেছিলেন IThe prophet of Islam, Muhammad ibn Abdullah, was truly a revolutionary. Major spheres of life such as religious, social and political received a new meaning due to the philosophies Prophet Muhammad brought into these areas of life. এই কথাটি কেন বলেছি, সেই বিষয়ে কিছু তথ্য দেই, তারপর আমরা আবার মূল প্রশ্নে চলে আসবো I মহানবী (সা)-এর জীবনী নিয়ে বহু পুস্তক লেখক বা কলাম লেখক বা প্রবন্ধকারকেই দেখেছি একটি পুস্তকের রেফারেন্স দিতে। পুস্তকটির নাম ‘The 100: A Ranking of the Most Influential Persons in History’। এই বইয়ের লেখক একজন পাশ্চাত্যের অমুসলিম পণ্ডিত, যার নাম মাইকেল এইচ হার্ট। পৃথিবীর ইতিহাসে বা মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বা সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ১০০ জন ব্যক্তিত্বের তালিকা ও জীবনী প্রকাশ করেছেন তার বইয়ে। মাইকেল হার্টের মতে, এবং তার বইয়ে প্রকাশিত তালিকা মোতাবেক, এই ১০০ জনের মধ্যে ১ নম্বর ব্যক্তি হচ্ছেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা) তথা মাইকেল হার্টের ভাষায় মুহাম্মদ (সা) হচ্ছেন মানব সভ্যতার ওপরে, মানব ইতিহাসের ওপরে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিত্ব। অতএব, সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। মাইকেল হার্ট জানতেন, তার এই বিবেচনা বা সিদ্ধান্ত প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। তাই তিনি মুহাম্মদ (সা)-এর জীবনী নিয়ে যেই অধ্যায় তার পুস্তকের শুরুতেই আছে, সেই অধ্যায়ের শুরুতে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ব্যাখাটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু এর মর্ম ব্যাপক। মাইকেল হার্ট লিখেছেন, ‘ইতিহাসে মুহাম্মদই একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় অঙ্গনে এবং জাগতিক অঙ্গনে তথা উভয় ক্ষেত্রে চরমভাবে সফল হয়েছিলেন। বাকি ৯৯ জনের মধ্যে বেশির ভাগই কোনো-না-কোনো সভ্যতার কেন্দ্রে বা জনপদে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং উৎসাহব্যঞ্জক বা জ্ঞানবান্ধব পরিবেশে বড় হয়েছেন। কিন্তু ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যখন মুহাম্মদ আরব উপদ্বীপের মক্কায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন; তখন চতুর্দিকের জনপদগুলো, তাদের লেখাপড়ার স্তর এবং তাদের ধর্মীয় চিন্তাচেতনার স্তর তৎকালীন পৃথিবীর পরিচিত মানদণ্ডে নিম্নস্তরে ছিল। সেইরূপ নিম্নস্তরে থেকেও তিনি একটি নতুন চিন্তা নতুন চেতনা নতুন সভ্যতার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।’
আপনি কি জানেন, নবি হওয়ার পর এই মানুষটি, সর্বপ্রথম সমাজে কি পরিবর্তন চেয়েছিলেন ?নারী শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেয়া যাবে না।ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীদের কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবে তো লজ্জা-শরমে, মনের কষ্টে কন্যা শিশুদেরকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। তাছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র কন্যাসন্তান হলে পরিবারের সকলের মুখ কালো হয়ে যেত। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজীদে বলা হয়েছে-“যখন তাদের কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় , তখন তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং অসহ্য মনোস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের কাছ থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে, অপমান সহ্য করে তাকে থাকতে দেবে, না তাকে মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে। শুনে রাখো, তাদের ফায়সালা খুবই নিকৃষ্ট।” (সূরা আন-নাহল, আয়াত -৫৮-৫৯)।ইসলাম নারী জাতিকে এক করুন অমানবিক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য অধিকার এবং সম্মানজনক মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। পবিত্র কোরআনে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের ওপর অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে স্ত্রীদেরও নিয়ম অনুযায়ী পুরুষদের ওপর অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত -২২৮)।

কিছুদিন পরই তিনি বললেন, একজন নারী তার পিতার, স্বামীর ও সন্তানের সম্পদের অংশীদার হবে।ইসলামের আগমনের আগে নারীর সম্পত্তির অধিকার ছিল না। সভ্যতার দাবিদার ইংল্যান্ডে ডাইনি বলে নারীকে পুড়িয়ে মারার আইন রদ করা হয় ১৭৩৬ সালে। যারা আজ সারা বিশ্বের প্রগতি ও আধুনিকতার নিয়ে চিৎকাররত ব্রিটেনে নারীর অবস্থা ছিল খুবই করুণ! Married Women's Property Act : ১৮৮২ –এর আগ পর্যন্ত সেদেশের আইনে নারীদের নারীর সম্পত্তি ছিল অবৈধ। বিয়ের আগেও যদি কোনো নারী চাকরি বা অন্য কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জন করত তাহলে তার বিয়ে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব সম্পত্তির মালিক হয়ে যেত তার স্বামী। জার্মানী নারীদের ১৯০০ সাল, সুইস নারীদের ১৯০৭, অষ্ট্রেলীয় নারীদের ১৯১৯ সালের আগে ছিল না কোনো উত্তরাধিকার সম্পত্তি। অথচ ইসলামের নবী, বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ‘সভ্য পৃথিবীর’ও ১৪০০ বছর আগে মরুভূমির প্রান্তে দাঁড়িয়ে উত্তরাধিকারসহ সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের কথা ঘোষণা করেছিলেন দীপ্তকণ্ঠে।আল-কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে- “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে পুরুষদের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পওিতে নারীদেরও অংশ আছে। অল্প হোক কিংবা বেশি হোক , এ অংশ নির্ধারিত।” (সূরা আন-নিসা , আয়াত নং-৭)।রাসূল (সা) যখন এই ঘোষণা দিলেন, তখনই তিনি সমাজপতিদের রোষাণলে পড়ে গেলেন I এতদিনের মেনে চলা এই সংস্কৃতি ও আইনের বিরুদ্ধে, এই মত তারা মেনে নিতে পারেনি I নারী শিশুকে জীবন্ত কবর দেয়ার মত অপরাধ এই পৃথিবীতে এখনো আছে, আধুনিক ভারতে প্রতিদিন দুই হাজার নারী শিশুর গর্ভপাত হয় কিন্তু কত জন নারীবাদী এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন ?
তারপর আসলো ক্রীতদাসের কথা I তিনি জানালেন, মানুষ আর মানুষের ক্রীতদাস হতে পারে না I মৃত পিতার রেখে যাওয়া ইথিওপিয়ান ক্রীতদাসী উম্মে আইমানকে নিজের মা, আর উপহার হিসাবে পাওয়া জায়েদকে নিজের ছেলে, হিসাবে যখন সমাজে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন সারা পৃথিবীতে আলোচনা শুরু হয়ে গেলো, মুহাম্মদ আসলে কি চায় ? ক্রীতদাস ছাড়া সমাজ ব্যবস্থা কেমন করে চলবে? অর্থনীতি কি করে আগাবে? ক্রীতদাসের দল মুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করলে কি অবস্থা হবে ? ব্যাস, তিনি হয়ে গেলেন সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু I আজকের আধুনিক ইউরোপীয়ানদের হাজার বছরের ক্রীতদাস প্রথা এখনো বহাল তবিয়তেই আছে I দাসপ্রথার এ রূপটি এখন আর নেই। কিন্তু পৃথিবী থেকে কি দাসপ্রথার অবসান হয়েছে? আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০১৬ সালেও বিশ্বে চার কোটি মানুষ দাসত্বের শিকার হয়েছে। একে বলা হচ্ছে আধুনিক দাসত্ব।এই চার কোটির মধ্যে আড়াই কোটি মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম দিতে হয়েছে। দেড় কোটিকে শিকার হতে হয়েছে জোরপূর্বক বিয়ের। আইএলওর চোখে এ দুটি দাসত্বের আধুনিক রূপ।ম্যালকম এক্সের মত বিপ্লবীরা, মুহাম্মদ আলীর মত শক্তিমান পুরুষরা যখন নবি মুহাম্মদ (সা) কে ভালোবাসতে শুরু করলো, তখনই তাদের মনে হলো, সব অপরাধ ঐ আরব লোকটিরই I আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮৬৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেন এবং দাসদের মুক্তির ঘোষণা দেন। কাগজে-কলমে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলে, কিন্তু মগজে-মননে রয়ে গেলে। কালোদের পক্ষ নেওয়ায় দাসপ্রথার সমর্থকরা ১৮৬৫ সালে আব্রাহাম লিঙ্কনকে গুলি করে হত্যা করে।একটা সময় ছিল যখন কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গরা চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করত। শ্বেতাঙ্গ মানুষেরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে মিশত না। খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, চলাফেরা- দৈনন্দিন জীবনের ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে দেশটির সাদা চামড়ার অধিবাসীদের কাছ থেকে নিগ্রহের শিকার হচ্ছিলেন তারা।এমনকি, শ্বেতাঙ্গ মানুষ বাসে উঠলে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে সিট ছেড়ে দিতে হতো, একই সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাবার খেত না। বর্ণ বৈষম্য ছিল প্রকট। ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বরে রোসা পার্কস নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পার্কসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অফিস থেকে বাসে করে ফেরার সময় আরেক শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান যাত্রীকে কেন নিজের আসন ছেড়ে দেননি। ১৯৫৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকায় আনুষ্ঠানিক সিভিল রাইটস মুভমেন্ট শুরু হয়। তখন মার্টিন লুথার কিং এবং সোসাইটির সবাই মিলে এর প্রতিবাদ স্বরূপ আন্দোলন শুরু করেন।মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রই প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমেরিকায় কালো মানুষের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদ শুরু করেন। তারা বাস সার্ভিস বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন, কেউ পায়ে হেঁটে, কেউ নিজের গাড়ি চালিয়ে অফিসে যাতায়াত করতে থাকেন। এই আন্দোলন অনেক দিন চলার পর অ্যালাবামা রাজ্যে যানবাহনে শ্বেতাঙ্গ কৃষ্ণাঙ্গদের ভেদাভেদকে বেআইনি ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসির লিঙ্কন মেমোরিয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক মুক্তি, চাকরির ক্ষেত্রসহ সর্বক্ষেত্রে সমান অধিকারের দাবিতে এক বিশাল সমাবেশ করেন। এই সমাবেশ ছিল আমেরিকার ইতিহাসে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ। ওয়াশিংটন থেকে লিঙ্কন মেমোরিয়াল পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ মানুষের উপস্থিতিতে তাঁর দেওয়া বিখ্যাত ভাষণ ‘অ্যাই হেভ অ্যা ড্রিম’—জাতিগত বৈষম্যের বিরুদ্ধে এক স্মরণীয় ঐতিহাসিক ভাষণ। তিনি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক আচরণ, বিদ্বেষ, নির্যাতনের কথা। বলেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কোনো প্রাপ্তি নেই, যতক্ষণ পর্যন্ত কালোরা নির্যাতনের শিকার হবে, হোটেলে, মোটেলে থাকার অধিকার না পাবে, কেবল শ্বেতাঙ্গদের জন্য—‘এমন সাইন বোর্ড থাকবে’। আমি জানি, আজ বা কাল আমাদের সময় সংকটময়। তবুও আমি স্বপ্ন দেখি, এ জাতি জাগ্রত হবে, মানুষের বিশ্বাসের মূল্যায়ন হবে। জাতিগত বৈষম্যের অবসান হবে। সব মানুষ জন্মসূত্রে সমান। আলোড়ন তোলা ‘অ্যাই হেভ অ্যা ড্রিম’ ভাষণের প্রভাবেই ১৯৬৪ সালে আমেরিকায় নাগরিক অধিকার আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণয়ন করা হয়।মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অহিংস আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে মার্টিন লুথার কিং নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। যত দিন বেঁচে ছিলেন, নির্যাতিত মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, সাদা-কালো নয়, সব মানুষ সমান—এমন আদর্শ বাস্তবায়নে লড়েছিলেন। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী আততায়ীর গুলিতে এই মহান নেতা নিহত হন। তিনি বলেছিলেন, যদি উড়তে না পার তবে দৌড়াও, যদি দৌড়াতে না পার তবে হাঁটো, যদি হাঁটতে না পার তবে হামাগুড়ি দাও, যাই করো না কেন সামনে এগিয়ে যেতে হবেই। মার্টিন লুথার কিং নিহত হওয়ার তিন বছর আগে ১৯৬৫ সালে আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের আরেক অবিসংবাদিত নেতা ম্যালকম (মালিক আল শাব্বাজ) শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। ১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্কে একটি হলরুমে বক্তৃতা করতে দাঁড়ালে হঠাৎ একসঙ্গে কয়েকটি বন্দুক গর্জে ওঠে। বুকে ৯৫টি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ম্যালকম তথা মালিক আল শাব্বাজ। এভাবেই যুগে যুগে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ মানবতার পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বরগুলোকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে।বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) স্পষ্ট করে বলেন, 'আরবের ওপর যেমন কোনো অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই; তেমনি অনারবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব নেই কোনো আরবের। এমনকি শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের কিংবা কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব বা বৈশিষ্ট্য নেই। শ্রেষ্ঠত্ব, বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া।' অন্য হাদিসে এসেছে, 'আল্লাহ তায়ালা তোমাদের চেহারা-সুরত, ধন-সম্পদের দিকে তাকান না; কিন্তু তিনি তোমাদের কর্ম ও অন্তরের অবস্থা দেখেন।' এ বাণীগুলোকে রাসুল (সা.) নিছকই 'গুরুজনের বাণী' হিসেবে উচ্চারণ করেননি। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর ২১ মার্চ বিশ্বব্যাপী পালন করা হচ্ছে বর্ণবৈষম্য নির্মূল দিবস। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র ঘোষণা করে মানুষে মানুষে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। অথচ আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে মানবতার নবী মহানবী (সা.) বর্ণবৈষম্য রোধে যৌক্তিক, কার্যকর ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। বিদায় হজ্জ্বের সময় মুহাম্মদ (সা.) এর শেষ ভাষণেও তিনি বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে গিয়েছেন। তার বক্তব্যে তিনি বলেন,“কোন অনারবের উপর কোন আরবের, কোন আরবের উপর কোন অনারবের উচ্চ মর্যাদা নেই…….একজন শেতাঙ্গ একজন কৃষ্ণাঙ্গের তুলনায় এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ একজন শেতাঙ্গের তুলনায় উচ্চতর নয়। পার্থক্য শুধু মানুষের চরিত্র ও কর্মের মাধ্যমে।” মুসলমানদের বাস্তব জীবন কাঠামোকেও তিনি এই ধাঁচে গড়ে তুলেছেন। আজকের পশ্চিমারা যে কালো আফ্রিকানদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে, তাদেরই বংশোদ্ভূত হযরত বেলাল (রা.)-কে ইসলামের প্রথম ও প্রধান মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেও এক আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী সাহাবির নাম হযরত বিলাল।
মুহাম্মদ (সা) বললেন, ধনীদের সম্পদের সুষম বন্টন হতে হবে I তাদের সম্পদের উপর গরিবের অধিকার আছে I তিনি ঘোষণা দিলেন, সবাইকে যাকাত দিতে হবে I আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন।” (সূরা বাকারা আয়াত -১১০)।আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’’ (সূরা নূর আয়াত -৫৬)।হাদিস শরীফে একে ইসলামের সেতুবন্ধন বলা হয়েছে। কারণ, এটি ধনী ও গরীবের মাঝে অর্থনৈতিক সেতুবন্ধন। সমাজের ধনী ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাবানরা ভাবলো, মুহাম্মদ একজন সমাজ বিপ্লবী, তাকে সমাজ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে I শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিসের শাইলকের মত লোভী সব ইহুদি কুসীদজীবিদের সুদ বন্ধ করতে আদেশ দিলেন I ধনী-গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্যকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেন I সবাই ভাবলো, মুহাম্মদ একজন সোসালিস্ট, তাকে মেরে ফেলতে হবে I
ইসলামের প্রথম যুগে জাহেলিয়াত আমলের সাধারণ রীতি-নীতির মত মদ্যপানও স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। Iমদ ও জুয়া মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে পর্যন্ত বিলুপ্ত করে ফেলে এবং ধনসম্পদও ধ্বংস করে দেয়।আল্লাহ বলেন- “হে ঈমানদারগণ! নিশ্চিত জেনো, মদ, জুয়া, মূর্তি এবং তীর নিক্ষেপ এসবগুলোই নিকৃষ্ট শয়তানী কাজ। কাজেই এসব থেকে সম্পূর্ণভাবে সরে থাক, যাতে তোমরা মুক্তিলাভ ও কল্যাণ পেতে পার। মদ ও জুয়ার দ্বারা তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও তিক্ততা সৃষ্টি হয়ে থাকে; আর আল্লাহর যিকর ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখাই হল শয়তানের একান্ত কাম্য, তবুও কি তোমরা তা থেকে বিরত থাকবে না?"(সুরা আল মায়িদাহ আয়াত ৯০-৯১)।রাসুল (সা) নিজের অনুসারীদেরকে বললেন। বললেন তোমরা আর মদ পান করবে না।ফলে সমাজে অন্যায় অবিচার কমে গেলো I চুরি ডাকাতি কমে গেলো I মাতাল স্বামীর সংখ্যা কমে যাওয়ায়, নারী নির্যাতন প্রায় বন্ধ হয়ে গেলো I অসভ্য পুরুষের মনে হিংসা শুরু হলো, এ লোক পাগল নাকি? মদ খাবে না, নারীকে নিয়ে ফুর্তি করবে না সে কোন ধরণের সমাজ চায়? মাদক ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে মুহাম্মদকে ঠেকানোর জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করলো I অসহায় মানুষের কষ্টার্জিত সম্পদ নিয়ে জুয়ার আসরের নিষেধাজ্ঞা আসলো I মুহাম্মদের আর কোন রক্ষা নেই I সে বড় বেশি বাড়াবাড়ি করছে I জুয়ার ব্যবসা ছাড়া সমাজে বিনোদনের আর কি রইলো ? মুহাম্মদকে ঘর ছাড়া করতে হবে I তার সব আয়-রোজগার বন্ধ করতে হবে I এখন কি বুঝতে পারছেন, কেন মুহাম্মদ (সা)র এত অপরাধ ?
এই যে এখন, নবী মুহাম্মদকে (সাঃ) কে এত বছর পর অপমান করার চেষ্টা করা হয়েছে তার কি কারণ? শুধু বাক কি স্বাধীনতা ? না I যে মানুষটির অনুসারীরা শুধু ভালোবাসা দিয়ে একসময় আফ্রিকা বিজয় করেছিল সেই আফ্রিকার ২৪ টি দেশের, শত বছরের ঔপনিবেশিক নির্যাতন নিপীড়ন ও শোষণ থেকে যখন আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়ার মত দেশগুলি অর্থনৈতিক ও রাজনৌতিক মুক্তি চেয়েছে তখনই নবী মুহাম্মদ (সা) হয়ে গেলেন বড় অপরাধী Iএক সময় ফ্রান্স ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের আয়তন দাঁড়ায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের লক্ষ-লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, অসহায় ও নিরপরাধ মানুষকে নিজের ক্রীতদাস করে রেখে যে সম্পদের পাহাড় তারা একসময় গড়েছেন, সেটি যখন হুমকির মুখে তখনই সব রাগ ও ক্ষোভ এসে জমা হয়েছে I এখন তাদের নবিকে অপমান করতে হবে, তাঁর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করতে হবে I তারপর আফ্রিকাতে আবার জঙ্গি দমানোর জন্য ন্যাটো বাহিনীকে পাঠাতে হবে I কিন্তু তারা পারবে না।২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ফ্রান্সের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখেরও অধিক।মুসলিম জনসংখ্যা হচ্ছে ৬ মিলিয়নের ও বেশি।মার্কিন গবেষণা কেন্দ্র পিউ রিসার্চের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৮ শতাংশ মুসলমান৷পিউ রিসার্চ সেন্টার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ফ্রান্সে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লাখ হবে।প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে অনেক কম।ফ্রান্সে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।বর্তমানে ফ্রান্সে ৩০০০হাজার মসজিদ আছে।পাঁচ শতের বেশি রয়েছে শুধু প্যারিস শহরে।গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১০০ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামাজকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। মুসলমানদের অব্যহত অগ্রগতিতে মুল ভূমিকা মুহাম্মদের।এখন তাঁর ব্যঙ্গ চিত্র প্রদর্শন করে ক্ষোভ মেটাতে হবে।পিউ রিসার্চের গবেষণা অনুযায়ী, শুধু ইউরোপেই প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে I আপনি দেখবেন কিছু দিন পর এই সংখ্যা হবে, দশ হাজার I কারন হলো, এই ঘটনার পর, মানুষ জানতে চাইবে , কে এই মুহাম্মদ ? প্রথমেই সে জানবে I মানুষটি শুধু আমাদেরকে মনে প্রাণে একজন মাত্র সৃষ্টিকর্তাকে ভালোবাসতে বলেছেন Iমানুষরূপী কোন খোদার কাছে মাথানত করতে নিষেধ করেছেন I একজন মানুষের জন্য শুধু এতটুকু জানাই যথেষ্ট I এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে সূর্যের আলোকে দেখতে না চায়, তাহলে কি সূর্য আলো দেয়া বন্ধ করে দিবে নাকি সূর্যের আলো হারিয়ে যাবে ? নবী মুহাম্মদ (সা) হলেন এই পৃথিবীতে সেই আলো I এই আলোকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারবে না I

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...