সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

 


মো.আবু রায়হানঃ উগান্ডা আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র। দেশটির পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে সুদান, পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ-পশ্চিমে রুয়ান্ডা এবং দক্ষিণে তানজানিয়া। দক্ষিণাঞ্চলের কিছু উল্লেখযোগ্য ভূমি ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত। এই অংশটিই একাধারে কেনিয়া এবং তানজানিয়ার সাথে সীমান্ত রক্ষা করে চলেছে। উগান্ডা নামটির উৎপত্তি হয়েছে বুগান্ডা রাজত্ব থেকে। কাম্পালা উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী।১৯শ শতকের শেষের দিকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকদের আগমনের পূর্বে এখানে অনেকগুলি শক্তিশালী রাজত্ব ছিল, যাদের মধ্যে বুগান্ডা ও বুনিয়োরো উল্লেখযোগ্য। ১৮৯৪ সালে উগান্ডা একটি ব্রিটিশ প্রোটেক্টোরেটে পরিণত হয়। ১৯২৬ সালে এর বর্তমান সীমানা নির্ধারিত হয়। ১৯৬২ সালে এটি ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭০-এর দশকে ও ১৯৮০-র দশকের শুরুর দিকে উগান্ডা দুইটি রক্তঝরানো স্বৈরশাসন (ইদি আমিন ও মিল্টন ওবোতে) এবং দুইটি যুদ্ধের শিকার হয়।

আয়তন ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৮ বর্গকিলোমিটার।জনসংখ্যা চার কোটি ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৩ জন। মুসলিম জনসংখ্যা ৪,০৬০,০০০ জন। ২০১৩ জাতীয় আদমশুমারি অনুসারে উগান্ডায় ইসলামের ধর্মের অনুসারি ১৩.৭ শতাংশ ছিল। ২০১৪ সালে পিউ গবেষণা কেন্দ্রটি অনুমান করেছিল যে ৩৫.২ শতাংশ তাঞ্জানিয়ান , ৯.৭ শতাংশ কেনিয়ান, ৬.২ শতাংশ দক্ষিণ সুদানি, র ২.৮ শতাংশ বুরুন্ডিয়ান এবং ১.৮ শতাংশ রুয়ান্ডিয়ান।উগান্ডার ১১.৫ শতাংশ মুসলিম ছিল। ২০০৯-এর প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, উগান্ডার পূর্বের ইগঙ্গা জেলাতে মুসলমানদের সর্বোচ্চ বসবাস । উগান্ডার মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি। অল্প সংখ্যক শিয়া ও আহমদী সংখ্যালঘুরাও উপস্থিত আছেন।গুড ফ্রাইডে, ইস্টার মানডে, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং ক্রিসমাস জাতীয় ছুটি স্বীকৃত।

উনিশ শতকের মধ্যভাগে ইসলাম উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার উপকূলীয় বাণিজ্যের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মাধ্যমে উগান্ডায় এসে পৌঁছেছিল। কিছু বাগান্দা মুসলমান পরিবার উনিশ শতকে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। কাবাকা মুতেসা প্রথম যে সময়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছিল।১৮৮০-র দশকে তুর্কি-মিশরীয় প্রভাবের মধ্য দিয়ে উত্তর উগান্ডার রুট দিয়ে ইসলাম উগান্ডায় প্রবেশ করেছিল। ১৮৪৪ সাল হিসাবে প্রথম মুসলিম আরব ব্যবসায়ী কসোজি ,আহমেদ বিন ইব্রাহিম বুগান্ডার রাজদরবারে পৌঁছেছিলেন।বহির্মুখী ধর্মগুলির মধ্যে ইসলামই প্রথম উগান্ডায় আগমন করেছিল এবং এটি ১৯৭০-র দশকে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। Islam was the first of the exogenous religions to arrive, and it became politically significant in the 1970s. Christianity came during the colonial period through spirited missionary activity—especially in the south, where Catholics were called bafaransa (“the French”) and Protestants bangerezza (“the British”).

গাদ্দাফি জাতীয় মসজিদ কাম্পালা হিলে অবস্থিত উগান্ডার জাতীয় মসজিদ। এটি উগান্ডা তথা পূর্ব আফ্রিকার সব থেকে বড় মসজিদ। ২০০৬ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ২০০৭ সালে চালু করা হয়। গাদ্দাফি মসজিদে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে। উগান্ডায় অনেক মসজিদ রয়েছে; কিন্তু এ মসজিদের মিনার প্রায় আকাশ ছুঁয়েছে। মসজিদের নাম রাখা হয়েছে লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির নামে। গাদ্দাফি মসজিদ লিবিয়ার পক্ষ থেকে উগান্ডার মুসলিম জনসংখ্যার জন্য উপহারস্বরূপ ছিল বলে এ নাম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পর এ মসজিদকে ন্যাশনাল মসজিদ বলা হচ্ছে। নেতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে নাম বদল শুধু বাংলাদেশেই নয় আরও অনেক দেশেই আছে তাহলে। এ মসজিদের এক অংশে উগান্ডা মুসলিম সুপ্রিম কাউন্সিলের প্রধান অফিস।উগান্ডায় তালিকাভুক্ত কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৩শ ৮৫টি। এ ছাড়া আরও অনেকগুলো কেন্দ্র তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। দেশটির অনগ্রসর মুসলিম তরুণদের জন্য গড়ে উঠেছে তিনটি বিশ্বমানের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইন উগান্ডা, কামপালা ইউনিভার্সিটি ও কামপালা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি)।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...