সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তানজানিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জাঞ্জিবার


Malindi Mosque


মো.আবু রায়হানঃভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত পূর্ব আফ্রিকার একটি প্রজাতন্ত্র তানজানিয়া ।১৯৬৪ সালে তাঙ্গানিকা ও জাঞ্জিবার দেশ দুইটির একটি মিলিত ফেডারেশন হিসেবে তানজানিয়া প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাঙ্গানিকার তান এবং জাঞ্জিবারের জান শব্দাংশ দুইটি থেকে দেশটির নাম তানজানিয়া রাখা হয়েছে।তানজানিয়ার উত্তরে কেনিয়া ও উগান্ডা, পূর্বে ভারত মহাসাগর, দক্ষিণে মোজাম্বিক, মালাউই ও জাম্বিয়া এবং পশ্চিমে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা। ভারত মহাসাগরের জাঞ্জিবার ও পেম্বা দ্বীপ এবং আরও কিছু ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ দেশটির সীমান্তের অন্তর্ভুক্ত। তানজানিয়ার মোট আয়তন ৯৪৫,১০০ বর্গকিলোমিটার।তানজানিয়া আফ্রিকার ১৩ তম বৃহত্তম দেশ এবং পৃথিবীর ৩১ তম বৃহত্তম। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, জনসংখ্যার ৬১.৪ শতাংশ খ্রিস্টান, ৩৫.২ শতাংশ মুসলমান, ১.৮ শতাংশ ঐতিহ্যগত আফ্রিকান ধর্ম পালন করে, ১.৪ শতাংশ কোন ধর্মের সাথে বিচ্ছিন্ন এবং ০.২ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। জাঞ্জিবার, সমস্ত মুসলমানের প্রায় ৯০% সুন্নি এবং সাধারণত শাফী মাজহাব অনুসরণ করে।তানজানিয়ার বেশিরভাগ মুসলিমের জাঞ্জিবারে বসবাস ।

জাঞ্জিবার ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ, যা বর্তমানে তানজানিয়ার অংশ। এটি ভারত মহাসাগরের জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের সমন্বয়ে গঠিত, মূল ভূখণ্ডের উপকূল থেকে ২৫-৫০ কিলোমিটার এবং বহু ছোট ছোট দ্বীপ এবং দুটি বৃহত্তর দ্বীপ নিয়ে গঠিত: উঙ্গুজা (মূল দ্বীপ, যা অনানুষ্ঠানিকভাবে উল্লেখ করা হয় জাঞ্জিবার) এবং পেম্বা দ্বীপ। রাজধানী উঙ্গুজা দ্বীপে অবস্থিত জাঞ্জিবার সিটি।আয়তন ১,৫৫৪ বর্গকিলোমিটার।২০০২ সালের আদমশুমারি জাঞ্জিবারের মোট জনসংখ্যা ছিল ৯৪৮,৬২৫। বার্ষিক বৃদ্ধির হার ৩.১ শতাংশ। জাঞ্জিবার সিটির জনসংখ্যা, যা বৃহত্তম শহর ছিল, ২০৫,৮৭০। প্রায় দুই তৃতীয়াংশ লোক, ৬২২,৪৫৯ উঙ্গুজা (জাঞ্জিবার দ্বীপ) এ বাস করত, বেশিরভাগ জনবসতিপূর্ণ পশ্চিমে বাস করত। জাঞ্জিবার সিটি ছাড়াও উঙ্গুজার অন্যান্য শহরগুলির মধ্যে রয়েছে চ্যানি, এম্বেওয়েনি, মঙ্গাপওয়ানি, চ্বাকা এবং নুঙ্গভি। এই শহরগুলির বাইরে, বেশিরভাগ লোকেরা ছোট গ্রামে থাকেন এবং কৃষিকাজ বা মাছ ধরতে নিযুক্ত হন ।পেম্বা দ্বীপের জনসংখ্যা ৩৬২,১৬৬ জন। জনসংখ্যার ১৯,২৮৩ জনসংখ্যার সাথে দ্বীপের বৃহত্তম শহর চক-চেক ছিল। ছোট শহরগুলি হল ওয়েট এবং মকোয়ানি ।মাঞ্জিয়া দ্বীপপুঞ্জ, জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য প্রধান দ্বীপ তবে মূল ভূখণ্ড তানজানিয়া (টাঙ্গানিকা) দ্বারা পরিচালিত, এর জনসংখ্যা ছিল ৪০,৮০১ জন। আধা-স্বায়ত্তশাসিত জাঞ্জিবার দ্বীপপুঞ্জের সর্বাধিক ইসলাম ধর্মের অনুসারির বাস এবং তাঞ্জানিয়া প্রজাতন্ত্রের ইসলামি কেন্দ্র হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। দ্বীপপুঞ্জের ৯৮ শতাংশ জনগণ মুসলিম,অধিকাংশ সুন্নি এছাড়া ইবাদি, ইসমাইলি এবংবারো ইমামে বিশ্বাসী শিয়া রয়েছে। Islam is the most prominent religion on the semi-autonomous Zanzibar archipelago and could be considered the Islamic center in the United Republic of Tanzania. Between 98 percent of the population in the islands are Muslim, with the vast majority being Sunni with a minority Ibadi, Ismaili and Twelver Shia. আরব মুসলমানরা অষ্টম শতাব্দীতে এসে পৌঁছে, তার পরে বহু ভারত মহাসাগরীয় দেশ থেকে মুসলিম বণিকরা এসে পৌঁছেছিল।

দশম শতাব্দী থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে দ্বীপগুলিতে ইসলামের দীর্ঘ উপস্থিতি প্রমাণ করে এবং জাঞ্জিবারের পাশাপাশি পূর্ব আফ্রিকান উপকূলে বণিক এবং সামুদ্রিক সোয়াহিলি সংস্কৃতি রুপায়নে একটি অন্তর্নিহিত অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।১৪৯৯ সাল থেকে এটি পর্তুগিজদের অধীনে ছিল। ১৬৫৮ সালে ওমানের সুলতান পর্তুগিজদের বিতাড়িত করে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।এরপর ১৮৫৮ সালে সুলতান মাজিদ বিন সাঈদ এই দ্বীপকে ওমান থেকে স্বাধীন দাবি করেন। তখন ব্রিটিশরা মাজিদকে সমর্থন জানায়। মাজিদের পরের সুলতানরা জাঞ্জিবারকে গড়ে তোলেন স্বাধীন আধুনিক শহর হিসেবে। সমুদ্রের পাড়ে গড়ে তোলেন বিশাল এক রাজপ্রাসাদ।১৮৮৬ সালের পর থেকে জাঞ্জিবার সরকারের ওপর ব্রিটিশরা তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। ১৮৯০ সালে খলিফা মৃত্যুবরণ করলে আলী বিন সাঈদ সিংহাসনে বসেন। তিনি ঐ অঞ্চলে ব্রিটিশদের মদদে বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে পড়া দাস প্রথা বন্ধ করে দেন।সুলতান আলী বিন সাঈদ জাঞ্জিবারকে ব্রিটিশদের উপনিবেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। সেসময় ঐ অঞ্চলে ব্রিটিশদের বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ছিলেন লয়েড ম্যাথিউস। সুলতান ম্যাথিউসকে তার মন্ত্রিপরিষদের প্রথম সারির মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। ব্রিটিশরাও এই সুযোগে চুক্তিটা করে নেয়। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, ভবিষ্যতে কেউ সুলতান হতে গেলেই ব্রিটিশদের অনুমতি লাগবে।সুলতান আলী বিন সাঈদের পর ১৮৯৩ সালে সিংহাসন অধিকার করেন সুলতান হামাদ বিন তাওয়াইনি। তিনি সুলতান থাকাকালে ব্রিটিশদের সাথে সম্পর্ক ভালই ছিল। কিন্তু রাজ্যের এক শ্রেণীর লোক ব্রিটিশদের সহ্য করতে পারত না। কারণ ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহাসিক দাস প্রথা উচ্ছেদ করেছে। দাস প্রথা ঐ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা অবধি নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছিল।১৯৬৪সালে একটি সহিংস বিপ্লবে বহু আরবকে হত্যা বা তাড়িয়ে দেয়া হয় এবং জাঞ্জিবার তানজানিয়া গঠনে যোগদান করেছিল।জাঞ্জিবারের প্রধান শিল্পগুলি হল মশলা, রাফিয়া এবং পর্যটন বিশেষত দ্বীপগুলি লবঙ্গ, জায়ফল, দারুচিনি এবং কালো মরিচ উৎপাদন করে। এই কারণে, জানজিবার আর্কিপেলাগো এবং তানজানিয়ার মাফিয়া দ্বীপকে একসাথে স্থানীয়ভাবে স্পাইস দ্বীপপুঞ্জ (ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপপুঞ্জ থেকে ধার করা একটি শব্দ) বলা হয়।উমশো জাঞ্জিবারে ইসলামিক সচেতনতা ও পাবলিক ডিসকোর্সনের অ্যাসোসিয়েশন - এটি সোয়াহিলি সংক্ষেপে জুমিকি নামে পরিচিত। উমশো ১৯৯০ এর দশকের শেষভাগে একটি এনজিও হিসাবে প্রতিষ্ঠিত এবং নিবন্ধিত হয়েছিল ২০০২ সালে। সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল জনসাধারণের প্রচারের মাধ্যমে মুসলিম ঐক্য ও মুসলিম অধিকার প্রচার করা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...