সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফ্রান্সে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতা, বাক স্বাধীনতা বিতর্ক









আবু রায়হান
ইউরোপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুসলমান বাস করে ফ্রান্সে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওই দেশটিতে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী প্রচার সবচেয়ে বেশি এবং প্রায়ই বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)এর প্রতি অবমাননার ঘটনা ঘটছে। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ফ্রান্সের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৬৯ লাখেরও অধিক।মুসলিম জনসংখ্যা হচ্ছে ৬ মিলিয়নের ও বেশি।মার্কিন গবেষণা কেন্দ্র পিউ রিসার্চের ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৮ শতাংশ মুসলমান৷পিউ রিসার্চ সেন্টার ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ফ্রান্সে মুসলমানদের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ১ কোটি ৩২ লাখ হবে।প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান ও ইহুদিদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে অনেক কম।ফ্রান্সে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।বর্তমানে ফ্রান্সে ৩০০০হাজার মসজিদ আছে।পাঁচ শতের বেশি রয়েছে শুধু প্যারিস শহরে।গত ২৫ বছরে ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। গত ১০০ বছরে ফ্রান্সে যতগুলো ক্যাথলিক গির্জা নির্মিত হয়েছে, গত ৩০ বছরেই তার চেয়ে বেশি মসজিদ ও নামাজকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। মুসলমানদের অব্যহত অগ্রগতি ফরাসিদের ভাবিয়ে তুলেছে ।
ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম শব্দটি ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব ইলিয়ক (১৮১৭-১৯০৪) প্রথম ব্যবহার করেন। নিরপেক্ষ" শব্দের অর্থ কোনও পক্ষে নয় ৷ “ধর্ম-নিরপেক্ষ" শব্দের অর্থ, কোন ধর্মের পক্ষে নয় ।অর্থাৎ সমস্তর ধর্মের সাথে সম্পর্কহীন ৷ Secularism শব্দের আভিধানিক অর্থ - একটি মতবাদ, যা মনে করে রাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা প্রভৃতি ধর্মীয় শাসন থেকে মুক্ত থাকা উচিত । আর ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞায় Encyclopedia of Britanica তে বলা হয়েছে যে, যারা কোন ধর্মের অন্তর্গত নয়, কোন ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয়, কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয় এবং আধ্যাত্মিকতা, জবাবদিহিতা ও পবিত্রতা বিরোধী তাদেরকেই বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ। chambers dictionary -এর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে- The belief that the state morals, education should be independent of religion. ( ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হলো এমন এক বিশ্বাস যার মতে, রাষ্ট্র, নৈতিক,শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছু ধর্মমুক্ত থাকবে)। Oxford dictonary -এর মতে, স্রষ্টায় বিশ্বাস বা পরকালে বিশ্বাস ত্যাগ করে মানব জাতির বর্তমান কল্যাণ চিন্তার ওপর ভিত্তি করে নৈতিকতা গড়ে উঠবে।গত একশ বছর ধরে ফ্রান্স ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রের অপছন্দনীয় জাতি বা গোষ্ঠীকে শায়েস্তা করেছে। লাইসিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতিকথা গির্জা থেকে রাষ্ট্রকে আলাদা করা বা রাষ্ট্রের ওপর গির্জার ক্ষমতাকে খর্ব করা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ব্যবহার করে ইসলাম এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী মুসলমানদেরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হয়েছে বছরের পর বছর।অথচ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বলতে বোঝায় পার্থিব,ইহজগতিক, ধর্মহীনতা। রাষ্ট্র আর ধর্মকে পৃথকরূপে প্রকাশ করা । কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করাকে বোঝানো হয়। এক অর্থে ধর্মনিরপেক্ষতা ধর্মীয় স্বাধীনতাকে প্রকাশ করে।ধর্মনিরপেক্ষ বলতে মূলত বোঝানো হয়ে থাকে যে রাষ্ট্র কোনো ধর্মকেই পক্ষপাত করে না। এই মতবাদ অনুযায়ী, সরকার কোনরূপ ধর্মীয় হস্তক্ষেপ করবে না, কোন ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবে না এবং কোন ধর্মকে কোন প্রকার অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করবে না।
ধর্মনিরপেক্ষতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাক স্বাধীনতা নামের আরেক ধাপ্পাবাজি। একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের নিপীড়ন অন্যদিকে বাক স্বাধীনতার নামে ইসলামী মূল্যবোধের একেবারে গভীরে আঘাত করা। অনুমান করা হয় যে ৬ষ্ঠ খৃষ্টপূূর্বের শেষে বা ৫ম খৃষ্টপূূর্বের প্রথমার্ধে প্রাচীন এথেন্সের গনতান্ত্রিক মতবাদে বাক স্বাধীনতার প্রতিফলন ঘটেছিল। প্রজাতন্ত্রী রোমানের মূল্যবোধে বাক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।পূর্বের মানবাধিকার দলিলপত্রে মানবাধিকারের ধারণা পাওয়া গিয়েছিল। ইংল্যান্ডের সংসদে ১৬৮৯ বিলে সাংবিধানিকভাবে বাকস্বাধীনতাকে অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়; যার প্রভাব সমাজে এখনো বিদ্যমান।১৭৮৯ তে ফরাসি বিপ্লবের সময় নাগরিকের অধিকার মুলক আইন বলবৎ করা হয়; যেখানে বাক স্বাধীনতাকে অনিবার্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। স্যামুয়েল প্যাটি নামে এক শিক্ষক ক্লাসে তার এক ছাত্রের হাতে নিহত হন। ওই শিক্ষক শার্লে হেবদোর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বনবীকে নিয়ে ব্যাঙ্গ কার্টুন ক্লাসে ছাত্রদেরকে প্রদর্শন করে। এর প্রতিবাদে ওই ছাত্র শিক্ষককে হত্যা করে।এ ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এরপর ফরাসি সরকার মুসলমানদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে এবং এ পর্যন্ত বহু সংখ্যক নিরপরাধ মুসলমানকে সেদেশ থেকে বহিষ্কার করেছে, মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। ফ্রান্সের অনেক ইসলামি দফতরও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবের পরিচয় দিয়ে সেদেশের বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে মুসলমানদের হালাল খাবার বিক্রির বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এ ঘটনাকে ইসলামপন্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে অভিহিত করেছে। ম্যাকরন ঔদ্ধত্যের সাথে বলেছেন, বিশ্বনবী(সা.)কে অবমাননা করে এ ধরণের ব্যাঙ্গকার্টুন প্রকাশ অব্যাহত থাকবে।তিনি বলেন-বাক স্বাধীনতার পক্ষে শিক্ষা দেয়ার কারণেই ৪৭ বছর বয়সী ওই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এমন সময় ধর্মের প্রতি অবমাননাকে বাক স্বাধীনতা হিসেবে অভিহিত করলেন যখন এ দেশটি কথিত ইহুদি নিধনযজ্ঞ হলোকাস্টের ঘটনা নিয়ে আপত্তি জানানো বা এটাকে অস্বীকার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে। আর্মেনিয়ায় গণহত্যা অস্বীকার করা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শার্লি এবদো ম্যাগাজিনে ইসলাম অবমাননার ঘটনাকে ম্যাকরন এমন সময় বাক স্বাধীনতা বলে দাবি করলেন যখন আন্তর্জাতিক আইন ও বাক স্বাধীনতার ব্যাখ্যায় কোনো ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও ফরাসি সরকার ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)র বিরুদ্ধে অপপ্রচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার পরিবর্তে উল্টো বাক স্বাধীনতার দোহায় দিয়ে অপরাধীদের সমর্থন দেয়ায় ইসলাম বিদ্বেষীরা আরো বেশি উৎসাহী হচ্ছে। যার ফলে মুসলমানদের পক্ষ থেকেও পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসছে।
ফ্রান্সের নাগরিকরা তাদের সংবিধান অনুযায়ী স্বাধীনভাবে যে-কোনো বিষয়ে মতপ্রকাশের অধিকার রাখে৷ ১৭৮৯ সালের বিপ্লবের পর ‘রাইট ডিক্লারেসন' এর আওতায় দেশটির নাগরিকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে৷ পরে বিভিন্ন সময়ে কিছু আইন প্রণয়নের মাধ্যমে অবাধ মতপ্রকাশকে কিছুটা সীমিত করা হয়৷ যেমন নাগরিকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে তবে তা যেন কোনোভাবেই বর্ণবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মানহানি, অপবাদ, ঘৃণা ছড়ানো ও মানকতাবিরোধী অপরাধকে সমর্থন না করে৷ মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করা, ব্যাঙ্গ কার্টুন করা, ইসলামের কটূক্তি বা নিন্দা ফ্রান্সে নতুন নয়।বাকস্বাধীনতা আর ধর্ম নিরপেক্ষতার বরাত দিয়ে দেশটির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং রাজনীতিবিদরা এই বিদ্বেষ ছড়ান।ড্যানিশ কার্টুনিস্ট কার্ট ওয়েস্টারগার্ড রাসুল (সা) কে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন তৈরি করেছিল যেখানে নবীর পাগড়িতে একটি বোম্ব রাখা ছিল। এটি সারা দুনিয়ায় প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।রাজনৈতিক বিজ্ঞানের প্রফেসর এবং লেখক নরমান ফিংকেনস্টাইন তার নিজের মতামত ব্যক্ত করে বলেন, মোহাম্মদ নিয়ে শার্লে হেবদোর মর্যাদাহানিকর কার্টুনগুলো বাকস্বাধীনতার সীমাকে অতিক্রম করেছে, আর তিনি সেই কার্টুনগুলোকে জুলিয়াস স্ট্রেইচারের কার্টুনগুলোর সাথে তুলনা করেন, যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তার লেখা ও আঁকা প্রকাশের জন্য ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।সাবেক ফরাসী রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক শার্লে হেবদোর সেই প্রকাশনাটির দ্বারা এভাবে প্রকাশ্য উত্তেজনা সৃষ্টির নিন্দা করেন। তিনি বলেন, "যা কিছু কোন ব্যক্তির বিশ্বাস, বিশেষ করে ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করবে সেগুলোকে পরিহার করা উচিৎ। অনেকে আছেন যারা বলে, খ্রিস্টান ধর্মে খ্রিস্টানেরাই নিয়মিতই যীশু খ্রিস্টকে নিয়ে অনেক মজা করে, প্রচুর ট্রল করে। বা হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাই তাঁদের দেব-দেবীদের নিয়ে কার্টুন আঁকে। কিন্তু এসব নিয়ে তাঁরা কখনো উগ্রতা দেখায় না। মুসলমানেরা কেন এই ধরনের ঘটনায় এতো প্রতিক্রিয়া দেখায়-খ্রিষ্টানদের কাছে যীশু খ্রিস্টের (ঈসা (আ))-এর প্রতিকৃতির বাক-স্বাধীনতা আর মুসলমানদের কাছে মুহাম্মদ (সা) এর প্রতিকৃতির বাক-স্বাধীনতা আলাদা।হযরত মোহাম্মদ (সা.) নিজে তার কোন ছবি বা প্রতিকৃতি আঁকতে নিষেধ করে গেছেন। এর কারণটাও খুব স্বাভাবিক। দেখেন, যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা (আ) এর প্রতিকৃতি ছিল বলেই পরবর্তীতে মানুষ তার প্রতিকৃতি দেখে খ্রিস্টকে গড ভেবে তাঁর প্রার্থনা করা শুরু করে। প্রার্থনার মধ্যে ঈসা (আ) এর ক্রুশবিদ্ধ যে প্রতিকৃতি আছে সেটাই খ্রিস্টান ধর্মের প্রার্থনার মূল অনুষঙ্গ।এখন ইসলাম ধর্মের মূল ব্যাপার হচ্ছে একত্ববাদ। আল্লাহ এক এবং প্রার্থনা শুধুমাত্র তাঁরই করতে হবে। এই কন্সেপ্টের পরেও বিভিন্ন জায়গায় এতো মাজার পূজা হয়। মুহাম্মদ (সা) এর কোন ছবি নাই। তারপরেও এক ধরনের মিলাদের নামে অনেকে প্রায় তাঁর নামেই প্রার্থনা করে।এখন চিন্তা করে দেখেন হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ছবি থাকলে কী হতো। অনেক মুসলমানই উনাকে যেভাবে বিশ্বাস করে, দেখা যেতো হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ক্ষেত্রেও যীশু খ্রিস্টের মতো পরিণতি হতো। মানুষ জন হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর ছবি সম্বলিত টি-শার্ট পড়তো, তাবিজ বানিয়ে ঘুরতো। ইসলামও তখন আরেকটা শিরকের ধর্মে পরিণত হতো।একবার আয়েশা (রা.) একটি ছোট ছবি আঁকা বালিশ কিনলেন। ঘরে প্রবেশের সময় তাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টি পড়লে তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন না। আয়েশা (রা.) তাঁর মুখমণ্ডল দেখেই তা বুঝতে পেরে বলেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে তাওবা করছি। আমি কি গুনাহ করেছি? রাসুলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই ছোট্ট বালিশটি কোথায় পেলে?’ তিনি বলেন, ‘আমি এটা কিনেছি, যাতে আপনি এতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে পারেন।’ তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা এসব ছবি অঙ্কন করেছে, কিয়ামতের মাঠে তাদের আজাব দেওয়া হবে। তাদের বলা হবে, তোমরা যাদের সৃষ্টি করেছিলে তাদের জীবিত করো।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (বুখারি, হাদিস -২৪১৭) আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) লিখেছেন, ‘প্রাণীর ছবি তৈরি করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। চাই তা সম্মানের জন্য তৈরি করা হোক অথবা অন্য কারণে। কেননা ছবি তৈরির মধ্যে স্রষ্টার সাদৃশ্য রয়েছে।’ (উমদাতুল কারি - ৪৫১)
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ গত কয়েক মাস ধরেই ইসলামকে এবং মুসলমানদের অনুভূতিতে কথার মার প্যাঁচে আঘাত করে যাচ্ছেন। যতই দিন যাচ্ছিল তার এই আঘাতের ডোজটা একটু একটু বাড়াচ্ছিলেন। দেখছিলেন যে মুসলিম বিশ্ব থেকে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে। তেমন বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া না আসায় এ মাসের গোঁড়ার দিকে তিনি একেবারে লাগাম ছেড়ে বলে দিলেন, ‘ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা আজ সারা বিশ্ব জুড়েই সঙ্কটের মধ্যে আছে।’ ফ্রান্সের এবং ইউরোপের আনেক গণমাধ্যমও বরাবরের মত এবারও বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে মাক্রোঁকে সমর্থন দিল। প্রেসিডেন্ট এরদোগান ফ্রান্সে বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ(সা.) এর প্রতি অবমাননাকর ব্যাঙ্গকার্টুন প্রকাশের ঘটনায় ওই দেশটির প্রেসিডেন্ট ম্যাকরনকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে মাক্রোঁনের ব্যক্তিগত সমস্যাটা কোথায়? মুসলমান ও ইসলাম ধর্মের প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল এমানুয়েল মাক্রোঁনের যে মনোভাব তাতে ম্যাকরনের উচিত মানসিক চিকিৎসা করানো। তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরো বলেছেন, ফ্রান্স সরকার বাহ্যিকভাবে নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাকস্বাধীনতার রক্ষক বলে মনে করে। অথচ তারা ইসলাম অবমাননার ঘটনা ঘটলেও এটাকে তারা বাকস্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। তারা আসলে চরম ইসলাম বিদ্বেষী।এরদোগানের ওই মন্তব্যকে নিন্দা জানায় ফরাসি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। এমনকি তুরস্ক থেকে তার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে গেছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...