রাসুলের কার্টুন নিয়ে তোমাদের কেন এতো বাড়াবাড়ি ?

 

খ্রিস্টান তোমরা যারা উপাসনা কর যিশুকে। আমরা তাকে ঈসা (আ.) হিসাবে মানি ও সম্মান করি।তার মাতা যাকে তোমরা মেরি বলো।আমরা বলি মরিয়ম। তার নামে কুরআনে একটি সুরা আছে সুরা মরিয়ম।শুধু তাই নয় পবিত্র কুরআনে একমাত্র নারী হিসেবে মরিয়ম (আ.) এর নাম সরাসরি উল্লেখ আছে। এর চেয়ে বড় বাক স্বাধীনতা আর কি চাও? নিউ টেস্টামেনটে মেরির নাম যতবার উল্লেখ নেই তার চেয়ে বেশি কুরআনে উল্লেখ আছে।কুরআনে ৩১ বার হযরত মরিয়মের নাম উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (আ) কে যে সুসংবাদ দিয়েছিলেন তা ইঞ্জিল কিতাবেও রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন- “স্মরণ কর, যখন মরিয়ম এর পুত্র ঈসা (আলাইসিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম) বললো, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল রূপে আগমন করেছি। আমার পূর্বে যে তাওরাত আবতীর্ণ হয়েছিলো আমি তা সত্য বলে বিশ্বাস করি এবং আমার পর ‘আহম্মদ’ নামে একজন রাসূল আগমন করবেন আমি তার সুসংবাদ দিচ্ছি। (সুরা সফ আয়াত- ৬)
বাইবেলে উল্লেখ আছে, “তোমাদেরকে বলার আমার আরো অনেক কথা আছে কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করতে পারবো না। পরন্ত সে সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদেরকে সত্যের সন্ধান দিবেন। কারণ তিনি নিজ থেকে কিছু বলবেন না, যা যা শুনবেন তাই বলবেন এবং ভবিষ্যতের ঘটনাও জানাবেন।” (যাহন অধ্যায় ১৪)।বাইবেলে বর্ণিত বাক্যগুলোতে হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া সাল্লাম বার বার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আগমনের সংবাদ দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে তিনি ‘ফারাক্লিত’ (PARACLETE) বলে অভিহিত করেছেন। এ শব্দটি ইবরানি অথবা সুরইয়ানি ভাষার। এর আরবি অনুবাদ মুহাম্মদ এবং আহম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত, পরম প্রশংসাকারী অথবা পরম প্রশংসিত। প্রাচীন ইউনানি (গ্রিক) ভাষায় এর অনুবাদ করা হয়েছে, ‘পাইরিকিলইউটাস’। এর অর্থ অত্যন্ত প্রশংসাকারী বা প্রশংসিত। (আহমদ) কিন্তু পরবর্তী খ্রিস্টানরা যখন দেখতে পেল, এর দ্বারা ইসলামের সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে, তখন তারা শব্দটি পরিবর্তন করে, ‘পাইরকিলিটাস’ অর্থাৎ শান্তিদাতা করে নেয়। খ্রিস্টান পাদ্রী এবং মুসলমান আলেম সমাজের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবৎ এ শব্দটি নিয়ে চলে আসছে তর্কযুদ্ধ। আলেমরা প্রাচীন খ্রিস্টানদের লিখিত প্রমাণ দ্বারা অনেকবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, এ শব্দটি ‘পাইরিকিলইউটাস’ অর্থাৎ মুহাম্মদ ও আহম্মদ। মহাত্মা যোহনের লিখিত বাইবেলে বর্ণিত বাক্যসমূহে প্রতীক্ষিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া-সাল্লাম যে গুণাবলী বর্ণিত আছে তা নিচে বর্ণনা করা হলো-
১। হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর প্রকৃত শিক্ষা মানুষ ভুলে যাবে এবং প্রতীক্ষিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে স্মরণ করে দিবেন।
২। তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর অসম্পূর্ণ বিষয়গুলো পূর্ণ করবেন এবং সমস্ত সত্যের সন্ধান দিবেন।
৩। তিনি পৃথিবীতে হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করবেন, তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন এবং তার প্রতি ঈমান না আনার জন্যে পৃথিবীর মানুষকে অপরাধী সাব্যস্ত করবেন।
৪। তিনি নিজের তরফ থেকে কিছুই বলবেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নির্দেশ পাবেন তাই বলবেন।

ইহুদিরা যাকে মোজেস বা মোশি বলে আমরা বলি মুসা (আ.)। তাকে আমরা নবি ও রাসুল জ্ঞান করি, সম্মান দিই। তোমরা জানো কুরআনে নবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হযরত মুসা (আ.) এর নাম উল্লেখ আছে। ৩৪ টি সুরায় ১৩৭ বার তার নাম আলোচিত হয়েছে। তোমাদের ধর্মগ্রন্থ আমাদের রাসুলের কথা উল্লেখ আছে তা কি ভুলে গেছো? তৌরাত (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম) যাকে হীব্রু ভাষায় 'মেউদ দেউদ' এবং 'ভাববাদী' বলে সম্বেধন করেছে তিনি হলেন সত্যের আত্মা, কলি যুগের মহাত্মা মুহাম্মদ (সাঃ)। সেই সত্যের আত্মার আগমন সম্পর্কে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫-১৯ বলা হয়েছেঃ
"১৫ তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ এক ভাববাদী উত্পন্ন করিবেন, তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে। ১৬কেননা হোরেবে সমাজের দিবসে তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর নিকটে এই প্রার্থনাই ত করিয়াছিলে, যথা, আমি যেন আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর পুনর্বার শুনিতে ও এই মহাগি্ন আর দেখিতে না পাই, পাছে আমি মারা পড়ি। ১৭তখন সদাপ্রভু আমাকে কহিলেন, উহারা ভালই বলিয়াছে। ১৮আমি উহাদের জন্য উহাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উত্পন্ন করিব, ও তাঁহার মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাঁহাকে মুখে যাহা যাহা আজ্ঞা করিব, তাহা তিনি উহাদিগকে বলিবেন। ১৯আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলিবেন, তাহাতে যে কেহ কর্ণপাত না করিবে, তাহার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব।" (বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত বাইবেলের পুরাতন নিয়মের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮: ১৫-১৯ )
বর্তমানে তাওরাতের যে সকল কপি পাওয়া যায় তার মধ্যে ‘আশয়ীয়া নবীর’ কিতাবে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনসহ আজও সেই ভবিষ্যদ্বাণী পাওয় যায়। তা হলো-
১। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
২। তিনি আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি।
৩। তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্ট।
৪। তিনি চিৎকার করবেন না । উচ্চস্বরে কথা বলবেন না এবং বাজারে কোলাহল করবেন না।
৫। তিনি গরীব, কাঙ্গাল ও দুর্বলদের উপর অত্যাচার করবেন না, তিনি সদাশয় এবং চরিত্রবান হবেন।
৬। তিনি চিরস্থায়ী ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না।
৭। তার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমিই আপনার সহায় হয়ে আপনাকে রক্ষা করবো।
৮। তিনি পূর্ণ তৌহিদ প্রচার করবেন এবং পৌত্তলিক ও মুশরিকদেরকে পরাজিত করে পৌত্তলিকতা ধ্বংস করবেন। তিনি বীরবেশে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
৯। মরুভূমিতে লোকালয়ে এবং কীদারের আবাদকৃত গ্রাম সমূহে নিজের গুরুগম্ভীর আহ্বান উচ্চ করবেন।
আমরা যাকে রাসুল মানি, অনুসরণ করি, ভালোবাসি যার অপমানে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ ( সা.)। তাকে অপমান করে কার্টুন প্রদর্শন করে তোমরা কিসের বাক স্বাধীনতার কথা বলো? তোমরা কি ধর্ম মানো? ঈসা (আ.) কে আল্লাহ আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন। আমাদের নবির উম্মত হিসেবে তিনি আবার দুনিয়ায় আসবেন। অথচ ঈসা (আ.)কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে তোমরা ভ্রান্ত খোয়াবে নিমগ্ন!হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর মর্যাদা ও সম্মান তোদের সহ্য হয়না। যেকারণে তোমরা মহানবির কার্টুন দিয়ে তাকে অসম্মান করতে চাও? যা তোদের জন্যই বুমেরাং হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল