চীনে মুসলমানদের আগমন ও বর্তমান অবস্থা




Dongguan Giant Mosque, Xining

মো আবু রায়হানঃ চীন পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। এশিয়া মহদেশের পূর্ব অঞ্চলে এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত।চীনের উত্তরে রয়েছে মঙ্গোলিয়া; উত্তর পূর্বে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া, পূর্বে চীন সাগর, দক্ষিণে ভিয়েতনাম, লাওস, মায়ানমার, ভারত, ভূটান, নেপাল, দক্ষিণ পশ্চিমে পাকিস্তান; পশ্চিমে আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কির্গিজিস্তান ও কাজাকিস্তান। এই ১৪টি দেশ বাদে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের সমুদ্র সীমানা রয়েছে। দেশটিকে প্রধানত ৩১টি প্রদেশ পর্যায়ের অঞ্চলে ভাগ করা যায়। সবগুলোকে অবশ্য প্রদেশ বলা হয় না। এর মধ্যে ২২টিকে বলা হয় প্রদেশ, পাঁচটিকে বলা হয় স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল আর চারটি হচ্ছে রাষ্ট্র কর্তৃক সরাসরি পরিচালিত মিউনিসিপ্যালটি। এগুলোর বাইরেও তিনটি বৃহৎ দ্বীপ রয়েছে যেগুলো চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে আইনগত, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কিত। এদের মধ্যে হংকং ও ম্যাকাওকে বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকের শেষে এসে পর্তুগাল মাকাওকে চীনের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯৯ সালে অঞ্চলটি চীনের কাছে হস্তান্তর করে; মাকাওকেও বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়।১৯৯৭ সালে চীন ব্রিটেনের কাছ থেকে হংকং এর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়, তবে অঞ্চলটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখেছে। চীনের সাম্যবাদী দল দেশটি শাসন করে।এছাড়াও চীন তাইওয়ানের ওপরে সার্বভৌমত্ব দাবী করে আসছে। দেশটির প্রধান প্রধান নগর অঞ্চলের মধ্যে সাংহাই, কুয়াংচৌ, বেইজিং, ছোংছিং, শেনচেন, থিয়েনচিন ও হংকং উল্লেখযোগ্য। চীন বিশ্বের একটি বৃহত্‌ শক্তি এবং এশিয়ার মহাদেশের একটি প্রধান আঞ্চলিক শক্তি।১৯৭৮ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের অবতারণার পর থেকে চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান প্রধান অর্থনীতিগুলির একটিতে পরিণত হয়েছে।২০১৬ সালের প্রাক্কলন অনুসারে এটি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়াও চীন বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক ও দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। চীন একটি স্বীকৃত পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র এবং বিশ্বের বৃহত্তম সক্রিয় সেনাবাহিনীর অধিকারী। এর প্রতিরক্ষা বাজেট বিশ্বের ২য় বৃহত্তম।চীন জাতিসংঘের একটি স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র। ১৯৭১ সালে এটি চীন প্রজাতন্ত্রকে প্রতিস্থাপিত করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। এছাড়াও চীন বহু সংগঠন ও সংস্থার সদস্য, যার মধ্যে অন্যতম হল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ব্রিক্‌স, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমার ফোরাম এবং জি-২০। চীনের দুইটি বৃহত্তম নদী হোয়াংহো ও ইয়াংসি। চীনারা তাদের দেশকে চুংকুও নামে ডাকে, যার অর্থ মধ্যদেশ বা মধ্যবর্তী রাজ্য। চীন নামটি বিদেশিদের দেওয়া।
চীনের আয়তন প্রায় ৯৫,৯৬,৯৬০ বর্গ বর্গকিলোমিটার।আয়তনের দিক থেকে চীন এশিয়ার বৃহত্তম দেশ এবং রাশিয়া ও কানাডার পর চীন বিশ্বে তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ গুণ। ১৪৪ কোটি জনসংখ্যার দেশটি জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে ১ম । বিশ্বের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের বাস। এদের ৯০%-এরও বেশি হল চৈনিক হান জাতির লোক। হান জাতি বাদে চীনে আরও ৫৫টি সংখ্যালঘু জাতির বাস। এদের মধ্যে আছে তিব্বতি, মঙ্গোল, উইঘুর, ছুয়াং, মিয়াও, য়ি এবং আরও অনেক ছোট ছোট জাতি। ২০১৪ সালের জরিপ অনুসারে চীনের প্রায় ৭৪% জনসংখ্যার কোন ধর্ম নেই বা আঞ্চলিক ধর্মাবলম্বী। এর বাইরে মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের প্রায় ১৫.৮৭%, খ্রিষ্টান ধর্মের প্রায় ২.৫৩%, ইসলাম ধর্মের প্রায় ০.৫%। চীনে বর্তমানে প্রায় ৬০-৮০মিলিয়ন মুসলমানের বসবাস। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০০৯ এর একটি সমীক্ষা হতে জানা যায় চীনে ২১,৬৬৭,০০০ মুসলমান রয়েছেন, তারা মোট জনসংখ্যার ১.৬%। সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুসারে, চীনে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১–২% মুসলমান। ২০০০ শুমারি গণনা থেকে জানা যায় যে চীনে ২০ মিলিয়ন পর্যন্ত মুসলমান থাকতে পারে।স্থানীয় সরকারের হিসাব অনুসারে মুসলিমরা মোট জনসংখ্যার ০.৪৫% থেকে ২.৮৫% প্রতিনিধিত্ব করে।৫৫টি জাতির মধ্যে ১০টি জাতির মধ্যে ধর্ম হিসাবে ইসলাম প্রভাবশালী। সেই ১০টি জাতি হচ্ছে হুই, উইঘুর, কাযাক, কিরগিজ, তাতার, উজবেক, তাজিক, দুংগশায়ান, সালারা, বাওয়ান। জিংজিয়াং, গানচু, নিংজিয়া, ইউনান, হেনান ও কুনমিং অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাধিক্য। পুরো চীনে প্রায় নয় লাখের মতো হুই গোষ্ঠীর বাস। তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চীনজুড়েই। তবে উত্তর-পশ্চিম চীনেই হুই জাতির বসবাস বেশি। হুই গোষ্ঠীর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্ম ইসলাম। ধারণা করা হয়, সিল্ক রুটের কল্যাণে যখন আরবদের সঙ্গে চীনাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, সে সময় হুই গোষ্ঠীর লোকজন ইসলামের সাম্য আর শান্তির বাণীতে আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে।

চীন অনেক আগ থেকেই বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল, তাই ইসলামের আবির্ভাবের আগেই আরবদের সাথে চীনের সম্পর্ক গড়ে উঠে ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্র ধরে। আরবে ইসলামের আবির্ভাবের শুরুতেই চীনে ইসলামের আলো প্রবেশ করে। আরব জাহাজগুলি সাহস করে আরব উপসাগরের প্রান্তে বসরা এবং পারস্য উপসাগরের কায়েস (সিরাফ) শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। তারা ভারত মহাসাগর ধরে আসার সময় সরণদীপ (শ্রীলঙ্কা) পেরিয়েছিল এবং সুমাত্রা ও মালয়েশিয়া উপদ্বীপের মধ্যবর্তী মালাক্কা প্রণালী হয়ে পৌঁছেছিল দক্ষিণ চীন সাগরে।Islam was first brought to China by Sa'd ibn abi Waqqas, who came to China for the third time at the head of an embassy sent by Uthman, the third Caliph, in 651, less than twenty years after the death of prophet Muhammad. The embassy was led by Sa`d ibn Abī Waqqās. Emperor Gaozong, the Tang emperor who received the envoy then ordered the construction of the Memorial mosque in Canton, the first mosque in the country, in memory of the prophet.(bbc 2002 )
৬১৬-৬১৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে সাহাবি হযরত সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস রা.-এর মাধ্যমে চীনে ইসলাম ধর্মের পরিচয় ঘটে। কারো মতে তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান রা.-এর আমলে ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দের চীনে ইসলামের আগমন ঘটে। According to traditional Chinese Muslim accounts, the history of Islam in China began when four Ṣaḥābā—Sa‘d ibn Abī Waqqās (594–674), Ja'far ibn Abi Talib, and Jahsh preached in 616/17 and onwards in China after coming from Chittagong-Kamrup-Manipur route after sailing from Abyssinia in 615/16. Sa‘d ibn Abi Waqqas again headed for China for the third time in 650–51 after Caliph ‘Uthman asked him to lead an embassy to China, which the Chinese emperor received warmly( Khamouch, Mohammed. "Jewel of Chinese Muslim's Heritage)যদিও নিরপেক্ষ কোনো ইতিহাসে চীনে সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস (রা.) এর আগমন সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই; তবু ঐতিহাসিক ঐক্যমতের ভিত্তিতে একথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, সপ্তম শতাব্দীর যেকোনো সময় মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের ব্যবসায়িক সম্পর্কের সূত্র ধরে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে।
গুয়াংজু (ক্যান্টন) ইসলামের প্রবেশদ্বার। তাং বংশের শাসনামলে (৬১৮-৯০৭) আরব বণিকদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামের আগমন ঘটে। সপ্তম শতাব্দীতে আরব বণিকরা গুয়াংজুতে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থানে বিশেষত Huaisheng Temple এলাকায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলে এবং মালামাল চীন থেকে আরব, আরব থেকে চীনে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবস্থা করে। ব্যাবসায়িক কারণে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আরবদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং অনেকে চীনা মেয়েদের পাণিগ্রহণ করে গুয়াংজুতে স্থায়ী হয়ে যায়। এক পর্যায়ে এসব অঞ্চলে তারা মসজিদ নির্মাণ করতে শুরু করেন। চীনের গুয়াংজুতে অবস্থিত হুয়েইশেং মসজিদটির বয়স প্রায় ১৩০০ বছর। হুয়াইশেং অর্থ ‘নবীকে স্মরণ করুন’ (নবীর স্মৃতিতে মসজিদ) এবং এটি কুয়াংতা মসজিদ নামেও পরিচিত যার ইংরেজি অর্থ হল দ্য বেকন টাওয়ার মস্ক বা বাংলায় বাতিঘর মসজিদ। হুয়াইশেং মসজিদটি কুয়াংতা রোডে (লাইট প্যাগোডা রোড) অবস্থিত যা রেনমিন ঝংলু থেকে পূর্ব দিকে চলে গিয়েছে।যদিও এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মসজিদটির পুনঃসংস্কার করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটিই চীনের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ।
আরব বণিকরা গুয়াংজু থেকে চীনের অন্যান্য প্রদেশে, বিশেষত কুনমিং, সাংহাই, বেইজিং, ইউনান ও জিংজিয়াংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে থাকে। বণিকরা ছিল মুসলিম। তারা যে অঞ্চলে ব্যবসা করতে গেছে সেখানে ইসলামের বিস্তৃতি ঘটেছে। টি মঙ্গোল ইউয়ান রাজবংশের অধীনে শীর্ষে পৌঁছেছিল।বাণিজ্য, যুদ্ধ, অধীনতা বা আধিপত্যের মাধ্যমে বিভিন্ন স্টেপ্প উপজাতি ও সাম্রাজ্যের সাথে চীনের দীর্ঘ ও আন্তঃসংযোগমূলক সম্পর্ক চীনের মধ্যে একটি বৃহৎ টেকসই ইসলামী সম্প্রদায়ের পথ সুগম করেছে। ইসলামী প্রভাবটি বিভিন্ন স্টেপ্প লোকদের কাছ থেকে এসেছিল যারা চীনা সংস্কৃতিতে আত্মনিয়োগ করেছিল। মুসলমানরা প্রশাসক, সেনাপতি এবং অন্যান্য নেতাদের দায়িত্ব পালন করেছিল যারা পার্সিয়া এবং মধ্য এশিয়া থেকে চীন থেকে মঙ্গোলদের অধীনে সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য স্থানান্তরিত হয়েছিল। Islam is considered to be the newest world religion to come to China. The religion arrived in China after Buddhism and Christianity. Muslim traders began to arrive in China during the Tang Dynasty (618 - 907), and perhaps hundreds of thousands of Muslims were brought into the Yuan Empire (1271 - 1368) by the Mongols. Many Mongol leaders became converts and the religion spread quickly in Central Asia by Muslim conquest of the nomadic tribes and empires between Arabia and China.
ইয়ুআন রাজবংশের শাসনামলে (১২৭৯ - ১৩৬৮) চীনে মুসলমানরা কিছুকাল সামাজিক প্রতিপত্তি লাভ করে। কেননা প্রভাব বিস্তারের দিক থেকে উক্ত শাসনামলে মঙ্গোলীয় শাসকগোষ্ঠীর পরেই ছিল আরব, পারস্য ও তুরস্ক থেকে আগত মুসলিমদের অবস্থান। আর উপজাতীয় বর্ণপ্রথার কারণে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হান চীনাসম্প্রদায় তখনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। পরবর্তীতে চীনের শাসনভার চলে যায় স্থানীয় হান রাজবংশের কাছে। তারা ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সাল পর্যন্ত চীনে শাসন করে। হান শাসকগোষ্ঠী মঙ্গোলীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় এতো পরিমাণে বাঁধা দেয় যে, তারা নামকরণ থেকে শুরু করে ভাষাচর্চা, পোশাকআশাক এমনকি চুল রাখার ধরণেও স্বকীয়তা বজায় রাখতে পারতো না।এমতাবস্থায় মুসলমানরা চীনের স্থানীয় হান সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে তারা চীনা ভাষা রপ্ত করে নেয় ও চীনা নাম ধারণ করে নিজেদেরকে স্থানীয় চীনা সম্প্রদায়ের অঙ্গীভূত করে নেয়। মূলত এরাই বর্তমান চীনে সর্ববৃহৎ উপজাতীয় হুই জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ।একবিংশ শতাব্দীর পুরোটা জুড়েই মুসলমানগণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানামুখী অত্যাচার ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
মসজিদ ভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠতে থাকে। ১৯০৭ সালে শায়েখ আবদুর রাহমান অয়াং হাও রান একটি উন্নতমানের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তিনি আরবি ও ফারসি ভাষার পাশাপাশি চীনা ভাষায় ইসলামি উলুমের শিক্ষা দানের ব্যবস্থা চালু করেন। তাঁর পরে আরো বিভিন্ন স্থানে এই ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে।এরপর ১৯১৯ সালের দিকে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা দানের উদ্দেশ্য নিয়ে আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠতে থাকে। তবে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব (১৯৬৬-১৯৭৬) ও আধুনিক চীন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে থাকে।গুয়াংজু থেকে জিংজিয়াংয়ের দূরত্ব ৭৩৫ কিলোমিটার। চীনের বর্তমান সরকার জিংজিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে। সব নাগরিকের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জিংজিয়াং আয়তনে বাংলাদেশের চেয়ে চার গুণ বড়। এক কোটি উইঘুর মুসলিম ও ১৫ লাখ কাজাখ মুসলিমকে প্রশিক্ষণের নামে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। চীনের ২৩টি প্রদেশে সরকারিভাবে বিভিন্ন সেমিনার, মতবিনিময়, প্রশিক্ষণ ও আলোচনাসভার মাধ্যমে মুসলমানদের পোশাক-পরিচ্ছদ, তাহজিব-তমদ্দুন ও জীবনাচারে ‘চীনা হয়ে যাওয়ার’ জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। এককথায় হান বুদ্ধ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানদের মিশে যেতে হবে। সপ্তম শতাব্দী থেকে চীনের মুসলমানরা কখনও কখনও চূড়ান্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চিনে তাদের বিশ্বাস অনুশীলন করতে পেরেছে। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা এখনও চিনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত।সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অফ চায়না দাবি করেছে যে দেশব্যাপী চীনা মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে। বেইজিংয়ে ১১ ই মে, ১৯৫৩ এর উদ্বোধনী সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের দশটি জাতীয়তার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এই সমিতিটি পরিচালিত হচ্ছিল ১৬ জন ইসলামী ধর্মীয় নেতা দ্বারা। চিং রাজবংশের সময়ে ইসলাম দ্রুত বিকাশ লাভ করেছিল এবং সারা দেশে প্রচুর মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজকাল চীনে প্রায় ২০,০০০ মসজিদ রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল