সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ঢাবির শিক্ষকদের যত ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ




শুদ্ধভাবে সালাম দেয়া ও আল্লাহ হাফেজ বলাকে বিএনপি-জামায়াতের মাসয়ালা ও জঙ্গিবাদের চর্চা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের উপসংহার অনুষ্ঠানে ধর্মের অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ বিষয় আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ভিডিওটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। সালাম ও আল্লাহ হাফেজ নিয়ে এমন মন্তব্য করায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে সমালোচনা ও নিন্দার তীব্র ঝড়।জনগণের প্রশ্ন ইসলাম সম্পর্কে যাদের ন্যূনতম জ্ঞান নাই, তাদের টকশোতে ডেকে এনে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্য কি?
গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসানের সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম একটি এবং ইমরুল হাসান নামে এক আইনজীবী তার নামে দুটি মামলা দায়ের করেন।আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলা দু’টি আদেশের জন্য রেখেছেন বলে জানান জানান আইনজীবী ইমরুল হাসান।মামলায় অভিযোগ করা হয়, সম্প্রতি ‘ডিবিসি নিউজ’ টেলিভিশন চ্যানেলের ‘উপসংহার’ নামে টক শোতে ‘ধর্মের অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে আলোচনায় মুসলিমদের শুদ্ধ উচ্চারণে ‘আসসালামু ওয়ালাইকুম’ বলা ও ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলাকে গর্হিত, নিন্দনীয় বলে ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক জিয়াউর রহমান। এসবকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন তিনি।অভিযুক্ত ব্যক্তির এরূপ মন্তব্য মুসলিম ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করেছে।তাই এই ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ও ২৯ ধারায় অভিযোগ করেন মাসিক বাইয়্যিনাত সম্পাদক। অপরদিকে আইনজীবী ইমরুল হাসানের মামলায় একই আইনের ২৫ ও ২৮ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ড. জিয়াউর রহমানকে লিগাল নোটিশটি পাঠান মুহম্মদ মাহবুব আলমের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহম্মদ শেখ ওমর শরীফ। পরে নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন তিনি।জানা গেছে, তিনি যদি নোটিশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে ধর্ম অবমাননাকর ও বেআইনি বক্তব্য প্রত্যাহার না করেন তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হবে নোটিশে এমনটাই জানানো হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে এবং এটা কোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বলে মন্তব্য করেছিলেন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে প্রেস ক্লাবে পলিটিকাল ইকোনমি অব মাদ্রাসা এডুকেশন ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকে যে ভর্তি হয় সে ভর্তির মধ্যে খোঁজ করে দেখুন মানে সেখানে যারা স্কুল থেকে পড়ে আসে তারা কত ভাগ ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একটা উচ্চতর মাদ্রাসায় পরিণত হয়েছে।আমি জেনে বুঝে ৩৪ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি তার আগে ৬ বছর পড়েছি, ৪০ বছর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত। আমি বলছি, চোখের ওপরে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা উচ্চতর মাদ্রাসায় হায়ার মাদ্রাসায় পরিণত হতে দেখছি। এবং এটা কোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় ৬০ ভাগের বেশি ভর্তি হয় মাদ্রাসা শিক্ষার্থী। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা জায়গা পাচ্ছে না। এবং তাদের ইংরেজির ভিত্তি এত খারাপ যে মাদ্রাসা থেকে যে ইংরেজি পড়ে আসে সেটা হচ্ছে ক্লাস ফোরের সমমান। ফলে তারা আপানার ইংরেজিতে দক্ষতা বিহীনভাবে তারা এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। এবং এটা গোটা উচ্চ শিক্ষাকে কিন্তু টেনে টেনে নিচে নামিয়ে আসছে। ফলে আমাদের সন্তানরা, তারাও আমাদের সন্তান, মানে আমরা যারা আমাদের ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে পড়াই তারা কিন্তু উচ্চশিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এটা হতে পারে না। এটা তাদের প্রতি অন্যাজ্য।
এই অধ্যাপক আরও বলেন, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনিয়র মাদারসায় পরিণত হবে এবং গোটা দেশটা মাদ্রাসার কাছে জিম্মি হয়ে যাবে এটা আমি মনে করিনা। বরং মাদ্রাসাকেই মূল ধারায় আনতে হবে। মাদ্রাসাতে ধর্ম শিক্ষার পাশাপাশি জীবন জীবীকার অনুসঙ্গী শিক্ষা পাঠক্রম অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে মূলধারায় আনতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার লেকচারে এরকম বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এবং প্রতি বছর ইতিহাস বিভাগে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী মাদ্রাসা থেকে আসে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবছরই বিভিন্ন ইউনিটে প্রথম হয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এমনকি ঢাবির বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষায়ও অনেকে প্রথম হন। আবার অনেকে স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশের বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার যাচ্ছেন।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে দেয়া এক বক্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ঢাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড মেসবাহ কামাল। এই সমালোচনার জবাবে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। পাঠকদের উদ্যেশ্যে তা হুবুহু তুলে ধরা হলো -তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে প্রফেসর ড. আবুল বারকাত ও তার সহ-গবেষকগণের লেখা একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সম্প্রতি আমি যে বক্তব্য দিয়েছি, তাতে মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমি কিছুই বলিনি। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আমি জানি যে, মাদ্রাসা শিক্ষা এদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা ব্যবস্থা। তাছাড়া উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং মাওলানা ভাসানী (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পাশাপাশি যে দুজন আমার পরম শ্রদ্ধেয়) তাঁরা দুজনেই মাদ্রাসায় পড়েছেন।মাদ্রাসা ছাত্রদের হেয় করা আমার উদ্দেশ্য ছিলো না, কেননা সকল ছাত্রই আমার কাছে সমান। বরং শিক্ষক হিসেবে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে মাদ্রাসা থেকে আসা, ব্যতিক্রম বাদে, বেশিরভাগ ছাত্রদের ভাষাগত ভিত্তির দুর্বলতার কথা বলেছি। আমাদের ছাত্রদের অনেকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্বল ইংরেজি নিয়ে প্রবেশ করে, তখন আমরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হই। তাই মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা দরকার সেটাই আমার বক্তব্য ছিলো। মাদ্রাসা শিক্ষা অবশ্যই এদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা। কিন্তু এখান থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভিত্তিমূল মজবুত করার জন্য তাদের মূল ধারার সাথে সংগতি রাখতে হবে। মাদ্রাসা থেকে একসময় অনেক বরেণ্য শিক্ষাবিদ, যেমন আমার শিক্ষক ড. মফিজুল্লাহ কবির, বেরিয়ে এসেছেন। মাদ্রাসা থেকে এখনও কিছু ভাল ছাত্র আমরা পাই, তবে তারা ব্যতিক্রম। আমি মাদ্রাসা শিক্ষা জাতীয়করণের দাবীকে সমর্থন করি, মাদ্রাসা ছাত্রদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে কথা বলি এবং মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থায়ন বৃদ্ধিকে সমর্থন করি। ঐ অনুষ্ঠানে আমার দেয়া ১৮ মিনিটের বক্তব্যে সেসব কথা বলেছিলাম। আগে-পিছে বাদ দিয়ে আংশিক বক্তব্য শুনে যথার্থ ধারণা পাওয়া যায় না। মাদ্রাসা ছাত্রদের কর্মসংস্থান ও জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে মাদ্রাসাকে শিক্ষার মুল ধারার সাথে সমন্বিত করা দরকার।আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি- এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা থেকে নম্বর সংযুক্তি ব্যবস্থা বাতিল করে সরাসরি পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তিযোগ্য ছাত্রছাত্রী নির্বাচন করা হলে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী মাধ্যম সহ সকল ছাত্রছাত্রী সমান সুযোগ পাবে। আমি এটাই বলতে চেয়েছি।আমার বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং বাহিরের ছাত্রছাত্রী-সহ অন্যান্য যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার কাছে সকল ছাত্রই সমান, তা সে যে ধারা থেকেই আসুক না কেন।

ঢাবিতে মাদ্রাসা থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে অশোভন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান ফার্সি ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু মূসা মোঃ আরিফ বিল্লাহ। তিনি ফেসবুকে পোস্ট করে এর প্রতিবাদ জানান-“ইতিহাসের একজন অধ্যাপক মাদ্রাসার ছাত্রদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া প্রসঙ্গে কিছু হঠকারী অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য দিয়েছেন। যা আমাকে বিস্মিত করেছে।এই ধরনের বক্তব্য একমাত্র অর্ধ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকদের পক্ষেই সম্ভব। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায় । স্কুলের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে এই অধ্যাপকের কোন ধারনাই নেই। কয়েকবছর আগে ঘ ইউনিটে ১০% ছাত্রও ইংরেজিতে পাশ করতে পারেনি।আমার মনে হয় এই ধরনের অধ্যাপকের বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে স্কুলে ইংরেজি পড়ানো উচিত। ওনার কথায় মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা মাদ্রাসায় পড়া লোকদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।লক্ষ লক্ষ জিপিএ৫ গোল্ডেন-৫ পাওয়া স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কেন মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য এই অধ্যাপককে আহ্বান জানাচ্ছি।আমি নিজেও একজন মাদ্রাসার ছাত্র। আমার মনে হয় আমাদের ইংরেজিতে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা হওয়া প্রয়োজন। তাহলে আসল চিত্র ধরা পড়বে।আমার মত আরও অনেকেই মাদ্রাসার ছাত্র আছেন যারা ইউরোপ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার মত দেশের নামী দামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন।আমি মাদ্রাসার ছাত্র হয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি করেছি উনি কোন স্কুলে পিএইচডি করেছেন আমার জানা নেই।আর সব শেষে বলি, এই ইতিহাসের শিক্ষকের জানা থাকার কথা মাদ্রাসার ছাত্ররাই এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রথম দিকের সিংহভাগ ছাত্রই ছিল মাদ্রাসার ছাত্র। এঁরা আসলে মাদ্রাসা না বরং ইসলাম বিদ্বেষী।এই মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশে এঁদের স্পর্ধা দেখে বিস্মিত হতে হয়। এদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।”
আহমেদ শরীফ (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২১ - ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯) নতুন প্রজন্মের অনেকেই তার নাম জানে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন।তার একটা বিখ্যাত উক্তি- পুরুষদের যদি সততা দরকার না হয় তবে নারীদের সতীত্বের কেন দরকার? নারীরাও যেভাবে খুশি যৌনাঙ্গ বিলাতে পারবে। তবে স্বঘোষিত নাস্তিক হলেও সে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতো কম। তার ইচ্ছা মেনে মৃত্যূর পর তার জানাজা এবং কবর কোনটাই হয়নি।
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১২ আগস্ট ২০০৪ ) প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল।বাংলা সাহিত্যের অশ্লীল ও কুরুচিপুর্ণ লেখার জনক। সারাজীবন ধর্মের প্রতি বিষোদগার করে গেলেও মৃত্যূর পর ধর্ম মেনে ঠিকই তার জানাজা ও কবর দেয়া হয়েছে, সে এটাই চেয়েছিল কারন মুখে নাস্তিকতার বড় বড় বুলি আওড়ালেও মৃত্যূ পরবর্তী জীবন নিয়ে সম্ভবত সে ভীত ছিল। মেয়ে মৌলি আজাদের ভাষায়- মাত্রাতিরিক্ত সেক্সের প্রাধান্য থাকতো বাবার উপন্যাসে। তাই মাঝে মধ্যে বিরক্তই হতাম হুমায়ুন আজাদের কুখ্যাত কিছু উক্তি- এক একটি উর্বশীকে আমি মেপে মেপে দেখি। মাঝারী স্তন আমার পছন্দ, সরু মাংসল উরু আমার পছন্দ চোখের সামনে আমার মেয়ে বড় হচ্ছে ।কিন্তু সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আমারহাত-পা বাঁধা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের চুইংগামের মতো চাবাতে ইচ্ছে করে।হুমায়ুন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
কবীর চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেশের জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হয়েছিলেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।তিনি একবার বলেছিলেন- তোমরা আমার মরণের সময় মোহাম্মদের জ্বালাও- পুড়াও ঐ কালেমা শুনাবে না, বরং রবীন্দ্রনাথের একটি সংগীত আমাকে শুনাবে এই উগ্র নাস্তিক মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল এবং ৭১ সালে পাক সরকারের বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে।সংবিধানে ‌’বিসমিল্লাহ’ রাখার ব্যাপারেও কবির চৌধুরী আপত্তি তুলেছিল।
মুনতাসির মামুন (জন্ম ২৪ মে ১৯৫১) একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করে থাকেন।তিনি একবার বলেছিলেন- সভা-সমাবেশে বিসমিল্লাহ বলা বা কুরআন পড়ার দরকার নেই। সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকা আমাদের জন্য অপমান সরূপ। আমরাতো সংবিধানে আল্লাহর নাম অথবা বিছমিল্লাহ থাকবে সেজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। ধর্ম যেমন ভন্ডামী তেমনি মৌলবাদিদের সব ভন্ডামী ।বঙ্গ ভবনের দেয়ালে কুরান শরীফের আয়াত লেখা এটা একটা চরম ভন্ডামী। মুনতাসির মামুনের দূঃসাহসী আরেকটা মন্তব্য-এদেশে এক জন মুসলমানও যত দিন থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই চলবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...