বিশ্বের চারটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র



মো আবু রায়হানঃ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৮০ কোটি মুসলমান রয়েছে এবং এদের মধ্যে অধিকাংশ মুসলমান সুন্নি মতাদর্শের অনুসারী।শিয়া মুসলমানরা ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা।পৃথিবীর ৮৫℅ মুসলমান সুন্নি এবং ১৫℅ শিয়া। Shia make up roughly 10% of all Muslims, and globally their population is estimated between 154 to 200 million, according to a 2009 report from the Pew Forum. Iran has the largest Shia majority, with more than 66 million making up nearly 90% of the population.শিয়াদের অধিকাংশ বারো ইমামের অনুসারী, বাকিরা বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত। দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাসী শিয়া ইসলামের বৃহত্তম উপশাখা এবং ২০১২ সালের একটি জরিপ মতে শিয়া মুসলমানদের ৮৫% হল দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাসী বা ইসনা আশারিয়া।

ইরান, ইরাক, বাহরাইন, আজারবাইজান চারটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। জাতিগত তুর্কি–অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র আজারবাইজান শিয়া প্রধান রাষ্ট্র।লেবানন, ইয়েমেনে, সিরিয়া, কুয়েত, জর্ডান, ফিলিস্তিন, সউদিআরব, পাকিস্তান, ভারতেও প্রচুর শিয়া রয়েছে । বাহরাইনে শিয়া জনগোষ্ঠী শতকরা ৭০ ভাগ, ইরানে ৯০ ভাগ, ইরাকে ৬৩ ভাগ, কুয়েতে ২৫ ভাগ, লেবাননে ৩৬ ভাগ, কাতারে ১৪ ভাগ, সৌদি আরবে ৫ ভাগ, আরব আমিরাতে ১৬ ভাগ, আর ইয়েমেনে ৩৬ ভাগ। (Shia Muslims are in the majority in Iran, Iraq, Bahrain, Azerbaijan and, according to some estimates, Yemen. There are also large Shia communities in Afghanistan, India, Kuwait, Lebanon, Pakistan, Qatar, Syria, Turkey, Saudi Arabia and the UAE.)
শিয়া শব্দটি আরবি।শিয়া শব্দটির অর্থ অনুসারী বা দল। শিয়া ইসলাম অনুসরণকারীদের শিইতি বা শিয়া বলা হয়। শিয়া হল ঐতিহাসিক বাক্য শিয়াত-ই-আলী এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ আলীর অনুগামীরা বা আলীর দল।শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো, হযরত আলী (রা.) এবং হযরত ফাতেমা (রা.)'র বংশের মাধ্যমে নবি পরিবারের (আহলে বায়ত) লোকেরাই হলেন ইমামত বা নেতৃত্বের প্রধান দাবিদার। শিয়া মাযহাব প্রথমে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও পরবর্তীতে ধর্মীয় সম্প্রদায় হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে।মূলত ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে হযরত আবু বকরের (রা.) নির্বাচনের সময় থেকে শিয়া আন্দোলনের বীজ বপন করা হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)'র ৬৩২ সালে ওফাতের সময় তাঁর জামাতা হযরত আলী (রা.) খলিফা হবেন বলে তাঁর সমর্থকদের ধারণা ছিল। তখনো তারা ইতিহাসে শিয়া নামে অভিহিত পরিচিত ছিলেন না।
শিয়াদের দাবী ছিল যে,আলী (রা.) খলিফা হবেন নবী করিম (সা.) এমন নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।এছাড়া আলী (রা.) বালকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, রাসুল (সা.)'র চাচাতো ভাই, জামাতা, রাসুলুল্লাহ (সা.)'র দৌহিত্র হাসান ও হোসেনের পিতা। রাসুলের (সা.)'র কোনো পুত্রসন্তান ছিল না এবং দৌহিত্র হাসান ও হোসেন শিশু ছিলেন। এসবদিক বিবেচনায় রাসূলের (সা.) ইন্তেকালের পর আলীই খিলাফতের নেতৃত্বের সর্বাধিক যোগ্য বলে শিয়ারা মনে করেন। কিন্তু ইসলামের ইতিহাসে হযরত আবু বকর (রা.)প্রথম খলীফা হিসাবে নির্বাচিত হলে তাঁদের এ দাবি উপেক্ষিত হয়।এতে হযরত আলী (রা.) সমর্থকেরা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। এরপর হযরত ওমর( রা.) ও হযরত ওসমান (রা.) যখন পালাক্রমে খলিফা নির্বাচিত হলেন, তখনো তাঁরা আলীকে (রা.) খলীফা নির্বাচিত করার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দীর্ঘদিন পর ৬৫৬ সালে ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত ওসমান (রা.) শাহাদাত বরণ করলে হযরত আলীর (রা.) খলীফা নির্বাচিত হবার পথ সুগম হয়। কিন্তু তৃতীয় খলিফা ওসমানের (রা.) আত্মীয় মুয়াবিয়ার (রা.) এর তীব্র বিরোধিতা করেন।
শিয়ারা আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধেও আলীকে সমর্থন করেন।উষ্ট্র ও সিফফিনের যুদ্ধে তারা আলীর পক্ষাবলম্বন করেন। হযরত আলী (রা.) ৬৬১ সালে শাহাদত বরণ করলে তাঁর পুত্র হযরত হাসান (রা.) খলিফা হন। কিন্তু তিনি মুয়াবিয়ার (রা.) নিকট খেলাফত ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। এর অল্পকাল পরেই বিষ প্রয়োগে তাঁকে হত্যা করা হয়। মুয়াবিয়ার (রা.) মৃত্যুর পর হযরত আলী (রা.)'র ছোট ছেলে হযরত হোসেন (রা.) কে খলিফা হিসাবে নির্বাচিত হবেন বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু আমীর মুয়াবিয়া তার পুত্র এজিদকে খলিফা মনোনীত করেন।অবশেষে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে হযরত হোসেন (রা.) ইয়াজিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এক অসম যুদ্ধে ৬১ হিজরি তথা ৬৮০ সালে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন।কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনায় প্রতিশোধের স্পৃহায় মুসলিমদের দুভাগে বিভক্ত করে দেয়। যা শিয়া নামে পরিচিত লাভ করে। কারবালার ঘটনার পর হতে ইসলামের ইতিহাসে শিয়া সুন্নি নামে দুটি বিবদমান দলের উদ্ভব ঘটে। ঐতিহাসিক পিকে হিট্টি বলেন, ‘The blood of all Hussayn, even more than that of his father, proved to be the seed of Shiite 'church'. Shiism was born on the tenth of Muharram.’ অর্থাৎ হোসাইনের রক্তে তার পিতা পিতার রক্ত অপেক্ষাও অধিকতর শিয়া বীজ নিহিত ছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
১০ মহররম শিয়া মতবাদের জন্ম লাভ ঘটে। হযরত আলী (রা.) ও তাঁর পুত্রদের করুণ পরিণতি শিয়া সম্প্রদায়ের উত্থানে অনুপ্রেরণা জোগায়। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, নবীর (স.) পাশাপাশি হযরত আলীর (রা.) এক বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা ছিল, যা তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের অধিকার দিয়েছিল। সেই কর্মভার হযরত আলী (রা.) তাঁর অনুসারী ইমামদের দিয়ে গেছেন। শিয়ারা বিশ্বাস করেন যে, ইমাম হচ্ছেন বারোজন, যাঁদের মধ্যে হযরত আলী (রা.) প্রথম ইমাম, পরে তাঁর পুত্র হযরত হাসান (রা.) ও হযরত হোসেন (রা.) এবং দ্বাদশ ও শেষ ইমাম এখনও জীবিত। তিনি পৃথিবী ধ্বংসের আগে ফিরে আসবেন। শিয়া মতবাদ প্রথমে ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক আন্দোলন।
পরবর্তীতে তা ধীরে ধীরে একটি ধর্মমতের রূপ পরিগ্রহ করে। ইদ্রিসী ও ফাতিমিয় নামে শিয়ারা আফ্রিকায় দুটি শিয়া রাজবংশেরও সূচনা করেছিলেন। ৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সার্বজনীনভাবে হোসেনের শাহাদাতবরণ উপলক্ষে শোক প্রকাশ করা হয়। ষোড়শ শতকে যখন সাফাভি বংশ পারস্যের ক্ষমতায় আসে তখন শিয়া মতবাদ প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রচারিত হতে থাকে। সাফাভি শাসকরা শিয়া মতবাদকে পারস্যের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করেন।আসলে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে কিছু বিষয়ে মতভেদ থাকলেও অনেক মৌলিক বিষয়েই রয়েছে মিল। যেমন, উভয় সম্প্রদায় এক আল্লাহ, অভিন্ন ধর্মগ্রন্থ তথা পবিত্র কুরআন এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সর্বশেষ নবি হিসেবে মানেন। সুন্নি ও শিয়ারা পরকালের প্রতি তথা পুনরুত্থান ও বিচার দিবসের প্রতি বিশ্বাস, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ও নারীদের পর্দা করা ফরজ হওয়ার বিষয়সহ আরো অনেক বিষয়েই তারা সহমত পোষণ করেন। এসব বিষয়ে বিষয়ে তাদের কিছু ছোটখাটো মতভেদ রয়েছে যা সুন্নিদের চার মাযহাবের মধ্যেও রয়েছে।
তবে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মধ্যে অমিল তথা মতবিরোধের অন্যতম দিক হলো- মহানবী (সা.) এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত তথা খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগ নিয়ে। সুন্নিরা মনে করেন এ বিষয়টি আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল মুসলিমদের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন এবং সাহাবাগণ নির্বাচন পদ্ধতিতে খলিফা নির্বাচন করেছেন। অন্যদিকে শিয়া মুসলিমরা মনে করেন, বিশ্বনবী (সা.) এর স্থলাভিষিক্ত তথা খলিফা বা প্রতিনিধি নিয়োগের বিষয়টি মহান আল্লাহই নির্ধারণ করেন ও তা রাসূলকে (সা.) জানিয়ে দেন। আর এরই ভিত্তিতে হযরত আলী (রা.) এবং এরপর তাঁর বংশধরগণ ছিলেন মুসলমানদের প্রকৃত খলিফা।
এজন্য শিয়ারা আলীকে চতুর্থ খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করেন।শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, অনেক বর্ণনা রয়েছে যেখানে ইসলামের নবী তার উত্তরাধিকারী হিসাবে আলীকে নির্বাচিত করেছিলেন।শিয়া মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, শুধুমাত্র আল্লাহই ইসলাম, কুরআন এবং শরিয়াত রক্ষা করার জন্য একজন প্রতিনিধি (নবী এবং ইমাম) নির্বাচন করতে পারেন সাধারণ মুসলমানরা পারে না। যার কারণে শিয়ারা ইসলাম এবং কুরআনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জনগণ যে আবু বকর, উমর এবং উসমানকে খলীফা হিসাবে নির্বাচিত করেছেন তা অনুসরণ করেন না।
শিয়ারা সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের তুলনায় আহলে বাইতের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদিস সমূহকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করে। শিয়া কালিমা মুসলিমদের শাহাদাহ থেকে ভিন্ন। তাদের কালিমা হলো – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহি ‘আলিউন ওয়ালিউল্লাহি ওয়াসিয়্যু রাসুলুল্লাহি ওয়া খালিফাতুহু বিলা ফাসলিন।
আযানের সময় শিয়ারা বলে, আলীয়ু ওয়ালিউল্লা অর্থাৎ আলী আল্লাহর বন্ধু। তারা আরও বলে, ‘হাইয়া আলা খায়রিল আমাল অর্থাৎ ভাল কাজে উদ্যোগী হও)। এ কথাটা তারা দুবার বলে।এভাবে শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে আরো বেশ কিছু আকীদাগত ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। তবে বর্তমানে ইরানের শিয়া সরকারের মুসলিমদের জন্য কিছু প্রশংসনীয় ভূমিকা শিয়া সুন্নি উভয় সম্প্রদায়কে যেমন আকৃষ্ট করেছে তেমনি সিরিয়া ইয়েমেন ও ইরাকে ইরানের ইন্ধনে সুন্নি মুসলিম নির্যাতন সুন্নিদের আতঙ্কিত করে তুলছে।

ইরান দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত একটি রাষ্ট্র। ইরান ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সম্পর্কিত অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত।ইরানের পূর্বে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান, উত্তর-পূর্বে তুর্কমেনস্তিান, উত্তরে কাস্পিয়ান সাগর, উত্তর-পশ্চিমে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া এবং পশ্চিমে তুরস্ক ও ইরাক। উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের অপর পাড়ে রয়েছে কাজাখস্তান ও রাশিয়ার মতো বৃহৎ দেশ। আর দক্ষিণে রয়েছে পারস্য উপসাগর। সাগরের ওপারেই আছে কুয়েত, সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।তেহরান ইরানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী; শহরটি ইরানের উত্তর অঞ্চলে অবস্থিত।খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে বর্তমান ইরান ছিল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সাম্রাজ্য পারস্যের কেন্দ্র। প্রায় ২০০০ বছর ধরে এ অঞ্চলের অধিবাসীরা নিজেদের দেশকে ইরান নামে ডাকত। ইরান নামটি এই এলাকায় বসতি স্থাপনকারী আর্য গোত্রের নাম থেকে নেয়া। কিন্তু গ্রিকরা এই অঞ্চলকে পার্সিস (বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ) বলে ডাকত, এবং সেখান থেকে ইউরোপীয় ভাষায় এর নাম হয় পার্সিয়া , যা বাংলায় পারস্য।১৯৩৫ সালে ইরানের শাসক দেশটিকে ইরান নামেই সারা বিশ্বে পরিচিত গড়ে তোলে। ১৫০১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাজতন্ত্রী ইরান হয় শাহ কিংবা রাজারা শাসন করতেন। দেশটির জনগণ জাতিগত ও ভাষাগতভাবে বিচিত্র হলেও এরা প্রায় সবাই মুসলিম। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অঞ্চলটি ইসলামের শিয়া মতাবলম্বীদের কেন্দ্র।১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে। ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে গৃহীত সংবিধান এবং ১৯৮৯ সালের সংশোধনী ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। সংবিধানে ইসলাম ধর্মের শিয়া মতটিকে ইরানের রাষ্ট্রধর্ম  হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

সৌদি আরবের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির মোট আয়তন হচ্ছে ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ বর্গকিলোমিটার।ইরান হচ্ছে বিশ্বের সবেচয়ে বড় আয়তনের দেশগুলোর তালিকায় ১৮তম যা ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের মোট আয়তনের সমান। ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী ইরানের মোট জনসংখ্যা সাত কোটি ৮৫ লাখ। সিআইএ ফ্যাক্টবুক অনুসারে ইরানের জাতিগুলি এরকম: পারসিক জাতি ৫১%, আজেরি জাতি ২৪%, গিলাকি জাতি ও মাজান্দারানি জাতি ৮%, কুর্দি জাতি ৭%,আরব জাতি ৩%, লুর জাতি ২%, বেলুচি জাতি ২%, তুর্কমেন জাতি ২% এবং অন্যান্য ১%। ইরানের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ জনগণ শিয়া মুসলমান। বর্তমানে ইরানের ৪ থেকে ৮% লোক সুন্নি মুসলমান, এদের অধিকাংশই কুর্দি ও বেলুচি। বাকি ২% অমুসলিম সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান, ইহুদি, বাহাই, মান্দীয়, ইয়েজিদি, ইয়ারসানি, জরথুস্ত্র প্রভৃতি সম্প্রদায়ের। হযরত আলী (রা.) ও হযরত হোসাইন (রা.)-এর মৃত্যুর প্রায় এক হাজার বছর পর প্রাচীন সাফাভি(১৫০৪-১৭৩৬) সাম্রাজ্য (আজকে যা ইরান) ইরাকের পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।সাফাভি সাম্রাজ্যই ইরানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে শিয়া ধর্মকে প্রবর্তন করেছিল। ১৫০১ সালে সাফাভি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে ইরানে সুন্নি ধর্মের প্রচলন ছিল।

ইরাক সরকারিভাবে ইরাক প্রজাতন্ত্র।এটি মধ্যপ্রাচ্যের একটি রাষ্ট্র। ইরাকের উত্তরে তুরস্ক, পূর্বে ইরান, দক্ষিণ-পূর্বে কুয়েত, দক্ষিণে সৌদি আরব, দক্ষিণ-পশ্চিমে জর্ডান  এবং পশ্চিম সীমান্তে সিরিয়া অবস্থিত।বাগদাদ ইরাকের রাজধানী। বাগদাদে শতাব্দী ধরে ইসলামী শিক্ষা ও বৃত্তির একটি কেন্দ্র ছিল এবং আব্বাসীয় খিলাফতের রাজধানী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।ইরাক বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমিয়ার জন্য সারা বিশ্বের বুকে গৌরবে মহীয়ান। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস (দজলা ও ফোরাত) নদীদ্বয়কে কেন্দ্র করে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০০ বছর আগে গড়ে ওঠে এ সভ্যতা। বর্তমান আরব বিশ্বের ইরান, কুয়েত, তুরস্ক, সিরিয়া, জর্ডান, কুয়েত প্রভৃতি দেশের অংশবিশেষ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাক্তন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, অ্যাসেরীয় ও ক্যালডীয় সভ্যতা বৃহত্তর মেসোপটেমীয় সভ্যতারই বিভিন্ন পর্যায়।এ অঞ্চলটি এক সময় উরুক নামে পরিচিত ছিল। ইরাক শব্দটি আসে উরুক থেকেই। ইরাকে নতুন সীমান্ত নির্ধারণ হয় ১৯২০ সালে, তৎকালীন লীগ অব নেশনসের (বর্তমান জাতি সংঘের উত্তরসূরি) মাধ্যমে। ওসমানিয়া সাম্রাজ্য দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার পর ওই সময় ইরাকের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ব্রিটেনের হাতে। ব্রিটেন থেকে দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৩২ সালে। তখনো ইরাকে রাজতন্ত্র ছিল। ১৯৫৮ সালে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে, প্রতিষ্ঠা হয় ইরাকি প্রজাতন্ত্র।১৯৯০ সালে সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বাধীন ইরাক কুয়েতে আগ্রাসন চালায় এবং কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ ঘোষণা করে। ইরাকের দখলদারি থেকে কুয়েতকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মার্কিন নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী ইরাকের বিরুদ্ধে ২রা আগস্ট ১৯৯০ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৯১ সাল পর্যন্ত 'অপারেশন ডেজার্ট স্ট্রম' নামক অপারেশন পরিচালনা করে। এটি প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ নামেও পরিচিত। এর প্রায় এক দশক পর ইরাকে মারাত্নক বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে এ কারণ দর্শিয়ে ইরাকে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে অভিযান পরিচালনা করে মার্কিন ও ইংরেজ যৌথ বাহিনী। ইতিহাসে এ ঘটনা দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ নামে পরিচির। এছাড়া মার্কিন বাহিনী ইরাকের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর 'অপারেশন রেড ডন' নামক আরেকটি অপারেশনও পরিচালনা করে।

ইরাকের মোট চার লাখ ৩৭ হাজার ৭২ বর্গকিলোমিটার। ইরাকের জনসংখ্যা তিন কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫ জন।জাতিগতভাবে ইরাকের অধিকাংশই হচ্ছে আরব।আরব ৭৫-৮০%, কুর্দি ১৫-২০% এবং বাকি ৫% অন্য জাতির।ইরাকের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। দেশটির ৯৫ শতাংশ লোক মুসলমান। দেশটিতে শিয়া ও সুন্নিমিশ্রিত জনগোষ্ঠীও রয়েছে।এর মধ্যে ৬৭.৬% শিয়া এবং ৩২.৪% সুন্নি।জনসংখ্যার ১.২১% খ্রিস্টান, ০.১% ইয়াজিদি, ০.১% সাবীয় মান্দীয়, ০.১% বাহাই, ০.১% জরথুস্ত্র, ০.১% হিন্দু, ০.১% বৌদ্ধ, ০.১% ইহুদি, ০.১% লোকধর্মাবলম্বী, ০.১% অধার্মিক এবং ০.১% অন্যান্য। CIA ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের অনুমান মতে, ইরাকের মুসলমানদের ৬৫% শিয়া এবং ৩৫% সুন্নি। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১১ সালের একটি জরিপ মতে ইরাকের মুসলমানদের ৫১% শিয়া, ৪২% সুন্নি এবং ৫% নিজেদের মুসলমান হিসেবে পরিচয় দেন। ৬৫৭ সালে খলিফা আলী (রা) বর্তমান ইরাকের কুফায় রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। ইরাকি শিয়া প্রচারকরা পার্সিয়ানদের ধর্মান্তরিত করেছিল। ইরাকে শিয়া মুসলমানদের অন্যতম দুটি তীর্থস্থান নাজাফ ও কারবালা অবস্থিত। আরবি ভাষী শিয়া ইরাকী ইউনুস হিসাবে পরিচিত এবং আরবি ভাষী সুন্নি জাজিরা আরবদের নামে পরিচিত। ইসলামের ছোট অংশগুলো ইরাকে বিদ্যমান, যেমন শিয়ার একটি ছোট অংশ শায়খ ধর্ম সম্প্রদায় বসরা ও কারবালায় কেন্দ্রীভূত। ১০ অক্টোবর ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে কারবালার যুদ্ধের ফলে আধুনিক শহরের প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ স্থান কারবালায় শিয়া ইসলামের সারগর্ভ প্রাধান্য পেয়েছে। একইভাবে, ইরাকের নাজাফ শহরে হযরত আলীর সমাধি স্থান হিসাবে খ্যাত, যাকে শিয়ার ধার্মিক খলিফা এবং ইসলামের প্রথম ইমাম বলা হয়। শহরটি এখন শিয়া ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র থেকে হজ্বের একটি মহান কেন্দ্র এবং এটা অনুমান করা হয় যে শুধুমাত্র মক্কা ও মদিনা আরো মুসলিম তীর্থযাত্রীদের গ্রহণ করে। সামারা শহর হল আল-আসকারী মসজিদের আবাস স্থল, যথাক্রমে দশম ও একাদশ শিয়া ইমাম আলী আল-হাদী ও হাসান আল আসকারী এর সমাধি স্থল, সেইসাথে মুহাম্মদ আল-মাহদী মাজারে তারা লুকানো ইমাম নামে এবং জাফর মাযহাবের শিয়া দ্বাদশ এবং চূড়ান্ত ইমাম হিসেবে পরিচিত। এই স্থানটি জাফর শিয়া মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। উপরন্তু, নবী মুহাম্মাদের কিছু নারী আত্মীয়দের ইরাকের সামারা শহরে দাফন করা হয়, শহরটি শিয়া মুসলমানদের জন্য ভক্তি ও সুন্নি মুসলমানদের জন্য শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়।

বাহরাইন মধ্যপ্রাচ্যের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। বাহরাইন পারস্য উপসাগরের পশ্চিম অংশের ৩৬টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত।এই দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে বড় দ্বীপের দৈর্ঘ্য ৫৫ আর প্রস্থ ১৮ কিলোমিটার। এর পূর্বে কাতার ও পশ্চিমে সৌদী আরব। সবচেয়ে বড় দ্বীপটিও বাহরাইন নামে পরিচিত এবং এতে দেশটির বৃহত্তম শহর ও রাজধানী মানামা অবস্থিত।প্রায় ৫,০০০ বছর আগেও বাহরাইন একটি বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। সবসময়ই এটি শক্তিশালী প্রতিবেশীদের অধীনস্থ ছিল। ১৭শ শতকে এটি ইরানের দখলে আসে। ১৭৮৩ সালে মধ্য সৌদী আরবের আল-খলিফা পরিবার নিজেদেরকে বাহরাইনের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে এবং তখন থেকে তারাই দেশটিকে শাসন করে আসছে। ১৯শ শতকের কিছু সন্ধিচুক্তির ফলে যুক্তরাজ্য দেশটির প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষার দায়িত্ব পায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বাহরাইন ব্রিটিশ প্রভাবাধীন ছিল। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের এর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যা আজও অব্যাহত।

বাহরাইনের মোট আয়তন ৭৬৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ১৩ লাখ ৪৩ হাজার। বাহরাইনের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম এবং অধিকাংশ বাহরাইনি মুসলমান।২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, বাহরাইনের জনসংখ্যার ৮১.২% মুসলমান, ১০% খ্রিস্টান এবং ৯.৮% হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।বাহরাইনের জনসংখ্যার ১% বাহাই ধর্মাবলম্বী।বাহরাইনি মুসলমানদের বেশিরভাগই শিয়া। ২০১৭ সালের একটি আদমশুমারি অনুযায়ী বাহরাইনি জনগণের ৬২% শিয়া এবং ৩৮% সুন্নি।শিয়ারা বাহরাইনের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হলেও রাজপরিবার এবং অভিজাতদের বেশিরভাগই সুন্নি মতাবলম্বী। দেশটির এই প্রধান দুই মুসলিম সম্প্রদায় কিছু ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তীব্র মতবিরোধ ধারণ করে। শিয়ারা প্রায়শই রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক প্রান্তীকরণের অভিযোগ তুলেছে; ফলে ২০১১ সালের বাহরাইনি অভ্যুত্থানের অধিকাংশ বিক্ষোভকারীই ছিল শিয়া। সরকার তা শক্ত হাতে দমন করে। নারী, পুরুষ ও শিশুদের আটক এবং তাদের নির্যাতন, শিয়া মসজিদ ও কবরস্থান ধ্বংস করা হয়।দেশের বেশিরভাগ প্রধান মসজিদ শিয়া।ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট অনুসারে বাহরাইনে শিয়া ও সুন্নি নেতাদের মতামত তাদের আরব প্রতিবেশী দেশগুলির মতো। সুন্নি আল-খলিফা পরিবার নাজদ থেকে শিয়া বাহরাইনে আগমন করেছিল। পশ্চিমা সহায়তায় তাদের শাসনটি স্থানীয় শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য নিপীড়নমূলক ও অত্যাচারী হয়েছে। বাহরাইনের জনগণ শিয়া ইরান বিপ্লবের বিজয় উদযাপন করে এবং এর সমর্থনে সমাবেশ করে। ১৭৮৯ সালে, তারা আল খলিফা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণে অংশ নিতে চেয়েছিল। দ্য গার্ডিয়ান-এর খবরে বলা হয়েছে, সুন্নি আল-খলিফা পরিবার যখন বাহরাইনকে পরিচালনা করতে শুরু করেছে, তখন শিয়াদের যাদের জমির টুকরো ছিল, তারা কৃষক হয়ে গিয়েছিল। এখন, উচ্চপদস্থ সরকারী পদগুলি সুন্নিদের অন্তর্গত এবং কেবল কয়েকটি পদ শিয়া দ্বারা শাসিত।বাহরাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায় রয়েছে, যেমন বাহারনা, আরব, হাওলা, আজম, এশিয়ানরা। অন্যদিকে বাহরাইনে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সরকারী ব্যবস্থা সুন্নি জনগণের দ্বারা পরিচালিত।

এশিয়া মহাদেশের একটি প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র আজারবাইজান। দেশটির উত্তরে রাশিয়া, পূর্বে কাস্পিয়ান সাগর, দক্ষিণে ইরান, পশ্চিমে আর্মেনিয়া, উত্তর-পশ্চিমে জর্জিয়া। এছাড়াও ছিটমহল নাখশিভানের মাধ্যমে তুরস্কের সাথে আজারবাইজানের একচিলতে সীমান্ত আছে। কাস্পিয়ান সাগরতীরে অবস্থিত বন্দর শহর বাকু আজারবাইজানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।১৯২২ সালে দেশটি আন্তঃককেশীয় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৩৬ সালে সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রটি ভেঙে তিনটি আলাদা প্রজাতন্ত্র আজারবাইজান, জর্জিয়া ও আর্মেনিয়াতে ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ২০শে অক্টোবর আজারবাইজান স্বাধীনতা লাভ করে। 

আয়তন ৮৬ হাজার ৬০০বর্গকিলোমিটার। আয়তন ও জনসংখ্যার দিকে থেকে এটি ককেশীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম।আজারবাইজানে প্রায় ৯৮ লক্ষ ২৪ হাজার ৯০০ লোকের বাস। আজারবাইজানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী।৯৫% লোক জাতিগতভাবে আজারবাইজানি। অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতির লোকের মধ্যে লেজগীয়, রুশ, আর্মেনীয় ও তালিশ জাতির লোক প্রধান। আজারবাইজানিদের প্রধান ধর্ম ইসলাম।আজারবাইজানের ৯৭ ভাগ মানুষ মুসলমান। এর মধ্যে ৮৫% শিয়া এবং ১৫% সুন্নি। আজারবাইজান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক শিয়াবহুল দেশ।যদিও আজারবাইজান মুসলিম বিশ্বের সর্বাধিক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ।বেশিরভাগ শিয়া শিয়া ইসলামের গোঁড়া দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাসী। বহু দশক ধরে সোভিয়েত নাস্তিক নীতি অনুসরণ করার পরে, আজারবাইজানে ধর্মীয় অনুষঙ্গ নামমাত্র এবং মুসলিম পরিচয় ধর্মের চেয়ে সংস্কৃতি ও জাতিগত ভিত্তিতে বেশি চলে।ঐতিহ্যগতভাবে বাকু এবং লেনকোরান অঞ্চলের আশেপাশের গ্রামগুলি শিয়া ধর্মের দুর্গ হিসাবে বিবেচিত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা শাসিত অন্যান্য সমস্ত সোভিয়েত রাষ্ট্রের মতো, আজারবাইজান একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদে উপাসনার স্বাধীনতা, কোনও বিশ্বাস বেছে নেওয়া, বা কোনও ধর্মের অনুশীলন না করা এবং ধর্ম সম্পর্কে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা হয়েছে। আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের আইন (১৯৯২) "বিশ্বাসের স্বাধীনতার উপর" যে কোনও মানুষের ধর্ম সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ এবং প্রকাশ করার এবং এই অধিকারটি কার্যকর করার অধিকার নিশ্চিত করে। তবে ১৯৯২ সালের একটি আইনে বলা হয়েছে যে বিদেশীদের বিবেকের স্বাধীনতা রয়েছে তবে জরিমানা বা নির্বাসনের হুমকিতে "ধর্মীয় প্রচার চালানো", অর্থাৎ প্রচার করার অধিকারকে তারা অস্বীকার করে।সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে ১-৩ অনুসারে ধর্ম ও রাষ্ট্র  পৃথকভাবে কাজ করে, আইন ও ধর্ম প্রচারের আগে প্রতিটি ধর্ম সমান, মানুষের ব্যক্তিত্বকে ঘৃণা করে এবং মানবতাবাদের নীতিগুলির সাথে বিরোধিতা নিষিদ্ধ। একই সাথে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ব্যবস্থাও ধর্মনিরপেক্ষ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল