সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হিমালয়ের কন্যা নেপালে ইসলাম ও মুসলিম


কাশ্মিরি তাকিয়া মসজিদ

মো.আবু রায়হানঃহিমালয়ের কন্যা নেপাল একটি দক্ষিণ এশীয় দেশ ।দেশটির উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারত।এখানেই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট অবস্থিত। বিংশ শতাব্দীতে এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে নেপাল গনতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিল। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটি একটি গৃহদ্বন্দ্বে ভুগছিল। ১৯৯১ সাল থেকে রাজা বীরেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব গণতন্ত্রের চর্চা শুরু করেন। ২০০১ সালে প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সপরিবারে নিহত হওয়ার পর সিংহাসনে বসেন তাঁর বড় ভাই জ্ঞানেন্দ্র বীরবিক্রম শাহ দেব। পরে মাওবাদী আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে সিংহাসন ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। রাজতন্ত্র বিলোপের দাবিতে ১৯৯৬ সাল থেকে আন্দোলন শুরু করে মাওবাদীরা। এতে ১২ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়, বাস্তুচ্যুত হয় লক্ষাধিক। এরপর ২০০৬ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ওই একই বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক নির্বাচনের জন্য নেপালের সংসদ ২০০৬ সালের জুন মাসে রাজতন্ত্রের অবসানের পক্ষে ভোট দেয়।২০০৮ সালের মে মাস পর্যন্ত নেপাল একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ছিল। ঐ মাসের ২৮ তারিখে নেপালের আইনসভা সংবিধানে সংশোধন আনে এবং নেপালকে একটি প্রজাতন্ত্রে রূপান্তরিত করে এবং ২০০ বছরের পুরনো শাহ রাজবংশের পতন ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল হয়ে ওঠে, 'যুক্তরাষ্ট্রীয় গণপ্রজাতান্ত্রিক নেপাল'।

নেপালকে ১৪টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, যেগুলি আবার ৭৫টি জেলায় বিভক্ত।নেপালের মোট আয়তন প্রায় ১৪৭,১৮১ বর্গকিমি। ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা দুই কোটি ৭৫ লাখ।জরিপ অনুযায়ী, ৮১.৩% নেপালি জনসংখ্যা হিন্দু, ৯.০% বৌদ্ধ, ৪.৪% মুসলমান, ৩.৩% কিরাত (দেশীয় জাতিগত ধর্ম), ১.৪% খ্রিস্ট, ০.১% শিখ, ০.১% জৈন এবং ০.৭% জনগণ অন্যান্য ধর্ম বা কোন ধর্মই অনুসরণ করেন না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা নেপালে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশটিতে ১০টি ধর্মের অনুসারী রয়েছে বলে জানা গেছে। মুসলামানদের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি।তাদের অধিকাংশই তিরাই অঞ্চলে বাস করে। শতকরা হিসেবে দেশটির সাতটি মুসলমান অধ্যুষিত জেলাগুলো হল-রৌতহট জেলা ১৯.৭%,বাঁকে জেলা ১৯%,কপিলবস্তু জেলা ১৮.২%,পর্সা জেলা ১৪.৫%,মহোত্তরী জেলা ১৩.৩%,বারা জেলা ১৩%,সুনসরী জেলা ১১.৫%।দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডুতে মোট ২১ হাজার মুসলমান বাস করে, যা শহরটির মোট জনসংখ্যার ১.২৫%।

নেপালি জামে মসজিদ

নেপালি ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে পনরো শতকের শেষদিকে রাজা রত্ন মল্লার রাজত্বকালে প্রথম মুসলমানরা কাঠমান্ডুতে বসতি স্থাপন করেছিল। কাশ্মীরি ব্যবসায়ীরা সম্ভবত প্রথম আগমনকারী মুসলমান ছিলেন, তারপরে আফগান, পার্সিয়ান এবং এমনকি আরবীয়রাও ছিলেন। ইন্দ্রচকের বাজারটি ইরাকি বণিকদের কাছ থেকে নামটি পেয়েছে।পশ্চিম নেপালের চৌবিজ রাজারাও আফগান ও ভারতীয় মুসলমানদের নেপালি সৈন্যদের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছিল। লাসায় নিযুক্ত রত্না মল্লার দূত কাশ্মীরি, লাদাখ এবং লাসার মধ্যে কেনাবেচা, গালিচা, শাল এবং পশমের মালামাল থেকে লাভ করার জন্য কাশ্মীরি মুসলমানদের কাঠমান্ডুতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মুসলমানদের প্রথম দলটি একটি কাশ্মীরি সাধু নিয়ে এসেছিল, যিনি ১৫২৪ সালে কাশ্মীরি তাকিয়া নামে প্রথম মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন।দিল্লিতে মুঘল দরবারের রীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, মল্লারা ভারতীয় মুসলমানদেরকে দরবারে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায় । যাতে মল্ল দরবারে অভিজাতদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিকে দিয়ে এগিয়ে যায়। যদিও মুসলিম দরবারীরা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি ।তারা ভারতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। অন্য মুসলমানরাও সেখানে থেকে যায়। মল্লারা মুঘল সাম্রাজ্যের ভারতীয় মুসলমানদেরকে তাদের দরবারে সঙ্গীতশিল্পী , আতর এবং অলঙ্কার বিশেষজ্ঞ হিসাবে যোগদানের জন্য নিয়ে আসেন। ঐতিহাসিক বাবুরাম আচার্য বিশ্বাস করেন যে তারা বিদ্রোহী আত্মীয় এবং দরবারের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে রাজা রত্ন মল্লাকে রক্ষা করতে সেখানে এসেছিলেন।নেপালের একীকরণের পরে, রাজা পৃথ্বী নারায়ণ শাহ মুসলিম ব্যবসায়ীদেরও তাদের পরিবার নিয়ে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করেছিলেন।বাণিজ্য ছাড়াও আফগানিস্তান ও ভারতবর্ষের মুসলমানরা বন্দুক, কার্তুজ এবং কামান তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ছিল, অন্যরা পারস্য ও আরবি জ্ঞানের কারণে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দক্ষ ছিল।পৃথ্বী নারায়ণ শাহ উপত্যকার উপর চাপানো অর্থনৈতিক অবরোধের সময় অনেক মুসলমান, বিশেষত কাশ্মীরি ব্যবসায়ী ভারতে পালিয়ে এসেছিলেন বলে জানা যায়। ধর্ম ও মল্লাদের সাথে তাদের সম্পর্কের কারণে হিন্দু রাজার কাছ থেকে নিপীড়নের ভয়ে ব্যবসায়ীরা নেপাল ছেড়ে চলে যায়। ১৭৭৪ সাল নাগাদ কেবল মুষ্টিমেয় কাশ্মীরি বণিক থেকে যায়। ঐতিহাসিকরা বলেছেন যে পৃথ্বী নারায়ণ শাহ মোল্লার শাসকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ থাকার কারণে তাদেরকে গুপ্তচর এবং গোয়েন্দা হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন। তার বিজয়ের পরে, তিনি তাদের ত্রি-চন্দ্র ক্যাম্পাসের নিকটে (নেপালি জামে মসজিদ) একটি মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন।

জঙ্গ বাহাদুর রানার শাসনামলে ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দ্বারা নিপীড়ন থেকে পালিয়ে বিপুল সংখ্যক মুসলমান নেপালের তারাইয়ে চলে আসেন। এই শরণার্থীরা তারাই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে, চামড়ার পণ্য বিক্রি করে বা কৃষিকাজে কাজ করে। মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের এক প্রবীণ দরবারিও কাঠমান্ডুতে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তিনি জামে মসজিদ সংস্কার করেন এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়। বেগম হজরত মহল ছিলেন আওধের বেগম এবং ওয়াজেদ আলি শাহর স্ত্রী। ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় নির্বাসিত হওয়ার পর তিনি আওধের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত বেগম হজরত মহল পরাজিত হন। তিনি নেপালে আশ্রয় নেন। তিনি থাপথলি দরবারে বসতি স্থাপন করেন এবং ১৮৭৯ সালে তার মৃত্যু হয়। বেগম হজরত মহলের কবর কাঠমান্ডুর কেন্দ্রে জামে মসজিদের নিকটে অবস্থিত।কবরটি বিখ্যাত দারবার মার্গ থেকে দূরে নয়। জামে মসজিদ কমিটি এর তদারক করে থাকে।

বেগম হজরত মহলের কবর

নেপালে মুসলিম সম্প্রদায়ের ইতিহাস আসলে তিনটি পৃথক গোষ্ঠী তিব্বতী, কাশ্মীরি ও মধেসের ইতিহাস।বসবাসের দিক দিয়ে নেপালের মুসলমান তিনভাগে বিভক্ত।প্রথমতঃ এক অংশ হলো যাদের আদি নিবাসই নেপাল।দ্বিতীয়তঃ ১৮৫৭ সালে ভারতে মুসলামনদের ওপর ব্রিটিশদের নির্যাতন, হামলা নিষ্পেষণের সময় ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে নেপালে বসতি স্থাপন শুরু করে। অনেক মুসলিম জান বাঁচিয়ে নেপালের পাহাড় আর জঙ্গল ভরা এলকায় আশ্রয় নিয়ে বসতি স্থাপন করেছে। নিজেদের লুকিয়ে রেখেছে শহর থেকে দূরে। তারা আর ফেরত যায়নি। তখন থেকেই তারা নেপালের নাগরিক হিসেবে বসবাস করছে দেশটিতে।তৃতীয়তঃ এক দল এসেছে ১৯৫০ সালের দিকে। চীন যখন তিব্বত নিয়ন্ত্রণে নেয়। তখন বৌদ্ধ ধর্মের অনেক অনুসারী ও মুসলিমরা একত্রে তিব্বত ছেড়ে নেপালে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কাশ্মীর থেকেও মুসলমানদের একটি অংশ চলে আসে নেপালে। কাশ্মীর থেকে আগত মুসলমানরা মূলত ব্যবসায়ী। সামাজিক এবং ব্যবসার দিক দিয়ে তারা এগিয়ে।রয়েছে কয়েকটি কাশ্মিরি মসজিদ। যা কাশ্মিরি মসজিদ নামেই পরিচিত।


সমগ্র দেশটিতে রয়েছে ৪৩০টি মসজিদ। দেশটির কেন্দ্রীয় মসজিদ রাজধানী কাঠমান্ডু রত্নাপার্ক সংলগ্ন।নেপালের সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম বরকতিয়া। এটি বরকতিয়া স্কুল বা বরকতিয়া মাদরাসা নামেও পরিচিত। ১৯৯৩ সালে মাওলানা জিয়াউল মোস্তফা নুরানি মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। বরকতিয়া মাদরাসায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।আশ্চর্যজনক হলেও অলিখিতভাবেই নেপাল সোবাহিনীতে কোনো মুসলিম নেওয়া হয়না। সরকারি চাকরিতেও করা হয় বৈষম্য। সরকারি চাকরিতে মহিলা, মাধেশী, জানজাতি এবং পিছিয়ে পরা জাতিদের মধ্যে হিন্দু ধর্মের সর্বনি¤œ শ্রেণী দলিতদের জন্য জন্য ৪৫ শতাংশ কোটা থাকলেও মুসলিমদের জন্য কোনো কোটা নেই। মুসলামানদের পিছিয়ে পরা জাতি বলা হলেও সাংবিধানিকভাবে তা স্বীকৃত নয়। তাই পিছিয়ে পরা জাতি হিসেবে কোনো নাগরিক সুবিধা পায়না মুসলমানরা। মুসলমানদের পারিবারিক আইন পালনে বাধা রয়েছে। ছেলে মেয়েদের সম্পদ বণ্টনে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলতে হয়। হিন্দুদের দেবতা হওয়ায় এখানে গরু জবাই করা আইনত নিষিদ্ধ। মুসলমানদের জন্য বা সমর্থিত কোনো আইনি সুরক্ষা নেই। নেই সাংবিধানিক কোনো নিরাপত্তা। সাধারণ আইনেই ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যবস্থায় চলতে হয় অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের।মুসলমানদের জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। বাংলাদেশে যেমন হিন্দু বিবাহ আইন আছে। কিন্তু নেপালে মুসলিম ম্যারেজ ল বা এজাতীয় কোনো আইন নেই। বিবাহ কিংবা তালাক হয় মৌখিকভাবে।নিজামতি সার্ভিস আইন সংশোধন করা হয়েছে। সেখানে সব ধর্মের অনুসারীদের ধর্ম পালনে কিছু বিষয়ে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। তবে তাও আবার হিন্দু ধর্মের মূল চেতনাকে অক্ষুন্ন রেখে।তুরস্কের Star newspaper এর রিপোর্ট মতে- গত ১৫ বছরে ১০০,০০০ নেপালি ইসলাম গ্রহণ করেছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...