সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শ্রীলঙ্কায় ইসলাম ও মুসলিম

 

Jamiul Alfar Masjid( Red Mosque),Colombo

মো.আবু রায়হানঃশ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার উত্তর-পশ্চিমে ভারতের সাথে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মালদ্বীপের সাথে সমুদ্র সীমানা রয়েছে।দেশটিকে একেশ্বরবাদী রাষ্ট্র বলা হয়।প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা অনেক নামে পরিচিত হয়ে আসছে।১৫০৫ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগিজরা এই দ্বীপে পৌঁছে এর নাম দেয় শেইলাও যার ইংরেজি শব্দ হল সিলন।১৯৪৮ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের অধীনে থাকা অবস্থায় তারা এই নামেই পরিচিত ছিল।১৯৪৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি সিলন নামে দেশটি স্বাধীনতা পায়।১৯৬০ সালের ২১শে জুলাই শ্রীমাভো বন্দেরনায়েক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি ছিলেন সারা পৃথিবীর প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭২ সালে দাপ্তরিক নাম পরিবর্তন করে শ্রীমাভো বন্দেরনায়েক সিলন থেকে শ্রীলঙ্কা নামকরণ করেন।শ্রীলঙ্কার প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। এর প্রধান শহর কলম্বো। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত।শ্রীলঙ্কা ভারতের দক্ষিণ উপকূল হতে ৩১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৫০৫ সালে পর্তুগীজরা সর্বপ্রথম এখানে পৌঁছায়। ১৭শ শতাব্দীর দিকে ডাচরা আসে যদিও ১৭৯৬ সালে দ্বীপটি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে চলে যায়। ১৮১৫ সালে ক্যান্ডি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে এলে সম্পূর্ণরূপে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৩০ সালের দিকে স্থানীয়দের প্রতি ব্রিটিশদের নির্যাতন-অত্যাচারের জন্য স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হতে থাকে।অবশেষে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি দেশটি স্বাধীনতা পায়।১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই শ্রীলঙ্কার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উত্তরাঞ্চলে ১৩ জন সৈন্যকে হত্যার মাধ্যমে শুরু করে দেশটির রক্তাক্ত ইতিহাস। দীর্ঘ ২৬ বছর চলে এই গৃহযুদ্ধ। যার অবসান ঘটে ২০০৯ সালে। নিহত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় হাজার হাজার তামিল।শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

আয়তন ৬৫ হাজার ৬১০ বর্গ কিমি।জনসংখ্যা দুই কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার। সিংহলি সম্প্রদায় এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।জাতিগোষ্ঠীর ১১.২ শতাংশ শ্রীলঙ্কান তামিল, ৯.২ শতাংশ শ্রীলঙ্কান মুর, ৪.২ শতাংশ ভারতীয় তামিল। উত্তর-পূর্ব দিকের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে তামিল সম্প্রদায় দেশের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।শ্রীলঙ্কার ৭০% মানুষ বৌদ্ধ, ১২% হিন্দু ও শ্রীলঙ্কার ১০ শতাংশ মুসলিম। ২০১২ সালের আদমশুমারি অনুসারে ১,৯৬৭,২২৭ জন ব্যক্তি মুসলিম।শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা মুর নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কার মুর মারাক্কার, মাপিলা, মেমন এবং দক্ষিণ ভারতের পাঠানদের বংশধর।মুসলিমরা দেশটিতে তৃতীয় বৃহত্তম জাতিগত সম্প্রদায়। শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের সবচেয়ে বেশি বাস পূর্ব প্রদেশের আমপাড়া জেলা ৪৩%, ত্রিনকোমালি ৪২% এবং বাটিকোলোয়া ২৬%, তারপরে পুতুলম ২০%, মান্নার ১৭%, ক্যান্ডি ১৪% এবং কলম্বোতে ১২%।শ্রীলঙ্কা আদম পিক (আদম চূড়া বা শ্রী পদ বা পবিত্র পদচিহ্ন) শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের শ্রীপাড়া প্রদেশে অবস্থিত একটি পর্বত চূড়া। যেখানে আদি মানব হযরত আদম (আ.) কে প্রেরণ করা হয়েছিল। এখনো সেখানে তাঁর পদচিহ্ন বিদ্যমান।

সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে আরবে নবী মুহাম্মদ (সা.)এর আগমনের পূর্ব হতে নৌপথে আরব সাগর, ভারত মহাসাগর হয়ে আরব বণিকদের মালাক্কা প্রণালী হয়ে চিনের ক্যান্টন পর্যন্ত যাতায়াত ছিল। পরবর্তীতে আরব বণিকরা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে ব্যবসার পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিয়োজিত হন।সপ্তম শতাব্দীতে আরব ব্যবসায়ীদের আগমনের সাথে সাথে শ্রীলঙ্কায় ইসলামের বিকাশ ঘটে। ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসি প্রথম ব্যক্তিরা হলেন আরব বণিক এবং তাদের স্থানীয় স্ত্রী, যাদেরকে তারা ইসলাম গ্রহণ করার পরে বিয়ে করেছিলেন।অষ্টম শতাব্দী অবধি আরব ব্যবসায়ীরা শ্রীলঙ্কা সহ ভারত মহাসাগরের বেশিরভাগ ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। তাদের অনেকেই বিভিন্ন দ্বীপে বসতি স্থাপন করেছিলেন।সুতরাং শ্রীলঙ্কায় প্রথম মুসলমানরা আসে আরব বনিকদের মাধ্যমে। বাণিজ্যিক সুবিধার জন্যই তখনকার স্থানীয় শাসকেরা আরব বণিকদের অনেক সুযোগ সুবিধা দিতেন। বাণিজ্য দলের কর্মচারীরা শ্রীলঙ্কায় এসে সিংহলি মেয়ে বিয়ে করতেন। প্রথম দিকে আরব বণিকরা আসা যাওয়া উপরই থাকতেন। পরবর্তীতে তারা শ্রীলঙ্কায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেসময় মুসলমানরা কলম্বো, ক্যান্ডিতেও থাকতে শুরু করেন। শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের মধ্যে এখনও আরব প্রভাব সুষ্পষ্ট।

কিছুদিন পর শ্রীলংকায় মালয় মুসলমানরা এসে বসবাস করতে থাকেন।এক সময়ে শ্রীলঙ্কায় পারসিক, ভারতীয় মুসলমানদের আগমন ঘটে।আঠারো ও উনিশ শতকে জাভানিজ ও মালয়েশিয়ার মুসলমানদের ডাচ ও ব্রিটিশ শাসকরা শ্রীলঙ্কায় আনায় ক্রমবর্ধমান মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল।উনিশ এবং বিশ শতকে ব্রিটিশ শাসনামলে ভারত থেকে মুসলমানদের আগমনও শ্রীলঙ্কায় ইসলামের বিকাশে অবদান রেখেছে। সেইসময় ভারতের উপকূলীয় কেরালা ও অন্ধ্র প্রদেশের অনেক জায়গায় মুসলিম রাজ্য ছিল।সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়, পাকিস্তানি ও দক্ষিণ ভারতীয় মুসলমানরা শাফেয়ি এবং হানাফি চিন্তাভাবনা শ্রীলঙ্কায় প্রবর্তন করেছে। দ্বীপের বেশিরভাগ মুসলিম সুন্নি ইসলামের রীতি মেনে চলেন।শ্রীলঙ্কায় মুসলমানদের উপর জুলুম-নির্যাতন, বঞ্চনা ও তাদের উপেক্ষিত করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা শ্রীলঙ্কা দখলের পর থেকে মুসলমানদের জীবনে নেমে আসে নানা দুর্ভোগ ও নির্যাতন। ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী বিদ্বেষ নিয়ে পর্তুগিজরা শ্রীলঙ্কায় আসে এবং মুসলমানদের বহু ঐতিহ্য ও নিদর্শন ধ্বংস করে।হল্যান্ডের ডাচ অধিবাসীরা ১৬৫৮ সালে শ্রীলঙ্কায় পাড়ি জমায় এবং তারাও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একই পথ অনুসরণ করে। ডাচ উপনিবেশবাদিরা খ্রিস্টধর্ম প্রচার এবং ইসলামের নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্য সেখানে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করে।শ্রীলঙ্কার মুসলিম জনগোষ্ঠী দেশটির গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।আধুনিক সময়ে, শ্রীলঙ্কার মুসলমানরা মুসলিম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়, যা ১৯৮০ এর দশকে শ্রীলঙ্কার বাকী অংশ থেকে মুসলিম সম্প্রদায়ের একটানা বিচ্ছিন্নতা রোধে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুসলিম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক বিভাগের মতে বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় ১৮২০ টি মসজিদ রয়েছে। এগুলি প্রতিটি বড় শহর, ছোট শহর এবং গ্রামে পাওয়া যায় যেখানে মুসলমানরা বসবাস করছে।১০০টি কোরআন শিক্ষাকেন্দ্র, ৭৪৯ টি মুসলিম বিদ্যালয়, ২০৫ টি মাদ্রাসা রয়েছে যা ইসলামী শিক্ষা দেয় এবং বেরুওয়ালায় একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়(জামিয়া নালেমিয়া) রয়েছে। কলম্বোর আল ইমান স্কুলগুলি ছিল এ জাতীয় ইসলামিক বিদ্যালয়ের প্রথম সংস্থা।দেশটিতে রয়েছে ঐতিহাসিক ও প্রাচীন অনেক মসজিদ। তন্মধ্যে কুরগালায় দশম শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটি উল্লেখযোগ্য। আর শ্রীলঙ্কার মধ্যাঞ্চল ডাম্বুলার সবচেয়ে বড় মসজিদের বয়স ৬০ বছরের বেশি। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার সর্ববৃহৎ মসজিদের উদ্বোধন করা হয়েছে। ওই মসজিদে এক সঙ্গে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শ্রীলঙ্কার উত্তরাঞ্চলের মানার শহরে ওই মসজিদটি অবস্থিত। সম্ভবত শ্রীলঙ্কাই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র অমুসলিম দেশ, যেখানে টেলিভিশন এবং রেডিওতে ৫ ওয়াক্ত নামাজের আজান সম্প্রচারিত হয়।
প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার মুসলমান শ্রীলঙ্কা থেকে হজ পালন করেন। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই শ্রীলঙ্কান মুসলমানরা সৌদি আরব সরকারের কাছে হজের কোটা বাড়ানোর আবেদন করে আসছে।দেশটির ধর্মীয় এবং জাতিসত্তার মানুষদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কট্টরপন্থী বৌদ্ধরা ২০১৩ সালে এবং ২০১৮ সালে মুসলমানদের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছিল। সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে গত বছর ইস্টার সানডের হামলার পরের মে মাসে।এপ্রিলে ইস্টার সানডের দিনে একযোগে কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে চালানো হামলায় নিহত হন ২৬৯ এর বেশি মানুষ। যে হামলার পর শ্রীলঙ্কায় মুসলমানরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় হামলার শিকার হয় এবং কয়েকজন মুসলমান নিহতও হন।শ্রীলঙ্কায় ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে ১৯ জন মুসলিম এমপি আছেন। তার মধ্যে ৯ জন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য। ইস্টার সানডে’তে শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলায় যুক্ত উগ্রপন্থি গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ উঠার পর ৯ জন মন্ত্রী ও ২ জন প্রাদেশিক গভর্নর পদত্যাগ করেন। তারা সবাই মুসলমান। যদিও মূলধারার মুসলমানরা এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের নিন্দা জানিয়েছেন।পদত্যাগকারীরা জানায় তাদেরকে সরকার নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হচ্ছে না।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...