সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সকল ধর্মের দেশ সিঙ্গাপুরে ইসলাম ও মুসলিম



মো.আবু রায়হানঃসিঙ্গাপুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র। এ দেশটি সিঙ্গাপুর দ্বীপ ও নিকটবর্তী ৬৩টি ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর দ্বীপটি গোটা দেশের মোট আয়তনের ৮৮.৫ শতাংশ। দেশটি মালয় উপদ্বীপের নিকটে অবস্থিত। এর সরকারি নাম সিঙ্গাপুর প্রজাতন্ত্র। সিঙ্গাপুর একটি ক্ষুদ্র ও ব্যাপকভাবে নগরায়িত দ্বীপরাষ্ট্র। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণতম প্রান্তে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মাঝখানে অবস্থিত। সিঙ্গাপুরের স্থলভূমির মোট আয়তন ৬৯৯ বর্গকিলোমিটার।এটি মালয়েশিয়া থেকে জোহর প্রণালী এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর প্রণালী দ্বারা বিচ্ছিন্ন।সিঙ্গাপুরের মূল ভূখণ্ডটি একটি হীরকাকৃতি দ্বীপ, তবে এর প্রশাসনিক সীমানার ভেতরে আরও বেশ কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ অবস্থিত।সিঙ্গাপুর প্রশাসন সমুদ্রতলের মাটি, পর্বত ও অন্যান্য দেশ থেকে মাটি সংগ্রহ করে দেশটির স্থলভাগের আয়তন বৃদ্ধি করে চলেছেন। ১৯৬০-এর দশকে দেশটির আয়তন ছিল প্রায় ৫৮২ বর্গকিলোমিটার, বর্তমান এটি ৬৯৯ বর্গকিলোমিটার এবং ২০৩৩ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে আরও ১০০ বর্গকিলোমিটার।
সিঙ্গাপুরের জনসংখ্যা ৬০ লাখ।এর মধ্যে চীনা বংশোদ্ভুত রয়েছে ৭৬.৭ শতাংশ। সিঙ্গাপুরে বৌদ্ধ ৩৩%, ইসলাম ১৬.%, নিরীশ্বরবাদী ১৪.৮% ,খ্রিস্টান ১০%, তাও ধর্ম ৮.৫%, হিন্দু ৪% । সিঙ্গাপুরে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী মুসলিম রয়েছে। বার্ষিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮,০০০ হাজার কমে গিয়েছে৷ মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৭ লাখে, যা আগের বছরের তুলনায় দশমিক ৩% কম৷ এরমধ্যে বিদেশিদের সংখ্যা ২% কমে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখে ঠেকেছে৷এদেশে ধর্ম নিয়ে কারোও ততটা মাথা ব্যথা নেই বা বলা চলে ধর্মীয় গোড়ামিমুক্ত।সিঙ্গাপুরিয়ানদের প্রায় সব মালায় এবং ২৫% ইন্ডিয়ান মুসলিম ধর্মানুসারী।২০১০ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সিঙ্গাপুরের ১৫ বছর এবং এর অধিক বয়সী নাগরিকদের প্রায় ১৫% মুসলমান।এদের অধিকাংশই মালয় এবং সুন্নি। সিঙ্গাপুরের মুসলমানদের ১৭ শতাংশ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত। অন্যদের মধ্যে রয়েছে চীনা, আরব ও ইউরোশীয় সম্প্রদায়ের। সিঙ্গাপুরের মুসলমানদের অধিকাংশ ঐতিহ্যগতভাবেই সুন্নি মুসলমান, যারা শাফি বা হানাফি মাজহাবের অনুসরণ করে।সিঙ্গাপুর একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সব ধর্মের সহাবস্থানের জন্য অতি সুপরিচিত।বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছে, দেশটিতে অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস বিদ্যমান। বিশ্বের সব গুরুত্বপূর্ণ ধর্মের অনুসারিই সিঙ্গাপুরে রয়েছে। সিঙ্গাপুরের সরকারী পরিসংখ্যান সব সময়ই বলে যে দেশটিতে মোট দশটি ধর্ম রয়েছে। ২০১৪ সালের একটি বৈশ্বিক গবেষণায় দেখা যায় যে সিঙ্গাপুরে বিশ্বের সব ধর্মই রয়েছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ সিঙ্গাপুরকেই ধরা হয়।বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ সিঙ্গাপুরে সবথেকে বেশি দেখা গিয়েছে যা দেশটির জনগণের ৩৩ শতাংশ মানুষ দ্বারা পালিত; ২০১৫ সালের সর্বশেষ পরিসংখ্যান এটাই বলে যে সিঙ্গাপুরে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীই বেশি, এই বৌদ্ধদের প্রায় সবাই চীনা বংশোদ্ভূত।
দারুল গোফরান মসজিদ
১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা লাভের পূর্বে সিঙ্গাপুর ব্রিটিশদের অধীনে একটি ক্রাউন কলোনি ছিল। ব্রিটিশের অধীনে থাকাকালীন সিঙ্গাপুরকে বলা হত মালায়ন পেনিনসুলা।এই দ্বীপটি পূর্ব এশিয়াতে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ছিল।ব্রিটিশ নৌবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি থাকার কারণে সিঙ্গাপুরকে তখন জিবরালটার অব দা ইস্ট বলা হত। ১৮৬৯ সালে সুয়েজ খাল খোলার পর ইউরোপ এবং এশিয়ার মধ্যে সমুদ্র বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়, ঠিক তখনই সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের প্রধান সমুদ্র বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় ।সিঙ্গাপুরের ৪টি দাপ্তরিক ভাষা রয়েছে। এগুলি হল ইংরেজি, মালয়, চীনা মান্দারিন এবং তামিল।এছাড়াও এখানে আরও প্রায় ২০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে জাপানি ভাষা, কোরীয় ভাষা, মালয়ালম ভাষা, পাঞ্জাবি ভাষা এবং থাই ভাষা উল্লেখযোগ্য।সাধারন ভাষা হিসেবে এখানে ইংরেজিই প্রচলিত।সিঙ্গাপুরের প্রায় ৮০% লোক ইংরেজিতে,৬৫% লোক মান্দারিন,১৭% লোক মালয় এবং ৪% লোক তামিল ভাষায় কথা বলে থাকে।রাষ্ট্র মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার সাথে বৈপরীত্যতা এড়াতে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৬০ সালে সিঙ্গাপুর সরকার মালয়কে জাতীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করে। সিঙ্গাপুরের জাতীয় সঙ্গীতও মালয় ভাষাতে রচিত।আরব ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দ্বারা ইসলাম চৌদ্দ শতকের দিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। সুলতানদের ধর্মান্তরিত হওয়া সত্ত্বেও, উনিশ শতকের শুরুতে দক্ষিণ এশীয় এবং আরব মুসলমানদের সমন্বয়ে সিঙ্গাপুরে একটি মুসলিম সম্প্রদায় গঠিত হয়েছিল।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় সরকার মুসলমানদের কিছু আইনের ব্যাপারে চিন্তা করতে থাকে। যেমন- হজ্ব পালনের পাশাপাশি বিবাহ আইন ইত্যাদি। ঐ সময় সিঙ্গাপুরে মুসলমানগণকে মোহামেডান বলা হত। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ধর্মীয় ব্যাপারে একটি বোর্ড গঠন করে। পরবর্তীতে ১৯১৫ খ্রি: ব্রিটিশ সরকার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান করে মুসলমানদের ধর্ম পালনের সুবিধার্থে মোহামেডান উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯২০ খ্রি: থেকে এ বোর্ড ধর্মীয় বিষয় নিয়ে নিয়মিত সিদ্ধান্ত দেয়া শুরু করে। ১২ জন বিজ্ঞ আলেমকে নিয়ে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। উহার প্রধান ছিলেন একজন অতি সম্মানীয় ব্যক্তি।১৯২৪ খ্রি: মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রমজানে সূর্যাস্ত তথা ইফতারের সময় গুলি করে শব্দ করতে ব্রিটিশ সরকারের অনুমতি লাভ করে। উপমহাদেশ খ্যাত ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা আবদুল হালিম ১৯৩২ খ্রি: ভারত থেকে সিঙ্গাপুর আসেন। তিনি সিঙ্গাপুরে ধর্মীয় মূল্যবোধ বিশাল অবদান রাখেন। হযরত মাওলানা আবদুল হালিমকে পেয়ে ধর্মপালনে উৎসুক হয়ে উঠে সিঙ্গাপুরবাসী।২য় বিশ্বযুদ্ধের পর সাধারণ মানুষের মাঝে স্বাধীনতার মূল্যবোধ জাগ্রত রাখে। ১৯৪৬ খ্রি: পেনাঙ্গ এবং ওএলসি এর মুসলমানরা সরকারের প্রতি ধর্মীয় কাউন্সিল গঠনের জন্য আবেদন জানান। পরবর্তীতে ১৯৫৭ খ্রি: মজলিশ গঠন করা হয়। অবশ্য ১৯৪৮ খ্রি: মুসলমানদের শাসন কার্যাবলীর জন্য মুসলিম ওগামা ইসলাম গঠন করে প্রশাসনকে পরামর্শ দান করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শুধু তাই নয়, সে লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়।
হালিমা ইয়াকুব
১৯৫২ খ্রি: মুসলমান কর্তৃক সিঙ্গাপুরের আইন সভায় একটি বিল উত্থাপন করা হয়। এ বিলের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের মোহামেডান বাদ দিয়ে মুসলিম জাতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ঐ সময় মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একটি মুসলিম ল’কোর্ট গঠন করা হয়। ১৯৫৯ খ্রি: সিঙ্গাপুর স্বাধীন সরকার গঠন করে এবং . আহমদ ইব্রাহীম প্রথম স্টেট এডভোকেট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি হলেন নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রধান। ১৯৬০ খ্রি: ১১ ডিসেম্বর শরীয়া বোর্ডের শক্তি বৃদ্ধি করার মুসলিম আইন বিল পাস করা হয়। এতে বিজ্ঞ লোক দ্বারা একটি মজলিশ গঠন করা হয়। এ মজলিশের অধীনে সকল মসজিদ,যাকাত, ধর্মীয় স্কুল ও শিক্ষকের পরিচালনা করার দায়িত্ব ছিল।১৯৬০-১৯৭০ এর দশকে পরিবর্তন আসে এবং সিঙ্গাপুর অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আবার নতুন মজলিশ গঠন করা হয় অনেক সমস্যার সমাধান করার জন্য। যখন মুসলিম ল’বিল সিঙ্গাপুরে পাস করা হয় তখন সিঙ্গাপুর একটি স্বাধীন সরকার রাষ্ট্র হয়। কিন্তু বিলটি আইন হয় আগস্ট ১৯৬৬ খ্রি।
মুসলিম নারীদের কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরার বিষয়ে বিতর্ক চলছে বিশ্বের অনেক দেশেই ৷ সিঙ্গাপুরেও বিষয়টি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক ৷ সিঙ্গাপুরে কাজ শুরুর আগে হিজাব খুলে ফেলার বিষয়টি খেয়াল রাখতে হয় মুসলিম নারীদের ৷সিঙ্গাপুরে এমন পরিস্থিতির শিকার অনেক মুসলিম নারী৷ একটি খাবারের দোকানের মহিলাকর্মীকে হিজাব খুলে ফেলতে বলেছিল কর্তৃপক্ষ৷ দেশজুড়েই তখন বিতর্ক শুরু হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব বলেন, হিজাবের বিষয়ে বৈষম্যমূলক আচরণের কোনো সুযোগ তিনি দেখেন না৷একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীও৷ সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন ‘‘কর্মক্ষেত্রে এ ধরনের বৈষম্য বিরক্তিকর৷ এমন আচরণ মানুষের রুটিরুজির উপর প্রভাব ফেলে৷’’পুলিশ বিভাগসহ দেশটির বেশ কিছু কর্মক্ষেত্রে হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে একটি আন্দোলনও শুরু হয়েছে সম্প্রতি৷ প্রায় ৫০ হাজার লোক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্বাক্ষর করেন ৷নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে একজন মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ।তিনি মালয় সম্প্রদায়ের ৬৫ বছর বয়স্ক হালিমা ইয়াকুব। যিনি দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।সিঙ্গাপুরের অষ্টম এবং প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হালিমা। যিনি বাণিজ্য সমৃদ্ধ দেশটির সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।কুইন স্ট্রিটে ১৯৫৪ সালের ২৩ আগস্ট হালিমা’র জন্ম। ১৯৭০ সালে তানজং ক্যানটং গার্লস স্কুলে এবং পরে সিঙ্গাপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৭৮ সালে ন্যাশনাল ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসে (এনটিইউসি) একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালনের পর তাকে ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ২০১১ সালে তিনি সামাজিক উন্নয়ন, যুব ও খেলাধুলা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এর দুবছর বাদে তিনি দেশটির সংসদে প্রথম নারী স্পিকার নিযুক্ত হন। পুরো সিঙ্গাপুরে ৭৫টির মতো মসজিদ রয়েছে।এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। যেহেতু সিঙ্গাপুরে বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা ৭ লক্ষের মত । তারা যেহেতু শাফী মাজহাবের অনুসারী, অতএব সমস্ত মসজিদে শাফী মাজহাব মতে পরিচালিত, তবে একটি শিয়া মসজিদ আছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...