কম্বোডিয়ায় ইসলাম ও চাম জনগোষ্ঠী




মো.আবু রায়হানঃকম্বোডিয়া ইন্দো-চায়না উপদ্বীপ অঞ্চলের এশিয়া মহাদেশের উত্তর পূর্বাংশে অবস্থিত। কিংডম অব কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়ার উত্তর-পূর্বে লাওস, পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে ভিয়েতনাম, পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে থাইল্যান্ড উপসাগর। কম্বোডিয়ার আগের নাম হচ্ছে কম্পুচিয়া। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন।দেশটির আয়তন এক লাখ ৮১ হাজার বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা এক কোটি ৪৫ লাখ ৫৮ হাজার ৩৩২ জন। জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী।জাতিগোষ্ঠী খেমার (৯০%), ভিয়েতনামি (৫%), চীনা (১%), অন্যান্য (৪%)। Islam is the religion of a majority of the Cham and Malay minorities in Cambodia. According to Po Dharma, there were 150,000 to 200,000 Muslims in Cambodia as late as 1975 while Ben Kiernan's research documents numbers as high as 250,000. Persecution under the Khmer Rouge eroded their numbers, however, and by the late 1980s they probably had not regained their former strength. All of the Cham Muslims are Sunnis of the Shafi'i school. Po Dharma divides the Muslim Cham in Cambodia into a traditionalist branch and an orthodox branch.১৯৫৩ সালে নরোদম সিহানুকের নেতৃত্বে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের অংশ হিসেবে এ সময় আমেরিকাও কমিউনিস্ট নিধন করতে কম্বোডিয়ার ওপর বোমা বর্ষণ করে। গোটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা যত বোমা ফেলেছে শুধু কম্বোডিয়ায় ফেলেছে তার তিন গুণ। পুরো কম্বোডিয়া তখন এক মৃত্যুপুরী। প্রাচীনকাল থেকেই কম্বোডিয়াতে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল।
বলা হয় ১৮২৩ সালের আগে কম্বোডিয়ায় ইসলামের প্রসার হয়নি। Islam has been in Cambodia in Cambodia for many centuries ago. We also have an inscription in stone, which got from Bak Kheng temple (The name of temple) in the Khmer museum of Cambodia has an Arab’s text “لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ” (There is no Allah but Allah, Muhammad is the Messenger of Allah).ভিয়েতনামের কম্বোডিয়া সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে গেছে মেকং নদী। নদীর তীর ধরে গড়ে উঠেছে অ্যান গিয়াং প্রদেশ। প্রদেশের অন্যতম জেলা মেকং ডেল্টা। এই মেকং ডেল্টায় সাউ ডক নামক গ্রামটির অবস্থান। গ্রামটির আয়তন প্রায় ১০৫ বর্গ কিলোমিটার। ২০১৩ সালের আদমশুমারি অনুসারে গ্রামটির মোট জনসংখ্যা ১,৫৭,২৯৪ জন। গ্রামের প্রধান ধর্ম বৌদ্ধ, দ্বিতীয় প্রধান ধর্ম ইসলাম। এরা সবাই-ই এখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী। মেকং ডেল্টাসহ দক্ষিণ ভিয়েতনামের বর্তমান এলাকাগুলো একসময়ে চাম্পা রাজার অধীনে ছিল। এই রাজ্যে যারা বসবাস করতো তাদের সবাইকে চাম বলা হতো। the Cham migrated from Champa, a kingdom formerly located in the south of Vietnam.চাম মুসলমানরা কম্বোডিয়ার কামপং চাম অঞ্চলে বসবাস করে। এই অঞ্চলে ছোট ছোট গ্রাম জুড়ে তাদের জীবন যাপন। কম্বোডিয়ার অন্যান্য অধিবাসীদের সঙ্গে তাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি বিশেষ মেলে না। প্রত্যেকটি গ্রামের নিজস্ব ছোট মসজিদ রয়েছে যেখানে গ্রামবাসীরা উপাসনা অনুষ্ঠান ইত্যাদি করতে পারে। চাম উপজাতির মুসলমানরা নিজ জাতির মানুষ ভিন্ন আর কাউকে বিয়ে করে না। যদি অন্য উপজাতির মানুষ ইসলাম ধর্ম নিতে রাজি হয় তবেই বিয়ে সম্ভব হয়। চামরা তাদের নারীদের অসম্ভব সম্মান করেন ও আগলে রাখেন।চাম্পা রাজত্বের অধীনস্থ এলাকায় ইসলামের আগমন সম্পর্কে প্রধানত দুটি মত পাওয়া যায়। একদল ইতিহাসবিদের মতে, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা) এর শাসনামলে অত্র অঞ্চলে সর্বপ্রথম ইসলামের আগমন ঘটে। তাদের মতে, হযরত উসমান (রা) ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন টাং সাম্রাজ্যে, তথা বর্তমান ভিয়েতনাম ও চীনে একজন ইসলামের দূত প্রেরণ করেছিলেন। তিনি চাম্পা সাম্রাজ্যে তার জাহাজ নোঙর করেছিলেন এবং অত্র অঞ্চলে প্রথমবারের মতো ইসলাম প্রচার করেছিলেন। তবে এ সময়ে চাম্পা রাজত্বে ইসলাম তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।আরেকদল ইতিহাসবিদ মনে করেন, উসমান (রা) এর আমলে নয়, বরং একাদশ শতকে চাম্পা রাজত্বে ইসলামের আগমন ঘটে। এ সময়ে অত্র অঞ্চলে আরব বণিকরা চন্দন কাঠের ব্যবসা করতে শুরু করে। এসব আরব বণিকদের অধিকাংশই ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তাদের হাত ধরেই চাম্পা অঞ্চলে ইসলামের প্রসার ঘটতে থাকে। কিন্তু স্থানীয় রাজার ধর্মই অধিকাংশ প্রজাদের ধর্ম হওয়ায় তখনও ইসলাম তেমন প্রভাব বিস্তার সক্ষম হয়নি। পরবর্তীতে সপ্তদশ শতকে এসে এক চাম্পা রাজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাতে অত্র অঞ্চলে ইসলামের দ্রুত প্রসার ঘটে। এ সময়ে প্রায় সকল প্রজা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
চাম্পা রাজত্বের সূচনা ঘটে ১৯২ খ্রিস্টাব্দে। দীর্ঘকাল পর ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে এই রাজত্বের পতন ঘটে। রাজত্বের পতন ও নানা নির্যাতনের কারণে চাম আদিবাসীরা ছড়িয়ে পড়ে বর্তমান ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে। রাজত্বের পতন হওয়ার সাথে সাথে চামদের দুর্বিষহ দিন শুরু হয়। নেমে আসতে থাকে নানা ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন। এ সময়ে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অধিকাংশ চাম জনগোষ্ঠী আশেপাশের এলাকায় পালিয়ে যেতে থাকে। সবচেয়ে বেশি পালিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী দেশ কম্বোডিয়ায়। কিন্তু সেখানেও তাদের শেষরক্ষা হয়নি। রোহিঙ্গাদের মতো সেখানেও তাদের উপর একটি বড়সড় গণহত্যা চালানো হয়। এরপর থেকে চামদের বসবাসের স্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রচুর ধর্মীয় পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়। অনেকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সময় বোর্নিও ও দক্ষিণ চীন সমুদ্র থেকে চাম উপজাতিরা কম্বোডিয়ায় পা রাখে। চামরা ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বি, অতএব, তখন থেকেই এই দেশে ইসলামের প্রসার শুরু হয়। বর্তমানে কম্বোডিয়ায় ১৫ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বি মানুষ রয়েছে। কিন্তু বহির্বিশ্বের কাছে তাদের খবর বিশেষ পৌঁছয় না। যেহেতু দেশটিতে বৌদ্ধ ধর্মই মূল, তাই দেশীয় মুসলমানদের হজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়া নিষেধ।চামের নিজস্ব মসজিদ রয়েছে। ১৯৬২ সালে দেশে প্রায় শতাধিক মসজিদ ছিল। উনিশ শতকের শেষের দিকে, কম্বোডিয়ার মুসলমানরা চারটি ধর্মীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি — মুপ্তি, টুক কলিহ, রাজা কালিক এবং ত্বান পেকে কর্তৃক একীভূত সম্প্রদায় গঠন করেছিল। চাম গ্রামে উল্লেখযোগ্য একটি কাউন্সিলের মধ্যে একটি হেকেম এবং কয়েকটি কাতিব, বিলাল এবং লাবি ছিল। চার জন উচ্চমান্য ব্যক্তি এবং হেকমকে ব্যক্তিগত কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল এবং তাদেরকে রাজদরবারের জাতীয় জাতীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কম্বোডিয়া স্বাধীন হওয়ার পরে, ইসলামী সম্প্রদায়টি পাঁচ সদস্যের কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে ছিল যা এই জনগোষ্ঠীকে সরকারী কার্যক্রমে এবং অন্যান্য ইসলামী সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ করে প্রতিনিধিত্ব করে। প্রতিটি মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি হাকেম রয়েছে যিনি সম্প্রদায় এবং মসজিদকে নেতৃত্ব দেন, একজন ইমাম যিনি নামাজের নেতৃত্ব দেন এবং একজন বিলাল যিনি প্রতিদিনকে নামাজের প্রতি বিশ্বস্ত আখ্যায়িত করেন। নমপেনের কাছে ক্রোয়ে চাংওয়ার উপদ্বীপকে চামের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ মুসলিম কর্মকর্তা সেখানে বাস করেন। প্রতি বছর চামের কিছু লোক মালয়েশিয়ার কেলানতানে কুরআন অধ্যয়ন করতে যায়, এবং কেউ কেউ মক্কায় পড়াশোনা করে বা তীর্থযাত্রা করে। ১৯৫০ এর দশকের শেষভাগের পরিসংখ্যান অনুসারে, চামের প্রায় সাত শতাংশই হজ্ব সম্পন্ন করেছিলেন এবং তাদের সাফল্যের লক্ষণ হিসাবে ফেজ বা পাগড়ি পরতে পারেন।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে এই দেশে দুটি ইসলামিক সোসাইটির পত্তন হয়,প্রথমটি, দ্য সেন্ট্রাল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অফ কম্বোডিয়া, যেটি মূলত মুসলমানদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার তত্ত্বাবধান করে।দ্বিতীয়টি, কম্বোডিয়া ইসলামিক ইউথ অ্যাসোশিয়েশন, যেটি মূলত ছাত্রদের শিক্ষাবিষয়ক, সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থার তত্ত্বাবধান করে। যে সমস্ত মুসলমান ছাত্ররা গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসে তাদের দেখাশোনা করে এই সংস্থাটি।একসময় চাম মুসলমানের ঘোরতর প্রভাব ছিল কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক অবস্থায়। রাজার আমলে বৌদ্ধ মন্ত্রীর অন্তত একজন মুসলমান সহায়ক থাকতই। এমনকি রাজার সভায় একজন মুসলমান সভাসদ থাকতেন যিনি ছিলেন তৎকালীন মুসলমানদের প্রতিভূ। কিন্তু ক্রমশ এই প্রভাব কমতে থাকে।তবে, ১৯৭০ সালের পর আবার এই অবস্থার উন্নতি হয়। সেনেট হলে একজন মুসলমান প্রতিনিধি, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে চার জন মুসলমান প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। এছাড়া বিদেশ নীতি ও রাষ্ট্রনীতিতেও মুসলমান প্রতিনিধিরা নিযুক্ত হন। কমিউনিস্টদের আক্রমণ থেকে কম্বোডিয়াকে অনেকাংশেই ঠেকিয়ে রেখেছিলেন এই মুসলমান প্রতিনিধিরা, কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। ১৯৭৫-এ কমিউনিস্টরা কম্বোডিয়ার দখল নিলে অন্যান্যদের মত মুসলমানদেরও দুর্দশার অন্ত থাকে না।তবে, বর্তমানে, কম্বোডিয়ার অন্যান্য অধিবাসীদের সঙ্গে মিলে মিশেই রয়েছে চাম মুসলমানরা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ