এশিয়ার দেশ লাওস যেখানে মুসলমানদের বসবাস সবচেয়ে কম
মো.আবু রায়হানঃআসিয়ান সদস্যভুক্ত লাওস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। দেশের নাম লাও পিপলস ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক। এদের ভাষায় ‘ছাথালানালাত পাকছাথি পাথাই পাকছা ছন লাও’। রাজধানী ভিয়েনতিয়েন। স্থানীয়রা বলেন ভিয়েনচান।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার আগে পৃথিবীতে অনেক সমাজতান্ত্রিক দেশ ছিল। বর্তমানে যে কয়টা সমাজতান্ত্রিক দেশ আছে লাওস তার মধ্যে একটি। লাওসের আয়তন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার এবং ৭০ লাখ ১৯ হাজার ৭৩ জন (৩৫ লাখ ২৭ হাজার ৭৮৬ জন নারী ও ৩৪ লাখ ৯১ হাজার ২৮৭ জন পুরুষ) জনসংখ্যা রয়েছে। সাগর-মহাসাগেরর সাথে কোনো সংযোগ নেই অর্থাৎ স্থলবেষ্টিত দেশ লাওস।লাওসের উত্তরে চীন, পূর্বে ভিয়েতনাম, দক্ষিণে কম্বোডিয়া , এবং পশ্চিমে ও উত্তর-পশ্চিমে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার। লাওস খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এবং জাতিগতভাবে বিচিত্র।১৯৯৫ সালের গণনা সম্পর্কিত উদ্দেশ্যে, লাওস সরকার ৪৭ টি প্রধান বর্ণের মধ্যে ১৪৯ জাতিগত গোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়। যদিও ন্যাশনাল কন্সট্রাকশন (এলএফএনসি) -এর জন্য লাওফর ফ্রন্ট সম্প্রতি ১৬০ টি জাতিগত গোষ্ঠী সহ ৪৯ টি জাতিকে অন্তর্ভুক্ত করার তালিকায় সংশোধিত হয়েছে।লাও ভাষা এখানকার সরকারি ভাষা। ভিয়েনতিয়েন দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।দেশটি পূর্বে ইন্দোচীন ইউনিয়ন তথা ফরাসি ইন্দোচীনের অংশ ছিল। ১৯৪৯ সালে ১৯ জুলাই দেশটি স্বাধীনতা লাভ করে। দেশটি ১৯৬০-এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধ এ জড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালে একটি সাম্যবাদী বিপ্লব দেশটির ছয়-শতাব্দী-প্রাচীন রাজতন্ত্রের পতন ঘটায় এবং একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে দেশটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র লাওসে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু।৮৫% মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। বাকিরা হলেন বাহাই, চাইনিজ, ফোক এবং বৌদ্ধদের ক্ষুদ্র গ্রুপ মাহায়ানা।১% খ্রিস্টান আর সক্রিয় আছেন নন রিলিজিয়াস গ্রুপও।লাওসে মুসলমানের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বলা হয়ে থাকে মুসলমান মাত্র ০.০১%। Muslims are a small minority in Buddhist-majority Laos and constitute about 0.01% of the population. বলা হয়ে থাকে এশিয়ার মধ্যে লাওস একমাত্র দেশ যেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বসবাস সবচেয়ে কম এবং তাদের সংখ্যা ৮০০ জনের মত। ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই এবং বাংলাদেশীরাই লাওসে বসবাসকারী মুসলমান।আর স্থানীয় মুসলমান মাত্র ২০ জন। Muslims form a very small proportion of Lao's population. Community leaders estimate their number of be less than eight hundred, making Laos possibly the country with the lowest number and proportion of Muslims in the whole of Asia.মুসলমানদের দেশটির রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে দেখা যায়।দেশটির অধিকাংশ মুসলমানই ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে যুক্ত। খেমাররুজ শাসনামলে দেশটিতে কম্বোডিয়া থেকে চাম মুসলিমরা আগমন করে। দেশটির অধিকাংশ মুসলমানই শহরে বাস করে। তারা মূলত মাংস সরবরাহ বাণিজ্যের সাথে যুক্ত। The Muslim population is mostly engaged in trade and manage meat shops. A small community of Cham Muslims from Cambodia who escaped the Khmer Rouge is also found. Muslims live primarily in urban areas such as Savannakhet. পুরো লাওসে মাত্র দুটি মসজিদ আছে। দুটোই রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে। একটির নাম ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদ, অপরটির নাম আল আজহার মসজিদ, যেটাকে স্থানীয়ভাবে মসজিদ অব কম্বোডিয়া বলে ডাকা হয়। But nearly all 500 or so Laotian Muslims live in the capital, Vientiane, and there they attend one of two mosques. The oldest and best known of these is the Jama' Masjid, or Congregational Mosque, which sits in a prestigious central neighborhood just behind the Nam Phu Fountain.লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে মেকং নদী। এই নদীর তীর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদের।কম্বোডিয়ান মুসলমানেরাই ১৯৮৬ সালে মসজিদে আজহার প্রতিষ্ঠা করেন। ৪৮০ মিটারের দোতলা ভিয়েনতিয়েন জামে মসজিদে একত্রে দেড়শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের ভেতরে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তা পর্দা দিয়ে আলাদা করা। প্রতি রমজানে শতাধিক রোজাদারদের ভিয়েনতিয়েন মসজিদে ইফতার করানো হয়। ঈদের নামাজের সময় মসজিদে জায়গা হয় না, তখন মসজিদসংলগ্ন রাস্তায় নামাজ আদায় করেন মুসলমানরা। মসজিদ পরিচালনার জন্য রয়েছে একটি কমিটি, এই কমিটি মসজিদ পরিচালনার যাবতীয় ব্যয়, ইমাম-মুয়াজ্জিনের বেতন ইত্যাদি নির্বাহ করেন।আল আজহার মসজিদটি চার মাইল দূরে পোন সা বাথ থাইয়ে মসজিদুল আজহা অবস্থিত।পাকিস্তানি এবং ভারতীয় মুসলমানরা ভিয়েনতিয়েন জামে মসিজদটি নির্মাণ করেন ১৯৭০ সালে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনেইয়ের মুসলমানরা নির্মাণ করেছন মসজিদুল আজহা।এখানে বাচ্চাদের জন্যে বৈকালিক ইসলামি শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। সেখানে লাও ভাষায় ইসলাম শিক্ষা দেওয়া হয়। আরেকটি মসজিদ ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশটির ওডমজে প্রদেশে একটি নতুন মসজিদ স্থাপন করা হয়।বিশ শতকের প্রথম দিকে দক্ষিণ ভারত থেকে তামিল মুসলমানরা ফ্রান্সের কলোনী থাকা অবস্থায় লাওসের ভিয়েনতিয়ানে শ্রমিক হিসেবে আগমন করেন। তারা বেশিরভাগ ব্যবসায় জড়িত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বর্তমান পাকিস্তানের পাখতুন প্রদেশের অনেক মুসলমান ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর হয়ে বার্মায় যুদ্ধ করেন। বার্মা থেকে তাদের অনেকে লাওসে যান এবং সেখানেই স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। পাখতুনদের অনেকেই লাও মহিলাদের বিবাহ করেন যারা পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণ করেন।সম্প্রতি তামিল, পাখতুন, কম্বোডিয়ান বংশোদ্ভূত মুসলমানদের সমন্বয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব লাওস টু অভারসিজ মুসলিম কমিউনিটি নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে লাওস ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। এর কিছুদিন পর আমেরিকার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। চীন ও ভিয়েতনামের সহযোগিতায় কমিউনিস্ট নেতা পেথেট লাও দীর্ঘ যুদ্ধে আমেরিকাকে ফিরে যেতে বাধ্য করে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী লাওস ঘোষণা করে। ১৯৬০ সালের দিকে লাওসে এখনকার চেয়ে অনেক বেশি মুসলমানের বসবাস ছিল। কিন্তু যুদ্ধে মুসলমানেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং অনেকে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন