সিলেটে হযরত বায়ামপুরীর কবর থেকে সুঘ্রাণ



আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন খ্যাতিমান আলেম, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক ও লেখক ছিলেন। হাদিস বিশারদ হিসেবে উপমহাদেশে তার ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসার মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস ছিলেন। সিলেট সরকারি আলিয়াসহ ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে,১৯৬২ সালে আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী পাকিস্তানের মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (এমএনএ) নির্বাচিত হন। সর্বপ্রথম ১৯৬২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে চেয়ার প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে বিপুল ভোটে এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাপফুল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ নিয়ে নির্বাচন করেন। প্রথমবার বিজয়ী হলেও শেষ দুইবার সামান্য ভোটে পরাজিত হন।আরবি, বাংলা ও উর্দু ভাষায় তার মূল্যবান বেশ কিছু গ্রন্থ রয়েছে। সেই কবর থেকে খুব সুঘ্রাণ বের হচ্ছে। ... এভাবেই এ জায়গা কবরস্থান'র জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হয়ে যায় এবং ...মক্কার ইমামের একটি মাসয়ালায় ভুল ধরে আরব বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেন।দারুল উলূম দেওবন্দে রেকর্ডসংখ্যক নাম্বার পেয়ে তিনি কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন। কথিত আছে, তিনি যখন দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে ফিরেন তখন তার শিক্ষক সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছিলেন, আব ইলম সিলেট কি তরফ জা রহা হায় (এখন জ্ঞানবত্তা সিলেটের দিকে যাচ্ছে)।সমকালীন আলেমরা তাকে একবাক্যে পণ্ডিত আলেম হিসেবে মেনে নিয়েছেন।আল্লামা বায়ামপুরী রহ. প্রথমে হাকীমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তবে নিজ উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর কাছ থেকেও আধ্যাত্মিক লাইনে উপকৃত হন। পরবর্তী সময়ে তিনি মাওলানা ইয়াকুব বদরপুরী রহ.-এর কাছে বায়াত হন এবং তাঁর খেলাফত লাভ করেন।আধ্যাত্মিকতার জগতে বায়মপুরী রহ. ছিলেন খুব উচুঁমাপের সাধক। তবে তিনি কখনও এটা প্রকাশ হতে দিতেন না। সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাাখতেন। বহু জ্ঞানী-গুণীজন তাঁর কাছে ইলমে তাসাউফের দীক্ষা নেন।সৌদি আরবের বাদশাহ তাদের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এনে আল্লামা বায়ামপুরীর সামনে পেশ করে বলেন, আমাদের সংবিধানে কোথাও কোনো ভুল আছে কি না দেখুন। পরে তিনি জানালেন অন্তত ১৪টি বিষয় সংশোধনযোগ্য।তার জ্ঞানের গভীরতা দেখে সৌদি আলেমরা হতবাক। আল্লামা বায়ামপুরী রহ. তার উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানীর সঙ্গে অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন। সে সময় অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে যাদের বাড়ি পাকিস্তানে ছিল তাদের ওপর নানা নির্যাতন হতো। এজন্য এক পর্যায়ে বায়ামপুরী রহ. ভারতের আসামে চলে যান। এই খবর জানার পর সৌদি বাদশা পাকিস্তানি এক মন্ত্রীকে ডেকে বলেন এমন একজন বিজ্ঞ আলেমকে তাড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান আবার মুসলমানদের রাষ্ট্র হয় কেমনে? এতে মন্ত্রী লজ্জিত হলেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আল্লামা বায়ামপুরীকে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) নিয়ে এলেন।

আল্লামা বায়ামপুরী (রহ.)কে দাফনের পর কয়েক দিন পর পর্যন্ত কবর থেকে সুগন্ধি বের হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে তিন মাস পর আবার এই সুগন্ধি অনুভব করেন এলাকাবাসী।তার মৃত্যুর ৫০ বছর পেরিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে চার বার তার কবর থেকে সুগন্ধ বেরিয়েছে। এ ঘটনাকে অলৌকিক ঘটনা বলে মনে করেন স্থানীয়রা। শোনা গেছে ইন্তেকালের ৪০ বছর পর ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে আবারও তার কবর থেকে সুগন্ধি বের হতে থাকে। এই সুগন্ধি লাভের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন। তবে তার কবরস্তান ঘিরে যেন শরিয়ত পরিপন্থি কোনো কর্মকা- না হয় সে ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করে। তিনি আল্লাহর কত প্রিয় বান্দা ছিলেন এই কারামাত দ্বারাই কিছুটা অনুমান করা যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর মাওলানা মুশাহিদ বায়মপুরী (রহ.) এর কবর থেকে সুগন্ধি ছড়াচ্ছে বলে দাবী করছেন তার অনুসারীরা। রাত ৮টার দিকে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে ভীড় করতে শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা। অনেকেই দূর দুরান্ত থেকেও ছুটে আসছেন। আর সেখান থেকে সুগন্ধি অনুভুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। মাদ্রাসার শিক্ষক ক্বারী হারুনুর রশীদ চতুলী বলেন, মাগরিবের নামাজের পর ছাত্ররা কবর জিয়ারতে গেলে সুগন্ধ অনুভব করেন। পরে তারা আমাদের খবর দিলে আমরাও তার বাস্তব প্রমাণ পাই। এ নিয়ে চতুর্থ বারের মতো এ আলেমের কবর থেকে সুগন্ধ বের হচ্ছে উল্লেখ করেন। ওলি আউলিয়াদের কবরে এধরনের ঘটনা নতুন নয়।আমিরুল মু'মিনীন ফিল হাদিস, ইসলামের এক জ্বলন্ত মোজেজা, ইমাম বোখারি (রহ.) কে জানাজার পর যখন তাঁকে কবরে রাখা হয়, তখন তাঁর কবরের মাটি থেকে মেশক আম্বরের সুগদ্ধ বাতাস প্রবাহিত হয়ে চারদিক মোহিত করে তোলে। মানুষ যেন তার কবর থেকে মাটি নিতে না পারে এ জন্য তার কবরের চারপাশে প্রাচীর দেওয়া হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল