মীর জাফরের মীর পদবি বিবর্তনে মির্জা পদবির উদ্ভব


#মো.আবু রায়হান
মুঘল সাম্রাজ্যে বিভিন্ন সামরিক শাখার প্রধানদেরকে মীর পদবী দেওয়া হতো।মূলত মীর একটি রাজকীয় পদবী বা রাজদত্ত পদবী যা পাক-ভারত উপমহাদেশের অনেক অঞ্চলে বা রাজ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।ইসলামিক প্রভাবের বিভিন্ন দেশ বা রাজ্যে এই পদবী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হায়দারাবাদের নিজামদের পদবী ছিল মীর। মীর শব্দটিকে ফার্সি শব্দ। পীর এর আরবি পরিভাষা হিসেবে অনুমান করা হয়ে থাকে। অনেকেই মীর শব্দটি আরবি আমীর শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করেন।এছাড়া মুর্শিদাবাদের নবাব সৈয়দ মীর জাফর আলী খান এর ক্ষেত্রে রাজকীয় পদবী হিসেবে মীর পদবী ব্যবহার হতে দেখা যায়। মীর জাফরের পরবর্তী বংশধরগণ মীর পদবী ব্যবহারের পরিবর্তে মীর জাদা বা সংক্ষেপে মির্জা পদবী ব্যবহার করতো নামের। মীর্জা শব্দটির উৎপত্তি ফার্সী আমীরজাদা হতে, যার অর্থ আমীর-পুত্র। তবে এটি শুধু তৈমুর লং এর পরবর্তী বংশধরদের ব্যাবহার করতে দেখা গেছে। মির্জা বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের পদবি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর অবৈধ ভূমিকার কুশীলব হিসেবে ভাবা হয় মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজদের পা-চাটা সামরিক অফিসার ছিলেন তিনি। বেসামরিক আমলা হিসেবেও অভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন মীরজাফরের চতুর্থ অধস্তন বংশধর।মীরজাফর ইস্কান্দার মির্জার দাদার বাবা।
৫৫ সালের ৫ আগস্ট অসুস্থতার জন্য পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ছুটিতে গেলে তিনি প্রথমে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল এবং পরে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন।পাকিস্তানের ’৫৬ সালের প্রথম সংবিধান অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল পদকে প্রেসিডেন্ট পদে রূপান্তর করা হয় এবং ইস্কান্দার মির্জা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অভিযোগে তিনি ’৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক আইন জারি করেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। এর মাত্র ২০ দিন পর আইয়ুব খান এক রক্তপাতহীন সামরিক ক্যুর মাধ্যমে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। তিনি ইস্কান্দার মির্জাকে লন্ডনে নির্বাসনে পাঠান। ’৬৯ সালের ১২ নভেম্বর ইস্কান্দার মির্জা লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার তার লাশ পাকিস্তানে সমাহিত করতে অনুমতি দেয়নি। সে কারণে তার মৃতদেহ তেহরানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইরানের শাহ একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদায় তার মৃতদেহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন।মির্জা গোলাম আহমেদ (১৮৩৫ - ২৬ মে ১৯০৮) একজন ভারতীয় ধর্মীয় নেতা, এবং আহ্‌মদিয়া মুসলিম জামাত এর প্রবর্তক। তার দাবী মতে, তিনি ১৪ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ (আধ্যাত্মিক সংস্কারক), প্রতিশ্রুত মসিহ, মাহাদি, নবী এবং খলীফা।তিনি ইসলামের পরিপূর্ণতা দানকারী একজন উম্মতি নবী হিসেবেও নিজেকে দাবী করেন।মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ইংরেজদের শেখানো বুলি ও তাদের নির্দেশনা মত প্রথমে সরলমনা মুসলমানদের নিকট নিজেকে “মুজাদ্দিদ” হিসেবে জাহির করেন। তার দাবির ফিরিস্তি অনেক লম্বা। নিজেকে “খোদা” থেকে শুরু করে আর্য জাতির “রাধাকৃষ্ণ” হবার দাবি পর্যন্ত তার বইতে উল্লেখ আছে।১৮৬৪ সাল থেকে ইলহামের দাবিদার তিনি। ১৮৮৪ সালে নিজেকে মুজাদ্দিদ দাবি করেন। তখন “বারাহিনে আহমদিয়া” নাম দিয়ে একটি বইও লিখেন। এভাবে ১০ বছর অতিবাহিত হয় তার মুজাদ্দিদ দাবির মধ্য দিয়ে। তারপর তিনি ১৮৯০ সালে প্রথমে ইমাম মাহাদী, এর কিছুদিন পরে ঈসা মাসীহ (আ)-এর “মাসীল” বা রূপক হওয়ার দাবি করেন। তখন নতুন করে তিনি কুরআন শরিফ থেকে হযরত ঈসা (আ)-এর মৃত্যুর ভুল তথ্য আবিষ্কার করে মানুষকে ধোকা দিতে শুরু করেন।১৯০১ সালে নিজেকে কথিত “উম্মতি নবী” দাবি করেন। তারপর ১৯০৭ সালে আর কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজেকে পরিপূর্ণ একজন নবী এবং রাসূল ঘোষণা দিয়ে বসেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল