অনৈক্যের বেড়াজালে মুসলিম বিশ্বের রাজনীতি
মো.আবু রায়হানঃ ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু হয় ৬১০ সালে। ৬২২সালে মদীনায় প্রথম ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬৩২ সালের মধ্যে হযরত মুহাম্মাদ (সা:) আরবের অধিকাংশ ভূখণ্ড নিজের অধিকারে আনেন।তারপর খুলাফায়ে রাশেদা সুদীর্ঘ ত্রিশ বছর মুসলিমবিশ্ব শাসন করেন। এই সময় দেখা দেয় অন্তর্দ্বন্দ্ব। এরপর উমাইয়া বংশের শাসন শুরু হয়। তারপর আব্বাসীয় বংশ আসে। এরমধ্যে ইসলাম স্পেন থেকে চিন সীমান্ত অবধি ছড়িয়ে যায়। এরপর আফগান শাসকরা ভারত আক্রমণ করেন ও পরে উপমহাদেশেও মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর তুর্কিশক্তির উত্থান হয়। ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ বাধে। স্পেনে পুনরায় খ্রিষ্টীয় শাসন হয়। এরমধ্যে উসমানীয় তুর্কিদের হাতে পুর্ব রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়।পৃথিবীর মানচিত্রের একটা বিরাট অংশজুড়ে অর্ধশতাধিক মুসলিম রাষ্ট্র শোভা পাচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৩৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে বসবাস করছে ১৮০ কোটি মুসলিম ।বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ২৪.১% মুসলিম।বিশ্বে ৬০টি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে ।বিশ্বের মোট রাষ্ট্রের ২৬% মুসলিম রাষ্ট্র।ধর্মীয় সংগঠন বা ধর্ম বিশ্বাস হিসেবে ইসলামকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুমোদন দিয়েছে ২৬টি রাষ্ট্র। যেখানে সরকারের কার্যের প্রথম ভিত্তি হল শরীয়াহ্ । তবে সবদেশে সমানভাবে তা কার্যকর নয়। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী রাষ্ট্র একটি তা হলো ইরান । রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মীয় বিষয়সমূহে নিরপেক্ষতা অবলম্বন করছে ৩০টি রাষ্ট্র । আনুষ্ঠানিক বা সরকারিভাবে এই মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোর কোন বক্তব্য নেই ধর্মীয় ব্যাপারে। এমন রাষ্ট্র সংখ্যা ১৩টি। পেট্রোল উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম উপসাগরীয় আরব দেশগুলো। ফসফেট উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম মরক্কো। রাবার উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম মালয়েশিয়া, টিন উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম মালয়েশিয়া (৩৫%)। কার্পাস উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম ইরাক ৮০%। কোলামবাইট (ধাতু) উৎপাদন পৃথিবীর মধ্যে প্রথম নাইজেরিয়া (৯০%), পাম অয়েল উৎপাদনে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম মালয়েশিয়া। এছাড়াও পৃথিবীর মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, বয়লার ৬০ ভাগ, স্বর্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ ও খেজুরের ১০০ ভাগই মুসলিম দেশগুলোর। অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলিম দেশগুলোর সাথে । পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের মোট সৈন্যসংখ্যা ৩ কোটি ৪০ লক্ষ। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের মোট সৈন্যসংখ্যা ৮৫ লক্ষ। অর্থাৎ পৃথিবীর মোট সৈন্যসংখ্যার অনুপাতে মুসলিম সৈন্যবাহিনী ২৫%। বিশ্বে ৬০টি মুসলিম দেশের মধ্যে অন্তত ৫টি দেশে সরাসরি যুদ্ধ চলছে। এছাড়া ১০টি দেশ সন্ত্রাস ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। ৫টি দেশের সন্ত্রাস জঙ্গীদের থাবায় আক্রান্ত হবার আশংকা রয়েছে। অপরদিকে প্রায় ২০টি মুসলিম দেশ একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ কিংবা পরোক্ষভাবে হানাহানি উস্কে দিচ্ছে। এক কথায় ৬০টি মুসলিম দেশের মধ্যে ৩৫টি দেশ চরম অশান্তির মধ্যে অবস্থান করছে। অবশিষ্ট ২৫টি দেশ মোটামুটি অনেকটা নিরাপদ। এক্ষেত্রে আবার ২৫টি নিরাপদ দেশ নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, এদের অধিকাংশ দেশ পশ্চিমা দোসর কিংবা তাবেদার সরকার দ্বারা পরিচালিত। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, আলবেনিয়া, তাঞ্জানিয়াসহ ৯/১০টি মধ্যপন্থী দেশ রয়েছে এরা কখনো মুসলিম বিশ্ব ও মুসলিম উম্মাহ বিরোধী অপশক্তিকে সমর্থন করেনা। যুদ্ধ, সংঘাত, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে জর্জরিত মুসলিম দেশগুলো মূলত পশ্চিমা বিরোধী এমনকি এসব দেশ বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকলেও এখন নিজেরাই সন্ত্রাস কিংবা চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের শিকার।
বেশিরভাগ মুসলিম রাষ্ট্রই পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের কবলে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলমান মুসলমান মারামা'রি-কাটাকাটি আর যুদ্ধ করে যত মুসলমানের মৃত্যু হয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ঘটেনি। ত্রয়োদশ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত ওসমানীয় যা পশ্চিমা বিশ্বে অটোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত। প্রায় ৭০০ বছর উত্তর আফ্রিকা থেকে শুরু করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য ও সুদূর ইউরোপ পর্যন্ত একটি বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করেছিল। প্রথম মুরাদ কর্তৃক বলকান জয়ের মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্য বহুমহাদেশীয় সাম্রাজ্য হয়ে উঠে এবং খিলাফতের দাবিদার হয়। ১৪৫৩ সালে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের কনস্টান্টিনোপল জয় করার মাধ্যমে উসমানীয়রা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য উচ্ছেদ করে। ১৫২৬ সালে হাঙ্গেরি জয়ের পর ইউরোপের বলকান অঞ্চল সমূহ নিয়ে বড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে।১৬শ ও ১৭শ শতাব্দীতে বিশেষত সুলতান প্রথম সুলাইমানের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, উত্তরে রাশিয়া কৃষ্ণ সাগর, পশ্চিম এশিয়া, ককেসাস, উত্তর আফ্রিকা ও হর্ন অব আফ্রিকা জুড়ে ,মধ্যপ্রাচ্য ও আরব অঞ্চলসহবিস্তৃত একটি শক্তিশালী বহুজাতিক, বহুভাষিক সাম্রাজ্য ছিল। অটোমান সাম্রাজ্যের মত এত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে শাসন সেই সময়ে অন্য কোন সাম্রাজ্যের ছিল না,যে কারণে অটোমান সুলতান প্রথম সুলাইমানকে বলা হত পৃথিবীর বাদশাহ। ১৫২০ সাল থেকে ১৫৬৬ পর্যন্ত ৪৬ বছর সুলতান সুলাইমান যখন শাসন করেছেন তখন তিন মহাদেশের বাদশাহ হিসেবে তাকে কেউ মেনে নিতে অস্বীকার করার সাহস পায়নি, যারা এই দুঃসাহস করেছে তাদের পরিণতি খুব খারাপ হয়েছে। ওসমানী শাসন ব্যবস্থায় মোট ৩৭ জন খলিফা ৬২৪ বছর খিলাফত পরিচালনা করেছেন ।১৭শ শতাব্দীর শুরুতে সাম্রাজ্যে ৩৬টি প্রদেশ ও বেশ কয়েকটি অনুগত রাজ্য ছিল। এসব এলাকাকে পরে ওসমানিয় সাম্রাজ্যের সাথে একীভূত করে নেয়া হয় এবং বাকি অঞ্চলকে কিছুমাত্রায় স্বায়ত্ত্বশাসন দেয়া হয়। ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের আয়তন সর্বোচ্চ হয়, এ সময় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ৩৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের বেশি।ওসমানীয় শাসনের কেন্দ্রস্থল ছিল বর্তমানের ইস্তাম্বুল।এই সময় মুসলিম দুনিয়া অনেকটা ঐক্যবদ্ধ ছিল। এই একতা সহ্য হয় না পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর, বিশেষ করে ইংরেজ আর ফরাসিদের। শুরু হয় এই সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সূত্রপাত হয় ইংরেজ ও ফরাসিদের প্ররোচনায় বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহ। এমন একটি ষড়যন্ত্রের ফলে, সৌদি আরবের মতো একটি দেশের ১৯৩২ সালে গোড়াপত্তন হয় । আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ছিল নজদ্ নামক মরু অঞ্চলের অধিবাসী। তিনি ছিলেন আরব বিশ্বে ওসমানি খেলাফতকে বিপর্যস্ত করার কাজে নিয়োজিত ব্রিটেনের বেতনভোগী অনুচর।ব্রিটিশরা ওসমানি খেলাফত তথা অটোম্যান তুর্কি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য ইবনে সৌদকে অনুচর হিসেবে বেছে নেয় এবং এ জন্য তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার পাউন্ড স্টার্লিং ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করে। ব্রিটিশ ভারতের বোম্বাই প্রেসিডেন্সি থেকে তাকে অর্থ দিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা। বিংশ শতকের তথা গত শতকের বিশের দশকে ব্রিটেনের আরেক অনুচর হেজাজের শাসক শরিফ হুসাইনকে ব্রিটিশরাই সরিয়ে দেয় ইবনে সৌদকে ব্যবহার করে। ফলে ইবনে সৌদের রাজ্যের সীমা হেজাজ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। রক্তপাত, গণহত্যা ও প্রতারণার মাধ্যমে ইবনে সৌদ দখল করেছিল হেজাজ।১৯২৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ইবনে সউদ আগের নজদ ও বর্তমান হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Najd and Hejaz ঘোষণা করেন। চার মাস পর ২৭ মে জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom of Najd and Hejaz-কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইবনে সৌদ দখল করে ইয়েমেনেরও এক বিশাল অংশ এবং আরব উপদ্বীপের পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল-সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোও দখল করতে সক্ষম হয়।১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ সরকারের অনুচর ও সেবাদাস আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ব্রিটেনের অনুমতি নিয়ে হিজাজের নাম পরিবর্তন করে নিজ বংশের নাম অনুযায়ী এই বিশাল আরব ভূখণ্ডের নাম রাখে সৌদি আরব। সৌদি আরবই বিশ্বের একমাত্র দেশ যার নামকরণ করা হয়েছে দেশটির সংখ্যালঘু একটি গোত্রের নাম অনুসারে।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অনেকটা সাম্রাজ্য বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ওসমানীয়রা ইঙ্গ-ফরাসি শক্তির বিরুদ্ধে জার্মানদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়। কেন্দ্রীয় শক্তিধর দেশ- জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি এবং ইটালির হয়ে যুদ্ধ করে।এই যুদ্ধে জার্মানি পরা'জিত হলে ইঙ্গ-ফরাসি শ'ক্তি পুরো ওসমানীয় সাম্রাজ্য দ'খলে নেয়।আনাতোলিয়ায় নতুন প্রজাতন্ত্র হিসেবে আধুনিক তুরস্কের উদ্ভব হয়। ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর সালতানাত বিলুপ্ত করা হয় এবং শেষ সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ ১৭ নভেম্বর দেশ ছেড়ে চলে যান। সালতানাত বিলুপ্ত হলেও এসময় খিলাফত বিলুপ্ত করা হয়নি। ষষ্ঠ মুহাম্মদের স্থলে দ্বিতীয় আবদুল মজিদ খলিফার পদে বসেন।১৯২৩ সালে ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজান শহরে সম্পাদিত হওয়া চুক্তিতে মিত্রশক্তি তুরস্কের ওপর ইচ্ছা মত এমন অনেক অন্যায় শর্ত চাপিয়ে দেয় যা সুনিশ্চিত করে যে তুরস্ক তাদের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না।বলকান ও মধ্যপ্রাচ্যে সাম্রাজ্যের সাবেক অংশগুলো প্রায় ৫০টি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তুরস্কের আয়তন কমে দাঁড়ায় মাত্র ৭ লক্ষ ৮৩ হাজার বর্গ কিমিটারে। তুরস্কের ন্যাশনাল এসেম্বলি ১৯২৩ সালের ২৯ অক্টোবর তুরস্ককে প্রজাতন্ত্র ও আঙ্কারাকে এর রাজধানী ঘোষণা করে। ফলে ৬২৪ বছর পর উসমানীয় সাম্রাজ্য আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্ত হয়। ১৯২৪ সালের ৩ মার্চ খিলাফত বিলুপ্ত করা হলে সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ দেশত্যাগ করেন।ওসমানী সালতানাতের সব উত্তরাধিকাদেরকে নির্বাসিত করা হয়, কাউকে গুপ্ত হত্যা করা হয়, অনেককে নিখোঁজ করা হয়। তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই ভাবে তুরস্ক থেকে খিলাফতের নিশানাসমূহ মুছে ফেলা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজ আর ফরাসিরা মিলে সাবেক ওসমানীয় সাম্রাজ্যের বিশাল ভূখণ্ডকে নিজেদের সুবিধামতো পিঠা ভাগের মতো ভাগ করে নতুন নতুন রাষ্ট্র সৃষ্টি করে। সৃষ্টি হয় ইরাক, সিরিয়া, আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্দান, কুয়েত, কাতার, লিবিয়া, লেবানন, মিসর প্রভৃতি দেশ। এই অঞ্চলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সীমান্তরেখা টানার মূল ভিত্তি ছিল তেল সম্পদের অস্তিত্ব। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব দেশ সৃষ্টি করার সময় কোনো একটি দেশকেও তারা একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সৃষ্টি করেনি।সব রাষ্ট্রেই রাজতন্ত্র হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাবেদার বাদশাহ,আমির, শেখকে মসনদে বসানো হয়েছিল। লিবিয়ায় একজন মেষপালক গোত্রপ্রধান ইদ্রিসকে বানানো হয় বাদশাহ। মিসরে ফারুক। ইরাকে বাদশাহ বানানোর জন্য কাউকে খুঁজে না পেয়ে ফায়সাল নামের একজনকে জর্দান থেকে এনে বাদশাহর সিংহাসনে বসানো হয়। মসনদে তাবেদার অনুগত রাজা-আমির ,শেখ ,বাদশাহ থাকলে সম্পদের লুটপাটের সুবিধা হয়।
মুহাম্মদ ইদ্রিস |
ফারুক |
ধূর্ত ইংরেজ ও ফরাসিরা এটা নিশ্চিত করে, এই নতুন সৃষ্ট দেশগুলো যেন সব সময় নানা বিষয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত থাকে। এতে তাদের সুবিধা বেশি, সম্পদ লুণ্ঠন সহজ হয়। কয়েক দিন আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি হয়, যার অর্থ একে অপরের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে অনেকটা কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার মতো।তাদের সঙ্গে আগের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল, এখন শুধু তা আনুষ্ঠানিক হয়েছে। সপ্তাহ না ঘুরতেই ইসরায়েল থেকে সৌদি আরবের আকাশসীমার ওপর দিয়ে আবুধাবিতে উড়ে এলেন প্লেন ভর্তি মার্কিন সিনেটর, কংগ্রেসম্যান আর ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতারা। সৌদি আরব ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে ইসরায়েলের জন্য তাদের আকাশসীমা উন্মুক্ত। এর আগে ইসরায়েলের নির্বাচনে নেতানিয়াহুর বিজয় নিশ্চি'ত করতে সৌদি আরব অর্থ ঢেলেছে বলে সংবাদ প্রকা'শিত হয়েছিল। সৌদি আরব তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কখনো অস্বীকার করেনি। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সম্মত হয়েছে বাহরাইন।১২ সেপ্টেম্বর এ স্বীকৃতি দেয় দেশটি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ঈসা আল খলিফার সাথে এক ফোনালাপের পরে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসবাদী হামলার ১৯তম বার্ষিকীতে এ চুক্তির ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এ চুক্তির ফলে মিসর, জর্ডান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর ইসরায়েলের সাথে চতুর্থ আরব দেশ হিসেবে বাহরাইনের পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হলো।ওমান এবং সুদানও ইসরায়েলকে পুরোপুরি স্বীকৃতি দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া এ অঞ্চলের অন্যতম শক্তিশালী দেশ সৌদি আরবও এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে সম্মত হতে পারে। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সব মুসলিম রাষ্ট্রই এখনো জোরালো সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরায়েল।১৯৭২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ইসরায়েল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল।তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরায়েলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।সেই অবস্থানের পিছনে মূল বিষয় ছিল ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন।৫০ বছর পরেও ইসরায়েল প্রশ্নে বাংলাদেশের সেই অবস্থানে কোন পরিবর্তন আসেনি। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের বিশ্বের একটি দেশেই যাওয়া নিষেধ, সেটি ইসরায়েল। পাসপোর্টে সেটি স্পষ্ট করে লেখা আছে। সত্তুরের শেষে এবং আশির দশকে বাংলাদেশের অনেক তরুণ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও গিয়েছিল।
ফায়সাল |
সৌদি আরব থেকে হতাশ হয়ে ফিরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি ছুটলেন চীনে। যে চীন বছরের বছরের পর চিনের জিনজিয়াং প্রদেশে কয়েক লাখ উইঘুর মুসলমানদের ওপর চরম নির্যাতন চালাচ্ছে। চীনে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে বন্দিশিবিরে আটক ও নির্যাতনের বিষয়ে সরকারি একটি গোপন নথি গত বছর ফাঁস হয়েছে। চীন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে ওই নথিতে উঠে এসেছে। নিউইয়র্ক টাইমস এই নথির বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করে। এ ছাড়া ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশ নিজেদের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করে। তাহলে চিন কেন কাশ্মীর নিয়ে মাথা ঘামাবে? উইঘুর বিষয়ে কোনো মুসলিম দেশকে তো দেখা যায় না টুঁ শব্দটি করতে। গত বছর চীন সফরে দেশটিতে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার হরণের পক্ষে সাফাই গাইলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান । বেইজিং সফরকালে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চীনের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দুই দেশের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন চীনের প্রেসিডেন্ট । উইঘুর মুসলিমদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নকে সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে চিন। সৌদি যুবরাজের এ সফরের কিছুদিন আগেই চীনের মুসলিম বন্দিশিবিরগুলোতে ১০ লক্ষাধিক উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এগুলো বন্ধের জন্য বেইজিংয়ের প্রতি আহবান জানায় তুরস্ক। তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে , উইঘুরদের বন্দিশিবির হিসেবে ব্যবহৃত চীনের এসব বন্দিশিবির মানবতার জন্য ভয়াবহ মাত্রায় লজ্জাজনক। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানও ইতোপূর্বে উইঘুর মুসলিমদের ওপর গণহত্যার জন্য চীনকে অভিযুক্ত করেছিলেন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী চাইছেন তুরস্ক, মালয়েশিয়া আর পাকিস্তানকে নিয়ে সৌদি বলয়ের বাইরে মুসলিম দুনিয়ার আরেকটি শক্তির সৃষ্টি করতে। এখন পর্যন্ত ইমরান খান তার এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি। মুসলিম দুনিয়ার অন্যতম পরাশক্তি ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব আর তুরস্কের সম্পর্ক বেশ ভালই ছিল। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরব প্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল ১৯২৯ সালে। কিন্তু দেশ দুটির মধ্যে চলতে থাকা অম্লমধুর সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে ১৯৭৯ সালে। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্বপ্নে থাকা সৌদিকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয় ইরানের সে সময়ের ইসলামিক বিপ্লব।তেহরান সে সময় প্রকাশ্যেই সৌদি আরবের সমালোচনা করতে থাকে। অন্যদিকে সৌদি আশঙ্কা করতে থাকে ইরান এ অঞ্চলে আরো কিছু দেশে একই ধারার বিপ্লব ঘটিয়ে সম্ভবত নিজেদের বলয়ের বিস্তার ঘটাবে। এ অবস্থায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। সৌদি আরব সুন্নি মুসলিমপ্রধান দেশ। অন্যদিকে ইরান শিয়া মুসলিমপ্রধান। এ বিরোধের মূলে আছে ধর্ম, রাজনীতি, আঞ্চলিক আধিপত্যসহ আরো কিছু বিষয়। এসব নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে দশকের পর দশক ধরে চলছে টানাপড়েন। সৌদিরা যে মুসলমান তা ইরান কার্যত স্বীকার করে না। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে তেহরানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করে রিয়াদ। সে বছর ইরান তাদের দেশ থেকে কাউকে হজব্রত পালন করতে সৌদি আরবে যেতে দেয়নি। ২০১৭ সালের জুন মাসে কাতারকে অসম্মানজনক কিছু শর্ত দেয় সৌদি আরব। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোটের চাপের মুখে কাতারও নিজের জন্য সহযোগী খুঁজে নেয়। সৌদি আরব যখন কাতারের স্থলসীমান্ত অবরুদ্ধ করে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও তাদের বন্দর থেকে দোহায় পণ্যের চালান বন্ধ করে দেয় তখন কাতারকে দুই হাত বাড়িয়ে সহায়তা করে ওমান, তুরস্ক ও ইরান। সে সময় ইরানের আকাশসীমা ব্যবহার করে কাতারের বিমানগুলো। তুরস্ক সেনা পাঠিয়ে কাতারের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে। ফলে অবরোধের ছাপ কাতারের দৈনন্দিন জীবনে সেভাবে পড়েনি। কাতার, ইরান ও তুরস্কের এই জোট সৌদি আরবসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের কপালে ভাঁজ ফেলেছে। তুরস্ক ও ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নস্যাতে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে একটি বিশেষ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
একাত্তরে যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের মানুষের ওপর নৃশংস গণহত্যা চালাচ্ছিল তখন ইরাক ছাড়া বিশ্বের অন্য কোনো মুসলিমপ্রধান দেশ এর সামান্যতম নিন্দাও করেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ইরাক ১৯৭২ সালের ৮ জুলাই বাংলাদেশকে একটি সার্বভৌম দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়,প্রথম আরব দেশ হিসাবে তারা এই স্বীকৃতি দেয়। অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিমপ্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ার নেভির একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর ফেলে। তাদের নৌসে'নারা চট্টগ্রাম শহরে খোলা জিপে ঘুরে বেড়াল এটি দেখাতে যে, আমরা এসে গেছি।১৯৭১ সালের সেই যুদ্ধে সৌদি আরব পাকিস্তানকে সমর্থন করে। তার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের মুসলিম রাষ্ট্রবিরোধী এবং ইসলাম বিরোধী আখ্যা দেয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করল বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে।বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ একে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা শুরু করে। কিন্তু সৌদি আরব তখনো স্বীকৃতি প্রদান করেনি।সৌদি আরব বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর। সৌদি আরব বর্তমানে আমেরিকার হয়ে প্রতিবেশী মুসলিমপ্রধান দেশ ইয়েমেনের ওপর নিয়মিত বোমা ফেলে নিরীহ মানুষ হত্যা করে। এ পর্যন্ত ওআইসিভু'ক্ত কোনো দেশ সে সম্পর্কে কোনো উচ্চবাচ্য করেনি।২০১৪ সালের শেষ দিকে ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী সশস্ত্রগোষ্ঠী হুথি ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নেয়। একপর্যায়ে দেশ ছেড়ে সৌদিতে পালিয়ে যান দেশটির রিয়াদ সমর্থিত প্রধানমন্ত্রী। অনুগতদের ক্ষমতায় বসাতে ২০১৫ সালের মার্চের শেষ দিকে ইয়েমেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে সৌদি সামরিক জোট। এই আগ্রাসনে ইয়েমেন এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালের জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত ইয়েমেনে সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৬৭ হাজারের বেশি। অন্যদিকে ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের বা ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের প্রয়োজন মানবিক সহায়তা।সেভ দ্য চিলড্রেনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ইয়েমেনে প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এ সব শিশু মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছিল। দেশটির প্রায় ২ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগারের সুবিধা পাচ্ছে না।চলমান যুদ্ধে ঘরছাড়া হয়েছে ইয়েমেনের লাখ লাখ মানুষ। সংঘাতে ঘর ছেড়েছে দেশটির ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষ। ইউএনডিপির দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গৃহযুদ্ধ যদি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলে, তবে ইয়েমেন পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশে পরিণত হবে। তখন দেশটির মোট জনসংখ্যার ৭৯ শতাংশ চলে যাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে।ভারতের কাশ্মীর নিয়ে বাংলাদেশের কিছু মহল ছাড়া আর কারো তেমন মাথাব্যথা নেই। মিয়ানমার তাদের এথনিক ক্লিনজিংয়ের অংশ হিসেবে আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান উৎ'খা'ত করা শুরু করল। মিয়ানমার সরকার দেশটির মানচিত্র থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের গ্রামগুলো মুছে ফেলেছে। এর একটি হচ্ছে কান কিয়া। তিন বছর আগে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের এই গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর পুরো গ্রাম বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল। রাতারাতি বাংলাদেশে ১০ লাখ ঢুকে পড়ল। এখন তারা বংশ বৃদ্ধি করে প্রায় ১২ লাখ। কয়েক হাজার গেল মালয়েশিয়া আর থাইল্যান্ডে। কিছু ভারতে গিয়েছিল। থাকতে পারেনি। মিয়ানমারের এই অমানবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো মুসলিম দেশের তেমন কোনো উচ্চবাচ্য তো শোনা যায় না। তাদের দেখতে বাংলাদেশে এলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের স্ত্রী। কিছুদিন রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির হয়ে উঠল বিদেশি মেহমানদের এক আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। মিয়ানমারের সঙ্গে মুসলিমপ্রধান দেশ ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া আসিয়ানের সদস্য। এই তিনটি দেশকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কখনো এই ফোরামে কোনো উচ্চাবাচ্য করতে শোনা যায় না। বর্তমান সময়ের জটিল ভূ-রাজনীতি পর্যালোচনা করলে এটি পরিষ্কার, মুসলিম উ'ম্মা'হ বলতে বাস্তবে কিছু নেই।ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশ অভিন্ন কণ্ঠে কোনো বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবে না। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ক সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। রোহিঙ্গাদের অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে, তা মনে হয় না। সব মুসলিম দেশ ঠিক করেছে, নিজের স্বার্থের বাইরে গিয়ে অন্য কারো স্বার্থ রক্ষার জন্য তেমন কিছু করা বোকামি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন