সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পূর্ব তিমুরে মুসলমান


মো.আবু রায়হানঃতিমুর সাগরের উত্তর তীরে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত একটি দ্বীপ তিমুর।দ্বীপটি ৩০,৭৭৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। দ্বীপের নাম টাইমুর শব্দ থেকে এসেছে, মলয় ভাষাতে তিমুর শব্দের অর্থ হল পূর্ব; দ্বীপটির এরূপ নামকরণের কারণ দ্বীপটির অবস্থান। কারণ দ্বীপটি লেসা সুন্দা দ্বীপপুঞ্জের পূর্ব দিকে অবস্থিত। দ্বীপটি পূর্ব অংশে পূর্ব তিমুরের সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং পশ্চিম অংশ ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসাবে বিভক্ত। ইন্দোনেশিয়ান অংশ, পশ্চিম তিমুর নামেও পরিচিত, পশ্চিম অংশটি নুসা তেনগারা প্রদেশের অংশ। পশ্চিম তিমুরের মধ্যে অবস্থিত ইস্ট টিয়ার্সের একটি ছিটমহল রয়ে যাকে ওইকেসেস জেলা বলা হয়। দ্বীপটি শতাব্দী ধরে রাজনৈতিকভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। ডাচ ও পর্তুগিজ দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণের জন্য চুক্তির দ্বারা দ্বীপটিকে বিভক্ত করে ১৬৫১ সালে ওলন্দাজরা তিমুরের পশ্চিমে কুপাং রাজ্যটি দখল করে নেয়। এটা ছিল তিমুর দ্বীপের প্রায় অর্ধেক। তিমুরের পুবের অংশটি তখন পর্তুগিজদের দখলে। পর্তুগিজ ব্যবসায়ী ও ধর্মযাজকেরা ১৫৫১ সালেই সেখানে পৌঁছেছিলেন। ১৮৫৯ সালে পতুর্গালের সঙ্গে ওলান্দাজদের একটা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী পূর্ব তিমুর পর্তুগালের উপনিবেশ হিসেবে থেকে যায়। পশ্চিম তিমুর হয় ইন্দোনেশিয়ার অংশ। ১৯৪৫ সালে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীন হলে পশ্চিম তিমুর ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসেবেই থেকে যায়।পশ্চিম তিমুর ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ডাচ তিমুর নামে পরিচিত ছিল, যখন এটি ইন্দোনেশিয়ান তিমুর হয়ে উঠেছিল, তখন এই এলাকাটি ইন্দোনেশিয়া জাতির একটি অংশ হয়ে উঠেছিল যা পুরাতন নেদারল্যান্ডস ইস্ট ইন্ডিজ থেকে গঠিত হয়েছিল। ওলন্দাজদের কাছ থেকে ১৯৪৫ সালে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা অর্জনের পর পশ্চিম তিমুর ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসেবেই থেকে যায়। কিন্তু পূর্ব তিমুর ছিল আলাদা পর্তুগিজ উপনিবেশ। এক সময় এর নাম ছিল পর্তুগিজ তিমুর দেশটির নাম তিমুর-লেস্তে। এটা পূর্ব তিমুর নামেই বেশি পরিচিত।জাপান বাহিনী ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ পর্যন্ত সমগ্র দ্বীপটিকে দখল করে নিয়েছিল।
১৯৭৪ সালে পর্তুগিজের সামরিক অভ্যুত্থানের পর পর্তুগিজরা তিমুর থেকে প্রত্যাবর্তন শুরু করে, পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা এবং কমিউনিস্ট ফ্রেতিলিন পার্টির ভয় ইন্দোনেশিয়াকে তিমুর আক্রমণে উৎসাহ দেয়, যারা একটি স্বাধীন পূর্ব তিমুর ধারণাটির বিরোধিতা করেছিল। ১৯৭৫ সালে, পূর্ব তিমুর ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয় এবং তিমুর তিমুর বা 'টিম-টিম' নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। জাতিসংঘ,পর্তুগাল কর্তৃক এটি স্বীকৃত ছিল না।
১৯৭৫ সালে ২৮ নভেম্বর বামঘেঁষা রাজনৈতিক দল ফ্রেতিলিন পূর্ব তিমুরের একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে এর ৯ দিনের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুর দখল করে নেয়। East Timor declared itself independent from Portugal on 28 November 1975, but was invaded by neighbouring Indonesia nine days later.ইন্দোনেশিয়ার ২৭তম প্রদেশ ঘোষণা করা হয় একে। এরপর কয়েক দশক ধরে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে পূর্ব তিমুরের বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি গ্রুপের লড়াই চলে।তিমুরের অধিবাসীদের একাংশ ছিল ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে থাকার পক্ষপাতী। তাদের ইন্ধনে ইন্দোনেশিয়া সৈন্য পাঠিয়ে পূর্ব তিমুর দখল করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়া এ আগ্রাসনে ইন্দোনেশিয়াকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেয়। কারণ পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাকামীরা মার্কসবাদী হিসেবে পরিচিতি ছিল। ইন্দোনেশীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে শুরু হয় ফ্রেতিলিনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ।এতে দ্বীপে অসন্তোষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।বিভিন্ন সংঘাতে এসময় পূর্ব তিমুরের প্রায় আড়াই লাখের মতো মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু ও ঘর ছাড়া হয়েছে। ।ইন্দোনেশীয় সরকার ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট পূর্ব তিমুরে গণভোটের আয়োজন করে।এই গণভোটে ৯০ ভাগের বেশি মানুষ ভোট দেন।প্রায় ৭৮.৫% ভাগ মানুষ পূর্বে তিমুরের স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছিল। চুক্তি ও গণভোট অনুযায়ী ২০০২ সালের ২০ মে পূর্ব তিমুরের গণপরিষদে নতুন সংবিধান অনুমোদিত হয় এবং একবিংশ শতাব্দীর প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয়।এরপর পূর্ব তিমুরের নতুন নামকরণ করা হয় República Democrática de Timor-Leste বা গণপ্রজাতন্ত্রী পূর্ব তিমুর।মূলত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানেই স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। পূর্ব তিমুরে অবস্থান করছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী। আয়তন প্রায় ১৫ হাজার ৪১০ বর্গকিমি। আয়তনে আমাদের দেশের প্রায় এক-দশমাংশ যা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তনের সমান। লোকসংখ্যা ১২ লাখের মতো।দেশটির প্রায় মোট জনসংখ্যার ৯৬.৯% ক্যাথলিক খ্রিস্টান; ২.২% প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টান; ০.৩% ইসলাম ধর্মের এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী ০.৬% অধিবাসী।হিন্দু-বৌদ্ধ নেই বললেই চলে। According to a 2005 World Bank report, 98 percent of the population is Catholic, 1 percent Protestant, and less than 1 percent Muslim. Most citizens also retain some vestiges of animistic beliefs and practices, which they have come to regard as more cultural than religious. According to a 2005 World Bank report, 98 percent of the population is Catholic, 1 percent Protestant, and less than 1 percent Muslim. Most citizens also retain some vestiges of animistic beliefs and practices, which they have come to regard as more cultural than religiousIn 2010, the Association of Religion Data Archives reported that according to the World Christian Database, Muslims made up 3.6 percent of the population.. Islam is a minority religion in East Timor. The US State Department and the CIA World Factbook estimate that Muslims make up 0.2% of the population. East Timor's first prime minister, Mari Alkatiri, is a Sunni Muslim.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...