সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

থাইল্যান্ডে ইসলাম ও মুসলিম



মো. আবু রায়হানঃথাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র।দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র দেশ থাইল্যান্ড যে দেশটি কোন ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়নি।১৭৮২ সাল থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত দেশটিতে পরম রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। ১৯৩২ সালে বিদ্রোহীরা একটি অভ্যুত্থান ঘটায় এবং দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত থাইল্যান্ড বহু সামরিক ও বেসামরিক সরকারের অধীনে শাসিত হয়েছে। ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত দেশটি শ্যামদেশ নামে পরিচিত ছিল। ঐ বছর নাম পরিবর্তন করে থাইল্যান্ড রাখা হয়। তবে ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে আবারও একে শ্যামদেশ নামে ডাকা হত। ১৯৪৯ সালে দ্বিতীয়বারের মত থাইল্যান্ড নামটি গ্রহণ করা হয়। থাইল্যান্ডের বৃহত্তম শহর ও রাজধানীর নাম ব্যাংকক।৫,১৪,০০০ বর্গকিলোমিটারের রাজতন্ত্রের দেশ থাইল্যান্ডে ৭ কোটি ৫০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৭৫ লাখ মুসলিম অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ।বৌদ্ধ ৮৭ শতাংশ, খৃষ্টান ০.৭২ শতাংশ এবং অন্যান্য ০.০৮ শতাংশ। According to the 2015 census, Thailand has 2,892,311 Muslims, or 4.29% of the total population. 2,227,613 of these Muslims are concentrated in the southern region of the country, where they represent up to 24.33% of the population.মুসলিমরা থাইল্যান্ডের বৃহত্তম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ।থাইল্যান্ডে রাজকীয়ভাবে পাঁচটি ধর্মকে সহযোগিতা করা হয়।এগুলো হলো বৌদ্ধ, ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও শিখ।অন্যান্য আঞ্চলিক লোক বিশ্বাসের ধর্মাবলম্বীরাও এখানে স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম পালন করতে পারেন।যাদের বেশির ভাগই বাস করেন গ্রামাঞ্চলে।গোটা থাইল্যান্ডে মসজিদের সংখ্যা তিন হাজার ৪৯৪ টি। There are approximately 2,000 mosques in Thailand, about 100 of which are in Bangkok. Some 200 Muslim schools offer secular as well as religious instruction.শুধু ব্যাংককেই রয়েছে ১৭০টি মসজিদ। নামাজির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।প্রাচীন কয়েকটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্রায় ৩শ’ বছর পূর্বে। এসব মসজিদের প্রায় সবগুলোর সঙ্গেই রয়েছে মাদ্রাসা। থাইল্যান্ডের মসজিদে আওয়াজ করেই মাইকে আজান দেওয়া হয়।দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতও চলছে পুরোদমে। থাইল্যান্ডে সাংবিধানিকভাবে ধর্মচর্চা, ধর্মশিক্ষা ও ধর্মপ্রচারে কোনো বাধা নেই।
রাজকীয় থাইল্যান্ডের সাথে ইসলামের সম্পর্ক ঐতিহাসিক সূত্রে গাঁথা। শতশত বছর ধরে আরবদের সাথে থাইল্যান্ডের আছে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সে সম্পর্ক ইসলাম আগমনের পর আরো গভীর ও উন্নত হয়।আরব ব্যবসায়ী এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিম অভিযানের মাধ্যমে এদেশে ইসলামের বিস্তার ঘটে। রাজা সুকুথাইয়ের (১২৫৭-১৩৭৭) সময় হতে আরবরা থাইল্যান্ডের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বসবাস শুরু করেন। ১৩৫০-১৭৬৭ সময়কালে ইরান, মালয় ও ইন্দোনেশীয় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অনেকে বর্তমান থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অংশে বসবাস শুরু করেন এবং কিংডম অব সিয়ামের সার্বিক সহযোগিতায় তারা আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় সহযোগিতা পেয়ে আসছেন। ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দ ইসলামের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়।ইরানের দুই ভাই থাইল্যান্ডে ইসলাম বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। ইসলাম প্রচারে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী এই দুই ভাইয়ের নাম হলো ‘শায়খ আহমাদ কোমি’ এবং শায়খ সায়িদ কোমি’। তাদের প্রভাবের একটা নিদর্শন হলো খ্রিষ্টিয় ১৬৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিখ্যাত মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল অয়ুদিয়া শহরে।ইসলাম প্রচারক শায়খ আহমদ খুমী আরব ও পারস্যের সাথে অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। শায়খ আহমদ খুমীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য কিং তাকে চুলারাজামনটি’ বা শায়খুল ইসলাম উপাধিতে ভূষিত করেন। থাইল্যান্ডে ইসলামী শিক্ষা ও ধর্মীয় বিষয়াবলী কিং-এর পক্ষ থেকে তিনি দেখাশুনা করতেন। এর পর থেকে কিংডম অব থাইল্যান্ডের সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক কখনো খারাপ হয়নি। ট্যুরিস্ট রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাওয়ার পর ভ্রমণকারীদের একটি বিরাট অংশ আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে থাইল্যান্ডে আসতে থাকেন। আর থাইল্যান্ডের কৃষিজাতপণ্যের বিরাট একটি অংশ বিভিন্ন মুসলিম দেশে রফতানি হয়ে থাকে। আরব, পাঠান, মালয়, বার্মিজ, বাঙালি, কম্বোডিয়া, ভারত, মধ্য এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মুসলিমরা অধিকাংশ দক্ষিণে এবং চাইনিজ বংশোদ্ভূত হাউ মুসলমানরা অধিকাংশ থাইল্যান্ডের উত্তর প্রদেশগুলোতে বসবাস করেন। চীনের ইউনান প্রদেশের বংশোদ্ভূত মুসলমানদের চেয়ে শিক্ষা-দীক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক এগিয়ে আছেন তারা।
সদ্য প্রয়াত কিং অব থাইল্যান্ড ভুমিবল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল থাই বাসীর কাছে অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি সকল ধর্মের লোকদের সমান চোখে দেখতেন। তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ঈদে মিলাদুন্নবী অনুষ্ঠান থাই মুসলমানদের কাছে একটি বড় ধর্মীয় পার্বণ। সেন্ট্রাল ইসলামিক কমিটি অব থাইল্যান্ড মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ যা রাজা কর্তৃক স্বীকৃত এবং ইসলামী শিক্ষা, হজ, মসজিদ ব্যবস্থাপনা, শরীয়া কোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজাকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। চিয়াংমাইয়ে এক চীনা মসজিদ এবছর শতবর্ষ উদযাপনের কথা ছিল; কিন্তু রাজা ভুমিবলের মৃত্যুর কারণে এ শতবর্ষ অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
বিংশ শতাব্দির শুরুতে থাইল্যান্ডের মুসলমানরাও ইসলামী সংস্কারকামী আন্দোলনের প্রভাবে বিশেষ করে মুহাম্মদ আবদুহ’র চিন্তাধারার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছিল। এ সময় আহমাদ ওহাব তাঁর সংস্কারমূলক চিন্তাধারার সমন্বয়ে একটি বই লেখেন। এ বইটির আদর্শ ও চিন্তা চেতনাগুলো ছিল মুহাম্মদ আবদুহ এবং রাশিদ রেযার চিন্তাধারারই বহিপ্রকাশমাত্র। হল্যান্ডি উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো ছিল মুহাম্মাদিয়া আন্দোলনের ছাঁচে ঢালা। তাঁকে যখন ইন্দোনেশিয়া থেকে থাইল্যান্ডে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল তখন তিনি সক্ষম হয়েছিলেন প্রচুর ভক্ত ও সমর্থক জোটাতে। তিনি ইসলামী সংস্কারমূলক সর্বপ্রথম যে ফ্রন্টটি গড়ে তুলেছিলেন, সেটির নাম ছিল ‘আনসারুস সুন্নাহ’। ১৯৬০ এর দশকে মুসলমানদের ওপর যখন সরকারী চাপ বেড়ে গিয়েছিল, তখন পাত্তানি লিবারেশন ফ্রন্ট গড়ে তোলেন। একইভাবে ১৯৬৮ সালে ‘পাত্তানি সম্মিলিত স্বাধীনতা সংস্থা’ নামে আরো একিটি প্রন্ট তিনি গড়ে তুলেছিলেন। তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় মুসলমান অধ্যুষিত চারটি প্রদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭০ এবং ১৯৮০’র দশকগুলোতে থাইল্যান্ডে ইসলামী জাগরণমূলক আন্দোলনের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। গেল দুই দশকেও মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামী জাগরণমূলক আন্দোলনের সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে গিয়েছিল একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। তারা ‘দাওয়া’ আন্দোলনের ছকে এবং আঙ্গিকে মূলত ইসলামী কার্যক্রমই পরিচালনা করে গেছেন। এই আন্দোলন ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল এবং তারা বিভিন্ন ইসলামী দেশকে সাহায্য সহযোগিতাও করে গিয়েছিল।
দেশটির তিনটি প্রদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে বিবেচিত। থাইল্যান্ডের মুসলিম প্রধান তিনটি রাজ্য হলো- পাতানি, নারাথিওয়াট ও ইয়ালা।এগুলোরমধ্যে অন্যতম ইয়ালা। সেখানকার মোট জনগোষ্ঠীর ৭৫ শতাংশ মুসলিম।উল্লেখ্য, পাতানি, নারাথিওয়াট ও ইয়ালা এই তিন প্রদেশকে পাতানি অঞ্চল বলা হয়। থাইরা ১৭৮৫ সালে সাবেক পাতানি সুলতানাত দখল এবং সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত অঞ্চলটি শাসন করে আসছে। ১৯০৯ সালে এ্যাংলো-শ্যাম চুক্তির মধ্যে এই অঞ্চলে থাইল্যান্ডের মালিকানা নিশ্চিত হয়।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক আদমশুমারী অনুযায়ী থাইল্যান্ডের মুসলিম প্রধান তিনটি রাজ্য পাতানি, নারাথিওয়াট ও ইয়ালার জনসংখ্যা। পাতানি মুসলিম ৫ লাখ, বৌদ্ধ ১ লাখ ৩০ হাজার ও খ্রিস্টান ৪ হাজার; নারাথিওয়াট মুসলিম ৬ লাখ, বৌদ্ধ ১ লাখ ও খ্রিস্টান ৩ হাজার এবং ইয়ালা মুসলিম ৩ লাখ, বৌদ্ধ ২ লাখ ও খ্রিস্টান ২ হাজার। অর্থাৎ এই তিনটি প্রদেশে থাইল্যান্ডের মোট মুসলিম জনসংখ্যার ১৮ শতাংশ বাস করে।মালয়েশিয়া সংলগ্ন সাতুন প্রদেশেও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।চারটি প্রদেশেই মুসলমান জনসংখ্যা বেশি। থাইল্যান্ডের ৮০% মুসলমান এ অংশে বাস করে।ন্যাশন স্টেট গঠনের সময় কেলানতান মালয়েশিয়ায়, অন্যদিকে ফাতানি, ইয়ালা, নারাথাবি ও সাটুন প্রদেশ থাইল্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়।থাই কিং-এর সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার পরও এ রাজ্যগুলো ভাষা ও শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের স্থানীয় ও ধর্মীয় ধারাকে প্রাধান্য দিত এবং কেন্দ্রীয় সরকার এর স্বীকৃতিও দিয়ে আসছে; কিন্তু চল্লিশের দশকে থাইভাষা বাধ্যতামূলক করা এবং স্থানীয় ধর্মীয় আইন-কানুন শিথিল করার পর উল্লেখিত চারটি প্রদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে কোনো কোনো গ্রুপ স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধাবিত করতে চেয়েছিল। এখনো এতদঞ্চলে উত্তেজনা বিদ্যমান।২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে দক্ষিণের মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী চারটি মুসলিম প্রধান প্রদেশে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়। দেশটির ৭৬টি প্রদেশের মধ্যে এই চার প্রদেশের অধিবাসীদের বেশিরভাগ মালয় ভাষাভাষী। এখানকার অধিবাসী মালয় ভাষার ইয়াওই শাখায় কথা বলে। থাই ও ইয়াও ভাষার অধিবাসীরা পরস্পরের ভাষা বোঝে না। মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য, নিরাপত্তা বাহিনীর হয়রানি, হত্যা, গুমসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সোংকা, পাতানি, ইয়ালা ও নারাথিওয়াট প্রদেশে এই স্বাধীনতা আন্দোলন চলছে ।মাঝেমধ্যে স্থানীয় বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলমানদের সহিংস ঘটনা ঘটে।ব্যাংকক পোস্ট দৈনিকের হিসেবে ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ঐ অঞ্চলে সহিংসতায় কমপক্ষে সাড়ে ছয় হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে একটি স্বাধীন ইসলামি খেলাফত গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েকটি ইসলামিগোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে৷ সরকার তাদের কঠোরভাবে দমন করতে চায়৷ ফলে সহিংসতা তৈরি হয়৷ তবে মারা যাওয়া প্রতি দশজনের নয়জনই সাধারণ নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ শ্রীলংকা, মিয়ানমারের মতো থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও সংঘাতের একটি অংশ৷ ২০১৫ সালের অক্টোবরে থাইল্যান্ডের একজন জনপ্রিয় বৌদ্ধ ভিক্ষু ফেসবুকে বলেছিলেন, একজন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করলে তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটি মসজিদ পুড়িয়ে দেয়া উচিত৷ এই ঘোষণার পর ঐ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে সন্ন্যাসী সম্প্রদায় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷সরকারের সঙ্গে মুসলিম নেতাদের শান্তি আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।সরকার এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তরিক আছে বলেই প্রতীয়মান।২০১৫ সালে উত্তর থাইল্যান্ডের রাজধানী শহর মুয়াং নান-এ একটি মসজিদ নির্মাণ পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানাতে প্রায় ৮০০ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে একজন বৌদ্ধ ধর্মযাজক প্রাদেশিক কর্মকর্তার হাতে প্রতিবাদপত্র হস্তান্তর করেন। থাইল্যান্ডের দক্ষিণ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে, যেখানে মুসলমানেরা সংখ্যাগুরু, সেখানে প্রাদেশিক ইসলামী কমিটিসমূহ সীমত পরিসরে পারিবারিক, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত শালিশ পরিচালনা করতে পারে।রাজধানী ব্যাংককের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিংবা সুপারমার্কেটে অনেক সময় দেখা মেলে মুসলিম নারীদের। খুব সহজেই চিনে নেওয়া যায় মুসলিমদের। কারণ থাই মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরে থাকেন। থাই মুসলিম নারীরা সবসময় হিজাব পরেই থাকেন। ঘরে-বাইরে হিজাব পরেই দৈনন্দিন কাজকর্ম ও ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যাবে, থাইল্যান্ডের মুসলিম নারীদের মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্যও। সে যেন এক ভিন্ন জগৎ!থাইল্যান্ডের মুসলিম মহিলা পুলিশ কর্মকর্তারা ডিউটি পালনের সময় হিজাব বা মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...