সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুরস্ক ইসরায়েল সম্পর্ক





মো আবু রায়হানঃতুরস্ক ইসরায়েলের সম্পর্ক ওপেন সিক্রেট বিষয়। যতই তুরস্ক ও এরদোয়ান ইসরায়েলের সমালোচনা করুক না কেন, দেশ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক বেশ পুরনো ও গভীর। যদিও মাঝেমধ্যে তুরস্ক ও ইসরায়েলের সম্পর্কে বিভিন্ন ইসুতে টানাপড়েন দেখা গেছে। এরদোয়ানের উদার ইসলামি নীতি ও কৌশলের কারণে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক অটুট রাখা সম্ভব হয়েছে। এতো শত ভালো কাজ করার পরও ইসরায়েলের সঙ্গে এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠতার কারণে তাকে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এজন্য এরদোয়ানকে বলা হয়েছে ইহুদীদের দালাল।কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কৌশলের জন্য এরদোয়ান সমভাবে প্রশংসিত। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অধিকার আদায়ে এরদোয়ান অবিসংবাদিত ও মুসলিম বিশ্বের যেন সুলতান।
মুসলিম বিশ্বে সর্বপ্রথম তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন মুস্তফা কামাল পাশা। ১৯২৮ সালে দেশটির শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম বিলুপ্তির সংশোধনী বিল চালু করে সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠা করা হয়।১৯৪৮ সালে অবৈধ দখলদার ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পরের বছর মার্চ মাসে মুসলিম বিশ্বের প্রথম দেশ- তুরস্ক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়।তাদের এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ভিত্তি ছিল সামরিক ও কূটনৈতিক। এখন তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে, দুদেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতাও আছে অনেক ক্ষেত্রে। তুরস্কের পর ইসরায়েলের সঙ্গে সর্বপ্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী দেশ ইরান। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের মিত্রতা শত্রুতায় রূপ নিয়েছে, সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তুরস্কে এরদোয়ান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরও ইসরায়েলের সঙ্গে তার দেশের পুরনো কূটনৈতিক সম্পর্ক অটুট ছিল। এমনকি ২০০৫ সালে এরদোয়ান ইসরায়েল সফর করেন এবং তুর্কি ও ইহুদি নেতারা ইরানের পারমাণবিক ক্ষমতা অর্জনের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে একটি যৌথ বিবৃতিও জারি করেন।
১৯৯৬ সালে তুরস্ক-ইসরায়েল এর মধ্যে একটি সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি হয়েছিল। সে চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তুরস্কের সেনা বাহিনীর কাছে এম ৬০ ট্যাঙ্ক, এফ ৪ এবং এফ ৫ জঙ্গি জেট বিমান বিক্রি করতে পারতো। এক সময় দেশ দুটির মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়াও অনুষ্ঠিত হতো। সামরিক মহড়ার জন্য তুরস্কের ভূখণ্ড ব্যবহারের অনুমতিও ছিল ইসরায়েলের।
২০০৭ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী শিমন পেরেজ তুরস্কে শুধু সফরই করেননি; বরং তাকে তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল এসেম্বিলিতে ভাষণেরও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী তুরস্কের একটি ত্রাণবাহী নৌবহরে ইসরায়েলি কমান্ডোদের হামলায় তুরষ্কের নাগরিক হতাহতের ঘটনার পর দেশ দুটির মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়।
গাজার সমুদ্রসীমায় ওই অভিযানকে তুরস্ক গণহত্যা ও জলদস্যুতা বলে বর্ণনা করেছিল। গাজা ফ্লোটিলায় হামলার ঘটনায় ইসরায়েল-তুরস্ক সম্পর্কের আরো অবনতি হয়। কয়েক বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েনই থেকে যায়। অবশেষে ২০১৬ সালে গোপন বৈঠকের ফলে ইসরায়েল-তুরস্ক কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হয়।
২০১৭ সালে আমেরিকা জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার পরে এক প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দেয় কিন্ত বাস্তবে ছিন্ন করেনি।
তুরস্ক অতীতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে, জেনারেল পারভেজ মোশাররফের শাসনামলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা তুরস্কে ওই দেশের নেতৃবৃন্দের আগ্রহে এ বিষয়ে একটি সভাও করেছে।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে ইসরায়েলে চিকিৎসা সামগ্রী দিয়েছে তুরস্ক। এসব সহায়তা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে, ফেইস মাস্ক, সুরক্ষা পোশাক ও জীবাণুমুক্ত গ্লোভস।দ্য ইকোনমিস্টের সাংবাদিক অম্বরিন জামানের মতে, মুসলিম বিশ্বে তুরস্কই হল, ইসরায়েলের একমাত্র বন্ধু দেশ কিন্তু এখন আর সেটা বলা যাবে না।তুরস্কের সরকার যেভাবে ইদানীং প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে, সেটা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর একটা সচেতন সিদ্ধান্ত – আর এতে আরব বিশ্বের রাজপথে তুরস্ক দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, সাধারণ আরবরা তুরস্কের ভূমিকাকে তারিফ করছেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...