রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বিতর্ক
মো আবু রায়হান:সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা চালু করার দাবিতে ১০ জনকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশটি পাওয়ার দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা লেখা শুরু করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক জনগণের পক্ষে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে এমনটি বলা হয়েছে।
শুধু কী বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে ?এর উত্তর চলুন জেনে আসি।সারা বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ২০ ভাগ দেশের রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে। ৪৩ টি দেশে ধর্মকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় গবেষণা সংস্থা পিউ’র তথ্য মতে, বিশ্বের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। বিশ্বের ১২০টিরও বেশি দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান থাকা সত্ত্বেও এসব দেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম নয়। ২৯টি দেশে মুসলমানরা সংখ্যায় কম হলেও তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ২৭ টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৩০ কোটি। এরমধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে মুসলিম জনসংখ্যা।মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং উত্তর ইউরোপের ৪৩টি দেশে অফিসিয়ালি রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। বিশ্বের যেসব দেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম, সে দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, কাতার, জর্ডান, মালদ্বীপ, ব্রুনাই, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, মিসর, মরক্কো, সোমালিয়া, লিবিয়া, কোমোরোস, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, জিবুতি ও মৌরিতানিয়া। ভুটান ও কম্বোডিয়ায় রাষ্ট্রধর্ম হল বৌদ্ধ এবং ইসরাইলের রাষ্ট্রধর্ম ইহুদি। তবে সারাবিশ্বের কোনো দেশেই হিন্দুধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের মধ্যে ১৩টিতে রাষ্ট্রধর্ম খ্রিস্টান। বিশ্বের ৪০টি দেশের মধ্যে ২৮টি দেশ খ্রিস্টান ধর্ম বিশ্বাসকে পছন্দ করে থাকে।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (Secularism) বলতে বোঝায় পার্থিব,ইহজগতিক, ধর্মহীনতা। রাষ্ট্র আর ধর্মকে পৃথকরূপে প্রকাশ করা । কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করাকে বোঝানো হয়।ম্যাকিয়াভেলির(১৪৬৯-১৫২৭)'আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জনক' নামে পরিচিত। একজন রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন।ম্যাকিয়াভেলি চার্চ ও ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কহীন সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ রাস্ট্রের কথা বলেছেন।ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রদর্শনের জনক বলা হয় তাকে।ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম” শব্দটি ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব ইলিয়ক (১৮১৭-১৯০৪) প্রথম ব্যবহার করেন। জর্জ জ্যাকব ধর্মের কোনো রকম সমালোচনা ছাড়া, সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য তার এই ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা প্রকাশ করেন। ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- Rejects all forms of religious faith অর্থাৎ এটি হলো এমন দর্শন যা সকল প্রকার ধর্মবিশ্বাসকে নাকচ করে দেয়। Encyclopedia of Britanica তে বলা হয়েছে যে, যারা কোন ধর্মের অন্তর্গত নয়, কোন ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয়, কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয় এবং আধ্যাত্মিকতা, জবাবদিহিতা ও পবিত্রতা বিরোধী তাদেরকেই বলা হয় ধর্মনিরপেক্ষ। chambers dictionary -এর মতে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হচ্ছে- The belief that the state morals, education should be independent of religion. অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হলো এমন এক বিশ্বাস যার মতে, রাষ্ট্র, নৈতিক, শিক্ষা ইত্যাদি সবকিছু ধর্মমুক্ত থাকবে। Oxford dictonary -এর মতে, আল্লাহতে বিশ্বাস বা পরকালে বিশ্বাসনির্ভর ত্যাগ করে মানব জাতির বর্তমান কল্যাণ চিন্তার ওপর ভিত্তি করে নৈতিকতা গড়ে উঠবে। ড. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল অল্প খারাপই নয়, এটি সত্য বিধ্বংসী ইবলিসী কালকূট'।
মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানের পুরো সময়কালে (১৯৪৭-১৯৭১) ধর্ম ও রাষ্ট্র ছিল অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। অনেক সমালোচকের দৃষ্টিতে পাকিস্তান ছিল ধর্মরাষ্ট্র। বস্ত্তত ১৯৫৬ ও ১৯৬২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ও আল্লাহ্কে পাকিস্তানের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ঘোষণা এবং আইন পরিষদের উপর কোরআন ও সুন্নাহ্র ভিত্তিতে আইন প্রণয়ন বাধ্যতামূলক করা, এগুলোই পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিকতার সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ছিল যথেষ্ট উদার। নীতিপ্রণেতারা ইসলামী বিধানের বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা যাবে না ঘোষণা করলেও বাস্তবে সরাসরি শরীয়া আইন লঙ্ঘন করে প্রায়শই আইন প্রণয়ন করেন। উদাহরণ স্বরূপ ছিল ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ।সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করা হয়।যা কার্যকর হয় ঐ বছরেরই ১৬ ডিসেম্বর থেকে৷ সেই সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চারটি মূলনীতি ছিল – ১. জাতীয়তাবাদ, ২. গণতন্ত্র, ৩. সমাজতন্ত্র এবং ৪. ধর্মনিরপেক্ষতা৷ অর্থাৎ সংবিধানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা৷
লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের পর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, নির্যাতন এবং বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমরা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খৃস্টানসহ অন্যান্য নাগরিকরা এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত-রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের সার্বিক সহযোগিতায় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আমাদের ১৯৭২ সালের পবিত্র সংবিধানে স্বাধীনতার চেতনাসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি ছিল জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূলনীতিসমূহ পরিবর্তন করা হয়। যা স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় এবং সংখ্যালঘু জনগণ মনেপ্রাণে গ্রহণ করেনি। সংবিধানে ২ক অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রধর্ম সংযোজনের ফলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে।’ গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন : “বাংলাদেশের যে ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ ঘোষিত হলো, তা ইসলামহীন সেক্যুলারিজম নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ইসলামসংক্রান্ত অনুষ্ঠান একটু বেশিই যেন প্রচারিত হতো। হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে বিশেষ কিছুই হতো না। কিন্তু কেন তা হতো? তা হতো এই জন্য যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান শ্রোতার কাছে ইসলামী অনুষ্ঠানের বিশেষ আবেদন ছিল। যার বিশেষ আবেদন থাকে, তার প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। বাংলাদেশ কি সেদিন ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে চেয়েছিল, নাকি অসাম্প্রদায়িক হতে চেয়েছিল? সেদিন বাংলাদেশের ধর্মাবলম্বী-নির্বিশেষে বাঙালি জনগণ চেয়েছিল অতীতের সাম্প্রদায়িক বিষ ধুয়ে-মুছে একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে—সেক্যুলার হতে নয়।” (সলিমুল্লাহ খান সম্পাদিত বেহাত বিপ্লব ১৯৭১, আগামী প্রকাশনী, দ্বিতীয় সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ, ডিসেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২২৮)
বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর কয়েক বছরের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি ক্রমেই দুর্বল হতে শুরু করে। ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামিক রাষ্ট্রসংস্থার সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের যোগদান থেকেই এই প্রক্রিয়ার সূচনা। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রথম মৌলিক পরিবর্তন ঘটে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (১৯৭৭-১৯৮১) ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের সংসদ চারটি মূল ভিত্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে। সংশোধনীটি ধর্ম নিরপেক্ষ বিষয় টিকে" সকল কাজের ভিত্তি হইবে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর " দ্বারা পুনস্থাপন করে এবং ধর্ম স্বাধীনতার তথ্যটি মুছে ফেলেন। তখন সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম উল্লেখ ছিল না। জিয়াউর রহমান৷ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে প্রস্তাবনার আগেই ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম'(দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করলাম) এই কথাটি সংযোজন করা হয়৷ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ (১৯৮২-১৯৯০) ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাস হয়। সেই সংশোধনীতে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়। ওই সংশোধনীতে সংবিধানের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের পরেই ২(ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও প্রজাতন্ত্রে শান্তিতে পালন করা যাইবে।’ তখন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতা করেছিল৷ এমনকি তারা একদিন হরতালও ডেকেছিল৷ তারা বলেছিল, কোনোদিন যদি তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে এরশাদের এ সব কাজকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে এবং আর্টিকেল ২(এ)-টিও বাতিল করা হবে৷ ওই বছরই এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি’র পক্ষে কয়েকজন নাগরিক রিট আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল, ড. কামাল উদ্দিন হোসেন, কে এম সোবহান, বিচারপতি দেবেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য, কলিম শরাফী, অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ, সিআর দত্ত প্রমূখ৷ তাদের অভিযোগ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার মাধ্যমে সংবিধানের অসাম্প্রদয়িক চরিত্রকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে৷ এর মাধ্যমে একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে৷ সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন করা যায় না, যা করা হয়েছে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে স্থান দিয়ে৷১৯৮৮ সালের রিট আবেদনের সঙ্গে ২৩ বছর পর ২০১১ সালে দাখিল করা এক সম্পূরক আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ওই বছরের ৮ জুন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করা সংবলিত সংবিধানের ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পরে একই বছরের ২৫ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখেই সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা হয়। ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে সে বছরই হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন করা হলে হাইকোর্ট ওই বছরের ১ ডিসেম্বর পৃথক রুল জারি করেন। উভয় রুলের ওপর শুনানির জন্য রিট আবেদনকারী পক্ষ হাইকোর্টে একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করার জন্য আবেদন করে। প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য তিন সদস্যের একটি বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখ বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানির জন্য কার্যতালিকাভুক্ত হয়। ২৮ মার্চ ২০১৭ মহামান্য আদালত রিটটি খারিজ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখেন।বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯০ দশমিক ৫ শতাংশ মুসলমান, ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হিন্দু, শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বৌদ্ধ, শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং ০১ শতাংশ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। ঐতিহাসিক এ রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় আবেগের প্রতি লক্ষ রাখা হয়েছে। এর পেছনেও যে আওয়ামী লীগ সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা কাছ করেছে, তা বলা বাহুল্য। কেননা আমরা জানি, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার ২০১১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করে। কিন্তু ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ রেখেই সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হয়। এ ছাড়া সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপিকে চেয়ারম্যান করে সংবিধান সংশোধনের জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিও ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ ও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ রেখেই সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ পেশ করে। ২০১১ সালের ২৫ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম সংশ্লিষ্ট সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা হয়। এতে বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করিবে।’ রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতি সংবিধানের এক ধরনের সৌজন্য বা আলঙ্কারিক স্বীকৃতি বলা যেতে পারে।
অনেকে বলার চেষ্টা করেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার মূল কারণ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম৷ অথচ সংবিধানের ৩৯ ও ৪১ ধারা অনুযায়ী সকলেরই এখানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে৷ বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কোনো রাষ্ট্রধর্ম নেই৷ দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু৷ বাকি ২০ শতাংশ সংখ্যালঘু, যাদের মধ্যে ১৪ দশমিক দুই শতাংশ মুসলমান৷ রাষ্ট্রধর্মহীন দেশটিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা গতবছর আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৭ শতাংশ৷ সরকারি হিসেবে, ২০১৫ সালে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার ৭৫১টি ঘটনায় কমপক্ষে ৯৭ জন প্রাণ হারিয়েছে, আহত ২,২৬৪৷
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন