সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামে পশুপ্রেম ও তথাকথিত ভন্ড পশুপ্রেমী




মো.আবু রায়হানঃপ্রতি বছর ঈদুল আজহা এলে তথাকথিত পশুপ্রেমীদের পশুকুলের জন্য মায়াকান্না বেড়ে যায়।১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনে একটি সংগঠন প্রাণীদের অধিকার বিষয়ে সোচ্চার হয়। ধীরে ধীরে তাদের চিন্তা-চেতনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশে দেশে। বলা যায়, তখন থেকেই সভ্য দুনিয়া পশু-পাখির প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শনে মনোযোগী হয়েছে। ইংরেজদের আমলে বাস্তবায়ন করা 'পশু নির্যাতন আইন-১৯২০' এ উল্লেখ আছে, কেউ অপ্রয়োজনীয় নির্যাতনের দ্বারা পশু হত্যা করলে 'পশু নির্যাতন আইন-১৯২০ ধারা ৭' অনুযায়ী তার শাস্তি ২০০ (দুই শত) টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৬ (ছয়) মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে। এসব ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার 'প্রাণী কল্যাণ আইন-২০১৬ পাস করে। এই আইনে প্রাণী (পশু) হত্যা, ও পশুর সাথে নিষ্ঠুর আচরণ ও অতিরিক্ত কঠোর পরিশ্রমে বাধ্য করলে জেল ও জরিমানার বিধান রাখা রয়েছে।১৪শ বছর পূর্বে পশু-পাখির অধিকার রক্ষায় ইসলাম নির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। প্রাণীদের অধিকার বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি শরয়ি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
ডেইরি খামারে বেশি বেশি দুধ উৎপাদনের জন্য গরুর ওপর নির্মমতা চালানো হয়। পোল্ট্রি ফার্মে বেশি হাঁস মুরগি ও ডিম উৎপাদনের জন্য নির্মমতা চালানো হয়। ফার্মিংয়ের নাম করে প্রতিবছর যে লাখ লাখ পশুকে হত্যা করা হয়। বনজঙ্গল কেটে বন্য পশুদের হত্যা করা হয়।চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রোলিয়াতে ১০ হাজার উট নিধন করা হলো।হিন্দুরাও তাদের মা কালী/ মনসা বা ঐ ধরনের দেবতা বা দেবীদের নামে পাঠা বলি দেয় আর তাতে নাকি দেবতা বা দেবী সন্তুষ্ট হয়।কিছু পুজায় এক সাথে শত শত হাজার হাজার পাঠা বলি দেয়। রক্তের বন্যা বয়ে যায় পুজার স্থানের আশপাশ।যারা সেখানে যায় তাদের শরীর হয়ে যায় রক্তে মাখামাখি। বড় বিভৎস লাগে দেখতে। ভারতে কাপালিক সম্প্রদায় বলে একটা সম্প্রদায় ছিল এক সময় তারা তাদের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করতে তাদের দেবী ভৈরবীর সামনে নরবলি দিতো।যে গরুর মাংসের জন্য এত মারকাটারি অবস্থা, যে গরু-মাংসের জন্য এত হানাহানি, রক্তক্ষয়, রক্তচক্ষু, জানেন কি সেই গরুর মাংস রপ্তানিতে ভারতের স্থান কত নম্বরে? গরুর মাংস রপ্তানি করে রীতিমতো আয় করে এই দেশ। পৃথিবীতে যত গরুর মাংস রপ্তানি হয়, তার ১৬ শতাংশই ভারত থেকে রপ্তানি হয়। ২০১৬ সালে ভারত ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার টন মাংস রপ্তানি করে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই স্থান ভারত ধরে রাখতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সমীক্ষা। সেই পরিমাণ বেড়ে ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টন পর্যন্তও হতে পারে বলে সূত্রের খবর।গত দু'বছরে অনেকটাই কমেছে গোমাংস বিক্রি তারপরেও দু নম্বর গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ ভারত ৷ ২০১৭ সালে ভারত ১.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন গো মাংস রপ্তানি করেছিল ৷ তার তুলনায় ২০১৯ সালে সেই রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন ৷ এই তালিকার এক নম্বর দেশ ব্রাজিল ৷ তারা ২.২ মিলিয়ন মেট্রিক টন মাংস রপ্তানি করেছে ৷আসিফ নজরুল স্যার গত বছর একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, “সারা বছর খায় গরুর মাংশের শিক কাবাব, গরুর রেজালা, খাসীর রান, হাস-মুরগী, কেউ কেউ এমনকি ছোট ছোট পাখী। কোরবানী ঈদ আসলে এদের অনেকে হঠাৎ হয়ে ওঠে পরম পশুপ্রেমী। এই ভন্ডামী আসলে একধরনের সাম্প্রদায়িকতা।“প্রতিদিন (এবং বছরে ৩৬৫ দিন) প্রায় একশত কোটি পশু হত্যা করছে ম্যাকডোনাল্ডস, কে এফ সি, বার্গার কিং এবং অন্যান্য কোম্পানি, ধনীদের মুখে খাবার তুলে দিয়ে অর্থ বানানোর জন্য; এনিয়ে কোনো রকম মাথাব্যথা নেই কারো।More than 200 million animals are killed for food around the world every day – just on land. Including wild-caught and farmed fishes, we get a total closer to 3 billion animals killed daily. That comes out to 72 billion land animals and over 1.2 trillion aquatic animals killed for food around the world every year.(Wikipeadia) বছরে মাত্র একটি দিন মুসলমানরা পশু কোরবানি দিচ্ছে, বিনা অর্থ বিনিময়ে, কোটি কোটি গরীবের ঘরে কুরবানির মাংস পৌঁছে দেয়, এবং এ নিয়ে বড়ই চিন্তিত ধর্মবিদ্বেষীরা ও পশুপ্রেমীরা । আমরা বিস্মৃত হতে পারি না যে, কেবল রসনাপূর্তির নামে অথবা ব্যবসায়িকভাবে বা অন্য কোনও ওজরে প্রতিদিন বিশ্বে অগণিত পশুপাখি আইনি ও বেআইনি পথে নিধন হয়ে চলেছে। প্রতিদিন এভাবে কত নিরীহ পশুপাখি হত্যা হচ্ছে তার কোনও বিশ্বাসযোগ্য হিসেব আমাদের কাছে নেই। তবে একটি সাধারণ হিসাব করা যেতে পারে। কোরবানির তিনদিন বাদ দিলে (কেননা পরপর তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়) বাকি ৩৬২ দিনে সারা বিশ্বে অন্য অছিলায় যে পশুপাখি হত্যা করা হয়, তা নিশ্চিতভাবেই কোরবানি-কৃত পশুপাখির চেয়ে কয়েক-গুণ বেশি হবে!Approximately 25 million farm animals are slaughtered each day in the United States. Approximately nine percent — more than 850 million — of the animals reared for food in the United States each year never make it to the slaughterhouse because they have already died from stress-induced disease or injury.(Wikipeadia) কেবল যদি আমরা শতভাগ বৈধ যুক্তির মাধ্যমে ত্যাগের নিদর্শন হিসেবে কোরবানি উপলক্ষে প্রাণিহত্যার বিরোধিতা করি তাহলে বিশ্ব অনিয়ন্ত্রিতভাবে বর্ধনশীল প্রাণিকুল নিয়ে কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে, তা বিবেচনা করার বিষয়টিও এড়ানো যায় না। বাংলাদেশের প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর কোরবানির জন্য দেশে এক কোটি ১৭ লক্ষ পশু ছিল। এর মধ্যে গরু ৪৫ লাখ এবং ছাগল ও ভেড়া ৭১ লাখ।এ বছরও হিসেব অনেকটা কাছাকাছি। কিন্তু এবার করোনার কারণে বাজার মন্দা ছিল।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে দেখতে পাই, প্রকৃতি ও প্রাণিজগৎ নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা অত্যন্ত সুবিন্যস্ত।সুরার নামকরণ করা হয়েছে জীবজন্তুর নামে। যেমন সুরা বাকারা (গাভি), সুরা আনআম (উট, গরু, বকরি), সুরা নাহল (মৌমাছি), সুরা নামল (পিপীলিকা), সুরা আনকাবুত (মাকড়সা), সুরা ফিল (হাতি) ইত্যাদি। এসব নামকরণ থেকে প্রাণিজগতের প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট ফুটে ওঠে। পশু-পাখির প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি খাবারদাবার ও প্রয়োজনে ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ইসলাম এগুলোকে প্রকৃতি ও পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কোরআনের বক্তব্য দেখুন - 'প্রাণিকুল সৃষ্টির (অন্যতম) কারণ হলো, এগুলোতে তোমরা আরোহণ করে থাকো আর এগুলো সৌন্দর্যের প্রতীক।' (সুরা নাহল, আয়াত ৮) ইসলাম ধর্ম মতে, পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত।
আমিষজাতীয় খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে পৃথিবীর সব ধর্ম, দর্শন ও সভ্যতার মানুষের মধ্যে ঐক্য দেখা যায়। যদিও নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে তাদের বিরোধও বিদ্যমান। হাজারো প্রাণীর মধ্যে ইসলাম সীমিত কিছু পশু-পাখি খাদ্য হিসেবে গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেগুলো জবাই করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দয়া প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'যখন তোমরা জবাই করবে, সর্বোত্তম পন্থায় করবে। জবাইয়ের বস্তু ভালোভাবে ধার দিয়ে নেবে আর পশুটিকে স্বাভাবিকভাবে প্রাণ বের হওয়ার সুযোগ দেবে।' (মুসলিম -১৯৫৫)। এক হাদিসে আছে ; ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একটি ভেড়া জবাইয়ের জন্য মাটিতে শোয়াল। তারপর সে চাকুতে ধার দিচ্ছিল। তখন হজরত (সা) বললেন, ‘তুমি কি পশুটিকে দু’বার মারতে চাও? তাকে শোয়ানোর আগে চাকুতে ধার দিতে পারলে না?’ফোকাহায়ে কেরাম লিখেছেন, পশুদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। এক পশুর সামনে অন্য পশু জবাই করা যাবে না।পরিপূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার আগে ছুরিকাঘাত কিংবা চামড়া সরানো মাকরুহে তাহরিমি। পশু-পাখি জীবিত থাকা অবস্থায় তার কোনো অঙ্গ কর্তন করা যাবে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'জীবিত অবস্থায় যে প্রাণীর কোনো অংশ কাটা হয়, সেটা মৃত তথা হারাম হয়ে যাবে।' (তিরমিজি-১৪৮০) পশু-পাখির চেহারায় প্রহার করা, অঙ্কিত করা ও চিহ্ন ব্যবহার করে চেহারা বিকৃত করা নিষিদ্ধ। হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) চেহারায় প্রহার ও অঙ্কন করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম -২১১৬) ইমাম নববি (র.) লিখেছেন, 'যেকোনো প্রাণির চেহারায় আঘাত করা নিষিদ্ধ।'
ইসলামে কোনো জীবন্ত পশু-পাখি আগুনে পোড়ানো নিষিদ্ধ। হযরত আবদুর রহমান বিন আবদুল্লাহ (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গী ছিলাম। তিনি দেখতে পেলেন, আমরা একটা মৌমাছির বাসা জ্বালিয়ে দিয়েছি। মহানবী (সা.) বললেন, 'কে এটি জ্বালিয়ে দিয়েছে?' আমরা নিজেদের কথা বললাম। তিনি বলেন, 'আগুনের স্রষ্টা ছাড়া কারো জন্য আগুন দিয়ে শাস্তি দেওয়া শোভা পায় না।' (আবু দাউদ -২৬৭৫)কিছু প্রাণী এমন আছে, যেগুলো প্রকৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের হত্যা করতে নিষেধ করেছেন রাসুল (সা.)। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) চার প্রকার প্রাণী হত্যা করতে বারণ করেছেন, পিঁপড়া, মধুমক্ষিকা, হুদহুদ পাখি এবং চড়ুইসদৃশ বাজপাখি। (আবু দাউদ, হাদিস -৫২৬৭)। হাদিসে আছে, হযরত (সা) বলেন, ‘একবার একটি পিপাসার্ত কুকুর কূপের পাশে ঘোরাঘুরি করছে। বনি ইসরাইলের এক কুলটা নারী তা দেখতে পেয়ে নিজের পায়ের মোজা খুলে কূপের পানি তোলে এবং কুকুরটিকে খাওয়ায়। এ জন্য তার পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়।(বোখারি- ৩৪৬৭)।অন্য হাদিসে এসেছে, 'একজন মহিলা একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবার দিত না আবার ভূখণ্ডে বিচরণ করে খাবার সংগ্রহের সুযোগও দিত না। এ কারণে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছে।' (বুখারি -৩৩১৮) অন্যত্র এসেছে : 'যেকোনো প্রাণীর ওপর দয়া করার মধ্যেও সওয়াব আছে।' (বুখারি -৬০০৯)।
পশু-পাখি আল্লাহর সৃষ্টি। এগুলোকে অশুভ মনে করা অজ্ঞতা ও কুসংস্কার। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। এমনকি পেঁচা বা সফর মাসেও কোনো কুলক্ষণ নেই।' (বুখারি) অহেতুক পশু-পাখির পেছনে লেগে থাকা, অযথা এগুলোকে শিকার করা ইসলামে নিন্দনীয়। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, 'কোনো প্রাণীকে লক্ষ্যবস্তু বানিও না।' (মুসলিম - ১৯৫৭) হযরত সাইদ ইবনে জুবাইর (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার হযরত ইবনে ওমর (রা.) কোরাইশ গোত্রের একদল বাচ্চাকে দেখতে পেলেন যে তারা পাখি শিকার করছে। এটা দেখে ইবনে ওমর (রা.) তাদের পৃথক করে দেন এবং বলেন, 'রাসুল (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে কোনো প্রাণবিশিষ্ট বস্তুকে লক্ষ্যবস্তু বানায়।' (মুসলিম-১৯৫৮)।পশু-পাখির যেহেতু বোধশক্তি নেই, ভালো-মন্দ পার্থক্য করার ক্ষমতা নেই, তাই পশু-পাখির মাধ্যমে মানুষ বা সম্পদের কোনো ক্ষতি হলে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হয় না। তবে এগুলোর সঙ্গে মালিক বা রাখাল থাকলে জরিমানা দিতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'চতুষ্পদ জন্তুর অনিষ্ট ক্ষমাযোগ্য।' (বুখারি শরিফ-৬৯১২)।
ইসলাম ধর্ম মতে, পশু-পাখির সঙ্গে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। এদের সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। পশু-পাখির অঙ্গহানি করা নিষিদ্ধ। হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, 'রাসুল (সা.) ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন, যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে।' (বুখারি : ৫১৯৫) পশু-পাখিকে অহেতুক নিশানা বানানো ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহর জমিনে তাদের অবাধ বিচরণের সুযোগ দিতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে যে হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।' (নাসায়ি, ইবনে হিব্বান)। যেসব প্রাণী প্রতিপালন করা হয়, সেগুলোর সুস্থতা ও খাবারদাবারের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা ওয়াজিব। মহানবী (সা.) বলেছেন, 'এসব বাক্শক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সুস্থ অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার করো।' (আবু দাউদ- ২৫৪৮)।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...