সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কর্ডোভা মসজিদ থেকে গির্জা চুপ কেন বিশ্ব ?


মো. আবু রায়হান
স্পেনে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত হয়েছিল মুর জাতির মাধ্যমে।৭১১ সালে স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর স্পেন আন্দালুসিয়া নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। মুসলিমদের শাসনাধীন আন্দালুসিয়ার রাজধানী ছিল কর্ডোভা। আরবিতে এ কর্ডোভার উচ্চারণ হয় কুরতুবা। ৭১১ থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত মুসলিম শাসনামলে সভ্যতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায় স্পেন। এ সময় স্পেনে শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটে। নির্মিত হয় অনেক লাইব্রেরি, হাম্মাম (গোসলখানা) ও মসজিদ। অসাধারণ শিল্পনৈপুণ্যে তৈরি অসংখ্য মুসলিম স্থাপনা যে কোনো মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম। এসব স্থাপনার মধ্যে কর্ডোভা মসজিদ অন্যতম। স্প্যানিশ ভাষায় মসজিদকে বলা হয় মেজিকেতা। তাই স্প্যানিশ ভাষায় এই মসজিদ লা মেজিকেতা নামে পরিচিত। আয়তনে মসজিদুল হারামের পরেই মসজিদটির অবস্থান।একসময় শত শত বছর ধরে এ কর্ডোভা মসজিদই ছিল মুসলিম শাসনের কেন্দ্রবিন্দু। মসজিদের অবকাঠামো, কারুকাজ ও সৌন্দর্য সব কিছু অক্ষুণ্ন থাকলেও নেই কেবল মুসলিমদের নামাজ ও ইবাদতের কোনো কার্যক্রম। আজও সৌন্দর্য ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক কর্ডোভা মসজিদ। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ আজও বিশ্ব মুসলিমদের হৃদয়ে হাহাকার জাগিয়ে রাখছে।
গোয়াদালকুইভির নদীর তীরে কর্ডোভা মসজিদ  
স্পেনের বৃহত্তর ও বিশ্ববিখ্যাত কর্ডোভা মসজিদের মালিক কেবল মুসলমানরাই। তাই এটি মুসলমানদের জন্য খুলে দিতে আহ্বান জানিয়েছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ নগরীর আমির সুলতান বিন মুহাম্মাদ কাসিমি।শারজাহ’র আমির এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘আমরা কর্ডোভা মসজিদকে আবারও মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের দাবি জানাচ্ছি। আমাকে বলা হয়, সিটি কাউন্সিল তা খ্রিস্টানদের দিয়েছে। তখন আমি বললাম, মালিকানাহীন বস্তু অনুপযুক্তকে দেওয়া হয়েছে। অথচ এর মালিকানা শুধু মুসলিমদের।’ -আলজাজিরা।
স্পেনে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন ঘটার ৭৩ বছর পর স্পেনে উমাইয়া শাসনের প্রতিষ্ঠাতা আমীর প্রথম আবদুর রহমান তার রাজধানী কর্ডোভায় এই মসজিদটি ৭৮৪ সালে নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময় এই মসজিদটির আয়তন ও শোভাবর্ধনসহ বিভিন্ন সংস্কারকাজ করা হয়।খলিফা প্রথম আবদুর রহমান নিজ তদারকিতে মসজিদের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিয়ে যান। সুলতান নিজেও প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে মসজিদের নির্মাণ কাজে শ্রম দিতেন। তার ৩ বছরের শাসনামলে মসজিদটির অবকাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হন।
৭৮৬ সালে সুলতান প্রথম আবদুর রহমান-এর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে হিশাম খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তিনিও মসজিদটি দৃষ্টিনন্দন ও সৌন্দর্য বাড়াতে অবদান রাখেন।৭৯৩ সালে খলিফা হিশাম মসজিদটির প্রাথমিক কাজ শেষ করতে সক্ষম হন। প্রাথমিক কাজ শেষ কুরতুবা মসজিদের আয়তন দাড়ায় দৈর্ঘে্য ৬০০ফুট এবং প্রস্থে ৩৫০ ফুট।খলিফা হিশামের পর উমাইয়া শাসনামলে সব শাসকই ধারাবাহিকভাবে এ মসজিদের ধারাবাহিক কাজ ও উন্নয়ন অব্যাহত রাখেন।দশম শতাব্দীতে খলিফা তৃতীয় আবদুর রহমান কুরতুবা মসজিদে পূর্ণাঙ্গ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। আর তাতে মসজিদের আয়তন দাঁড়ায় ১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিট। ৫০ দরজার এ বিশাল স্থাপনায় রয়েছে ১২৯৩টি পিলার বা স্তম্ভ।কুরতুবা মসজিদ নির্মাণের পর এটি বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্যশৈলীর মর্যাদা লাভ করে। আর এটি ছিল বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আশ্চর্য স্থাপনা হিসেবে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।
কর্ডোভা মসজিদের ভেতর
১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটির নকশা করেন একজন সিরিয়ান স্থপতি। এর থামের সংখ্যা ৮৫৬টি। এছাড়াও ৯টি বাহির দরজা ও ১১টি অভ্যন্তরীণ দরজা রয়েছে। লাল ডোরাকাটা খিলানগুলো স্মরণ করিয়ে দেয় স্থাপত্যশিল্পে মুসলিম মুন্সিয়ানার কথা। অনিন্দ্য সুন্দর এই মসজিদের থামগুলো নির্মিত হয়েছে মার্বেল, গ্রানাইট, জেসপার, অনিক্স পাথর দিয়ে।কর্ডোভা মসজিদ নির্মাণে সেকালেই আড়াই থেকে তিন লাখ মুদ্রা ব্যয় করা হয়েছিল। পূর্ব-পশ্চিমে এর দৈর্ঘ্য ছিল ৫০০ ফুট। এর সুন্দর ও আকর্ষণীয় মিহরাব স্থাপিত ছিল পাথরের নির্মিত এক হাজার ৪১৭টি স্তম্ভের ওপর। মিহরাবের কাছে একটি উঁচু মিম্বর ছিল হাতির দাঁত ও ৩৬ হাজার বিভিন্ন রং ও বিভিন্ন কাষ্ঠখ-ের তৈরি। সেগুলোর ওপর ছিল হরেক ধরনের হীরা-জহরতের কারুকাজ। দীর্ঘ সাত বছরের পরিশ্রমে মিম্বরটি নির্মাণ করা হয়। তৈরি করা হয় ১০৮ ফুট উঁচু মিনার, যাতে ওঠানামার জন্য নির্মিত দুটি সিঁড়ির ছিল ১০৭টি ধাপ। মসজিদের মধ্যে ছোট-বড় ১০ হাজার ঝাড়বাতি জ্বালানো হতো। তার মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ঝাড়বাতি ছিল রুপার, বাকিগুলো পিতলের তৈরি। বড় বড় ঝাড়ের মধ্যে এক হাজার ৪৮০টি প্রদীপ জ্বালানো হতো। শুধু তিনটি রুপার ঝাড়েই ৩৬ সের তেল পোড়ানো হতো। ৩০০ কর্মচারী ও খাদেম শুধু এই মসজিদের তদারকিতেই নিয়োজিত ছিলেন।মুসলিম বিশ্বের কাছে সুপরিচিত বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ কুরতুবি রয়েছে এ মসজিদের এক গভীর সম্পর্ক। এ মসজিদেই আল্লামা কুরতুবি (র) মুসলিমদের তার রচিত তাফসিরে কুরতুবির পাঠ দিতেন। মসজিদে বসেই ইলমে তাসাউফের দরস দিতেন শায়খুল আকবর সুফি ইমাম ইবনে আরাবি।বাকি ইবনে মাখলাদের মতো ব্যক্তিত্ব এখানে বসেই ‘কালাল্লাহ’ এবং ‘কালার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন ৷হযরত ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াহইয়া আন্দালুসিও ইলমে দ্বীনের পাঠদান করতেন এ মসজিদে। ইলমে ফিকহের মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতেন হযরত ইবনে হাজাম জাহেরি।কিন্তু, ১২৩৬ সালে ক্যাসলের রাজা তৃতীয় ফার্ডিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে স্পেন দখল করে নেয় আর মসজিদটিকে রোমান ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তরিত করে ৷ তখন থেকে একে বলা হয় দ্য মস্ক ক্যাথেড্রাল অব কর্ডোভা।
কর্ডোভা মসজিদের মিহরাব
স্থাপনের পর থেকে মুসলিমরা এখানে নামাজ আদায় করেছিল প্রায় ৫০০ বছর ধরে।ফলে মুসলমানদের একটানা ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ঐতিহ্য প্রতিদিন ৫ বার আজানের ধ্বনি ও নামাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর মসজিদটির মিনারে মাইকের বদলে লাগানো হয় গির্জার ঘণ্টা। আর এখন সে মিনার থেকে আজানের পরিবর্তে প্রতিধ্বনিত হয় গির্জার ঘণ্টাধ্বনি।স্পেন থেকে মুসলমানরা বিতাড়িত হওয়ার পর দীর্ঘ ৭০০ বছর কর্ডোভা মসজিদে কোনো আজান ও নামাজ হয়নি। আল্লামা ইকবালের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল এই মসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়া।১৯৩৩ সালে স্পেন সফরকালে আল্লামা ইকবাল এই মসজিদ পরিদর্শন করেন। মসজিদে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শুধু আল্লামা ইকবালকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, প্রবেশের পর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে বলা হয়।মসজিদে প্রবেশ করেই উচ্চস্বরে আজান দেন আল্লামা ইকবাল। দীর্ঘ সাতশ’ বছর পর ওই মসজিদে এটিই ছিল প্রথম আজান। মসজিদের দেয়াল ও স্তম্ভগুলো দীর্ঘকাল পর আজানের ধ্বনি শুনতে পায়। আজানের পর জায়নামাজ বিছিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন ইকবাল। নামাজে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত করেন। মোনাজাতের প্রতিটি বাক্যই কবিতার মতো করে আবৃত্তি করেছিলেন তিনি।ঐতিহাসিক কর্ডোভা মসজিদে নামাজ পড়ে তিনি তার আবেগকে ৭টি কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। বালে জিবরিলে দুআ’ শিরোনামে দীর্ঘ কবিতাটি ওই মসজিদে বসেই লিখেছিলেন তিনি। যাতে কেউ সেখানে নামাজ, রুকু কিংবা সেজদা দিতে না পারে। সে জন্য অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত বিশেষ সিকিউরিটি ফোর্স সেখানে সার্বক্ষণিক পাহারায় নিয়োজিত।আজো সেখানে ক্রুশ টানিয়ে রাখা হয়েছে৷২০০০ সালের প্রথম দিকে স্প্যানিশ মুসলমানরা এই মসজিদের নামাজ আদায় করার দাবি জানালে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন এই কর্ডোভা মসজিদটি এখনো গির্জা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
কর্ডোভা মসজিদে আল্লামা ইকবাল
২০১০ সালে এক দল মুসলিম পর্যটক শুধু রুকু করতে অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন৷ একজন সত্যিকার ও চিন্তাশীল মুসলমান মসজিদে কর্ডোভায় দাড়িয়ে না কেঁদে থাকতে পারে না৷১৯৮৪ সালে ঐতিহাসিক এ মসজিদটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত দেয়। মসজিদের ভেতরে ঢোকার জন্য টিকিট ফি ১০ ইউরো। প্রতিদিন অনেক পর্যটক ভিড় করেন ঐতিহাসিক এ মসজিদটি দেখার জন্য। হৃদয়গ্রাহী নকশা ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য নবম ও দশম শতাব্দীতে এটি ছিল সারা বিশ্বের প্রথম সারির মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম।শুধু স্পেন নয় অটোমান সাম্রাজ্যের যে সমস্ত এলাকা বর্তমান খ্রিস্টান ইউরোপের দখলে যেমন গ্রিস, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া ,হাঙ্গেরি ইত্যাদি বলকান অঞ্চলে অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর সেখানকার একাধিক মসজিদকে জোরপূর্বক গির্জায় রূপান্তরিত করা হয়েছে অথবা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তুরস্কের অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মোহাম্মদ তৎকালীন কনস্টান্টিনোপল শহর দখল করে তার নাম পরিবর্তন করে ইস্তাম্বুল (ইসলামের শহর) এবং আয়া সোফিয়াকে মসজিদ রূপান্তরিত করে বলেন- "এটি হলো ক্রিশ্চান ইউরোপের দাম্ভিকতার ধ্বংসের প্রতীক যারা আমাদের ভাইদের রক্তে স্পেনের জমিন লাল করেছে"খলীফা সুলতান-সুলেমান বলেছিলেন--"ওরা ভেবেছিল ইউরোপের জমিন থেকে চিরতরে আযানের ধ্বনি মুছে দেবে, আয়া সোফিয়া র আজান এটাই প্রমাণ করবে যে আল্লাহর বান্দারা কোনদিন পরাজিত হয় না।"ওসমানীয় খলিফা আব্দুল হামিদ বলেছিলেন-"যেদিন খ্রিস্টান ইউরোপ মসজিদে কুরতুবাতে পুনরায় আযান দিতে দেবে সেদিন আয়া-সোফিয়া নিয়ে তাদের কান্না সার্থক হবে তবে তার আগে নয়।"

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...