সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও কিছু অপ্রিয় কথন


বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া প্রায় একই রকম। সাধারণত মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।মৌখিক পরীক্ষাভিত্তিক প্রচলিত শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির পদ্ধতিতে স্বজনপ্রীতি, পক্ষপাতিত্ব, কম মেধাসম্পন্ন প্রার্থীর নিয়োগ এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাব বিস্তারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাই, শিক্ষক নিয়োগের মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে, বিশেষ করে, এন্ট্রি লেভেলে, শুধু মৌখিক পরীক্ষা পদ্ধতি যথার্থ বিবেচিত হলে তা মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিস্তারে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ভূমিকা পালনে সহায়ক হবে- এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না।কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছিল, তা হুবহু এ রকম-‘শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়, এতে অনিয়মের সুযোগ তৈরি হয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে মৌখিক পরীক্ষার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলে প্রার্থীর মেধা যাচাই করা সহজ হবে এবং অনিয়মের সুযোগ হ্রাস পাবে।’আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত। সরকার বা ইউজিসি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো নির্দেশনা মানতে বাধ্য করতে পারে না। সুপারিশ করতে পারে বড়জোর। তাই ইউজিসির ওই নির্দেশনাও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করেনি।১৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করে টিআইবি দেখে, আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রভাষক নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এ পদে নিয়োগে ৩ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে।টিআইবি আরও বলছে, নিয়োগ বোর্ড গঠন, সুবিধামতো যোগ্যতা পরিবর্তন বা শিথিল করা, জবাবদিহি না থাকার মাধ্যমে এই অনিয়মের শুরু। আর ১৩টির মধ্যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ড গঠনে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব ঘটানোর সুযোগ বিদ্যমান ছিল।মজার ঘটনা ঘটে আআমস আরেফিন সিদ্দিক ঢাবির উপাচার্য থাকাকালীন। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক হলেও শুধুমাত্র অনার্স পাস করা তিনজনকে ঢাবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা।একইসঙ্গে চারটি শূন্য পদের বিপরীতে নয়জনকে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশও করে সিন্ডিকেট সভা।ফলাফলের দিক থেকে সেরা শিক্ষার্থী কোনো কোনো সময় সেরা শিক্ষক না-ও হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনে অনেক শিক্ষককে পেয়েছি, যাঁরা নোট মুখস্থ করে এসে গড়গড় করে বলে গেছেন। কোনো প্রশ্ন করলে বরং বিরক্তই হয়েছেন। আবার কিছু শিক্ষককে পেয়েছি, যাঁরা শিক্ষার্থীদের অন্তর্লোকে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। তাই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষকের টিচিং স্টাইল বা পড়ানোর ধরনটা বিবেচনায় নেওয়া খুব জরুরি—যে চর্চা এখন একেবারেই নেই বললেই চলে।যাঁরা প্রভাষক পদে আবেদন করতে যাচ্ছেন, তাঁদের ভাবতে হবে, শিক্ষকতা পেশা কতটা ভালোবাসেন তিনি। নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করাই মুখ্য উদ্দেশ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রভাষক পদে বেশি নিয়োগ করা হয়। এ ছাড়া সহকারী, সহযোগী ও অধ্যাপক পদেও সরাসরি নিয়োগ হয়ে থাকে। প্রভাষক পদে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে অনার্স ও মাস্টার্সসহ চারটি অথবা তিনটিতে প্রথম শ্রেণি বা ৪ স্কেলে জিপিএ ৩.৫-এর ওপরে চাওয়া হয়। প্রভাষক নিয়োগে মেধা হিসেবে একাডেমিক রেজাল্টকে প্রাধান্য দেওয়া হয় এবং মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীর একাডেমিক জ্ঞান, সনদপত্র ও প্রার্থী শিক্ষাদানের উপযোগী কি না তা যাচাই-বাছাই করে নিয়োগের সুপারিশ করা হয় এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করে সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে দুই বছরের জন্য সাময়িক নিয়োগ প্রদান করা হয়।বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সর্বশেষ যোগ্যতা হিসেবে মাস্টার্স পাসকৃত শিক্ষার্থীদের প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়, যা বিশ্বের কোথাও নেই। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী সদ্য পাস করে কোনো একাডেমিক ও গবেষণার প্রশিক্ষণ ছাড়াই সরাসরি পাঠদান শুরু করে। অনেক সময় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষককে মাস্টার্সের ক্লাস নিতেও দেখা যায়। এ ছাড়া একজন প্রভাষক যোগদান করার পরপরই তার উচ্চশিক্ষার জন্য খুঁজতে থাকেন ভালো একটি স্কলারশিপ। সুযোগ পেলেই চলে যান মাস্টার্স, পিএইচডি করার জন্য, তারপর পোস্ট-ডক্টরেট। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মানুসারে শিক্ষাছুটি নিয়ে বিদেশে কাটিয়ে দেন ছয়-সাত বছর।
বিশ্ববিদ্যালয় শুধু জ্ঞান দান করে না, জ্ঞান তৈরিও করে। এই জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মান অন্য যেকোনো পেশা থেকে যোজন যোজন বেশি। তবে এই জ্ঞান তৈরি করতে গবেষণা লাগে। আর তার জন্য দরকার মেধাবী গবেষক।শুধু স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস করে তৈরিকৃত জ্ঞান দান করা যায় বটে, কিন্তু জ্ঞান তৈরি করা যায় না। জ্ঞান তৈরি করা তথা ভালো গবেষক হতে গেলে দরকার পরিপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক গবেষণার অভিজ্ঞতা, অর্থাৎ পিএইচডি। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা পিএইচডি হওয়া বাঞ্ছনীয়।উন্নত দেশে শিক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পিএইচডি থাকলেই হয় না, সঙ্গে পোস্ট ডক্টরাল অভিজ্ঞতাও থাকতে হয়।সার্কভুক্ত অনেক দেশেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক ফলাফলের চেয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত গবেষণাকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভিয়েতনামে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন না করলে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আবেদন করতে পারেন না।
স্নাতক/স্নাতকোত্তর পাস করে যদি স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের শিক্ষক হওয়া যায়, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কেন উচ্চ মাধ্যমিকের, মাধ্যমিক পাস করে কেন মাধ্যমিকের ও প্রাথমিক পাস করে কেন প্রাথমিকের শিক্ষক হতে পারবে না? এ ক্ষেত্রে যদি তাঁর উত্তর হয়—দেশে বিপুলসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট থাকতে কম সার্টিফিকেটধারীদের নিয়োগ দেব কেন! তাহলে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম নেবে—এই বিপুলসংখ্যক পিএইচডি ডিগ্রিধারী থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ স্নাতকোত্তরদের কেন নিয়োগ দেয়? কেন ইউজিসি নীতিমালা করে না যে, বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী না পাওয়া গেলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দিয়ে শূন্য পদসমূহ পূরণ করা হবে। বাংলাদেশের নাগরিক পিএইচডি ডিগ্রিধারী অস্ট্রেলিয়াতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুযোগের অপেক্ষায়। বিশ্বব্যাপী গণনা করলে, এই সংখ্যাটি শত শত, এমনকি হাজার হাজার হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ যদি উদ্যোগ নিয়ে এসব পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, তাহলে আমরাও হয়তো একদিন বিশ্বের জ্ঞান পরিমণ্ডলে উজ্জ্বল তারকারূপে আবির্ভাব হব।
প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী হতে হবে এবং আন্তর্জাতিক বা মানসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশনা থাকতে হবে। উন্নত দেশ থেকে অর্জিত পিএইচডি ও বিষয়ভিত্তিক গবেষণার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশে বিভাগীয় শিক্ষা ও গবেষণাকাজে অবদান রাখতে পারবেন এ রকম প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর ফলে একদিকে যেমন একজন যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাবে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় তার সদ্য নিয়োগকৃত সহকর্মীর দ্বারা মানসম্পন্ন সেবা পাবে।শিক্ষকের প্রধান একটি কাজ হল শিক্ষার্থীর মাঝে তথ্যের বিস্তরণ (Information Dissemination) করা। প্রণালিবদ্ধ তথ্যসমৃদ্ধ শিক্ষার্থীই একজন ভালো শিক্ষার্থী, আর একজন ভালো শিক্ষক হওয়ার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যসমৃদ্ধ একজন ভালো শিক্ষার্থী হওয়া অত্যাবশ্যক। তবে একজন ভালো শিক্ষার্থী হলেই তিনি ভালো শিক্ষক হবেন- এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। টিচিং এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বিজ্ঞান এবং কলার যুগপৎ এবং কার্যকর সমন্বয়ের বিষয় রয়েছে। একজন ভালো শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি তথ্য বিস্তরণ ক্ষমতা এবং যোগাযোগ দক্ষতার ঘাটতি থাকে তাহলে তিনি শ্রেণিকক্ষে নিজেকে একজন কার্যকর শিক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হবেন না। শ্রেণিকক্ষকে ইন্টারঅ্যাকটিভ করা, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখন প্রেষণা সৃষ্টি করা এবং সর্বোপরি শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একজন শিক্ষকের পর্যাপ্ত এবং স্বচ্ছ ধারণা থাকা প্রয়োজন। তাই কম তথ্যসমৃদ্ধ এবং উচ্চতর ডিগ্রি দ্বারা ঘাটতি পূরণকৃত শিক্ষার্থীদের অন্তত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকতা পেশায় আসা নিরুৎসাহিত করার মতো বিধান নীতিমালায় থাকা আবশ্যক।
মানসম্মত শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন শিক্ষকের মধ্যে বিষয়গত গভীর জ্ঞান,বাচনিক দক্ষতা, যথাযথ উপস্থাপন কৌশল, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীদের শিখনফল মূল্যায়নের যথাযথ কৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি। অতএব শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রার্থীর বিষয়গত জ্ঞান ও শিক্ষার্থীদের অর্জিত শিখনফল মূল্যায়ন দক্ষতা পরিমাপের জন্য এক্সটেনসিভ লিখিত পরীক্ষা, বাচনিক দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য মৌখিক পরীক্ষা এবং উপস্থাপন কৌশল, যোগাযোগ দক্ষতা ও শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য প্রদর্শনী ক্লাসের ব্যবস্থা রাখা হলে মানসম্পন্ন এবং যোগ্য ও কার্যকর শিক্ষক নির্বাচন করা সম্ভব।(লেখাটি কয়েকটি পত্রিকা থেকে সংকলিত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...