সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্রাচীন ভারতের নর্তকীর নামে আম্রপালীর নামকরণ

স্বাদের দিক থেকে অনেকের কাছেই আম্রপালী আম খুবই প্রিয় । ছোট কিন্তু মিষ্টির দিক থেকে যেন সকল আমকে পিছনে ফেলে দিয়েছে আম্রপালী । কিন্তু জানেন কি, এই আমের নামকরণ কোথা থেকে হলো ? আম্রপালী রাষ্ট্র যাকে বানিয়েছিল নগরবধু বা পতিতা।আম্রপালী -যে জন্মেছিলো আজ থেকে ২৫০০ বছর আগে ৬০০-৫০০ খ্রি পূর্বে ভারতে জন্ম গ্রহণ করেন।তার কয়েকটি নাম পাওয়া যায় যেমন- আম্বাপ্লিকা ,আম্বাপালি,অমরা। সে ছিলো সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী এবং নর্তকী । যার রুপে পাগল ছিলো পুরো দুনিয়া। আর এই রুপই তার জন্য কাল হয়ে ওঠে। যার কারণে সে ছিলো ইতিহাসের এমন একজন নারী যাকে রাষ্ট্রীয় আদেশে পতিতা বানানো হয়েছিলো !
বৈশালী ছিল প্রাচীন ভারতের একটি শহর। এটি বর্তমানে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের বিহার রাজ্যের তিরহুত বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রত্নক্ষেত্র।বৈশালী ছিল লিচ্ছবির রাজধানী।চীনা পর্যটক ফাহিয়েন (খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতাব্দী) ও হিউয়েন সাংয়ের ভ্রমণবিবরণীতে বৈশালী শহরের কথা উল্লিখিত হয়েছে। এই বিবরণ অনুসারে ১৮৬১ সালে পুরাতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম অধুনা বিহারের বৈশালী জেলার বাসরাহ গ্রামটিকে প্রাচীন বৈশালী নগর হিসেবে চিহ্নিত করেন। বৈশালির রাজোদ্যান নামক স্থানে আম্রবৃক্ষের পাদমূলে অম্বপালি নামে এক মেয়ে শিশুর জন্ম হয়। মাহানামন নামে এক ব্যক্তি শিশুকালে আম্রপালীকে আম গাছের নীচে খুজে পায়। তার আসল বাবা মা কে ইতিহাস ঘেটেও তা জানা যায়নি । যেহেতু তাকে আম গাছের নীচে পায় তাই তার নাম রাখে আম্রপালী । সংস্কৃতে আম্র মানে আম, এবং পল্লব হল পাতা। অর্থাৎ, আমগাছের নবীন পাতা (Her name derive from a combination of two Sanskrit words: amra, meaning mango, and pallawa, meaning young leaves or sprouts.[8] It is said that she was spontaneously born at the foot of a mango tree in one of the royal gardens in Vaishali — hence her name.) নগরের উদ্যান পালক এই অম্বপালির ভোরণপোষণের ভার গ্রহণ করেন। আম্রদান পালকের কন্যা বলে তার নাম হয় অম্বপালি বা আম্রপালি। বয়ঃবৃদ্ধির সাথে সাথে আম্রপালি অনিন্দ্য সুন্দরী হয়ে উঠতে থাকে। কোথাও এতটুকুও খুঁত নেই। এরপর আম্রপালি হলেন রাজ্যের সভানর্তকী। কারণ সে আমলে বৈশালীতে আইন ছিলো, অনিন্দ্য সুন্দরী নারী কখনও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হতে পারবেন না। জনসাধরণেরর আনন্দের জন্য তাঁকে উৎসর্গ করা হবে। আম্রপালি সুন্দরী, মহিমাময়ী, মনোহরিনী এবং সর্বোৎকৃষ্ট বর্ণসুষমার অধিকারিণী ছিলেন। নাচ, গান ও বীণাবাদনে সেকালে তার তুলনা ছিল না। তিনি পালি ভাষায় কবিতাও রচনা করতেন। সেকালোর বহু পদমর্যাদাশীল গুণীজন তার ভক্ত ছিলেন। মগধের রাজা বিম্বিসার নিজেও আম্রপালির গুণমুগ্ধ ছিলেন।সবাই তাকে একনজর দেখতে চায়, বিয়ে করতে চায় । এ নিয়ে আম্রপালীর মা বাবা খুব চিন্তিত হয়ে পড়েন । তারা তখন বৈশালীতে সকল গণমান্য ব্যক্তিকে এর একটি সমাধান করার জন্য বলেন। কারণ সবাই আম্রপালীকে বিয়ে করতে চায় । তখন বৈশালীর সকল ক্ষমতাবান ধনবান ব্যক্তি মিলে বৈঠকে বসে নানা আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত নেয় তা হল, আম্রপালীকে কেউ বিয়ে করতে পারবেনা। কারণ তার রুপ। সে একা কারো হতে পারেনা। আম্রপালী হবে সবার সে হবে একজন নগরবধু মানে সোজা বাংলায় পতিতা ।।এটা ছিলো একটা ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। ইতিহাসে এভাবে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে কাউকে পতিতা বানানো হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত খুবই বিরল !! আম্রপালী সে সভায় ৫টি শর্ত রাখেন আম্রপালীর শর্তগুলি ছিল নিম্নরূপঃ (১) নগরের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় তার ঘর হবে (২) তাঁর মুল্য হবে প্রতি রাত্রির জন্য পাঁচশত স্বর্ণমুদ্রা (৩) একবারে মাত্র একজন তাঁর গৃহে প্রবেশ করতে পারবে (৪ ) শক্র বা কোনো অপরাধীর সন্ধানে প্রয়োজনে সপ্তাহে সর্বোচ্চ একবার তার গৃহে প্রবেশ করা যাবে (৫)তার গৃহে কে আসলো গেলো এ নিয়ে কোন অনুসন্ধান করা যাবেনা সবাই তার এসব শর্ত মেনে নেয় । এভাবে দিনে দিনে আম্রপালী বিপুল ধন সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন । আম্রপালীর রুপের কথাও দেশ বিদেশে আরও বেশি করে ছড়াতে থাকে । প্রাচীন ভারতের মগধ রাজ্যের রাজা ছিলেন বিম্বিসার । বিম্বিসার (৫৫৮ খ্রিঃপূঃ – ৪৯১ খ্রিঃপূঃ) হর্য্যঙ্ক রাজবংশের রাজা ছিলেন। যিনি ৫৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৪৯২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত মগধ শাসন করেন। তার পৃষ্ঠপোষকতায় উত্তর ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার সম্ভব হয়েছিল। শোনা যায়, তার স্ত্রীর সংখ্যা নাকি ৫০০ ছিল !নর্তকীদের নাচের এক অনুষ্ঠানে বিম্বিসার এক নর্তকীর নাচ দেখে বলেছিলেন, এ নর্তকী বিশ্বসেরা। তখন তার এক সভাসদ বলেন, "মহারাজ,এই নর্তকী আম্রপালীর নখের যোগ্য নয়" !! বিম্বিসারের এক কথাটি নজর এড়ায়নি। সে তার সভাসদ থেকে আম্রপালী সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে তাকে কাছে পাবার বাসনা করে, কিন্তু তার সভাসদ বলেন সেটা সম্ভব নয়। কারণ তাহলে আমাদের যুদ্ধ করে বৈশালী রাজ্য জয় করতে হবে। আর আম্রপালীর দেখা পাওয়াও এত সহজ নয়। দেশ বিদেশের বহু রাজা রাজপুত্র আম্রপালীর প্রাসাদের সামনে তার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। কিন্তু মন না চাইলে সে কাউকে দেখা দেয়না । এত কথা শুনে তার আগ্রহ আরও বেড়ে গেলো। সে সিদ্ধান্ত নিলো ছদ্মবেশে বৈশালী রাজ্যে গিয়ে আম্রপালীকে দেখে আসবে।কি এমন আছে সেই নারীর মাঝে, যার জন্য পুরো জাহান পাগল হয়ে আছে !তারপর বহু চড়াই উৎরাই শেষে, রাজার আম্রপালীর সাথে দেখা করার সুযোগ আসে আম্রপালীর প্রাসাদ আম্রকুন্জে, কিন্তু দেখা করতে গিয়ে রাজা চমকে উঠেন এতো কোন নারী নয়, যেন সাক্ষাৎ পরী!এ কোনভাবেই মানুষ হতে পারেনা। এত রুপ মানুষের কিভাবে হতে পারে !!!! কিন্তু অবাক রাজার জন্য আরও অবাক কিছু অপেক্ষা করছিলো কারণ আম্রপালী প্রথম দেখাতেই তাকে সে যে মগধ রাজ্যের রাজা বিম্বিসার কে চিনে ফেলে। এবং আম্রপালী জানায় সে তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে বহু আগে থেকেই। এ কথা শুনে রাজার বিস্ময়ের সীমা থাকে না। রাজা সাথে সাথে তাকে তার রাজ্যের রাজরাণী বানানোর প্রস্তাব দেয়।কিন্তু আম্রপালী জানে, তার রাজ্যের মানুষ এটা কখনোই মেনে নিবেনা। উল্টো বহু মানুষের জীবন যাবে। রক্তপাত হবে। তাই তাকে দ্রত এখান থেকে চলে যেতে বলে। রাজা বিম্বিসার বৈশালী আক্রমন করে আম্রপালীকে পেতে চান, কিন্তু আম্রপালী তার নিজের রাজ্যের কোন ক্ষতি চাননা। তাই তিনি রাজাকে তার নিজ রাজ্যে ফেরত পাঠান এবং বৈশালীতে কোন আক্রমণ হলে তিনি তা মেনে নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন । (Stories of her beauty travelled to the ears of Bimbisara, king of the hostile neighbouring kingdom of Magadha. He attacked Vaishali, and took refuge in Amrapali's house. Bimbisara was a good musician. Before long, Amrapali and Bimbisara fell in love. When she learned his true identity, Amrapali asked Bimbisara to leave and cease his war. Bimbisara, smitten with love, did as she asked. In the eyes of the people of Vaishali, this incident made him a coward. Later, Amrapali bore him a son named Vimala Kondanna.)।এদিকে বিম্বিসার এর সন্তান অজাতশত্রুও আম্রপালীর প্রেমে মগ্ন ছিলেন। সে বিম্বিসারকে আটক করে নিজে সিংহাসন দখল করে বসেন এবং আম্রপালীকে পাওয়ার জন্য বৈশালী রাজ্য আক্রমণ করে বসেন। কিন্তু দখল করতে সক্ষম হননি এবং খুব বাজেভাবে আহত হন। পরবর্তীতে আম্রপালীর সেবায় সুস্হ হয়ে গোপনে তার নিজের রাজ্যে ফেরত যান। সেদিনও আম্রপালী অজাতশত্রুর বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন । এত নাটকীয়তার পর শেষের দিকে এসে কি হলো ? গৌতম বুদ্ধর সময়কাল তখন, গৌতম বুদ্ধ তার কয়েকশো সঙ্গী নিয়ে বৈশালী রাজ্যে এলেন । একদিন বৈশালী রাজ্যের রাবান্দা থেকে এক বৌদ্ধ তরুণ সন্ন্যাসীকে দেখে তার মনে ধরে গেলো। আম্রপালী ভাবলো দেশ বিদেশের রাজারা আমার পায়ের কাছে এসে বসে থাকে আর এতো সামান্য একজন মানুষ । সে সন্ন্যাসীকে ৪মাস তার কাছে রাখার জন্য গৌতম বুদ্ধকে বললেন। সবাই ভাবলো বুদ্ধ কখনোই রাজি হবেননা। কারণ, একজন সন্ন্যাসী এমন একজন পতিতার কাছে থাকবে এটা হতেই পারেনা কিন্তু গৌতম বুদ্ধ সেদিন তাকে রাখতে রাজি হলো এবং এটাও বললো আমি শ্রমণের (তরুণ সে সন্ন্যাসীর নাম ছিলো ) চোখে কোন কামনা বাসনা দেখছিনা। সে চারমাস থাকলেও নিষ্পাপ হয়েই ফিরে আসবে এটা আমি নিশ্চিত !! চার মাস শেষ। গৌতম বুদ্ধ তার সঙ্গীদের নিয়ে চলে যাবেন। তরুণ শ্রমণের কোন খবর নেই। তবে কি আম্রপালীর রুপের কাছেই হেরে গেলো শ্রমণ ? সেদিন সবাইকে অবাক করে দিয়ে তরুণ শ্রমণ ফিরে আসেন। তার পিছনে পিছনে আসেন একজন নারী। সেই নারীই ছিলেন আম্রপালী। তিনি বলেন , তরুণ শ্রমণকে প্রলুব্ধ করতে কোনও চেষ্টা বাকি রাখেননি। কিন্তু এই প্রথম কোন পুরুষকে বশ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বৈশালীর নগরবধূ আম্রপালী।আজ, সর্বস্ব ত্যাগ করে বুদ্ধের চরণে আশ্রয় চান আম্রপালী !!! সব কিছু দান করে বাকী জীবন গৌতম বুদ্ধের চরণেই কাটিয়ে দেন ইতিহাস বিখ্যাত সেই রমণী আম্রপালী । Following the Buddha's teachings, she became an arahant. She is mentioned in the old Pali texts and Buddhist traditions, particularly in conjunction with the Buddha staying at her mango grove, আম্রপালি গৌতম বুদ্ধের বাণী শুনে ভিক্ষণী সংঘে যোগ দেন। শেষ জীবনে তিনি দিব্যজ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। স্বীয় দেহের ক্রমধ্বংসশীল প্রকৃতি তার দৃষ্টিগোচরে আসে। পৃথিবীর সকল বস্তুর নশ্বরত্ব তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আম্রপালী হাইব্রিড এ জাতটি উদ্ভাবন হয় ১৯৭১ সালে। ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ড. পিযুষ কান্তি মজুমদার 'দশেরী' এবং 'নিলম' জাতের দুটি আমের সংকরায়নের মাধ্যমে নতুন এ জাতটি উদ্ভাবন করেন। যার নাম দেয়া হয় আম্রপালি। ভারতীয় আমের এ জাতটি বাংলাদেশে আসে ১৯৮৪ সালে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ এনামুল হক এবং চুয়াডাঙ্গার আজাদ হাইব্রিড নার্সারির কর্ণধার আবুল কালাম আজাদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় আম্রপালি জাত।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...