রবীন্দ্রনাথের বিসিএস


মো.আবু রায়হানঃরবীন্দ্রনাথ বিসিএস প্রিলি দিয়ে বের হল। গলদঘর্ম অবস্থা। পঞ্চম বারের মতো প্রিলি দিয়েছে। এর আগে একবারও প্রিলিতে পাস জুটেনি। এবারও পাস করার আশা ক্ষীণ। এতোসব কঠিন প্রশ্নের উত্তর করা যায়? এডিসনের বাবার নাম কি? উগান্ডার রাজধানীর নাম কি? টাইটানিক কবে ডুবেছিল? বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কোন কাব্যের অন্তর্গত হাবিজাবি?পরীক্ষা শেষে বাইরে চোখ পড়তেই  বিদ্যাসাগরের সঙ্গে দেখা। তারও একই অবস্থা। বাবা মায়ের স্বপ্ন বিসিএস পুলিশ অথবা এডমিন ক্যাডার।কারণ জোড়াসাঁকোর অভিজাত পরিবার ঐতিহ্য রক্ষায় ক্ষমতা চাই। জজ,  ব্যারিস্টার মুক্তার ঢের আছে।রবীন্দ্রনাথের সমস্যা হলো সন তারিখ ও কারো বাপ মায়ের নাম সহজে মনে রাখতে না পারার কষ্ট।এছাড়া বিজ্ঞান মানসিক দক্ষতা নিয়ে প্রচন্ড ফোবিয়া। 
এসব তথ্য যেন তার বুকে সাত আসমান সম ভারী অনুভূত হয়। আজকাল পড়তেও ইচ্ছে করে না।পড়তে গেলে ফেসবুক, ইন্টারনেট আসক্তি তো আছেই। ভাবে সেকি সেই বীরপুরুষ মোবাইল ব্যবহার না করেই যে ক্যাডার।এদিকে দাদা- বৌদির ঘ্যানর ঘ্যানর, চেঁচামেচি  যেন তার কানে বজ্রপাতের মতো ভয়ঙ্কর শোনায়।বৌদির  তো সকাল বিকেল নেই।  সারাদিনই তার একই কথা ওরে রবি তুকে কিন্তু বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে।আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবি। সরকারি গাড়ী, বাংলো পাবি। কত ক্ষমতা থাকবে।সঙ্গে সঙ্গে বৌদি এও বলে দেখিস বৌদিকে আবার ভুলে যাসনে। শুধু কি তাই? বৌদি নীলক্ষেত  বাজার থেকে ওরাকল সিরিজের বই গিফট করে। রবিও কম না, মাঝেমধ্যে বৌদিকে বলে বৌদি আমার দ্বারা বিসিএস টিসিএস হবে না। বিসিএস ক্যাডার হতে হলে বিয়ে করতে হয়, গার্লফ্রেন্ড লাগে, উৎসাহের তো ব্যাপার স্যাপার আছে তাই না? আমার তো পোড়া কপাল এসবের কিচ্ছু নেই।একথা শুনে বৌদি তো চিৎকার চেঁচামেচি করে সারা বাড়ি  হুলস্থুল কান্ড করে ফেলে। সর্বনাশ রবি বলে কি? ও বিয়ে করতে চায়! রবি একটু উচ্চস্বরে বলে উঠল আহা বৌদি এবার থামবে তো? তুমি না সেকেলে রয়ে গেলে। গত বছর পত্রিকায় দেখনি? ময়মনসিংহের কাফি বউয়ের রূপের আলোই পড়াশোনা করে ক্যাডার হয়েছে। রবি কাঁদো কাঁদো কন্ঠে  আসলে  আমার ভাগ্যটাই  খারাপ।বৌদি অনেকটা লাজুক ভাবে বলল আরে বোকা আমি আছি না?রবি কিছুটা চাপা অভিমানে তুমি কি করবে আমার!এদিকে বিদ্যাসাগর রবির নির্লিপ্ততা দেখে রবির চোখের সামনে হাত নাড়া দিতেই রবি সম্বিত ফিরে পেল। কিরে দোস্ত কি ভাবিস?তুকে তো দেখছি ভাবের জগতে। রবির ঘোর কেটে গেল। রবি এবার বলল ও কিছু না। চল বিদ্যা সামনের দোকানে দুজনে দুকাপ চা পান করি।চায়ের দোকানে দুই বন্ধু তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই পেরেশান। গল্পে চায়ে চুমুকের  সঙ্গে বরি সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া আকাশে ছেড়ে বলে দেখ বিদ্যা ধোঁয়া কত স্বাধীন যেদিকে ইচ্ছে ওরা চলে যায়।ধোঁয়া ছেড়ে রবি টেনশন হালকা করার বৃথা চেষ্টায়। এরমধ্যে রবি আচমকা বিদ্যাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে ইউরেকা দোস্ত, ইউরেকা। বিদ্যা কি হইছে খুলে বলবি তো? শোন দোস্ত আমাদের দ্বারা বিসিএস টিসিএস হবে না। বরং চল গল্প কবিতা লিখি। আমাদের গল্প কবিতা, উপন্যাস পড়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিসিএস দেবে। বুঝবে তারা কত ধানে কত চাল। সন তারিখ গল্প, উপন্যাসের চরিত্র উফ আর নিতে পারছি না। বিদ্যা বলল দোস্ত তোর মাথায় এতো বুদ্ধি! আরে বুদ্ধি না গ্রেট রিভেনজ। রবি বলল চল, আর হ্যাঁ বন্ধু চায়ের বিলটা তুই দে। বিদ্যা বরাবর তো আমিই দেই। আরে শালা তুই দিবি না তো কে দেবে? এতো বড় আইডিয়া দিলাম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল