চাচার পুঁথি দেখভালের জন্য আহমদ শরীফ ঢাবিতে চাকরি পান
আহমদ শরীফ একজন ভাষাবিদ, খ্যাতনামা মনীষী এবং বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত বাংলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতি পরিমণ্ডলের অন্যতম প্রতিভূ। কলেজ অধ্যাপনা দিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। সেইসাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি। চট্টগ্রামের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম এন্ট্রাস পাস করা এবং বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি বলে খ্যাত আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ছিলেন তার চাচা ও পিতৃপ্রতিম। জন্মের পর হতে আহমদ শরীফ সাহিত্যবিশারদ ও তার স্ত্রীর কাছে পুত্র স্নেহে লালিত-পালিত হয়েছেন।ফলত অনেকের কাছেই তিনি সাহিত্য বিশারদের সন্তান হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।তাদের পিতা-পুত্রের এ সম্পর্ক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বজায় ছিল।
১৯২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম ড. আহমদ শরীফের।বেড়ে উঠেছিলেন সাহিত্যবিশারদের সংগৃহীত একরাশ পুঁথি ও সাহিত্য সাময়িকীর মধ্যে। ১৯৪০ সালে আইএ এবং ১৯৪২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর এমএতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। ১৯৪৪ সালে বাংলায় এমএ ডিগ্রি লাভ করে প্রথমে দুর্নীতি দমন বিভাগে চাকরি নিলেও ওই বিভাগের দুর্নীতি দেখে ১৯৪৫ সালে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন লাকসাম পশ্চিমগাঁও নওয়াব ফয়জুন্নেসা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। এরপর ১৯৪৮ সালে ফেনী কলেজে। এক বছরও থাকেননি সেখানে। ১৯৪৯-এর জুনে রেডিও পাকিস্তানের প্রগ্রাম অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন।
অধ্যাপক শরীফের চাচা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছয়শ পুঁথি দান করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁথিগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করার সময় আহমদ শরীফকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন আবদুল করিম।সুতরাং পুঁথিগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ভার পড়ে পুঁথিগুলোর সঙ্গে আবাল্য যিনি সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, সেই আহমদ শরীফের ওপর। ১৯৫০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রিসার্চ অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে যোগ দেন তিনি।
পুঁথিগুলি অবলম্বন করেই আহমদ শরীফের গবেষণা-জীবনের সূচনা হয় এবং অচিরেই তিনি পুঁথি পাঠে পারদর্শিতা অর্জন করেন। সে থেকে আজীবন তিনি পুথি নিয়ে ভেবেছেন এবং বহু উল্লেখযোগ্য পুঁথি সম্পাদনাও করেছেন।পরে এ বিভাগের শিক্ষক হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। অভিসন্দর্ভের বিষয় – সৈয়দ সুলতান, তাঁর গ্রন্থাবলী ও তাঁর যুগ। ১৯৭২ সালে প্রফেসর পদে উন্নীত হন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকালের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডীন, সিন্ডিকেট সদস্য এবং শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তরকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ৩৪ বছর তথা ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুবছরের (১৯৮৪-৮৬) জন্য নজরুল অধ্যাপক পদে সমাসীন ছিলেন।
গ্রন্থনায়-মো. আবু রায়হান
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন