সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বোরকা বিতর্ক

বোরকা হলো মহিলাদের এক ধরনের বহিরাঙ্গিক পোশাক যা সারা শরীর ঢেকে রাখে। মুসলিম অমুসলিম দেশে বোরকা নিয়ে বিতর্ক বেশ পুরনো। সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের এক শ্রেণীর সুশীল ও প্রগতিশীলদের বোরকা, হিজাব কিংবা নেকাব নিয়ে সরব হতে দেখা যায়।প্রতারক সাহেদের বোরকা পরে পলায়নের প্রস্তুতি নিয়ে আবার বোরকাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। সাহেদই কী প্রথম পুরুষ হিসেবে বোরকা পরেছে? বাংলা সিনেমায় বোরকা পরে অভিসারে নায়িকার সঙ্গে দেখা করা তো কমন দৃশ্য। তাই বলে বোরকাকে দোষারোপ করবেন? গত বছরের জানুয়ারির ঘটনা। স্ত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকলেও সেখানে কী করছেন, কার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলছেন এসব সন্দেহ হওয়ায় বাইরের দোকান থেকে বোরকা কিনে ছদ্মবেশে সেখানে প্রবেশ করেন স্বামী।কিন্তু ভুল করে বসেন তিনি! বোরকা পরে পুরুষের বাথরুম থেকে নারী বের হওয়ায় সন্দেহ হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের। ব্যাস, সোজা পুলিশে খবর। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এসে আবিষ্কার করে বোরকা পরিহিত নারী নয়, পুরুষ। ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে।
বেশকিছু মুসলিম দেশ পুরো ইউরোপ জুড়ে ইসলামোফোবিয়ার জের ধরে কোথাও বোরকা আবার কোথাও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্স ২০১১ সালে নিকাব নিষিদ্ধ করে। বেলজিয়াম, স্পেন, শাদ, ক্যামেরুন, নাইজেরিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশে নেকাব এবং বোরকাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।গত বছর অস্কার জয়ী এ সঙ্গীতবিদ সুরের যাদুকর এআর রাহমানের মেয়ে খাতিজার বোরকা পরিহিত একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তসলিমা নাসরিন সেই ছবি টুইটারে প্রকাশ করে লেখেন,
"আমি এ আর রাহমানের গান অনেক পছন্দ করি। কিন্তু যখনই আমি তার প্রিয় মেয়েকে দেখি, আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা পরিবারেও যে খুব সহজে মগজধোলাই করা যায়, তা জানা সত্যিকার অর্থেই হতাশার।"
নিজের ইনস্টাগ্রামে তসলিমার সমালোচনার জবাব দেন খাতিজা রহমান।তিনি বলেন-
‘প্রিয় তসলিমা নাসরিন, আমার পোশাকে আপনার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিছু মুক্ত বাতাস গ্রহণ করুন। কারণ, এতে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয় না। বরং আমি যে অবস্থান নিয়েছি এতে গর্বিত ও ক্ষমতায়িত অনুভব করি। আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি, গুগলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, সত্যিকার নারীবাদ কী। কারণ, নারীবাদ কখনও অন্য নারীকে কটাক্ষ বা বিষয়টিতে তার বাবাকে জড়িয়ে আনা নয়’।
গত বছর আজহারীর ওয়াজের একটি ভিডিও শেয়ার করেন তসলিমা।ভিডিওতে দেখা গেছে, আজহারী তার ওই ওয়াজে তসলিমাকে নিয়ে সমালোচনা করছেন।আজহারী বলেন,
‘বাংলাদেশে একটা কথা কয়-নিন্দে পাখি পিন্দে। তসলিমা নাসরিন নারীদের নিয়ে বই লিখেছেন। ও বলে, নারীদের কোনো দেশ নেই। তসলিমা বোরকার বিরুদ্ধে লিখেছে। শেষ পর্যন্ত সে দেশে থাকতে পারে নাই। ওরে যখন ইন্ডিয়ায় লুকিয়ে নেয়া হয়, তখন ওর গায়ে বোরকা পরিয়ে নেয়া নেয়া হয়েছিল।’
আজহারীর ওই ওয়াজের জবাবে তসলিমা নাসরিন বলেন,
‘‘আমি নাকি রাতের অন্ধকারে ‘বোরকা’ পরে দেশ থেকে বেরিয়েছি। ওরা রাতের অন্ধকারে বোরখার ভেতরের মানুষকে দেখে কীভাবে? এনিওয়ে, আমি কোনোদিন বোরকা পরিনি।”
কুরআনে মুসলিম নারীদের পর্দা করতে বলা হয়েছে। এ আদেশের অর্থ হলো দেহের আর্কষণীয় অংশ যেমন বক্ষ, কেশ, বাহু এবং পা পরপুরুষের সম্মুখে আবৃত রাখা। ইসলামী শরিয়তে এজন্য হিজাব ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব আয়াত - ৫৯)।
আল্লাহ পাক আরো বলেন,
(হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর আয়াত - ৩১)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...