ফিঙ্গারপ্রিন্টের আবিষ্কারক কাজী সৈয়দ মুহম্মদ আজিজুল হক


কাজী সৈয়দ মুহম্মদ আজিজুল হক

মো.আবু রায়হান
ফিঙ্গার প্রিন্ট মহান আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ এক সৃষ্টি। ব্যক্তি সনাক্তকরণে বহুল ব্যবহৃত একটি পদ্ধতি হল ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙ্গুলের ছাপ)।পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যত মানুষ ছিল, আছে এবং আসবে তাদের প্রত্যেকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পূর্ণ আলাদা।কারো সাথে কখনোই এটি মিলবে না।বিশ্বের সাড়ে সাতশ কোটি মানুষের প্রত্যক্যের ফিঙ্গার প্রিন্ট আলাদা।মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, মানুষ কি মনে করে যে, আমি (আল্লাহ) তার অস্থিসমূহ একে অন্যর সাথে একত্রিত করব? তাহলে তাদের বলো কেবল এই নয়, আমি তার আঙ্গুলের ডগা (আঙ্গুলের ছাপ) পর্যন্ত আলাদা করতে সক্ষম।(সূরা কিয়ামাহ আয়াত,৩-৪)। দুই ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপের পার্থক্য এতই আপেক্ষিক ও সূক্ষ্ম যে, কেবল অভিজ্ঞ ব্যক্তিই উপযুক্ত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে তা শনাক্ত করতে পারে। এটি কোরআন মাজিদের অপর এক মোজেজা তা এই বাস্তবতার বর্ণনা দিয়েছে মানুষ তা ধারণা করারও বহু আগে।
পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙ্গুলে ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে হুবহু মিলে যাবে।Human fingerprints are detailed, nearly unique, difficult to alter, and durable over the life of an individual, making them suitable as long-term markers of human identity.বর্তমানে অনেক স্কুলে ও অফিসে ছাত্র ও অফিসে কর্মরতদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হয়। জতীয় পরিচয় পত্রে, ভিসা আবেদনের জন্য ,মোবাইল বা কম্পিউটারের ব্যক্তি শনাক্ত করণ, মোবাইল সংযোগ পেতে অপরাধী সনাক্তকরণ করতে আঙুলের ছাপ অন্যতম মাধ্যম।The recovery of partial fingerprints from a crime scene is an important method of forensic science.জীবনযাত্রা, তার বসবাসরত পরিবেশ, তার কাজ-কর্ম, খাওয়ার অভ্যাস, অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কেও ফিঙ্গারপ্রিন্টের প্রয়োজন হয়।ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার নামক যন্ত্রের মাধ্যমে আঙুলের ছাপকে ডিজিটাল ডাটায় রুপান্তর করা যায়। একেকজনের একেক রকম আঙ্গুলের ছাপ হওয়ায় এর ব্যবহার অনেক।উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে (১৮৯৬ সালের দিকে) আঙুলের ছাপ সর্বপ্রথম অপরাধী সনাক্তকরণে ব্যবহৃত হয়। স্যার এডওয়ার্ড হেনরি ১৯০১ সালে আঙুলের ছাপকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। যা ধীরে ধীরে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।১৯১১ সালে আমেরিকাতে থমাস জেনিংস নামে এক ব্যক্তিকে আঙুলের ছাপের ভিত্তিতে হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে এ সময়ে মূলত আঙুলের ছাপ মানুষের চোখের আন্দাজের উপরে ভিত্তি করে একই কিনা তা নির্ণয় করতো। এ কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯০ এর দশকে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষের আঙুলের ছাপ অনন্য। এই কথাটি শুরু হয় স্যার ফ্রান্সিস গোল্টের এক দাবি থেকে। তবে তিনি এই তথ্য সমর্থন করার জন্য এখনও বৈজ্ঞানিক কোন দলিল দেখাতে পারেন নি। আর বর্তমানে সেটাই সত্য বলে বিবেচনা করা হয়।
দ্য ডিটেকটিভ' ম্যাগাজিনে আঙ্গুলের ছাপের
উদ্ভব বিষয়ক প্রবন্ধে আজিজুল হক;
১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে প্রগতিশীল পরিসংখ্যানবিদ, স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট প্রকাশ করেন 'ফিঙ্গার প্রিন্টস' নামের বহুল আলোচিত একটি বই। সেখানে তিনি আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে পরিচয় শনাক্তকরণের বিষয়ে বিশদে আলোচনা করেন।১৮৮০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করে ১৮৯২সালে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন বলে প্রচলিত আছে। অপরাধী শনাক্তকরণে আধুনিক পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট তথা আঙুলের ছাপের প্রথম আবিষ্কারক খুলনার কাজী সৈয়দ মুহম্মদ আজিজুল হক (১৮৭২-১৯৩৫)।১৮৭২ সালে ব্রিটিশ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির খুলনা জেলার ফুলতলার পয়োগ্রাম কসবায় জন্মগ্রহণ করেন আজিজুল হক। তার পারিবারিক নাম ছিল কাজি সৈয়দ আজিজুল হক।শৈশবেই তিনি এক নৌ দুর্ঘটনায় বাবা-মাকে হারান।ব্রিটিশ শাসন আমলে তিনি একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। আমাদের অনেকেই জানি না যে, এই অভূতপূর্ব উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে এই সাধারণ বাঙালির নাম। ফ্রান্সিস গোল্টের বই পড়ে তৎকালীন বেঙ্গল পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল, স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরি আগ্রহী হয়ে ওঠেন অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের ব্যাপারে। ১৮৯৬ থেকে ১৯২৫ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি এই শ্রেণীবিন্যাসকরণের কাজ চালিয়ে যান। তার এই শ্রেণীবিন্যাস অপরাধবিজ্ঞানে 'হেনরি ক্লাসিফিকেশন সিস্টেম' নামে পরিচিত। এই শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। অপরাধবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব এই অবদানের যাবতীয় কৃতিত্ব জোটে তার কপালে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই শ্রেণীবিন্যাসকরণ আদতে তার নিজের হাত ধরে হয়নি।এই আঙুলের ছাপ উদ্ভাবনের মূল কৃতিত্ব ছিল উনিশ শতকের বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা কাজি আজিজুল হকের।Khan Bahadur Qazi Azizul Haque (1872 – 1935) was a Bengali inventor and police officer in British India, notable for his work with Edward Henry in developing the Henry Classification System of fingerprints, which is still in use.Haque provided the mathematical basis for the system.
আজিজুল সেই ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রচণ্ড রকমের মেধাবী। বিশেষত তার ছিল কঠিন কঠিন সব গাণিতিক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক সমস্যা সমাধানের এক সহজাত দক্ষতা। সেই সাথে তিনি ছিলেন মস্ত বড় খাদ্য রসিকও। খাবারের প্রতি ছিল খুব বেশি রকমের ঝোঁক। হয়তো মস্তিষ্কের পুষ্টির জন্যই তার বাড়তি খাবারের প্রয়োজন পড়ত।















কিন্তু অভাবের, টানাটানির সংসারে আজিজুলের খাবারে প্রতি অতিরিক্ত লোভ কোনো প্রশংসনীয় বিষয় ছিল না। প্রায়ই বড় ভাইয়ের গালমন্দ শুনতে হতো তাকে। তবু যেন তার স্বভাবের পরিবর্তন হতো না। নিজেরটা খেয়ে অন্যের খাবারেও ভাগ বসাতে দ্বিধা করতেন না তিনি। এমনই একদিনের ঘটনা। সারাদিন প্রচণ্ড গরমে হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তার বড় ভাই। পেটে দারুণ ক্ষুধা নিয়ে খেতে বসে তিনি আবিষ্কার করলেন, ছোট ভাই নিজের অংশের খাবার খাওয়ার পর তার অংশেরও বেশ খানিকটা খেয়ে ফেলেছেন। যারপরনাই খুবই রেগে গেলেন তিনি। মারতে শুরু করলেন ভাইকে। বড় ভাইয়ের হাতে বেধড়ক মার খেয়ে আজিজুল যতটা না ব্যথা পেলেন শরীরে, তার থেকেও বহুগুণ বেশি ব্যথা পেলেন মনে। অপমানিত, মনঃক্ষুণ্ণ অবস্থায়, বুক ভরা অভিমান নিয়ে তিনি পালিয়ে এলেন বাড়ি ছেড়ে। ট্রেন স্টেশনে এসে চড়ে বসলেন একটি চলন্ত ট্রেনে। সেই ট্রেন তাকে নিয়ে এলো কলকাতা শহরে। এটি ১৮৮৪ সালের কথা, আজিজুল তখন ১২ বছরের বালক।
রাতের বেলা আর কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে এক গৃহস্থ বাড়ির সামনে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আজিজুল। সেটি ছিল এক ধনাঢ্য ও খ্যাতিমান বাঙালি বাবুর বাড়ি। সাত-সকালে দোরগোড়ায় শতচ্ছিন্ন কাপড়ের, অসহায় এক বালককে আবিষ্কার করে বড় মায়া হলো তার মনে। অন্য কেউ হলে হয়তো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিত, কিন্তু তিনি পরম মমতায় কাছে টেনে নিলেন বালকটিকে।সেই একটি পরিবারে তার আশ্রয় হয়।ছোটখাট কাজ করানোর জন্য নিয়োগ দিলেন তাকে।গণিতের উপর তার ভালো দক্ষতা দেখে ওই পরিবার খুব অনুপ্রাণিত হয় এবং তাকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করে দেয়। পরে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেন।২০০১ সালে প্রকাশিত কলিন বিভানের ফিঙ্গার প্রিন্ট বিষয়ক একটি গ্রন্থে বলা হয়, ১৮৯২ সালে ব্রিটিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এডওয়ার্ড হেনরি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষের কাছে একটি চিঠি লিখেন এবং পরিসংখ্যানের উপর ভালো দক্ষতা আছে এমন একজন শিক্ষার্থী দিতে বলেন। এক্ষেত্রে কলেজ অধ্যক্ষ গণিতের মেধাবী ছাত্র কাজি আজিজুল হকের নাম সুপারিশ করেন।

হ্যানরি আজিজুল হককে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ দেন। এভাবে বেঙ্গল পুলিশ সার্ভিসে তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে বিহার পৃথক হলে তিনি বিহার পুলিশে যোগ দেন।পুলিশ সার্ভিসে কাজ করার সময় হেনরি কর্তৃক আজিজুল হককে অ্যানথ্রোপমেট্রি (মানব দেহের আকৃতি) পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয়। মূলত ওই সময় পুলিশ বিভাগে অপরাধী সনাক্তকরণে অ্যানথ্রোপমেট্রি (মানব দেহের আকৃতি) পদ্ধতি ব্যবহার করা হত।কিন্তু ফ্রান্সিস গাল্টন কর্তৃক উদ্ভাবিত এই অ্যানথ্রোপমেট্রি পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে তিনি হতাশ হন। এসময় গ্লাটনের উদ্ভাবিত পদ্ধতির কিছু উপাদানের উপর ভিত্তি করে আজিজুল হক নিজের উদ্ভাবিত কিছু পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করেন।
২০০১ সালে প্রকাশিত কলিন বিভান তার ফিঙ্গারপ্রিন্টস গ্রন্থে তার গবেষণার মৌলিকত্ব সম্পর্কে লিখতে গিয়ে জানাচ্ছেন, অ্যানথ্রোপমেট্রি পদ্ধতিতে কাজ করতে গিয়ে আজিজুল হক ভীষণ অসুবিধায় পড়েন।ফলে তিনি নিজেই ফিঙ্গারপ্রিন্টের শ্রেণীবিন্যাস করণের একটা পদ্ধতি উদ্ভাবন করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকেন।তিনি একটি বিশেষ গাণিতিক ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। এই ফর্মুলার আলোকে তিনি আঙুলের ছাপের ধরনের ওপর ভিত্তি করে ৩২টি থাক বানান। সেই ৩২টি সারিতে সৃষ্টি করেন এক হাজার ২৪টি খোপ। এভাবে তিনি তার কর্মশালায় সাত হাজার ফিঙ্গারপ্রিন্টের বিশাল এক সংগ্রহ গড়ে তোলেন। তাঁর সহজ-সরল এই পদ্ধতিতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংখ্যায় লাখ লাখ হলেও শ্রেণীবিন্যাস করার কাজ সহজ করে দেয়।জানা যায়, ওই সময় আজিজুল হকের সঙ্গে আরেকজন ভারতীয় আঙুলের ছাপের টেলিগ্রাফিক কোড পদ্ধতি উদ্ভাবনে সাহায্য করেছিলেন। তার নাম হেম চন্দ্র বোস। আর তাদের কাজের সুপারভাইজার ছিলেন স্যার এডওয়ার্ড হ্যানরি। In Kolkata a fingerprint Bureau was established in 1897, after the Council of the Governor General approved a committee report that fingerprints should be used for the classification of criminal records. The bureau employees Azizul Haque and Hem Chandra Bose have been credited with the primary development of a fingerprint classification system eventually named after their supervisor, Sir Edward Richard Henry.
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রথমে হ্যানরি এই উদ্ভাবনের আনুষ্ঠানিক কৃতিত্ব এই দু’জনের কাউকেই দেননি। তিনি এই পদ্ধতিটি ব্রিটেনে প্রকাশ করেন। মুসলমান বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত অনেক কিছুর মতো তার সহকর্মী অ্যাডওয়ার্ড হেনরি এই কৃতিত্ব নিজের নামেই চালিয়ে দেয় যা পরবর্তীতে ‘Henry Classification System of fingerprints’ ‘হেনরি সিস্টেম’ বা ‘হেনরি পদ্ধতি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ব্রিটেন সরকার হ্যানরিকে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করে।কিন্তু সেই চুরির ঘটনা বেশী দিন গোপন থাকেনি, ১০০ বছর পর হলেও ইতিহাসের সেই তথ্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে।আর আজিজুল হকের উদ্ভাবিত আঙুলের ছাপের শ্রেণিবিন্যাস পদ্ধতি নামে পরিচিত হয়। এবং দীর্ঘদিন বাদে হ্যানরি প্রকাশ্যে বলেছিলেন, "পরিচয় শনাক্তকরণের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের পদ্ধতিটি আবিষ্কারের প্রধানতম কৃতিত্ব খান বাহাদুর কাজি আজিজুল হকের।
যাইহোক কয়েক বছর পরে আঙুলের ছাপ আবিষ্কারের জন্য স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেন আজিজুল হক। পরে স্যার হেনরি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুজন পুলিশ অফিসারের অবদানের কথা স্বীকার করেন।পরে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা ও লেখালেখি হয়। ১৯৬৫ সালে বেঙ্গল পুলিশের সাবেক আইজি (১৯৩৮-৪২) চন্দক সেনগুপ্ত টাইম ম্যাগাজিনকে লিখা এক চিঠিতে আঙুলের ছাপ উদ্ভাবনে আজিজুল হকের অবদানের বিষয়টি তুলে ধরেন। এভাবে আরও অনেকেই ব্রিটিশ সরকারের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরেন।একপর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার আজিজুল হকের এই কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯১৩ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে 'খান সাহেব', এবং ১৯২৪ সালে 'খান বাহাদুর' উপাধিতে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি বিহারের মতিহারিতে জায়গিরও (রাষ্ট্র কর্তৃক বন্দোবস্তকৃত ভূমি) লাভ করেন। হেমচন্দ্র বসুও একই সমতুল্য 'রায় সাহেব' ও 'রায় বাহাদুর' উপাধি লাভ করেন। পাশাপাশি দুইজনই ৫০০০ রুপি করে অর্থ পুরস্কারও পান।পরে তিনি চাকরিতে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হয়েছিলেন।এছাড়া ব্রিটেনের ‘দ্য ফিঙ্গারপ্রিন্ট সোসাইটি’ খান বাহাদুর আজিজুল হক এবং হেমচন্দ্র বোসের নামে একটি গবেষণা পুরস্কার চালু করে।ফরেনসিক বিষয়ে যারা বিশেষ অবদান রাখেন তাদেরকেই এ পুরস্কার দেয়া হয়।অবশেষে ১৯৩৫ সালে অবিভক্ত ভারতের চম্পারানে মারা যান বাংলার কৃতি সন্তান খান বাহাদুর আজিজুল হক। মৃত্যুকালে আজিজুল রেখে গিয়েছিলেন আট সন্তান ও স্ত্রী। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তার স্ত্রী ও সন্তানেরা পাড়ি জমান পাকিস্তানে, পরিবারের অন্য সদস্যরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশে চলে আসেন।মরহুম আজিজুল হকের পুত্র আসিরুল হক পুলিশ বিভাগের ডিএসপি হয়েছিলেন। তার দুই বিখ্যাত নাতি ও নাতনি হচ্ছেন যথাক্রমে ইতিহাসের অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফী।তবে বর্তমানে তার উত্তরসূরীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট ও কানাডায়।

(তথ্যসুত্র- জাতীয় দৈনিক ও ইন্টারনেট )

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ