সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অক্সিজেনের জন্য হাহাকার দম বন্ধের আগে গুরুত্ব বুঝি না



প্রতিমূহুর্তে নিজেদের অজান্তেই শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছি।আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার ৯২০ বার শ্বাস নিই। একদিনের নিঃশ্বাসে কতটা অক্সিজেন নিই আমরা? জানা যায় একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৭-৮ লিটার বাতাস গ্রহন করে থাকে। তাহলে আপনি ২৪ ঘন্টায় অর্থাৎ একদিনে প্রায় ১১৫০০ লিটার বাতাস গ্রহন করছেন। আর আপনি শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে পরিমান বাতাস নিচ্ছেন তাতে ২০ শতাংশ অক্সিজেন থাকে। আবার প্রশ্বাসের মাধমে যে পরিমান বাতাস বের করছেন তাতে প্রায় ১৫ শতাংশ অক্সিজেন থাকে। তাহলে এর মানে দাড়ালো আমরা নিশ্বাসের মাধ্যমে ৫ শতাংশ অক্সিজেন শরীরে গ্রহন করে থাকে। আর সেই ৫ শতাংশ অক্সিজেনই শরীর বৃত্তিয় কাজ শেষে কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসাবে বের হয়।একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহন করে। আর এটা তো যারা স্বাভাবিক কাজ কর্ম করে তারা গ্রহন করে থাকে। তবে যারা বেশী পরিশ্রম করে বা ব্যায়াম করে তারা ৭৫০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন গ্রহন করে থাকে।হাসপাতালের বিছানায় শোয়া একজন মানুষের প্রতি ঘন্টার অক্সিজেনের বিল আসে ২০০ টাকা। সারাদিনের বিল ৪৮০০ টাকা। আমাদের বয়স কত? আজ পর্যন্ত কত টাকার অক্সিজেন আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন? তার বদলে আল্লাহ আমাদের কত টাকা বিল করেছেন? শ্বাস-প্রশ্বাস আল্লাহর দেওয়া অসংখ্য-অগণিত নিয়ামত রাজির একটি। প্রাণিকুল প্রতিটি মুহৃর্তে আল্লাহর দেওয়া শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে কোনো মাধ্যম বা কারো হেল্প ব্যতীত। কিন্তু হাসপাতালে গেলে দেখা যায় লাইফ সাপোর্টে রোগীর একটি শ্বাসের জন্য কত কষ্ট হচ্ছে। কত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কত যত্ন নেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরও লাইফ সাপোর্ট থেকে অনেকে জীবিত ফিরে আসে, আবার অনেকে লাশ হয়ে বের হয়। অথচ আল্লাহর দেওয়া এ নেয়ামতের জন্য আজ পর্যন্ত কারও কোনো মূল্য দিতে হয়নি বা মূল্য দেওয়ার চিন্তাও কেউ কোনো দিন করেনি। এই শ্বাস-প্রশ্বাস যদি বন্ধ হয়ে যায় তখনই তো জীবনলীলা সাঙ্গ হয়।করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত শ্বাসকষ্ট থেকে জীবন রক্ষায় বাজার থেকে সিলিন্ডার ভর্তি অক্সিজেন সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছেন বহু মানুষ, যাতে বেসরকারি উদ্যোগে অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যবস্থায় তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে।করোনায় অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সিলিন্ডার সংকটে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।বেশ কিছুদিন ধরে যারাই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনছেন চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে তাদের।লেখাটি গ্রন্থনা করেছেন-মো.আবু রায়হান
এক
করোনায় আক্রান্ত ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তির অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিক্যাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তার মেয়েকে। অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেও ভাড়ায় নেওয়া যায়নি অক্সিজেনের সিলিন্ডার। সবাই সিলিন্ডার ভাড়া না দিয়ে বিক্রি করতে চায়, দামও চাইছে আকাশচুম্বী। বাধ্য হয়ে তিনি একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের ফুল সেট কেনেন ৪২ হাজার টাকায়। এর সঙ্গে আছে ট্রলি, ফ্লো মিটার, ক্যানোলা এবং মাস্কে।ঢাকার বিভিন্ন অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়েছে জীবন বাঁচানো এই মেডিক্যাল অক্সিজেন সিলিন্ডারের। করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে এর দাম ১০-১২ হাজার টাকা এবং তারও আগে ৫-৬ হাজার টাকার মধ্যে থাকলেও সম্প্রতি তা এক লাফে বেড়ে ২০-২২ হাজার হয়ে যায়। গত জুন মাসের ১ তারিখ থেকে বাজারে সিলিন্ডার সংকট দেখা দেওয়ায় এর দাম আরও বাড়তে বাড়তে এখন ৪৭ হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। এমনকি ১ হাজার ৪০০ লিটারের (১ দশমিক ৪ কিউবিক মিটার) অক্সিজেন সিলিন্ডার ৪৭ হাজার টাকা মূল্যেও পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ শুধু খালি সিলিন্ডার বিক্রয় করছে ২০-২৫ হাজার টাকায়। তারা আরও জানান, অনেকেই আগাম সতর্কতা হিসেবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ঘরে তুলে রাখছেন। যে কারণে সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অক্সিজেনের উৎপাদন পর্যাপ্ত হলেও সিলিন্ডারের অভাবে সরবরাহে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।বাজারে কয়েক ধরনের সিলিন্ডার থাকলেও ‘লিনডে’, ‘চায়না’ এবং ‘প্রাইভেট’ —এই তিন ধরনের সিলিন্ডারের চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন কিংবা সিলিন্ডারের কোনও সমস্যা নেই। গত ২৮ এপ্রিলের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ও আইসোলেশন ইউনিটগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহে কোনও ঘাটতি নেই। সারা দেশে সব উপজেলায় ১০ হাজার ৩৯৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। প্রতি উপজেলায় প্রয়োজন অনুসারে অক্সিজেন সিলিন্ডার রেখে বাকিগুলো জেলা হাসপাতালে প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। কোভিড-১৯ উপলক্ষে আরও ৩ হাজার ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ে যাতে খালি অক্সিজেন সিলিন্ডারগুলো পুনরায় রিফিল করা যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট নেই। ৮টি বিভাগে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল বাদে ১৩ হাজার ৭৪৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। তবে বাইরে সিলিন্ডারের অতিরিক্ত দামের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। (বাংলা ট্রিবিউন জুন ০৯, ২০২০)
দুই
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি ও অক্সিজেন সরবরাহে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সঙ্কটের কারণে ইতোমধ্যেই সিলিন্ডারভর্তি অক্সিজেনের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে গত সপ্তাহ থেকে চড়া দামেও মিলছে না জীবন রক্ষাকারী এই অক্সিজেন।দেশে অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও অন্যান্য শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য কয়েক বছর ধরে অক্সিজেনের সিলিন্ডার ভাড়া দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। প্রায় পাঁচ গুণ দাম বেড়ে মাঝারি মানের একটি অক্সিজেনের সিলিন্ডার ও আনুসাঙ্গিক সরঞ্জাম বিক্রি হচ্ছে ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। অথচ তিন মাস আগেও অক্সিজেন সিলিন্ডারের এই সেট পাওয়া যেত পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায়। সম্প্রতি অক্সিজেনসিলিন্ডারবিডি, অক্সিজেনবিডি, মেডিশপ ডটকম, লিনডে ডটকমডটবিডি, সিসমার্ক লিমিটেডসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট এবং কিছু ফেইসবুকভিত্তিক অক্সিজেন সরবরাহ কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সঙ্কট পরিস্থিতির চিত্র পাওয়া যায়।অক্সিজেন সিলিন্ডারবিডির ব্যবস্থাপক আল ইমরান রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজে তার প্রতিষ্ঠানের দুটি মোবাইল নম্বরে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অনবরত ফোন আসছে। কিন্তু গত পাঁচ দিন ধরে নতুন করে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি কিংবা ভাড়া দিতে পারছেন না। কারণ যেসব পণ্য ছিল তা ইতোমধ্যেই বিক্রি বা বুকড হয়ে গেছে।অনেকে বাসায় সংরক্ষণের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার চাচ্ছেন। অনেকে আবার শ্বাসকষ্টে পড়ে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেন চাচ্ছেন। মাঝে মধ্যে অনেকে ফোন করে রীতিমতো হাহাকার করছে। কিন্তু আমাদের এই মুহূর্তে কিছুই করার থাকছে না। কারণ পাঁচ দিন আগেই স্টক ফাঁকা হয়ে গেছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়ে গেছে যে, অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই জেনেও অনেক ক্রেতা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য জোর করে টাকা জমা দিয়ে গেছেন।”তার কথার সত্যতা পাওয়া যায় কয়েকটি ওয়েবসাইটে দেওয়া মোবাইল নম্বরে কল করে। এদের সবাই ফোন ধরেই বলছেন, “অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। কবে আসবে তাও বলতে পারছি না। ৩-৪ দিন পর যোগাযোগ করেন।” ( বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
তিন
করোনা আতঙ্কে অনলাইনে অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার রীতিমতো হিড়িক পড়ে গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসা না মেলায় বাড়িতে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীরা ব্যাপকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারকরছেন।প্রচুর চাহিদার কারণে হোম সার্ভিসে অক্সিজেন ডেলিভারির বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে। আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে একেকটি সিলিন্ডার। অনেকে কিনতে না পেরে স্বজন বাঁচাতে তড়িঘড়ি ভাড়ায় নিচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার।সিলিন্ডারের পাশাপাশি পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর ও দেহের অক্সিজেন লেভেল পরিমাপের জন্য পালস অক্সিমিটার নামের ছোট একটি যন্ত্র অনলাইনে বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়াই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহারে প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসাসংশ্লিষ্টরা।কোভিড হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা এতটাই খারাপ যে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। একটি মাত্র সিলিন্ডার ওয়ার্ডের কোনো এক জায়গায় রাখা থাকে। শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের পালা করে সেখানে গিয়ে অক্সিজেন মাস্ক পরতে হয়। ভিড় লেগে যাওয়ায় একজন বেশিক্ষণ নিতে পারেন না।আবার সিলিন্ডার ফুরিয়ে গেলে নতুন সিলিন্ডার আসতেও দেরি হয় অনেক। দিনের বেশির ভাগ সময় ডাক্তার বা নার্সের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। হাসপাতালের এমন করুণ অভিজ্ঞতার কারণে করোনা আক্রান্ত অনেকেই বাড়িতেই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাদের কেউ কেউ আগেই অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখছেন বাসায়। কারণ সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে গিয়েও লাভ হচ্ছে না।পি-৪ হেলথ নামের অনলাইনভিত্তিক অক্সিজেন সিলিন্ডার হোম সার্ভিসের এক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইটে নানা ব্র্যান্ডের অক্সিজেন সিলিন্ডারের ছবিসহ মূল্য তালিকা দিয়েছে। সেখানে দেখা যায়, ১৫শ’ লিটার সিলিন্ডারের দাম ১৩ হাজার ৮শ’ টাকা এবং ২ হাজার লিটারের দাম ১৬ হাজার ৭শ’ টাকা। এর সঙ্গে অক্সিজেন মাস্কের দাম ও হোম ডেলিভারি চার্জ নেয়া হচ্ছে আরও প্রায় ৬শ’ টাকা।যোগাযোগ করা হলে পি-৪ ফেসবুক পেইজের স্বত্বাধিকারী মেসবাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে সিলিন্ডারের চাহিদাও তত বাড়ছে। কিন্তু বাজারে সিলিন্ডারের সংকট। এ কারণে আমাদের ডেলিভারি বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ এখন প্রতিদিন সিলিন্ডার চেয়ে এত বেশি ফোন আসছে যে, আমাদের হোম ডেলিভারির জন্য নির্ধারিত ফোনটি বন্ধ রাখতে হয়। অনেকেই ফোন করে কান্নাকাটি করেন।বলেন, ‘দয়া করে জীবন বাঁচান। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। তাছাড়া এ ব্যবসায় অনেকেই প্রতারণা করছেন। সিলিন্ডারের বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাছাড়া অক্সিজেন ব্যবহারের সময় পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত ফলো মিটারও পাওয়া যাচ্ছে না। দেড় হাজার টাকার ফলো মিটার এখন বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়।’সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোম ডেলিভারির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দোকান ভাড়া নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার অস্থায়ী গোডাউনও তৈরি হয়েছে। নদ্দা ও বাড্ডা এলাকায় এ ধরনের গোডাউনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নদ্দা এলাকা থেকে লিনডে বাংলাদেশ ও ইসলাম অক্সিজেনের সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন জিয়া নামের একজন ব্যক্তি। অনলাইনে মোবাইল নম্বর ও সিলিন্ডারের মূল্যসহ মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যে হোম ডেলিভারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে তার ফেসবুক পেইজে। বুধবার যোগাযোগ করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫-৬টি সিলিন্ডার হোম ডেলিভারি হতো। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা অনেক। পাইকারি মার্কেটেও সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও প্রতি মাসে ৩০-৪০টির বেশি সিলিন্ডার ডেলিভারি দিতে পারছেন না তারা।দেখা যায়, অনলাইনে হোম ডেলিভারির জন্য সিলিন্ডারপ্রতি দাম রাখা হচ্ছে ১৭ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ২৫ হাজার ৫শ’। এর সঙ্গে পালস অক্সিমিটার ৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আবার মাসিক ভাড়ায়ও মিলছে সিলিন্ডার। সেক্ষেত্রে ভাড়া ১১ থেকে ১৫ হাজার টাকা। খালি সিলিন্ডার রিফিলের খরচ ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। শপ বিডি ডটকম, হোম সার্ভিস, ইসরাত অক্সিজেন হোম সার্ভিস, অক্সিজেন সাপ্লাই ও সালাউদ্দিন অক্সিজেন সাপ্লাইসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের পাশাপাশি অনলাইনে মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ কোভিড সুরক্ষা পণ্য বিক্রিতে রীতিমতো ধুম পড়ে গেছে।বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, দেহে কতটুকু অক্সিজেন দরকার হবে তার জন্য রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। সাধারণ দু’ভাবে অক্সিজেন দেয়া হয়- একটি হচ্ছে মাস্কের সাহায্যে। অপরটি ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। দুটি পদ্ধতিতেই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। কারণ দেহের অক্সিজেন লেভেল পরিমাপের পরই প্রতি মিনিটে কতটুকু অক্সিজেন প্রবাহ প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা হয়। শ্বাসকষ্ট হলেই অক্সিজেন নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ পাল পিটিশনসহ অনেক কারণেই শ্বাসকস্ট দেখা দিতে পারে। তবে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে নেমে গেলে মিনিটে ২ লিটার করে অক্সিজেন দিতে হয়। এতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে প্রবাহ দ্বিগুণ করতে হয়। তবে প্রয়োজন ছাড়াই উচ্চমাত্রার অক্সিজেন নেয়া হলে স্বাস্থঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। এক্ষেত্রে শিশুদের রেটিনায় চাপ পড়ে চিরতরে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের সেল ড্যামেজ হতে পারে।(যুগান্তর ০৪ জুন ২০২০)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...