জালিমের কারাগারে বন্দি কুরআনের হফেজা ও স্নায়ুবিজ্ঞানী আফিয়া


মো.আবু রায়হানঃ যেদিন আফিয়ার কাহিনি পড়ি সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।মনে মনে স্থির করে রেখেছিলাম একদিন আফিয়াকে নিয়ে এই অধম কিছু লিখবে।অনেক দিন পর তার সম্পর্কে কিছু লেখার সুযোগ হলো।ড. আফিয়া সিদ্দিকী যিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বিখ্যাত একজন মুসলিম স্নায়ুবিজ্ঞানী।তিনি ১৯৭২ সালের ২ মার্চ পাকিস্তানের করাচির অত্যন্ত দ্বীনদার, সম্ভ্রান্ত অভিজাত ও উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।তার বাবা মুহাম্মদ সালেহ সিদ্দিকী ব্র্রিটেনে শিক্ষাপ্রাপ্ত একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী।তার মা ইসমাত সিদ্দিকী একজন সমাজকর্মী ও পাকিস্তানের সাবেক সংসদ সদস্য।বড় ভাই মুহাম্মদ সিদ্দিকী আমেরিকার টেক্সাসে বসবাসরত স্থপতি এবং বড় বোন ফাউজিয়া হার্ভার্ড ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত স্নায়ুবিজ্ঞানী, যিনি বর্তমানে বাল্টিমোরের সিনাই হাসপাতালে কর্মরত। তিন ভাই-বোনের মধ্যে আফিয়া সবার ছোট।আফিয়া সিদ্দিকীর শৈশবকাল কাটে আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়াতে।৮ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন।এরপর পাকিস্তানে ফিরে আসেন এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। আফিয়া সিদ্দিকী পবিত্র কুরআন হিফজ করেন।একইভাবে বাইবেল আর তোরাহও পড়েছিলেন। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে অগাধ জ্ঞানের জন্য আফিয়াকে তার বোন তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের এনসাইক্লোপিডিয়া বলে ডাকতেন।
১৯৯০ সালে আফিয়া সিদ্দিকী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার ভাই মুহাম্মদ সিদ্দিকীর কাছে যান এবং টেক্সাসের হাউস্টন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। হাউস্টনে তৃতীয় সেমিষ্টারে থাকাবস্থায় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) থেকে ফুল স্কলারশীপ পেয়ে সেখানে ভর্তি হন।সিদ্দিকি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউট অফ টেকনোলজি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে জীন বিদ্যার উপর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।স্বনামধন্য এই স্নায়ুবিজ্ঞানী শিক্ষা জীবনে অসামান্য মেধার পরিচয় দেন। ১৯৯৯ যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।ব্র্যান্ডিজ থেকেই ২০০১ সালে পিএইচ.ডি. করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নিউরোলজি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী প্রদান করে। তিনি বিশ্বের একমাত্র নিউরোলোজিস্ট যাকে হার্ভাড সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রিতে ভূষিত করে।এছাড়াও সম্মান সূচক ও অন্যান্য ডিগ্রীর ১৪৪ টিরও বেশি সার্টিফিকেট তিনি অর্জন করেন।
১৯৯৫ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে অ্যানেসথিসিয়াবিদ আমজাদ মোহাম্মাদ খানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন ড. আফিয়া। এরপর যথাক্রমে আহমেদ (১৯৯৬),মারিয়াম(১৯৯৮) এবং সুলাইমান (২০০২)নামে তিনসন্তান জন্মদান করেন।আগেই বলেছি তিনি হাফিযে কোরআন ও আলিমা।পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পারদর্শিনী এ নারী ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত দ্বীনদার। ইসলামী আদর্শ, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি রয়েছে তার দৃঢ় অঙ্গীকার। ড. আফিয়া বসনিয়ার মজলুম নারী ও শিশুদের জন্য একাই এক হাজার ডলার জমা করেন যা সম্ভবত কোনো ছাত্রীর পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনের বিশ্ব রেকর্ড ছিল। শত শত বসনিয়ান এতিমকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিনি আমেরিকায় খুঁজে খুঁজে মুসলিম পরিবার বের করেছেন। তিনি কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্যও এক লক্ষ রুপি জমা করেন। আফিয়া ভদ্রতা ও চারিত্রিক মাধুর্যতার জন্য সকল শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে প্রিয় ছিলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকেই দানের হাত প্রশ্বস্ত করেন। শিক্ষা লাভের পর অত্যন্ত ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী ড. আফিয়া সিদ্দিকী ২০০২ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন।আমেরিকায় ২০০১ সালের ঘটনার পর ও কয়েকবার পাকিস্তানে আসেন।আফিয়া সিদ্দিকী প্রফেসর নোয়াম চমস্কির তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও গবেষণা করেন। প্রফেসর নোয়াম চমস্কি তার সম্পর্কে বলেন, আফিয়া যেখানেই যাবে সেখানের পরিবেশকেই পাল্টে দেবে।
আফিয়াকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে তার তিন সন্তান আহমদ, সুলায়মান ও মরিয়মসহ পাকিস্তানের করাচির রাজপথ থেকে অপহরণ করে। অপহরণের পর ড. আফিয়ার মায়ের সাথে সন্দেহভাজন এজেন্সি যোগাযোগ করে। তারা হুমকি দেয়, আফিয়াকে জীবিত ফেরত পেতে চাইলে তার পরিবার যেন মুখ বন্ধ রাখে। এ ঘটনার পর পাকিস্তান সরকার ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। তাকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে।প্রচলিত আইনের আওতায় না এনে পাকিস্তানের কারাগারে গ্রেফতার না রেখেই তাকে আফগানিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে গোপনে ৫ বছর বন্দি করে রাখে।
আফগানিস্তানের বাগরাম কারাগারে ৫ বছর ধরে তাকে প্রতিদিন শারীরিক মানসিক ও যৌন নির্যাতন করা হয় এবং তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয়।বৃটিশ মহিলা সাংবাদিক ইভন্লি রিডলি পাকিস্তানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ড. আফিয়া সিদ্দিকীসহ বাগরাম কারাগারের সাড়ে ৬শ' কারাবন্দীর উপর চালানো ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে। এরপরই শুরু হয় আসল সমস্যার। আমাদের একথা মনে রাখতে হবে যে, পশ্চিমা মিডিয়া তার গায়ে আল কায়েদার লেবেল এঁটে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। অথচ মার্কিনীরা একাধারে ৫ বছর চেষ্টা চালিয়েও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার কোন প্রমাণ বের করতে পারেনি। বৃটিশ মহিলা সাংবাদিকদের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্ব ইতিহাসের একটি জঘন্যতম অধ্যায়ের দ্বার উন্মোচিত হয়। আমরা জানতে পারি একজন পাকিস্তানী মহিলা বিজ্ঞানীর উপর মার্কিন সামরিক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ভয়াবহ ও জঘন্য দৈহিক মানসিক ও যৌন নির্যাতন চালানোর বিবরণ। এ সময় পাকিস্তানের এই ঘটনার প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সারাদেশে প্রতিটি শহরে বিক্ষোভ হয়। পশ্চিমের অনেক দেশে ও তার মুক্তির জোর দাবি ওঠে। বিশ্ব মিডিয়ায় এ বিষয়টি ব্যাপক প্রচার পায়। আইনজীবীর তথ্যানুযায়ী নির্যাতনে তার ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে যায়। মার্কিনীরা তার দেহ থেকে একটি কিডনিও সরিয়ে ফেলে। অপারেশনের সময় তার অন্ত্রের কিছু অংশ কেটে ফেলা হয় যার কারনে তিনি খাবার হজম করতে পারেন না।কুরআনের পাতা ছিঁড়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে তাকে হাঁটতে বলা হুতো।তাকে বিবস্ত্র করে পবিত্র কোরানের ছেঁড়া পাতার উপর হেটে গিয়ে কাপড় নিতে বলা হতো।তিনি তা পারতেন না।কারণ তিনি কুরআনের হাফেজা, মুসলমান।এতে তার ওপর আরো নেমে আসতো অত্যাচার নির্যাতনের খড়্গহস্ত। বন্দী থাকাকালে যৌন নির্যাতনের কারনে তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন।বাগরাম কারাগার থেকে মুক্তি প্রাপ্ত বন্দিরা অভিযোগ করেছে “নির্যাতনের সময়ে আফিয়ার আত্ন-চিৎকার অন্য বন্দির পক্ষে সহ্য করাও কঠিন ছিল।আফিয়ার ওপর নির্যাতন বন্ধ করার জন্য অন্য বন্দীরা অনশন পর্যন্ত করেছিল।
২০০৮ সালের মধ্যে অনেকের মনে এ ধারণা জন্মে যে, নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ বছর পর হয়তো আফিয়া এবং তার সন্তানেরা আর বেঁচে নেই। এরপর ২০০৮ সালের জুলাই মাসে ড. আফিয়া নাটকীয়ভাবে গজনীতে আবির্ভূত হন। আফগানিস্তানে আফিয়ার উপর গুলি করার পর ৩রা আগষ্ট ২০০৮ আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার করে আমেরিকার নিউইয়র্কে নিয়ে যাওয়া হয়।সেখানে তাকে এক গোপন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েও তার উপরে নির্যাতন অব্যাহত থাকে। নিউইয়র্ক ডিটেনশন সেন্টারে ছয়জন পুরুষ সৈন্য তাকে জোরপূর্বক উলঙ্গ করে ধূলোবালি ভর্তি কক্ষ থেকে বাহিরে এনে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তার ভিডিও ফিল্ম বানানো হয় এবং তাকে বলা হয়, এই ভিডিও ফিল্ম ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হবে। এভাবে তাকে মানসিক নির্যাতন করে পাগল বানানোর চেষ্টা করা হয়। মার্কিন সরকার ‘সেন্ট্রাল কোর্টে’ আবেদন করে কিছু ছবির প্রচারণা নিষিদ্ধ করেছিল যার মধ্যে আফিয়ার উপরে চালানো নির্যাতনের সেই ছবিগুলোও ছিল।এখন তিনি আছেন টেক্সাস স্টেটের এক কারাগারে।বর্তমানে তিনি পুরুষদের সাথে ওই কারাগারে বন্দি।চলমান নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি মানসিক ভারসাম্য হরিয়ে ফেলেছেন।সেখানেও চিকিৎসার নামে তার উপর চলছে অমানসিক নির্যাতন। তার বুকের গুলির ক্ষত ও তার কিডনি বের করার ক্ষত ও শুকায়নি। আর এর জন্য তাকে তেমন কোন ব্যাথা নাশক ও প্রদান করেনি।শুধু কি তাই ? কুলাঙ্গাররা তার শরিরে ক্যান্সারের বীজ ঢুকিয়ে দেয়।যাতে খুব দ্রুতই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে নির্দোষ আফিয়া।প্রথম থেকেই তিন সন্তানকে তার থেকে পৃথক রাখা হয়েছে। আজও তিনি জানেন না তার সন্তানরা কোথায়? তারা আদৌ বেঁচে আছে কি না। পাকিস্তানের তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হবার আগে বলেছিলেন, তার দুই সন্তান মার্কিন নিয়ন্ত্রিত আফগান কারাগারে অত্যাচারে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মধ্যে যারা ড. আফিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।কিন্তু তার এই বক্তব্য আস্ফালন হিসাবে রয়ে গেছে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ আফিয়াকে নিয়ে একটি নাটক সাজায়। বলা হয়, আফগান বাহিনী আফিয়াকে গ্রেফতার করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে।
অপহরণের ৫ বছর পর ২০০৮ সালে নাটকীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় বলা হয় গ্রেফতারের সময় তার সাথে থাকা হাতব্যাগ তল্লাশি করে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা-সংবলিত কাগজপত্র, গজনির মানচিত্র, রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির নিয়মাবলি ও রেডিওলজিক্যাল এজেন্ট সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গেছে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়।ড. আফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর বক্তব্যে ব্রিটেনের দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্রন্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিধারী একজন পাকিস্তানি-আমেরিকান তার হাতব্যাগে মার্কিন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ঘুরছেন- এটি কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য?
৪ঠা আগষ্ট ২০০৮ তার বিরুদ্ধে মার্কিন সৈন্যদের উপর আক্রমণের ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করা হয়।তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আফগানিস্তানে তিনি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেছিলেন।তার বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা দায়ের করা হয়।আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজানো হয়। পর্যালোচনা করলে বোঝা যাবে, এটি পাতানো গল্প। বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের জুলাইয়ে আফগানিস্তানের গজনি প্রদেশে আফিফাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় তিনি দুই মার্কিন গোয়েন্দাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করেন। মার্কিন গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় ৩৮ বছর বয়সী আফিয়া একজন ওয়ারেন্ট অফিসারের এম-৪ অ্যাসল্ট রাইফেল কেড়ে নিয়ে এফবিআই এজেন্ট ও সৈন্যদের গুলি করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় মার্কিন সেনারা তাকে মেঝেতে ফেলে দিলে ধস্তাধস্তি হয় এবং ৯ এমএম পিস্তলের গুলি তার পায়ে লাগে। এতে মার্কিন এজেন্ট বা গোয়েন্দার কেউ হতাহত না হলেও আফিফা গুলিবিদ্ধ হন। আমেরিকানরা আরো দাবি করেছে, আফিয়া আরবিতে বলেন, ‘মার্কিনিরা নিপাত যাক, আল্লাহ মহান।’বিচারকার্য শেষে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত আফিয়া সিদ্দিকীকে ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মার্কিন গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৮৬ বছর কারাদন্ড দেয়।বিচারক বলেন,আমি আমার রায়ে ড: সিদ্দিকিকে সাজা হিসেবে ৮৬ বছর জেল প্রদান করলাম,” কথাগুলো বলেন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় আদালতের (ফেডারেল কোর্ট) ম্যানহাটনের জেলা বিচারালয়ের বিচারক (ডিস্ট্রিক কোর্ট জাজ) রিচার্ড বারম্যান। ড আফিয়া সিদ্দিকি এই রায় নাকচ করে দিয়েছেন এই বলে যে, “এ রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সময় নষ্ট করা মাত্র। এর বিরুদ্ধে আমি কেবল আল্লাহর কাছে অভিযোগ করব।
আদালতে ড. আফিয়াকে ৮৬ বছর কারাদন্ডের রায় ঘোষণা করার পর পাকিস্তানের রাস্তায় বিক্ষোভ হয়।বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় রাস্তায় হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বড় বড় শহরে সাঁটানো পোস্টারে লেখা- ‘আমেরিকাকে ধিক্কার’। লাহোর হাইকোর্ট স্নায়ুবিজ্ঞানী ড. আফিয়া সিদ্দিকীর মুক্তির পদক্ষেপ নিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়। সংশ্লিষ্ট আবেদনে জাফরি বলেন, একজন ইহুদি বিচারকই রায় দিয়েছেন।‘পক্ষপাতদুষ্ট কোনো ব্যক্তির’ কাছ থেকে কেউ সুবিচার আশা করতে পারে না।পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনে বলেছিল, সরকার আফিয়ার মুক্তির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।রায়ের বিরুদ্ধে ড. আফিয়া সিদ্দিকী মার্কিন উচ্চ আদালতে আপিল করেননি।তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর আদালতে আপিল করেছি।(I appeal to God and he hears me.) 

রায় ঘোষণার পর আফিয়া আদালতে বলেন, আমেরিকা নয়, ইসরাইল থেকে এসেছে এ রায়।(This verdict coming from Israel and not from America".) এই আদালত বয়কট করি। আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে আমি যে নির্দোষ, তা প্রমাণ করতে সক্ষম, কিন্তু বিচারকের প্রতি আমার আস্থা নেই।’ আর বিচারকও তাকে নির্দোষ প্রমাণের সুযোগ দেননি। আফিয়া আগেই বলেছিলেন, কোনো ইহুদি বিচারক থাকলে তিনি (আফিয়া) ন্যায়বিচার পাবেন না এবং ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন বিচারক নিয়োগ করা হোক।আদালতে প্রদত্ত তার বক্তব্যে দৃঢ়তা ও নির্ভীকতার পরিচয় পাওয়া যায় I demand all prospective jurors be DNA-tested, and excluded from the jury at my trial: if they have a Zionist or Israeli background... they are all mad at me... I have a feeling everyone here is them—subject to genetic testing. They should be excluded, if you want to be fair. I do not trust the Judge. I’m boycotting the trial, just to let all of you know. There are too many injustices.
তিন সন্তানের জননী হার্ভার্ড পিএইচডিধারী আফিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সন্তাসবিরোধী যুদ্ধের আর একটি নির্দোষ শিকার। লাহোর হাইকোর্টের আইনজীবী আকসির আব্বাসী অভিযোগ করেন, বিশ্বজুড়ে সব জায়গাতেই অভিযুক্তরা বেনিফিট অব ডাউট বা সন্দেহাতীতভাবে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্দোষ বিবেচিত বলে সুবিধা পেয়ে থাকেন, কিন্তু আফিয়া তা পাননি। এটা বিচারপ্রক্রিয়ার মৌলিক নীতিমালার বিরোধী।
নিউইয়র্কের আদালতে কেবল গজনির ওই ঘটনারই বিচার হয়েছে। তাকে অপহরণ বা বাগরামে আটকে রাখা-সংক্রান্ত অভিযোগের কোনো তদন্ত হয়নি। আফিয়া সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের কোনো অভিযোগ আনা হয়নি। অথচ মার্কিন কর্মকর্তারা এর আগে বিভিন্ন সময়ে আলকায়েদাকে অর্থায়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হামলা পরিকল্পনার কথা বলে এসেছেন। আইনজীবী অভিযোগ করেন, আফিয়ার বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বৈতনীতি অনুসরণ করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন একজন অসুস্থ মহিলাকে এত দীর্ঘ কারাদণ্ড প্রদান করায় বিশ্বের সচেতন মানুষ স্তম্ভিত। আমেরিকার মতো একটি শক্তিধর রাষ্ট্র একজন অসহায় মহিলার প্রতি এত ক্ষিপ্ত কেন? আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন ড. আফিয়া মার্কিন নাগরিক নন; আফগানিস্তানের ঘটনার কথিত অভিযোগে একজন পাকিস্তানি নাগরিককে আমেরিকায় স্থানান্তর করে সে দেশের আদালতে তাদের মর্জি মাফিক বিচার করা ও সাজা দেয়া কতটুকু আইনসম্মত? এটা ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।৯ অক্টোবর ২০১০ সালে পাকিস্তানি কনসাল জেনারেল হিউস্টন কারাগারে দেখা করতে গেলে ড. আফিয়া সিদ্দিকী তার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে একটি চিঠি পাঠান।জানা যায়, সেই চিঠিতে তিনি তার মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কাছে সহযোগিতা চান।তিনি বলেন, ইমরান খান অতীতে আমার অনেক সাহায্য করেছেন। তিনি যেন আমার মুক্তির জন্য চেষ্টা করেন। আমি বন্দিত্ব থেকে মুক্তি চাই। আমেরিকা আমাকে বেআইনিভাবে শাস্তি দিচ্ছে। আমাকে অপহরণ করে আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এখানে আফিয়া আটক আছেন
আফিয়া সিদ্দিকী বর্তমানে টেক্সাসের কার্সওয়েল, ফোর্ট ওর্থের ফেডারেল মেডিকেল সেন্টারে (FMC) আটক আছেন। সেখানে তাকে স্পেশাল হাউজিং ইউনিটে (SHU) রাখা হয়েছে, যা কিনা সবচেয়ে ভয়াবহ নির্জনবাস বিভাগ। কয়েদি নাম্বার ৯০২৭৯-০৫৪। আফিয়ার মুক্তির তারিখ ১৬/১০/২০৮৩। মুক্তি পেতে পেতে আফিয়ার বয়স হয়ে যাবে ১১১ বছর! এখনো তাকে বিশ্বস্ত কারো সাথে, এমনকি তার পরিবারের সাথেও ঠিকমতো যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না।
তার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বিষয়টি আলোচিত হয় কারাগার থেকে তার বহুল আলোচিত চিঠিটি লেখার পর। চিঠিটিতে আফিয়া দাবি করেন তার ওপর শারীরিক, পাশবিক নির্যাতনের পাশাপাশি একের পর এক ধর্ষণ করা হয়। তার একটি কিডনিও বের করে ফেলা হয়েছিল ফলে তিনি হাঁটতে পারতেন না। তিনি আরো দাবি করেন যে তাকে গুলি করা হয় এবং তার বুকে গুলি আঘাত ছিল।অশ্রুজল ও বুকভরা আর্তনাদ পৃথিবীতে কোনো দিন ব্যর্থ হয়নি। আফিয়া সিদ্দিকীর সাহস, আত্মপ্রত্যয় ও কোরবানি ইসলামের প্রথম শহিদ হযরত সুমাইয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়।আফিয়ার জন্যে কিছু না করতে পারার যাতনা ও নিজের অসহায়ত্বের জন্য সেই থেকে প্রতিনিয়ত মনঃপীড়ায় ভোগী।


আফগানিস্তান থেকে আফিয়া সিদ্দিকির লেখা চিঠি
হে আমার ঘুমন্ত/মৃত জাতি।আমার নাম ড. আফিয়া সিদ্দিকী, আমি Massachusetts Institute of Technology (USA) থেকে লেখাপড়া শেষ করেছি্ এবং আমার তিনটি বাচ্চা আছে।আমার উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের সহায়তায় অর্জিত আমার উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে আমার জাতিকে সাহায্য করা।আমাকে অপহরণ করা হয় আমার নিজের দেশ (পাকিস্তান) থেকে আমার দেশের তথাকথিত মুসলিম নামধারি মুরতাদ সেনাবাহিনীর দ্বারা এবং আমায় বিক্রি করে দেয়া হয় আমেরিকার কাছে।এরপর তারা আমার উপর চালায় পাশবিক অত্যাচার। আমাকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করা হয়, আঘাত করা হয় এবং ধর্ষণ করা হয়, একের পর এক।আমার কয়েদী নম্বর দেয়া হয়েছে ৬৫০।আমি এখন মুসলিম দেশ আফগানেস্তান এর কারাগার থেকে আমার বন্দী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে দোয়া করি আমার ভাই সেই মুহাম্মদ বিন কাশিমের জন্য।আমি সারা বিশ্বের জনসংখার এক পঞ্চমাংশ জনসংখার মুসলিমদের বোন।ইসলামের শুরু থেকেই আমার জাতি ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত তাদের ভাইদেরকে হেফাযত করার জন্য এবং শত্রুর কবল থেকে তাদেরকে রক্ষা করার জন্য।হযরত উমর (রা) বলেছিলেন যে,”যদি কোন কুকুর ফুরাত নদীর ধারে মরে থাকে,তাহলে শেষ বিচারের দিন উমর সেই কুকুরের মৃত্যুর জন্য আল্লাহর নিকট দায়ী থাকবে।”এই মুহূর্তে আমি নিজে নিজে হাটতে পারি না।আমার একটি কিডনি বের করে ফেলা হয়েছে,আমার বুকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে এবং আমার বুকে গুলির আঘাত রয়েছে।আমার জন্য সব ধরনের মেডিক্যাল এবং বৈধ ও সাধারন সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাখান করা হয়েছে এবং এটা নিশ্চিত নয় যে আমি বেচে থাকব না মরে যাবো।আমি তোমাদের জন্য বোন হওয়ার যে মর্যাদা তার রদ চাই।আমি একজন গর্বিত' মুসলিম,হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) এর অনুসারি, হযরত আবু বকর (রা), উমার (রা) , উসমান
(রা), আলি (রা), এবং তার সকল সাহাবি ও তার সকল সঠিক ও সত্যপন্তি অনুসারীদের কন্যা। আমি তোমাদের বোন হতে চাই না।আমার নবী (সা) এবং হযরত আবু বকর (রা), উমার (রা) , উসমান (রা), আলি (রা) এবং তার সকল সাহাবি ও তার সকল সঠিক ও সত্যপন্থি অনুসারীরাই আমার উদ্ধারকারী এবং আমি আল্লাহর করুণা ও সাহায্য চাই তোমাদের কাছে নয়।আমি কোনো পাকিস্তানি হতে চাই না যাদের রয়েছে ৬ লক্ষ সৈন্যবাহিনী, বিশেষ ফোর্স এস,এস,জি কিন্তু তারা আমাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।তারা আমাকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু যখন আমি সাহায্যের জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলাম তখন তারা আমাকে প্রত্যাখান করল।আমার সেই মুসলিম উম্মাহ বলে ডাকা লোকদের রয়েছে লক্ষ লক্ষ সৈন্যবাহিনী সব ধরনের টাঙ্ক,বন্দুক,জঙ্গি বিমান,সাবমেরিন কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত আমাকে উদ্ধার করতে এবং বাঁচাতে পারেনি।কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে জবাব দেয়ার ব্যাপারে তোমাদের চিন্তার কিছু নেই কারণ তোমাদেরকে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্নও করা হবে না এবং তোমাদেরকে কোনো উত্তরও দেয়া লাগবে না এজন্য যে তোমরা কেউ মুসলিম হিসাবে আমার ভাই নও, এবং ইসলাম ধর্মের জন্য ও ইসলামের অন্তর্ভুক্তির জন্য আমার ভাই নও।তোমরা কেউ আরব, কেউ ইরানী, কেউ ফিলিস্তিনি কেউ আফ্রিকান,কেউ পাকিস্তানি, কেউ বাংলাদেশী, কেউ আফ্রিকান, কেউ মালোয়শিয়ান কেউ ইন্দোনেশিয়ান, কেউ দক্ষিন এশীয় হতে পারো,তবে তোমরা কেউ মুসলিম নও।আমার কথায় যদি তোমরা আঘাত পেয়ে থাক তাহলে আমি খুবই দুঃখিত কিন্তু তোমরা কেউ এটা চিন্তাও করতে পারবে না যে, আমি কী ধরনের, এবং কেমন আঘাতপ্রা্প্ত।

আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে লেখা আফিয়ার মায়ের চিঠি

বারাক ওবামা
প্রেসিডেন্ট
হোয়াইটহাউজ
ওয়াশিংটন,ডিসি-২৯৫০০
প্রিয় মি.প্রেসিডেন্ট,
আমার নাম ইসমত সিদ্দিকী।ড. আফিয়া সিদ্দিকী আমার কন্যা। সে এমন একজন যার সম্পর্কে আপনি ইতোমধ্যে হয়তো শুনে থাকবেন। সম্ভবত, তার সম্পর্কে নেতিবাচক কিছুই শুনে থাকবেন। ইন্টারনেট ও অন্যান্য মাধ্যমে লাখ লাখ পৃষ্ঠা একজন ব্যক্তি সম্পর্কে অনুমিত বিবরণ, প্রশংসা, কটাক্ষমূলক ব্যঙ্গবিদ্রূপ এবং একই সাথে একগাদা প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তার সমর্থকেরা তাকে সেইন্টহুডে তুলে এনেছে। আর কুৎসাকারীরা তাকে অপবাদ দিয়ে দানবে রূপায়িত করেছে। একজন মানুষ সম্পর্কিত সত্যটি এর মধ্যে হারিয়ে গেছে। আসল ঘটনা হচ্ছে, আফিয়া তিন-তিনটি সন্তানের মা এবং একজন মেধাবী মুসলিম মহিলা। তার একমাত্র উৎসাহ-অনুরাগ হচ্ছে লোকদের শিক্ষিত করে তোলা। এ জন্য সে পড়াশোনা করেছে বিশ্বের উৎকৃষ্ট সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এগুলোর মধ্যে আছে এমআইটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সুখ্যাত প্রতিষ্ঠানগুলোও। ২০০১ সালের ১ সেপ্টেম্বরের পর অজানা কারণে আফিয়া সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের এক শিকারে পরিণত হয়েছে।এটি শুধু তার অসুস্থ মায়ের একটি দুঃখজনক কাহিনীই নয়। এটি সেইসব মানুষের দ্বারা নির্যাতন, অন্যায় মর্যাদাহানি, অবনমিত করা, প্রতারণা ও বর্বরতার এক বাস্তবতা- যারা নিজেদের সবচেয়ে বেশি সভ্য বলে দাবি করেন। এটি তাদের করা গুরুতর এক অন্যায়-অবিচার, যারা নিজেদের সবচেয়ে ন্যায়ানুগ বলে দাবি করেন। এটি একটি জাতির পক্ষপাতদুষ্টতার এক মহাকাব্য, যে জাতি তা থেকে নিজেকে মুক্ত বলে দাবি করে থাকে। এটি শুধু একজন নারীর কোনো অগ্নিপরীক্ষা নয়; এটি একটি জাতির অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী একটি জাতি ও এর শাসকদের ওপর কালিমা লেপনের কাজ। স্যার, এটি আমেরিকার দু’টি প্রশাসনের ‘লজ্জাকর উত্তরাধিকার’। আমি এই বিভৎস ঘটনা, এর মেরিট বা ডিমেরিট উল্লেখ করতে যাবো না, কারণ আমি নিশ্চিত- আপনার কাছে প্রবেশাধিকার পাওয়া উকিলেরা আপনাকে শুধু সেসব ‘ফ্যাক্ট’ জানাবেন, যা তাদের দাবিকেই যুক্তিযুক্ত করে তোলে। কিন্তু এই আশায় এর সাথে ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিস নেটওয়ার্কের তৈরী একটি ফ্যাক্টশিট সংযোজন করছি যে, আপনি এক নজর তা দেখবেন এবং দেখবেন এর একটি ‘উল্টো পিঠ’ও আছে। আমাকে বলা হয়েছে, আপনি একজন মেধাবী আইনজীবী ছিলেন। হার্ভার্ডে আপনি ছিলেন আপনার সহপাঠীদের শীর্ষে। অতএব আমার আশা, আপনি কল্পকাহিনী থেকে সত্য বের করে নিয়ে আসতে পারবেন।
মি. প্রেসিডেন্ট, অপহরণের পর আমার মেয়েকে এই কয়েক বছর ধরে জোর করে তার সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখা, তার ওপর নির্যাতন চালানো, গুলি চালানো, মারধর করা, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা এবং বিবস্ত্র করার ভাবনায় আমার হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এমনকি, এখনো তার ডিটেনশন ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাধারণ সৌজন্যবোধও মানা হচ্ছে না। বুলেটের ক্ষতস্থান থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত নিয়ে নিউ ইয়র্কে পৌঁছার পর এক মাস তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া হয়নি। তার আটককারীরা নিউ ইয়র্কে এবং ফোর্টওয়ার্থের কার্সওয়েল মেডিক্যাল ফ্যাসিলিটিতে আইনজীবীদের সাথে সহায়তা করতে হুমকি অব্যাহত রাখে, যাতে তা করলে তাকে শাস্তি দেয়া যায়। তাকে এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলা হয়, যেখানে নির্মম প্রতিশোধের ভয়ে পরিবারের সাথে দেখা করতেও সে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। ইতোমধ্যে তীব্র যন্ত্রণায় পার হয়ে গেছে তার ১২টি বছর- পাঁচ বছরের গোপন বন্দিত্ব জীবন এবং প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন সাত বছরের বন্দিত্ব।সতের বছর বয়সে আমার মেয়েকে আপনার দেশে পাঠিয়েছিলাম, যাতে এমন শিক্ষা গ্রহণ করে যা বিশ্বের আর কোথাও সম্ভব হতো না। তাকে সেই মূল্যবোধ শিখিয়েছিলাম- দয়ালু হতে ও ন্যায়বিচারের পক্ষে কাজ করতে; প্রয়োজনে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং অসহায় মানুষকে সহায়তা দিতে। আমার মেয়েকে সেটাই শিখিয়েছিলাম, যা আমেরিকার অবস্থান। কিন্তু আমি অবাক হই, আপনারা যখন সে মূল্যবোধ ভুলে যান। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া তার সন্তানেরা প্রশ্ন করে- কেন তাদের অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়েছিল? কেন এদের দেশ এদের ওপর এমন আচরণ করল? আপনি কি এর জবাব দিতে পারেন?
আফিয়া শান্তি ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সে সন্ত্রাসী নয়। তার শিক্ষা এবং তার সন্তানের প্রতি আগ্রহসূত্রে সে হতে পারত বিশ্বের অন্ধকারতম কোনো কোণোর একটি মেধাবী আলো। শৈশবের প্রথমাবস্থায় শিক্ষার্জনের ওপর তার গবেষণা সবখানে লাখ লাখ শিশুর জন্য সহায়ক হতে পারত। আমার কন্যা হতে পারত একটি বিশ্বসম্পদ, যে বিশ্বে তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি দরকার।আমি আপনার কাছে আর্জি জানাই, আপনার প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতা ব্যবহার করে আমাদের এই সময়ের সবচেয়ে গুরুতর অন্যায়-অবিচারের একটিকে অকার্যকর করে দিন। এটা হবে এমন একটি পদক্ষেপ, যা মুসলিম বিশ্বে আপনার জন্য প্রচুর সুনাম বয়ে আনবে; যা লাখ লাখ ডলার খরচ করেও আনা সম্ভব হবে না। আপনার একটি সাধারণ পদক্ষেপ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়ানো একজন মায়ের হৃদয় উষ্ণতায় ভরিয়ে দিতে পারে। আর তা ফিরিয়ে আনতে পারে আমেরিকার ক্ষমা ও করুণার উপায়। আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি, এক মুহূর্ত চিন্তা করে দেখুন একজন বাবা হিসেবে, যে এক কন্যাকে ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারে। আপনার গোয়েন্দা সংস্থা যা-ই বলুক, তা বিবেচনায় না নিয়ে আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি- আমার কন্যা কারো জন্য কোনো হুমকি নয়। তাকে ছেড়ে দিলে শুধু আপনিই আরো শক্তিধর ও গৌরবোজ্জ্বল হবেন। কারণ, ক্ষমার প্রাপ্তি দ্বিগুণ। সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।-

ইসমত সিদ্দিকী

Youtube এ আফিয়ার লিংক দেয়া হলো-

(তথ্যসূত্র -জাতীয় দৈনিক ,ইন্টারনেট)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল